ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩৪'তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৪ জুন, ২০১৫, ০২:০০:৩৩ দুপুর
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩৪'তম পর্ব)
শায়লার ইচ্ছায় এক টাকা দেন মোহর ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন হল। বিয়ের অনুষ্ঠান সুভেলাভে সম্পন্ন হয়ে গেলে বন্ধী বন্ধুরা এবং পরিবারের লোকেরা একে একে বিদায় নিল। সুপার সাহেবের নির্দেশে শায়লা-সাদী দম্পতিকে তাদের ফুল শয্যার জন্য নির্ধারীত একটা ভিআইপি কেবিনে পাঠিয়ে দেয়া হল, ফজরের পূর্বেই সাদীকে যেন তার কন্ডেম সেলে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই নির্দেশ দিয়ে জেলার সাহেব নিজের রুমালে চোখ মুছতে মুছতে সাদী এবং শায়লার জন্য শুভ কামনা করে বিদায় নিলেন।
===========৩৪
ফুল শয্যার রাতে বাসর ঘরে আনন্দের যে বন্যা বয়ে যায় সেরকম আনন্দ নাই সাদী শায়লা দম্পতির বাসর ঘরে। এরকম ফুল শয্যার রাতের কথা কেউ কোন কালে চিন্তা করেছে কিনা সন্দেহ আছে। যা চিন্তারও অতীত তাই আজ শায়লা সাদী দম্পতির ক্ষেত্র বাস্তব। ফুল শয্যার চিরাচরিত নিয়ম অনুসারে দুলহান বড় একটা ঘোমটা টেনে বসে থাকে বিছানায় আর দুলহা এসে অতি আদরের সাথে হৃদয়ের সব টুকু ভালবাসা উজাড় করে দুলহানের ঘুঙট তুলে জীবন সাথীর চাঁদ মুখ খানা দর্শন করে, কন্তু সাদী শায়লা দম্পতির ক্ষেত্রে সব কিছুই যেহেতু উল্ট পালট হেয়ে গেছে তাই ফুল শয্যার ক্ষেত্রেইবা বেতিক্রম হবেনা কেন?
সাদীকে কষ্ট করে ঘুঙট উঠাতে হয়নি বরং কেবিনের দরজা বন্ধ করে শায়লাই সাদীর উপর হামলে পরে! যেমনটা দীর্ঘ্য দিন অভুক্ত থাকা সিংহ শিকারের উপর হামলে পারে। শায়লার এই হামলে পরা মোটেই শারীরিক প্রয়োজনে ছিলনা বরং পুরটাই ছিলে হৃদয় নিংড়ান ভালবাসা আর আবেগের বহিঃপ্রকাশ। পুরা ঘটনায়ই এতক্ষণ সাদী ছিল নিরব দর্শক কিন্তু শায়লার আবেগের কাছে সাদী নিজেও হারিয়ে গেল। দুটি হৃদয় যখন পরস্পর আবেগের অবগাহনে তখন আকাশের ফেরেশতারাও হয়ত তাদের এই মধুময় সময় টুকু কবুল করার জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুলেছিল।
- শায়লা! প্রিয়তমা!
- ইয়েস স্যার!
- এমন পাগলামি কেন করতে গেলে হে আমার নীলাঞ্জনা? যে প্রদীপ ক্ষণিক বাদেই নিভে যাবে, জেনে বুঝে সেই কুপিতে কেন নতুন সলতে লাগিয়ে তেল ঢালতে গেলা। এটা তো কোন বুদ্ধিমানের কাজ হলনা।
- পাগলামী করেছি নাকি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছি তা বলতে পারবনা তবে জীবনের সব কিছু লাভ ক্ষতির বিচারে হয়না। সবাই লাভের আশায় কাজ করে কিন্তু ক্ষতিতেও জীবনের পরম প্রাপ্তি থাকে। আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি মিলে গেছে তা সামান্য সময়ের জন্য হলেও। বাকী কথা গুলোত জেল সুপার সাহেব বিবাহের খুৎবায় বলেছেন। আর তার পরেও যদি বেশী কিছু জানতে চাও তাহলে বলব, তোমাকে একবার স্পর্শ করার বড় স্বাধ ছিল, তোমাকে দুনিয়ায় নাহয় নাইবা পেলাম কিন্তু পরকালে যেন পাই সেজন্য দুনিয়ায় বসেই রেজিষ্ট্রি করে রাখলাম। বলতে পার নিজের স্বার্থটাই বড় করে দেখেছি। যেমনটা অন্য দশজন দেখে।
- মাশা’আল্লাহ! তুমিতো দেখি আসহাবে রাসূল (সঃ) হযরত হানজালার (রাঃ) স্ত্রীর দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে। এখন আল্লাহর কাছে দুয়া কর যেন তিনি আমাকে হানজালা (রাঃ) এর মত শহীদ হিসেবে কবুল করেন। শাহাদাতের পর যেন আল্লাহর ফেরেশতারা হানজালা (রাঃ)কে যেভাবে গোসল দিয়েছিল সে ভাবে আমাকেও গোসল দেয়। যদি আমার কোন আমানত তোমার কাছে থেকে যায় তাহলে তাকে আল্লাহর রাহে ওয়াকফ করে গেলাম।
- ইনশা’আল্লাহ! হে প্রাণ প্রিয় স্বামী, তোমাকে এত সহজেই যেতে দিবনা, রাষ্ট্রপতির কাছে নয় বরং আল্লাহর কাছে তোমার প্রাণ ভিক্ষা চাইব। মুমিন কখনো আল্লাহর দয়া থেকে নিরাশ হয়না। আমিও নিরাশ নই।
- আল বেদা হে প্রিয়তমা আল বেদা।
- আল বেদা বাট সি ইউ এগেইন ইনশা’আল্লাহ।
মন না চাইলেও সময় শেষ হওয়ায় সাদীকে পুনরায় ফিরে যেতে হল ফাঁসির সেলে। সাময়িক অমূল্য কয়েকটা মুহুর্ত ফুরিয়ে গেলে সাদীর শেষ হয়ে আসা দুনিয়ার জীবন থেকে। সাদী তৃপ্তির সাথে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করল। যে দুটো বিষয় সাদীকে প্রেশানীর মধ্যে রেখেছিল তার সমাধান হয়ে যাওয়ায় সাদী এখন আনন্দ চিত্তে ফাঁসির মালা গলায় পড়তে পারবে। তবে শায়লা যে দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছে তা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে পারবে কিনা সেজন্য ভয় হচ্ছিল।
যা হবার তা হয়ে গেছে। চাইলেও এখান থেকে ফিরে আসার সুযোগ নাই তাই সাদী হৃদয় বিগলিত আবেগ দ্বারা আল্লাহর কাছে শায়লার জন্য দুয়া চাইল যাতে সে তার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারে।
===========৩৫
বিষয়: সাহিত্য
১৬১৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ্ আপনার নেক দুয়া কবুল করুন।
আল্লাহ্ আপনাকে জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এহকালিন ও পরকালিন কামিয়াবি দান করুন। ইনক্লুডিন দুলাভাই এবং বেবিস।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
সুন্দর পরামর্শ্বের জন্য আন্তরিক মুবারকবাদ।
এখন মুক্তি পাবার পালা। অপেক্ষায় রইলাম।
অপেক্ষার পালা যেন শেভে লাভে শেষ হয় আমারও সেই প্রত্যাশা।
ধন্যবাদ ভাই।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন