ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩০'তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২০ জুন, ২০১৫, ০৪:০৬:০৯ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (৩০'তম পর্ব)
সবাই যখন নতুন স্বপ্নে বিভোর, সাদীকে কেন্দ্র করে সবার যখন পদাচরনা ঠিক তখনই একদিন হঠাৎ সাদীর ডাক পড়ে গেল। কোন ফাকে যে একটা মাস চলে গেছে কেউ টেরই পায়নি। আজ সাদীর মামলার রায় হওয়ার দিন তাই তাকে আদালতে যেতে হবে।
- ===========৩০
সাদীর বন্ধুরা ব্যপক হারে আদালতে উপস্থিত হয়েছে। কি রায় হবে কেউ জানেনা। সাদী কি সত্যিই মুক্তি পাবে না অন্যদের মত তাকেও আদালতের দড়জায় ন্যায় বিচারের জন্য বছরের পর বছর কপাল ঠুকতে হবে আল্লাহু আলম।
আদালতের গারদের ভিতর ছোট্ট একটা টুলে বসে সাদী উপস্থিত সব বন্ধুদের দিকে দৃষ্টিপাত করছিল। সব বন্ধুরাই মুক্ত, নিজেদের দল ক্ষমতার অংশীদার, যে সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য সাদীর চেষ্টার অন্ত ছিলনা অথছ ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে সেই সরকারের আমলেই সাদী মুক্ত দুনিয়ার এক বন্ধি বাসিন্দা! ভাবতেই সাদীর বিতরে একটা মোচর দিয়ে উঠল কিন্তু সে যে বীর যোদ্ধা, সাহসী সৈনিক, লড়াকু ছাত্র সংগঠনের সালার তাকে বিচলিত হলে কি চলে?
আমজাদ শেখ সাহেব সবচেয়ে বেশী প্রেশান। মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েও সে কোনদিন বিচলিত হয়নি। হাসি মুখে যুদ্ধের নয় মাস মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য যে যোদ্ধার প্রতিটি সকাল হত, সেই যোদ্ধা আজ পরাজয়ের আশঙ্কায় কম্পমান। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাকে এমন পরিস্থিতির মুখমুখি হতে হবে সেটা তার ভাবনায়ও ছিলনা।
ছেলের অনুপস্থিতিতে সাদীর মা একেবারেই ভেঙ্গে পরেছে। শারীরিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে তাকে আদালতে আনা যায়নি।
সাদিয়া আর শাকিল এসেছে। তাদেরকে এক সাথে দেখে সাদীর হৃদয়টা আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে। যে বোনকে কাছে পেলে এমন কোন সময় যাইনি যখন তারা দুজন খুনসুটি করেনি অথছ আজ দু ভাই-বোনই নিরুত্তাপ, কথা হচ্ছে চোখের ভাষায় আর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বোনের চোখের অশ্রু বানে যা সাধারণত প্রতিটি বোনই ভাইদের বিপদে আপদে করে থাকে! ওয়াকিলের মুখেও কোন কথা নাই, এমন অবস্থার মুখমুখি যে তাকে হতে হবে তা ছিল তার ভাবনার ও অতীত।
শায়লা কালো গাউনের সাথে মথায় কালো স্কার্ফ পরেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে স্বর্গীয় অপ্সরী! সাদীর ইচ্ছা হচ্ছে তাকে প্রাণ ভরে দেখতে কিন্তু দীনের একজন মুজাহিদ বিবাহের পূর্বে কিভাবে একজন যুবতীর দিকে কামনার দৃষ্টতে তাকায়? হোকনা সে বেহেস্তের হুর, সর্গীয় অপ্সরী বা নিজের বাগদত্তা। এক পলকেই সাদী দৃষ্টি নামিয়ে নিতে বাধ্য হল যা শায়লার চোখও এড়ায়নি।
সাদীকে কিছু একটা বলার জন্য শায়লার অন্তরটা ফেটে যাচ্ছিল কিন্তু এত মানুষের সামনে মুখ খুলতে পারছিল না। শুধু অপলক নেত্রে সাদীর পাণ্ডুর মুখের দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া এই মুহুর্তে শায়লার যেন আর কিছুই করার নাই।
দেখতে দেখতে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার সময় হয়ে গেল। ইতিমধ্যেই বিচারকগণ এজলাসে হাজির হয়ে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করেছেন।
আদালতে পিন পতন নিরবতা বিরাজ করছে। সকল নিরবতা ভেঙ্গে মননীয় বিচারক মহদয় দিনের কার্যক্রমের সূচনা করে রায় পড়া শুরু করলেনঃ
