ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (২৮'তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৭ জুন, ২০১৫, ০৭:৫৭:৫৮ সকাল
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (২৮'তম পর্ব)
লোকটার প্রতি শরিফের কেমন যেন শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হল, খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকল। আজানের শব্দে সাদীরও ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং চোখ মেলতেই সে শরিফকে তার বেডের পার্শ্বে বসে আছে দেখতে পেল।
- ===========২৮
- আসসালামু’আলাইকুম।
- ভাই আপনি কোন জেলা থেকে এসেছেন?
- তা বলব, কিন্তু আপনিত সালামের জবাব দিলেন না? আপনার ফাইলে নাম দেখলাম শরিফ মাহমুদ মোল্লা।
- সরি ভাই, আপনি কি আমাদের দেলের ক্যাডার না?
- দেখুন আমরা কে কোন দলের সেটা বড় প্রশ্ন না। প্রশ্ন হল আমরা সবাই মুসলমান। আর সালাম দেয়া মুসলমাদের সুন্নত, দলের সুন্নত না।
- আসলে কি জানেন? ছোট্ট বেলায় মক্তবে পড়ার সময় সালাম দেয়া শিখেছিলাম এবং স্কুল জীবনে ভদ্র ছেলে হিসেবেই পরিচিত ছিলাম কিন্তু কলেজে পা রেখেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যাই, তার পর থেকে কাউকে আর সালাম দেয়া হয়নি। তাই কিনা অনভ্যস্ত হয়ে পরেছি।
- হুম! বুঝতে পেরেছি। আমার পরিচয় আমি মুসলমান আর আল্লাহ্ প্রিতটি মুসলমানকেই কিছু দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিগত ৭/৮ বছর যেমন সরকারী রাষানলে পড়ে নির্যাতিত হয়েছি তেমনি বর্তমানেও বিভিন্ন কুটচালে ফেসে গিয়ে নির্যাতন ভোগ করছি।
- দুঃখিত ভাই। আমি আপনাকে আমাদের দলের লোক ভেবেছিলাম।
- না, না। দুঃখ পাওয়ার কিছু নাই। দল যাই হোক আমারা সবাই মুসলমান, আমরা সবাই বাংলাদেশী।
- তা তো ভাই ঠিকই, মূল জিনিসে আমাদের মিল থাকার পরেও আমরা আজ বহুধা বিভক্ত।
- গুড, এইতো বুঝতে পারছেন। আচ্ছা চলুন একত্রে জোহরের নামাযটা পড়ে নেই।
- নামায?
- হ্যা নামায!
- আসলে কি জানেন আমার কাপড় পাক নাই তাছাড়া অনেকদিন থেকে নামায পড়া হয়না তাই নিয়ম কানুনও ভুলে গেছি। আগে সুস্থ্য হয়ে নেই তার পর পাক পবিত্র হয়ে আপনার সাথে নামজ পড়ব।
- আর যদি সুস্থ্য না হন? আল্লাহ্ না করুণ, সুস্থ্য না হয়ে বরং যদি বেনামাজি অবস্থায় মৃত্যু হয় তাহলে আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবেন?
- এমন করে তো খনও ভাবি নাই। এই অপবিত্র অবস্থায় নামায পড়লে গুনাহ হবে না?
- দেখেন ভাই, আল্লাহ্ তাঁর বান্দার উপর এমন বোঝা চাপান না যা সে বইতে পারবেনা। আর আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও আল্লাহ্ অবগত আছেন। এই অবস্থায় নামায পরলেও আল্লাহা আমাদের নামাযকে কবুল করবেন।
- তাই নাকি? কিন্তু আমরা তো ভাবতাম টুপি ছাড়াই নামাজ হয়না আর আপনি বলছেন অপরিষ্কার কাপড়েও নামায হবে!
- হ্যা, এটাইতো আমাদের সমাজের প্রচলিত ভুলগুলোর মধ্যে একটা অন্যতম ভুল। নামায পড়ার জন্য টুপি শর্ত নয়। শর্ত ছত্র ঢাকে এমন পবিত্র কাপড়। আর পুরুষের ছত্র হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত ঢাকা। কিন্তু পবিত্র কাপড় যোগার করতে না পারলে যে কাপর আছে তা অপবিত্র হলেও নামায পড়ে নিতে হবে। কোন অযুহাতেই মানায ছাড়া যাবে না।
- আচ্ছা ভাই, কিছু মনে করবেন না। আপনি কি ছাত্র সমিতির কেউ? আপনি যদি ছাত্র সমিতির লোক হয়ে থাকেন তাহলে একটু অপেক্ষা করুণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবেন ছাত্র সমিতির ছেলেরা আমাকে দেখতে আসবে। ওরাও আমাকে নামায পড়তে বলেছি কিন্তু আমিই গুরুত্ব দেইনি। তবে আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি ভুলের মধ্যে আছি।
- তা আপনি ভাবতে পারেন।
শরিফের গলাটা ধরে আসল, স্কুল জীনবে সে ছাত্র সমিতির দাওয়াত পেয়েছিল কিন্তু কবুল করেনি। যদি কবুল করত তাহলে তার জীবনটাও এদের মত পবিত্র হতে পারত।
- কি ব্যাপার শরিফ কিছু ভাবছেন মনে হচ্ছে?
- হ্যা ভাই ভাবছি। কেন আমি ভুলের পথে পা বাড়িয়েছি? আলেম পরিবারের সন্তান হয়েও কেন যে ধর্মহীন সেকুলার দলের পাল্লায় পড়ে নিজের জীনবটাই বরবাদ করলাম বুঝতে পারছিনা।
- আচ্ছা ঠিক আছে, ও নিয়ে এখন ভেবে লাভ নাই। চলুন আগে নামায পড়ে আসি।
- হ্যা চলুন।
মসজিদে গিয়ে দুজন অযু করছিল। শরিফ ওজুখানার টেপে আর সাদী ভ্যাসিনে। অযুকরার জন্য সাদী চোয়ালের ব্যান্ডেজটা খুলে ফেল্লে তার মায়াবী নূরানী চেহারাটা পুরাপুরি প্রকাশিত হয়ে পড়ে। অজু শেষে পূর্ণ চাদের চেহারায় শরিফ সাদীকে দেখে দারুণ ভাবে অভিভূত হয়। ভেসিনের আয়নার সামনে গিয়ে সাদীর সাথে নিজের চেহারা মিলিয়ে দেখে। নিজের চেহারা সাথে সাদীর এমন মিল যে দুজনকে পার্থক্য করাই দায়। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে সাদীর মুখের ছোট্ট ছোট্ট দাড়ির ফাঁক গলিয়ে একটা বেহেস্তি জ্বোতি খেলে যাচ্ছে আর শরিফের চেহারায় কেমন যেন একটা রুক্ষ ভাব বিরাজ করছে।
- কি হল এমন হা করে কি দেখছেন?।
- ভাইয়া আপনাকে দেখছি। আপনার চেহারার সাথে আমার চেহারা মিলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আপনি আমার আপন ভাই। আমি নিশ্চিৎ, আপনি আমার আপন ভাই না কিন্তু যদি সত্যিই আমার কোন বড় ভাই থাকত তাহলে আপনার মতই হত।
- পাগল কোথাকার, চল আগে নামায পড়ি তার পড়ে কথা হবে। আপাতত আমরা যেহেতু একই রুমের বাসিন্দা তখন অনেক গল্প হবে, জীবনের গল্প, দেশের গল্প, রাজনীতির গল্প।
(চলবে) .............
বিষয়: সাহিত্য
১৩৮৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
গল্পের মাঝে মানুষকে কিছু শেখাতে পারলে সেটা কাজে লাগে।
ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকুন।
ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকুন।
লেখার অত যোগ্যতা আমার কোথায়, পর্ব গুলো লেখার আগে মহান মণিবের দরবারে একটু ধর্ণা দিয়ে নেই। আলহামদুলিল্লাহ্ সুফল পাচ্ছি। লেখার আগে যা ভাবি লেখা শেষে দিখি অন্য কিছু। ২৬তম পর্বে একটা পজেটিভ রায়ের মাধ্যমে গল্পটা শেষ করেছিলাম।
আপনার একটা মন্তব্য গল্পের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিয়েছে।
জ্ঞানি মানুষের বেশী বলতে হয়না তাদের ইঙ্গিতেই অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়।
কোন লেখা শুরু করার আগেই কাউকে মেসেজ দেয়া একটা অস্বস্থিকর কাজ কিন্তু সাহস করে আপনি সহ একান্ত তিনজনকে মেসেজ দিয়েছিলাম। আপনি একাই সারা দিয়েছেন এবং অব্যহত ভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন সে জন্য আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন