ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩২'তম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২২ জুন, ২০১৫, ০৪:৩২:২২ বিকাল

ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩২'তম পর্ব)

ফজেরের আজানের শব্দে শায়লার ঘুম ভেঙ্গে গেলে নিজে নিজেই স্বপ্নের তাবির করতে লাগল কিন্তু কিছুর সাথেই কিছু মিলাতে পারছিলনা। সে সিদ্ধান্ত নিল আজই সে সাদীর সাথে দেখা করে স্বপ্নের তাবির জানতে চাইবে।

===========৩২

ফাঁসির সেলেও নির্ভিক সাহসী আল্লাহর দীনের মুজাহীদ এক মুজাহীদ সাদী মোহাম্মদ সাইয়্যেদ। তার ভিতর কোন প্রেশানী নাই, কারণ আল্লাহর দিনের সৈনিকেরা যাবতীয় বিপদ আপদে ধৈর্য ধারণ করে। নিজের জন্য তার কোন ভাবনা নেই, ভাববেই বা কেন? জীবনে দৃশ্যমান কোন অন্যায় করেছে বলে তার দৃষ্টিগোচর হচ্ছেনা। নিজের অজান্তে কোন অন্যায় করে থাকলে সে জন্য তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছে এবং তওবা কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন এবং ক্ষমার ওয়াদা করেছেন তাই সে আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপরই রাজি খুশি ও অবিচল।

মানুষ দুনিয়ায় আসে এবং চলেও যায়। সবই হয় আল্লাহর হুকুমে। এখানে কারো কোন হাত নাই। দুনিয়ায় আসার সময়ই একটা জিনিস প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় আর তা হল, সময় ফুরিয়ে গেলে তাকে অবশ্যই ফেরত যেতে হবে। দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা। তার সময়ও যদি শেষ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তাকেও কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা। আর হায়াত শেষ না হলে কেউ তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাতে পারবেনা।

মানুষ আশা নিয়েই বেচে থাকে। আশা না থাকলে এ পৃথিবী আবাদ হত কিনা কে জানে। জীবনের মাত্র দুইটা দিনের পুঁজি নিয়েও শায়লা এবং সাদী আশায় বুক বেঁধে বেচে আছে। সাদী নিজের জন্য প্রেশান না হলেও বৃদ্ধা মা এবং অভাগিনী শায়লার জন্য প্রেশান না হয়ে পারছেনা। মা এবং শায়লার একটা বিহিত করে যেতে পারলে সাদী মরেও শান্তি পেত। যে মরণ নিশ্চিত তা বিছানায় শুয়ে হল না ফাঁসির রশিতে ঝুলে হল তা নিয়ে সাদী মোটেও বিচলিত নয়। বরং এই নোংরা দুনিয়ার ঘুণে ধরা সমাজকে যত তারাতারি গুড বাই, শুভ বিদায় বলা যায় ততই ভাল আর সে বিদায়ে যাদি থাকে শাহাদাতের হাতছানি তাহলে তো কোন কথাই নাই।

ফজরের নামায পড়ে শায়লা তরিঘড়ি করে রেডি হয়ে সাদীর সাথে দেখা করার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। সকাল আটটার মধ্যেই জেলখানায় পৌছে জানতে পারল জেল সুপার সাহেবও আজ জেলখানার অফিসেই আছেন। তাই কাল বিলম্ব না করে সে জেল সুপার সাহেবের কাছে চলে গেল। জেলা সুপার সাহেব অতিশয় সৎ এবং আল্লাহ্‌ ভিরু লোক। কিন্তু তার হাতও আইনের রশিতে বাঁধা তাই সে আইনের ফাঁক গলিয়ে কিছু করতে পারলেও আইনকে অবজ্ঞা করার ক্ষমতা তার নাই।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বিগত ১০০ দিনে যে কয়টা ভালো কাজ করেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন সৎ যোগ্য আল্লাহ্‌ ওয়ালা লোক নির্বাচিত করা আর জেল সুপার হিসেবে একজন সৎ যোগ্য দক্ষ ও কর্মঠ লোককে নিয়গ দেয়া অন্যতম।

শায়লা অসংকোচে সাদীর পুরা ঘটনা খুলে বললে জেল সুপার সাহেব ঘটনার পিছনের ঘটনা অনুদাবন করতে পারল বটে কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে অনুধাবন করেতো কোন লাভ নাই। আদালতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা হ্রদ করার ক্ষমতা তো আর জেল সুপারের নাই এমন কি প্রধান মন্ত্রীরও না। ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রপতির হাতে কিন্তু সাদী যে সে পথে যাবেনা তা শায়লা ভাল করেই জানে। শায়লা নিজেই বা কিসের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করবে? হঠাৎ রাতে দেখা স্বপ্নের কথা শায়লার মনে এলে সে জেল সুপারের কাছে তাও খুলে বলে কিন্তু জেল সুপার তাকে কি পরামর্শ্ব দিবে তা ভেবে পাচ্ছিল না।

পরবর্তি করণীয় কি শায়লা তা জেল সুপারকে খুলে বলল। জেল সুপার সাত পাঁচ ভেবে শায়লার কথায় সায় দিল তবে শায়লাকে শতর্ক করে বলল বিষয়টা কিন্তু শায়লার জন্য খুবই আবেগী এবং রিস্কি।

এত বড় রিস্ক নেয়ার পরেও যে ফলাফল পক্ষে আসবে তারও কিন্তু কোন নিশ্চয়তা নেই। আর শায়লার কথায় এমন অবিবেচকের মত কাজ সাদী করতে রাজী হবে কিনা তাতেও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বরং রাজী না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। আর জোর জবরদস্তি করে রাজী করানো গেলেও ভালো কোন ফল বয়ে আনবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই।

শায়লা তার দিদ্ধান্তে অটল এবং নাছর বান্দা। জেল সুপার সাহেব শায়লাকে বুঝাতে চাইলেন যে সে যদি তার নিজের মেয়েও হত তাহলেও এমন পাগলামিতে সায় দিতেন না।

শায়লার পিড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত জেল সুপার সাহেব রাজি হলেন এবং শায়লাকে বিদায় করে দিলেন। আর এও বলে দিলেন শায়লার এমন বিপদের দিনে তিনি পার্শ্বে থাকবেন এবং যাবতীয় করনীয় তিনি পর্দার আড়ালে থেকে নিজেই করবেন। তবে শায়লা যেন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে তার মা বাবা এবং আমজাদ শেখ সাহেবের সাথে পরামর্শ্ব করে নেয়। মুরুব্বিরা রাজী হলে তাদের নিয়ে ঠিক এশার নামাজের পরেই যেন তারা জেল খানায় উপস্থিত হয়।

শায়লা চলে গেলে সুপার সাহেব ভাবনায় পরে গেলেন। কাজটা করা তার জন্য মোটেও ঠিক হবে কিনা? কিন্তু শায়লাকে যেহেতু কথা দিয়েছে সেহেতু ফেরারও কোন পথ নাই। শায়লা যদি তার বাবা-মা আর আমজাদ শেখ সাহেবকে ম্যানেজ না করতে পারে তাহলেই কেবল জেল সুপার সাহেব এমন রিস্কি কাজ থেকে মুক্তি পাবে অন্যথায় তাকে ওয়াদা মত কাজ করতেই হবে।

===========৩৩

বিষয়: সাহিত্য

১৪৬৩ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

327122
২২ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৩
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আগামী পর্বের অপেক্ষায়।
২৩ জুন ২০১৫ সকাল ০৫:০৪
269403
আবু জারীর লিখেছেন : ইনশা'আল্লাহ যথা সময় এসে যাবে।
ধন্যবাদ বদ্দা।
327132
২২ জুন ২০১৫ রাত ১০:১৮
আবু জান্নাত লিখেছেন : মনে হচ্ছে কোন আশার বাণী পাচ্ছি। আগামী পর্বের অপেক্ষায়।
২৩ জুন ২০১৫ সকাল ০৫:০৫
269404
আবু জারীর লিখেছেন : ইনশা'আল্লাহ যথা সময় এসে যাবে।
ধন্যবাদ।
327164
২৩ জুন ২০১৫ রাত ০৩:৩৩
আফরা লিখেছেন : আগামী পর্বের অপেক্ষায় - - - - দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গড়ায় ।
২৩ জুন ২০১৫ সকাল ০৫:০৫
269405
আবু জারীর লিখেছেন : দেখা যাক কিতে কি হয়?
ধন্যবাদ।
327173
২৩ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:৫৪
আবু নাইম লিখেছেন : জটিল পজিশনে এনে রাখলেন.......অপেক্ষায় আছি..চাতক পাখির মত......
২৩ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:০৭
269444
আবু জারীর লিখেছেন : জটিলই বিষয়টা।
ধন্যবাদ ভাই।
327198
২৩ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ভাইয়া! আগামী পর্বের অপেক্ষায় - - - - দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়।
২৩ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:০৮
269445
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়লাইকুম'আসসালাম।
দেখা যাক কি হয়।
ধন্যবাদ আপু।
336777
১৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:৫২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : তাহলে কি বিয়ে হবে ?
২০ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০০
278839
আবু জারীর লিখেছেন : মনে তো হচ্ছে
ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File