ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (২৯'তম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৮ জুন, ২০১৫, ০১:০৭:৪৭ দুপুর

ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (২৯'তম পর্ব)

- ভাইয়া আপনাকে দেখছি। আপনার চেহারার সাথে আমার চেহারা মিলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আপনি আমার আপন ভাই। আমি নিশ্চিৎ, আপনি আমার আপন ভাই না কিন্তু যদি সত্যিই আমার কোন বড় ভাই থাকত তাহলে আপনার মতই হত।

- পাগল কোথাকার, চল আগে নামায পড়ি তার পড়ে কথা হবে। আপাতত আমরা যেহেতু একই রুমের বাসিন্দা তখন অনেক গল্প হবে, জীবনের গল্প, দেশের গল্প, রাজনীতির গল্প।

- ===========২৯

এক সপ্তাহের চিকিৎসায় সাদী এবং শরিফ মোটামুতি সুস্থ্য হয়ে উঠলে দুজনই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ওয়ার্ডে চলে যায়। সাদীকে ছাত্র সমিতির নেতা কর্মীরা তাদের ওয়ার্ডে নিয়ে গেল। জেলের মধ্যেও ছাত্র সমিতির নেতা কর্মীদের এই ভ্রাতৃত্ব বোধ শরিফকে বেশ নাড়া দিল। মুক্ত জীবনে যারা শরিফের কথায় ওঠবস করত তেমন নেতা কর্মীরাও শরিফকে একটা বারের জন্যও জিজ্ঞেস করলনা সে কেমন আছে! পক্ষান্তরে সাদীর সহকর্মীরাই বরং নিজেদের ওয়ার্ডে জায়গা সংকুলান না হবার সম্ভাবনা থাকার পরেও শরিফকে আমন্ত্রণ জানাল!

বিগত একটা সপ্তাহ সাদীর সাথে থেকে শরিফের এই বিশ্বাস জন্মেছে যে ছাত্র সমিতির ছেলারা কারো শত্রু হতে পারেনা বরং এরা অজাত মিত্র। আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর উম্মতের মনে হয় এটাই আসল রূপ। হায় দুনিয়ার মানুষ গুলো যদি সবাই সাদী ভাই আর ছাত্র সমিতির ছেলেদের মত হত তাহলে কতই না ভালো হত।

সাদী ওয়ার্ডে আসার পর, ওয়ার্ড গুলোর একটা গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমেই সে ছাত্র সমিতির নেতা কর্মীদের নিয়ে জেলখানার ভিতরে একটা প্রিচ্ছন্নতা অভিজান চালিয়েছে। জেলের পরিবেশ এখন বাহিরের পরিবেশের চেয়েও উন্নত হয়েছে। তাদের দেখাদেখি অন্যরাও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেটা ঘটেছে সেটা হলে এখন আর কেউ নতুন আমদানীর উপর হাত তুলেনা বরং সবাই সাদরে তাদের গ্রহণ করে। প্রত্যেক দিনই যেহেতু নতুন করে আমদানী হয় তাই রাতের খাবেরের একটা অংশ তারা নতুন মেহমানদের জন্য রেখে দেয়। বাহির থেকে যে যত ভিতি নিয়েই জেলে আসুকনা কেন ভিতরের পরিবেশ আর আতিথেয়তা দেখে সব ভুলে যায়।

প্রথম দিনই জেলার সাহেবের দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়ায় সাদী যত দিন হাস্পাতালে ছিল ততদিন ফোন করে তার খবর নিয়েছেন। ওয়ার্ডে আসার পর নিজের অফিসে ডেকে নিয়ে সাদীর সাথে মত বিনিময় করেছেন। সাদীর গৃহীত পদক্ষেপে যারপরনায় জেলার সাহেব বেশ খুশি। সামর্থের মধ্যে থাকলে জেল কোডের আওতায় সাদীর যেকোন যৌক্তিক দাবী জেলার সাহেব পুরা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। পরের দিন থেকেই সবার খাবারের মান বেড়ে গেছে দেখে, সবাই বেশ আশ্চর্য হয়েছে। এত দিন যা হয়নি সাদী আসার সাথে সাথেই তা হওয়ায় সবাই সাদীর উপর বেশ খুশি। আর সরকারী ও বিরধী দলের কয়েকজন যারা জেলের ভিতরেও নানাবিধ অনৈতিকতার সাথে জড়িত ছিল তার প্রমাদ গুনল। মনে মনে এই নতুন আপদ দূর করার জন্য বদ্ধপরিকর হল।

জেলার সাহেবের সহযোগিতায় বন্ধী সাদী এখন জেলখানার মধ্যে মুক্ত পাখি। সে ইচ্ছা করলেই যে কোন ওয়ার্ডে যেতে পারে। এই সুযোগে সাদী জেলের মধ্যে দাওয়াতী কাজ শুরু করে দিয়েছে। তার আফসোস হচ্ছিল জেলে আরো আগে আসেনি বলে।

সাদীর প্রচেষ্টায় দুই একজন হিংসুটে ছাড়া প্রায় সকল বন্ধীদের মধ্যেই একটা ভ্রাতৃত্বের ভাব বিরাজ করছিল। সরকারী দলের বন্ধীদের সে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যদি তারা নতুন আমদানীর উপর অপ্রিতিকর আচরণ করে তাহলে দিন দিন যখন মুক্তি পেয়ে তাদের সংখ্যা কমে যাবে আর বিরোধীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে তখন কি হবে? তখন কি তাদের দলের নেতা কর্মীরা এমন আক্রমণের শিকার হবেনা, যেটা তারা এখন করছে? এমনও হতে পারে যে এখন যারা অতি উৎসাহের সাথে অপকর্মটি করছে তাদের মুক্তিই সবার শেষে হবে, আর শেষের দিন গুলিতে তারা নিয়মিত আপ্যায়িত হবে।

সাদীর বক্তব্য সবার মধ্যে টনিকের মধত কাজ করল। যারা এত দিন অতি উৎসাহী ছিল তারাও চুপসে গেল। সাদী তাদের এধারনাও দিতে সক্ষম হয়েছে যে সকলেরই একই পরিচয় আর তা হল তারা সকলেই মুসলমান আর বাংলাদেশী। একই সূত্রে তারা পরস্পর পরস্পরের ভাই।

প্রতিদিন সকালে পরিষ্কার প্রিচ্ছন্নতা অভিজান, বিকেলে খেলাধুলা, সন্ধ্যায় লকাপের পর নিজ নিজ রুমে ইতিহাস ঐতিহ্য আর ইসলামী রেনেসার গল্প, যাদের পরীক্ষা সন্নিকটে তাকের পাঠদান আর প্রতি শুক্রবার মসজিদে জুমার খুতবার আগে কুর’আন হাদীসের দার্স। যেভাবে কার্যক্রম চলছে এভাবে চলতে থাকলে কয়েক মাসের মধ্যেই জেলের মধ্যে ছাত্র সমিতির বিপ্লব ঘটে যাবে।

সবাই যখন নতুন স্বপ্নে বিভোর, সাদীকে কেন্দ্র করে সবার যখন পদাচরনা ঠিক তখনই একদিন হঠাৎ সাদীর ডাক পড়ে গেল। কোন ফাকে যে একটা মাস চলে গেছে কেউ টেরই পায়নি। আজ সাদীর মামলার রায় হওয়ার দিন তাই তাকে আদালতে যেতে হবে।

- ===========৩০

বিষয়: সাহিত্য

১৩১২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

326583
১৮ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:৪৮
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : ভালো লাগলো পড়ে । অনেক ধন্যবাদ
১৮ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৫
268952
আবু জারীর লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
আল্লাহ্‌ আপনাকে ভালো রাখুন।
326589
১৮ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:১৫
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : মামলার রায়টা যেন সঠিক হয়, সেই দোয়া করছি...
১৮ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৬
268953
আবু জারীর লিখেছেন : প্রচলিত আদালত গুলোতে রায় হয় স্বাক্ষি প্রমাণের বিত্তিতে সেখানে হাকিকত যাই হোকনা কেন।
ধন্যবাদ দাদা।
326596
১৮ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:২৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, এমন জাগায় এসে থামলেন. পাক্কা ঐপন্যাসিক মনে হয়। যেন আলতামাসের আত্মীয়। আফসোস রয়ে গেল।
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব..... চাই.......
১৮ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৮
268954
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম'আসসালাম
সরমিন্দা করলেন ভাই।
দুয়া করবেন যেন সফল ভাবে পরের পর্ব গুলো লিখতে পারি এবং তাতে কিছু পজেটিভ মেসেজ দিতে পারি।
ধন্যবাদ।
326673
১৯ জুন ২০১৫ রাত ০১:৪০
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : অদ্ভুত সুন্দর, যদিও সবগুলো পড়িনি...।
১৯ জুন ২০১৫ সকাল ০৭:৩৪
269030
আবু জারীর লিখেছেন : ধান্যবাদ বাহার ভাই।
326692
১৯ জুন ২০১৫ রাত ০৪:১৩
আফরা লিখেছেন : ৩০------ কবে আসছে ভাইয়া ।
১৯ জুন ২০১৫ সকাল ০৭:৩৫
269031
আবু জারীর লিখেছেন : আজই সম্ভাবনা আছে ইনশা'আল্লাহ!
326739
১৯ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:০০
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ভাইয়া! পরের পর্ব তাড়াতাড়ি পোস্ট করুন! এই রমাদ্বানে অনেক ব্যস্ততার পরও নিজে না লিখলেও আপনার লেখাটা না পড়ে পারি নাই! তাই বলবো প্লিজ তাড়াতাড়ি করুন.................। অনেক ধন্যবাদ
২০ জুন ২০১৫ রাত ০৩:৩৯
269105
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম'আসসালাম। রমাদান কারীম।
এই রমজানে তো বিরতি নিতে চেয়েছিলাম।
ঠিক আছে আপু আপনি যখন হুকুম করেছেন তখন অমান্য করি কিভাবে?
336774
১৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:৩৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আল্লাহই জানে কি আছে সাদীর ভাগ্যে।
২০ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৬
278836
আবু জারীর লিখেছেন : দেখা যাক কি আছে তার ভাগ্যে ?
ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File