- আসামির পক্ষের স্বাক্ষি জনাব আমজাদ শেখ একজন সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা, ডিবি পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা এবং নিহত পুলিশ অফিসার শাকিলের বাবা। তার স্বাক্ষ অবশ্যই বিবেচনার দাবী রাখে কিন্তু তিনি আদালতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে সে যে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল তা প্রতারণার সামিল। সরকার পক্ষের স্বাক্ষি হিসেবে আদালতে এসেও আসামির পক্ষে স্বাক্ষ দিয়েছেন। তার এহেন আচরণের কারণে আদালতে তার স্বাক্ষ গৃহীত হয়নি।
আসামি পক্ষের তরুণী আইনজীবী মিস শায়লা জামান মৌ একজন শ্রদ্ধাভাজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ডিবি পুলিশের সাবেক কর্মকর্তার মেয়ে এবং সদ্য পাশ করা মেধাবী ছাত্রী ও নবীন আইনজীবী। আশা করি সে আইন পেশায় নিয়োজিত থাকলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে। কিন্তু এই মামলার যুক্তি তর্কে তার বক্তব্যে যুক্তির চেয়ে আবেগই বেশী স্থায়ন পেয়েছে। আদালতে আবেগের কোন মূল্য নাই। বিচার ফয়সালার জন্য চাই অকাট্য প্রমাণ যা তার বক্তব্যে অনুপস্থিৎ ছিল এবং সে কোন প্রমাণ পত্রও উপস্থাপন করতে পারেনি।
পক্ষান্তরে সরকার পক্ষের আইনজীবী জনাব ইমরুল কায়েস বটপুরির প্রত্যেকটা কথাই ছিল যৌক্তিক এবং তার উপস্থাপিত ডকুমেন্ট গুলোও ছিল প্রমাণ সাপেক্ষ। বিশেষ করে মুন্সি গনঞ্জের শ্রীপুর থানা পয়েন্টের যে স্থানে শাকীলের গাড়িতে আগুণ দেয়া হয়েছিল সেখানে সাদী সাইয়্যেদের পুস্থিতির যে ভিডিও ক্লিপ তিনি উপস্থাপন করেছেন তা ছিল এই মামলার সঠিক রায় নির্ধানের ক্ষেত্রে অথেন্টিক দলিল। আদালত তার উপস্থাপিত ডকুমেন্ট যাচাই বাছাই করে আসামী সাদী সাঈদকে শাকিল হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বলে প্রমাণ পেয়েছে।
পুলিশ অফিসার শাকিল হত্যায় সাদী মোহাম্মদ সাইয়্যেদের সম্পৃক্ততা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানীত হওয়ায় তাকে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত করা হল।
আদালতের কার্য ক্রম আজকের মত এখানেই সমাপ্ত!
রায় শুণে সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পরল, সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য, আপন ভাইয়ের মৃত্যুতেও মানুষ এমন ভবাবে দুঃখ করেনা যেমনটা করছে সাদীর বন্ধুরা এই রায় শুনে। কিন্তু সাদী? সদী দাড়িয়ে আছে অটল অবিচল পাহাড়ের মত দৃঢ়তা নিয়ে! কারণ সে যে এক বীর যোদ্ধা, সাহসী সৈনিক। আর সাহসী সৈনিকেরা পরাজয়ে ভয় পায়না, মিথ্যার সাথে আপোষ করেনা। সত্য বলতে পিছ পা হয়না তাইত নিজের মৃত্যু দন্ডের রায় শুনেও নিশ্চিন্তে আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজের নির্দোষ হওয়ার দাবী দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা করছে!
বিচারকগণ এজলাস ছেড়ে চলে গেলে পুলিশ এসে সাদীকে জেলখানার উদ্দেশ্যে নিয়ে চলে যায়। যেতে যেতে সাদী আইনজীবী শায়লা ও অভিভাবক আমজাদ শেখ সাহেবকে আপীল করার পরামর্শ্ব আর বন্ধুদের ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর সিদ্ধন্তের উপর খুশি থাকার পরমর্শ্ব দেয়ে যায়।
- ===========৩১
বিষয়: সাহিত্য
১৫৯৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
আইনের রশিতে কেউ বাঁধা পরলে মুক্তি কি হসজে মিলে?
ধন্যবাদ।
বাহার ভাই।
স্বাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত তেমনটাইত রায় দিয়েছে। মুক্ত হওয়ার জন্য সাদীকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে যে ভিডিও ক্লিপের ভিত্তিতে এই রায় সেই যুবককে খুজে বের করতে হবে। শায়লা কি পারবে তাকে খুজে বের করতে?
না হলে লেখকের ফাসী হবে -----
ভাইয়া আপনি সব কাজ ছেড়ে লেখক হয়ে যান অনেক ভাল লেখক হবেন । ইনশা আল্লাহ !
তোমার পরামর্শ্ব গ্রহণ করার তাওফিক আল্লাহ্ যদি দেন তাহলে আমি অবসর জীবনের সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাতে চেষ্টা করব ইনশা'আল্লাহ।
ধন্যবাদ আপু, আল্লাহ্ তোমাকে ভালো রাখুন সুখে রাখন।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন