ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (২৭'তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৫ জুন, ২০১৫, ০৮:৩৭:৫৬ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (২৭'তম পর্ব)
- অর্ডার অর্ডার, আদালত এক মাসের জন্য মূলতবি করা হল। শীতকালীন ছুটি শেষে জানুয়ারীর ২৫ তারিখে আদালত আবার বসবে এবং সেই দিন এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
- ===========২৭
সাদীর অবস্থা খুবই নাজুক, হাটা তো দূরের কথা নিজের পায়ে ভর করেই দাড়াতে পারছিলনা। পাণ্ডুর মুখখানি দেখে শায়লা এবং আমজাদ সাহেবের হৃদটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল। তারা দুজন ছুটে গেলেন বিচারকের খাস কামড়ায়। আসামীর অবস্থার কথা বিবেচনা করে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং পুরপুরি সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে স্থানান্তর না করার আদেশ প্রার্থনা করলে তা মঞ্জুর হয়।
এক সপ্তাহ চিকিৎসার পড়ে সাদীর অবস্থা কিছুটা উন্নত হয়েছে, লাঠিতে ভর দিয়ে দাড়াতেও পারছে কিন্তু এখনও হাটা চলার উপযুক্ত হয়নি। প্রসাশনের বিভিন্ন রন্দ্রে রন্দ্রে বিগত সরকারের নিয়গ দিয়ে যাওয়া দলীও কর্মীরা এখনও বহাল তবিয়তে, তাই সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের দাপট কমেনি। আগে তারা প্রকাশ্যে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করত আর এখন করছে নিরবে।
পুরপুরি সুস্থ্য হওয়ার আগেই সাদীকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হল। সাদী সাইয়্যেদকে কারাগার কর্তিপক্ষ গ্রহণ করে আমদানীতে পাঠিয়ে দিল। নতুন আমদানী এসেছে বলে কয়েদীদের মধ্যে পক্ষ বিপক্ষ সবার কাছেই খবর পৌছে গেছে।
ইদানিং দেশের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও জেলের ভিতরের পরিস্থিতি বেশ অশান্ত হয়ে উঠেছে, যার নিয়ন্ত্রণ বলতে গেলে পুলিশের আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে। প্রায় প্রতি দিনই সাবেক সরকারী দল বা বর্তমান বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা জেলে আসছে। তাদেরকে যখন গ্রেফতার করা হচ্ছে তখনই তাদের কাবু করার জন্য পুলিশ প্রয়জনীয় ডোজ দিচ্ছে। থানায় হাজির করে নিজেদের চাহিদা মত উপরি না পেলে আরও কয়েক ডোজ দিয়ে কোর্টে চালান করছে, আর কোর্ট তাদের বেল বাতিল করে যখন কারাগারে পাঠাচ্ছে তখন সাবেক বিরোধী বা বর্তমান সরকারী দলের যারা এখনও বন্ধি আছে তারা পাইকারী দরে আর এক দফা মেহমানদারী করছে। এতে অনেকেই মারাত্বক ভাবে আহত হচ্ছে এমনকি কাউকে কাউকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালেও পাঠাতে হচ্ছে।
ছাত্র সমিতির যারা আছে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করছে কিন্তু সব সময় কুলিয়ে উঠতে পারছেনা। কিছুদিন আগে শরিফ নামের একটা ছেলেকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কারা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সে নাকি মুন্সি গঞ্জের ত্রাস ছিল। অবশ্য চেহারা সুরতে বেশ ভদ্রতার ছাপ। হয়ত খান্দনী পরিবারের বখে যাওয়া যুবক হবে। এখনও পুরপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেনি বলে কারা হাসপাতালেই অবস্থান করছে। ছাত্র সমিতির ছেলেরা রোগী দেখার সুন্নত এবং দাওয়াতি কাজের ফরয আদায় করার জন্য তার সাথে দেখা করা এবং খোজ খবর নেয়ার জন্য প্রায়ই হাসপাতালে যাচ্ছে। তবে তার সাথে রাজনীতিক ব্যাপারে এখনও কোন আলোচনা হয়নি।
সাদী সাইয়্যেদকে হুইল চেয়ারে করে আমদানীতে নিয়ে আসার সাথে সাথেই বিরধী দলের কর্মী ভেবে সরকারী দলের কাপুরুষ ডেডিকেটেড কর্মীরা তার উপর ঝাপিয়ে পরল। যরা বিগত সরকারের এমলে ভেজা বেড়ালের মত গর্তে লুকিয়ে ছিল, সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে জেলখানার ভিতরেই তারা যেন এক একটা নেকড়ে হায়ানায় পরিণত হয়েছে। জেল থেকে ছাড়া পেলে এরা যে কি করে আল্লাহ্ই ভালো জানেন। ছাত্র সমিতির কর্মীরা যথা সময়ে উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার না করলে হয়ত এখানেই তার সলিল সমাধি হতে পারত।
বিরধি দলের কর্মী মনে করে ছাত্র সমিতির ছেলেরা কয়েদীকে উদ্ধার করলেও পরক্ষণেই তাদের অনেকেই সাদীকে চিন ফেলে। সাদীকে চিনতে পেরে এবার সবাই সরকারী দলের ভেজা বেড়াল, হালে ফেউ হওয়া হায়েনা গুলোর উপর চড়াও হয়, সুযোগ পেয়ে বিরধী দলের কর্মীরাও তাদের সাথে যোগ দিয়ে ঝাল মেটাতে চাইল। মূহুর্তেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাদী সাইয়্যেদের নির্দেশে ছাত্র সমিতির ছেলেরা রনে ভঙ্গ দিলে অনাকাঙ্ক্ষিত রক্তক্ষয়ি এক সংঘর্ষ থেকে সবাই মুক্তি পেল। যে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেল কর্তৃপক্ষ গলদঘর্ম হচ্ছিল তা সাদীর একটা নির্দেশেই বন্ধ হয়ে গেল! যা জেলার সাহেবেরও দৃষ্টিও এরাল না।
জেলার সাহেবের নির্দেশে সাদীকে সরাসরি জেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে আগে থেকেই বিরোধী দলের ক্যাডার শরিফ চিকিৎসাধীন ছিল। শরিফের রুমেই শুধু একটা সিট খালি ছিল তাই সাদীকেও ঐ রুমেই রাখা হল। সাদী যখন রুমে প্রবেশ করল তখন শরিফ বেঘোরে ঘুমচ্ছিল। প্রথম দৃষ্টিতেই সাদীর কাছে শরিফকে মায়াবী চেহারার বখে যাওয়া খান্দানী যুবক বলে মনে হল। ছেলেটার চেহারার সাথেও নিজের চেহারার দারুণ মিল খুজে পেল। মোট কথা প্রথম দৃষ্টিতে ছেলেটার প্রতি সাদীর কেমন যেন মায়া জন্মে গেল। সাদীর মনে এমন ভাবের উদয় হল যে তার যদি একটা ভাই থাকত তাহলে তার চেহারও হয়ত এমনই হত।
জোহরের আজান শুনে শরিফের ঘুম ভাংলে, সে তার পার্শ্বের সিটে হাত পায়ে ও মুখে ব্যান্ডিজ ওয়ালা আর এক আসামীকে দেখতে পেয়ে হতচকিত হয়ে পর্য বেক্ষন করতে লাগল। সে ধরেই নিয়েছিল নতুন আগন্তকও তার মতই কোন জেলার ক্যাডার হবে। ইদানিং জেলখানায় যাদের আগমন ঘটছে তারা প্রায় সকলেই তার দলীয় নেতা কর্মী বা পতিত ক্যাডার। চোয়ালের ব্যান্ডেজ বাদে সাদীর চেহারার বাকী যে অংশ দেখা যাচ্ছে তাতে শরিফ তাদের দলের নেতা কর্মী বা পতিত ক্যাডারদের চেহারার কোন মিল খুজে পাচ্ছেনা যেমনটা তার চেহারার সাথে তার দলীয় ক্যাডারদের চেহারার মিল নাই।
লোকটার প্রতি শরিফের কেমন যেন শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হল, খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকল। আজানের শব্দে সাদীরও ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং চোখ মেলতেই সে শরিফকে তার বেডের পার্শ্বে বসে আছে দেখতে পেল।
(চলবে) .............।
বিষয়: সাহিত্য
১০৩০ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ মডু ভাই।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপু।
ইনশা'আল্লাহ তারাতারিই দেয়ার চেষ্টা করব। পারলে কালিই। রমজান সমাগত তাই দ্রুত শেষ করতে পারলে ভালো।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।
সাদীর জীবনের কঠিন অধ্যায়টির সাথে পরিচিত হলাম! ন্যায় বিচার কি আদৌ পাবে?
আমার কাছ এপুরো সিরিজটা খুব ভালো লাগছে, আশাকরি আপনি হতোদ্যম হবেন না! আর পোস্ট স্টিকি হওয়া মানেই কিন্তু লিখা রমান ভালো তা প্রমান করে এ ধারনা ঠিক নয়!আপনা রলিখা ভালো মডারেশনের চোখে পড়ে নি হয়তো!
শুকরিয়া!
এ দুনিয়ায় ন্যায় বিচার পাওয়া আসলেই কঠিন। বিচারের বানি নিবৃতে কাঁদে আর অবিচার দুনিয়াকে দাপিয়ে বেড়ায়।
গল্পের মাধ্যমে ২/১টা মেসেজ দেয়াই আমার উদ্দেশ্য, জানিনা এ পর্যন্ত কোন মেসেজ দিতে পেরেছি কিনা।
চেষ্টা করছি আপু গল্পটার সফল সমাপ্তি টানার, দুয়া করবেন।
শুরুর দিকটা যত সহজে লিখেছি শেষের দিকটা মিলিয়ে আনতে কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
আশা করি আল্লাহর মেহেরবানিতে শেষ করতে পারব এবং শেষে একটা গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ থাকবে। এমন মেসেজ যা এ পর্যন্ত কেউ চিন্তা করেছে বলেও মনে হয়না। বিষয়টা গতকালই মাথায় এসেছে।
নিয়িমিত সাথে থেকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আন্তরিক মুবারকবাদ আপু।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন