ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩৩'তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৩ জুন, ২০১৫, ০৪:২৯:২৪ বিকাল
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩৩'তম পর্ব)
শায়লা চলে গেলে সুপার সাহেব ভাবনায় পরে গেলেন। কাজটা করা তার জন্য মোটেও ঠিক হবে কিনা? কিন্তু শায়লাকে যেহেতু কথা দিয়েছে সেহেতু ফেরারও কোন পথ নাই। শায়লা যদি তার বাবা-মা আর আমজাদ শেখ সাহেবকে ম্যানেজ না করতে পারে তাহলেই কেবল জেল সুপার সাহেব এমন রিস্কি কাজ থেকে মুক্তি পাবে অন্যথায় তাকে ওয়াদা মত কাজ করতেই হবে।
===========৩৩
এশার নামাজ পড়তে গিয়েও জেল সুপার সাহেব দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে দুয়া করলেন তিনি একজন মেচিউর্ড মানুষ হয়েও শায়লার কথায় অবিবেচকের মত যে কাজ করতে যাচ্ছেন তাতে যদি অকল্যাণ থাকে তাহলে যেন শায়লা না আসে আর যদি কল্যাণ থাকে তাহলে শায়লা যেন আসে এবং কাজটা যেন ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হয়।
নামায শেষ জেল সুপার সাহেব কারা মসজিদের ঈমাম সাহেবকে কিছুক্ষণ মসজিদে অপেক্ষা করার এবং পরবর্তি খবর না আসা পর্যন্ত যেন চলে না যান সেই অনুরোধ করে নিজ অফিসের দিকে পা বাড়ালেন।
অফিসে গিয়েই সুপার সাহেব স্বপরিবারে শায়লাকে তার অফিসে দেখতে পেয়ে বুঝে গেছেন যে শায়লার তরফ থেকে সব ঠিক আছে। তাই তিনি কাল বিলম্ব না করে পরিকল্পনা মাফিক সাদীকে কারা হাসপাতালের হর রুমে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়ে দুজন জমাদারকে পাঠিয়ে দিলেন।
ফাঁসির প্রকোষ্ঠে সাদী জীবনের শেষ সূর্যদয় দেখার জন্য যখন অপক্ষা করছিল আর বিগত দিনের অজানা ভুল ত্রুটির জন্য মহান আল্লহার দরবারে সেজদাবনত হয়ে চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছিল তখনই বাহির থেক দরজায় করাঘাতের আওয়াজ পেয়ে চট জলদি নামায শেষ করে দরজা খুলে দিল। এই অসময় দুজন কারা রক্ষিকে দেখে সাদীর মনে ভাবনার উদয় হল, সব নীয়ম নীতি লঙ্ঘন করে সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য কর্তৃ পক্ষের মধ্যে ঘাটপি মেরে থাকা বিরোধীরা চক্র হয়ত আজই তাকে পরপারে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
- জ্বি বলুন।
- স্যার তারাতারি গোসল করে এই নতুন পোশাকটা পরে নিন।
- ফাঁসির পূর্বে কি নতুন পোষাক পড়ান হয় না কি?
- না স্যার তা হয়না তবে আপনার বেলায় বেতিক্রম মনে হচ্ছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।
মিনিট দশেকের মধ্যেই সাদী তৈয়ার হয়ে বেড়িয়ে এসে কারা রক্ষিদের সাথে চল্ল। আশ্চর্যের বিষয় হল সাদীকে ফাঁসির কাষ্ঠের দিকে না নিয়ে কারা হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল! সাদীর মনে নতুন ভাবনার উদয় হল। হয়ত ফাঁসির পরিবর্তে ইঞ্জেকশানের মাধ্যমে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভাবনার ছেদ পরল যখন সাদী কারা হাসপাতালের ভিতর প্রবেশ করল। আমজাদ শেখ সাহেব এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিল। সাদীও চোখের পানি আটকাতে পারলনা। আমজাদ সাহেব তার বাহুন্ধনে বন্দী করে সাদীকে হল রুমের দিকে নিয়ে চল্ল। আমজাদ সাহেবের স্পর্শ আর বুকের উষ্ণতা সাদিকে নিজের বাবার কথা স্মরণ করিয়ে দিল। ছোট্ট বেলায় সাদীকে তার বাবা কতবারই না এভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেছে কপলে চুমু খেয়েছে। সেই বাবা আজ নাই থাকলে হয়ত আজও সে এভাবে জড়ীয়ে ধরে আদর করত।
তারা যখন হল রুমে ঢুকল তখন সেখানে সাদী ভিন্ন পরিবেশ দেখে আরো আশ্চর্য হল। জেল সুপার সহ সাদী, শায়লা এবং আমজাদ শেখ সাহেবের পুরা পরিবারের সদস্যদের সাথে বন্ধি বন্ধুদের প্রায় সকলেই উপস্থিৎ! জেলার সাহেব নিজে উঠে এসে সাদীকে স্বাগতম জানিয়ে মাথায় বিয়ের তাজ পরিয়ে দিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে বরের জন্য নির্ধারীত আসনে বসিয়ে দিলেন।
বর প্রস্তুত, কনে প্রস্তুত, কাজী প্রস্তুত, মৌলুভী প্রস্তুত এমনকি অভিভাবকরাও উপস্থিৎ। সবার সম্মিলিত পাগলামির কাছে সাদীর কোন যুক্তিইযে ধোপে টিকবেনা তা সাদী বেশ বুঝতে পারছিল তাই কালক্ষেপণের চেয়ে তাদের সাথে তাল মেলানই শ্রেয়।
জেল সুপার সাহেব নিজেই বিয়ের খুৎবা দিলেন যাতে তিনি শায়লার শেষ ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারী খরচে সাদীর বিয়ের এই পাগলামিতে স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছেন বলে জানালেন। যে কারণ গুলো তাকে এই পাগলামিতে অংশ নিতে বাধ্য করেছে তা হল সাদীর নির্দোষ হওয়া এবং তার জীবন রক্ষার জন্য শায়লার দাবীকে শক্তিশালী করা। শায়লা এখন নিজের স্বামীর প্রতি যে অবিচার হয়েছে, সে যে নির্দোষ তা মহামাণ্য রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে পারবেন। এ বিবাহ শায়লাকে নিজ স্বামীর জীবন বাঁচাতে আরো দৃঢ় এবং সাহসী করবে। পাশাপাশি সাদিকে যদি শেষ পর্যন্ত বাচান নাও যায় তাহলে সাদীর মা যেন অভিভাবক হিন হয়ে না পরে। সব কিছু মিলিয়ে আত্মীয়তার এই বন্ধনটা জরুরী ছিল।
শায়লার ইচ্ছায় এক টাকা দেন মোহর ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন হল। বিয়ের অনুষ্ঠান সুভেলাভে সম্পন্ন হয়ে গেলে বন্ধী বন্ধুরা এবং পরিবারের লোকেরা একে একে বিদায় নিল। সুপার সাহেবের নির্দেশে শায়লা-সাদী দম্পতিকে তাদের ফুল শয্যার জন্য নির্ধারীত একটা ভিআইপি কেবিনে পাঠিয়ে দেয়া হল, ফজরের পূর্বেই সাদীকে যেন তার কন্ডেম সেলে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই নির্দেশ দিয়ে জেলার সাহেব নিজের রুমালে চোখ মুছতে মুছতে সাদী এবং শায়লার জন্য শুভ কামনা করে বিদায় নিলেন।
===========৩৪
বিষয়: সাহিত্য
১২২২ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বই আকারা প্রকাশ করা যায় কিনা সে ব্যাপারে সহায়তা চাই। যাতে দেশ বিদেশের পাঠকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যায়। সাধারণ মানুষের হাতে বইটা পৌছানর ব্যাপারে কি করনীয় তাও আপনি ভালো বলতে পারবেন।
ধন্যবাদ।
মুক্ত করাটা কি জরুরী।
গল্পেতো মিলনের চেয়ে বিরহেই বেশী সুখ তাই না?
ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন