ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (২৬'তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৪ জুন, ২০১৫, ০৯:০৬:১০ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (২৬'তম পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ- অর্ডার, অর্ডারঃ আজকের আদালত এখানে মুলতবি করা হল। আগামিকাল সকাল ১০টায় আদালত আবার পুনরায় বসবে। সকলকে ধন্যবাদ।
- ===========২৬
পরের দিন পুনরায় আদালত বসল। আজ সরকার পক্ষের আইন জীবীর যুক্তি উপস্থাপনের কথা। সকারী পিপি হিসেবে যুক্তি তর্কে অংশ নিতে মিস্টার ইমরুল কায়েস বটপুরী দৃঢ় পদে আসামির কাঠাগড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বেঞ্চের বিচারকদের মত মিস্টার বটপুরীও বিগত সরকারের নিয়োগকৃত পিপি।
- মাননীয় আদালত, আমি শাকিল হত্যা মামলার আসামি নর ঘাতক এবং বিগত সরকারের আমলে জ্বালাও পোড়াও সহ অনেক মামলার আসামি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রাস হিসেবে খ্যাত, আসামির কাঠগড়ায় দাড়ান, আসামিকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। পুলিশ অফিসার শাকিল হত্যার মোটিভ উদ্ঘাটনে আশা করি সহায়ক হবে।
- অনু মতি দেয়া হল।
- জনাব আপনার নাম কি?
- সাদী সাঈয়্যেদ।
- মি লর্ড, নোট ইট ডাউন। যে ব্যক্তি নিজের নাম বলতেই মিথ্যার আশ্রয় নেয় তারা মুখে যতই ইসলামের কথা বলুক না কেন প্রকৃত পক্ষে তারা ধর্ম ব্যবসায়ী। বরং অসত্য বলাই তাদের ধর্ম!
- অব্জেশান ইয়োর ওনার। মাননীয় পিপি সাহেব অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করে আসামিকে হেয় করছে এবং মানুষিক যন্ত্রনা দিচ্ছে যা কাম্য নয়।
- মি লর্ড, প্লিজ লেট হার কীপ কোয়াইট। লেট নট হার ডিস্টার্ভ মি।
- অব্জেকশান সাস্টেইন।
- মি লর্ড, এই ফাইলে আসামির এস এস সি ও এইচ এস সির সার্টিফিকেট আছে যাতে আসামির নাম স্পষ্ট অক্ষরে সাদী মোহাম্মদ সাইয়্যেদ লেখা আছে।
- মিস্টার সাদী মোহাম্মদ সাইয়্যেদ আপনি এস আই শাকিল এর বিবাহের দিন অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন না, তাই না?
- সত্য নয়। আমি যাবতীয় দায়িত্বে ছিলাম।
- মি লর্ড, নোট ইট ডাউন। আসামি এবারও সত্যের অপলাপ করেছে। সে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিৎই ছিলনা। যে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়েছিল তাতে দেখাযায় রাসেল নামের এক ভদ্রলোক সেটা ভাড়া করেছে। বুকিং রেজিস্টারে রাসেল নামের সেই ভদ্রলোকের নাম ও দস্তখত আছে যা এই ফাইলে আছে। শুধু কি তাই? বিয়ের অনুষ্ঠানের যে ভিডিও রেকর্ড আমাদের হাতে এসেছে তাতেও আসামি সাদীর উপস্থিতি নাই। মিস শায়লার দাবী মত সাদি সাইয়্যেদ সেদিন নাকি বিবাহ অনুষ্ঠানের দায়ীত্ব পালনরত অবস্থায় ঢাকার কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত ছিল? যদি তাই হয় তাহলে কমিউনিটি সেন্টার কেন রাসেল নামের যুবকের নামে ভাড়া করা হয়েছিল? কেন পুরা অনুষ্ঠানের ভিডিও রেকর্ডে এক মূহুর্তের জন্যও আসামির কোন উপস্থিতি নাই?
- মিস্টার সাদী মোহাম্মদ সাইয়্যেদ, শাকীলকে যে স্পটে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে সে স্পটে আপনি উপস্থিত ছিলেন এবং আপনার আদেশেই গাড়িতে আগুণ দেয়া হয়েছিল তাই না?
- সত্য নয়। সেদিন আমি সেখানে ছিলাম না অতএব গাড়িতে আগুণ দেয়ার নির্দেশ দানের প্রশ্নই উঠেনা।
- মি লর্ড, আগের প্রশ্ন গুলোর মত এই প্রশ্নেরও সত্য জবাব, আসামি দেয় নি। যেদিন এস আই শাকিল নিহত হয়েছে সেদিন আন্দোলন কারীদের সাথে আসামিকেও সেখানে দেখা গেছে। টিটিএন বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক পূণ্যশাহার রিপোর্ট ও ভিডিও চিত্রে আসামিকে সেখানে যুদ্ধাংদেহী অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। প্রমাণ হিসেবে সেই সংবাদের ভিডিও ক্লিপ উপস্থাপন করা হল।
- মি লর্ড আবেগ দিয়ে বিচার হয়না, বিচার হয় স্বাক্ষ প্রমানের ভিত্তিতে। আসামি পক্ষের তরুণী আইনজীবী শায়লা জামান মৌ যা বলেছেন তা সবই আবেগী কথা যার কোন ভিত্তি নেই। প্রতারণা যাদের স্বভাব তারা প্রতারণা করবেই। প্রতারকদের স্বাক্ষ আদালতে গৃহিত হতে পারেনা।
- এস আই শাকিলের বাবা নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা দাবী করে আদালতে সরকার পক্ষে স্বাক্ষ দেয়ার জন্য হাজীর হয়েও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ঘুড়ে দাড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই সাদী সাইয়্যদের সাথে তার তাত্মীয়তার সম্পর্ক হয়েছে। মি লর্ড, দুনিয়ায় অর্থের বিনিময়ে অনেক কিছুই হয়। অর্থ লোভ তাকে পুত্র শোক ভুলিয়ে দিয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহ আছে। আত্মীয়তা, লোভ ও প্রতারণার কারণে আদালতে তার স্বাক্ষ গৃহিত হতে পারেনা।
- মি লর্ড, আমি যা বলেছি তা সবই সত্য এবং প্রমাণও উপস্থাপন করেছি। আশা করি এই খুণিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিয়ে আদালত ন্যায় বিচারের অতীত গৌরব সমুজ্জ্বল রাখবে। ধন্যবাদ মাননীয় আদালত, ধন্যবাদ সকলকে, সত্যের জয় হোক।
উপস্থিত সাদীর বন্ধুদের হতাসা ঘিরে ধরেছে। সরকারী পিপির প্রতিটা কথাই যে অসত্য তা সবারই জানা কিন্তু প্রমাণের বেলায় তার সেই অসত্য কথাগুলোই সত্য মনে হচ্ছে! অর্ধ সত্য যে মিথায়র চেয়েও জঘন্য তা সাদী, শায়লা, শাকিলের বাবা সহ সাদীর বন্ধুরা বুঝতে পারছিলেন কিন্তু এই অর্ধ সত্য মিশ্রিত মিথ্যাকে তারা কিভাবে মিথ্যা প্রমাণ করবে সেটাই একটা বড় প্রশ্ন।
- অর্ডার অর্ডার, আদালত এক মাসের জন্য মূলতবি করা হল। শীতকালীন ছুটি শেষে জানুয়ারীর ২৫ তারিখে আদালত আবার বসবে এবং সেই দিন এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
(চলবে) ...............।
বিষয়: সাহিত্য
১৩৮৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
২৩নং পর্বটা আপনার মন্তব্যের প্রীত মন্তব্য দিয়েছিলাম। এখানে আবার দিচ্ছি।
- এই খুকি, আমি তোর কি হই জানিস তো। ছোট্ট হয়ে বড়দের সাথে বেয়াদবী। রাখ সময় মত এর বদলা নিব, তখন বুঝবি মজা, কেমন লাগে?
- যখনকারটা তখন দেখা যাবে, আগে ভাবিতো হও।
- ===========২৩
সরকার শেষ পর্যান্ত পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। মন্ত্রী এম্পিদের দূর্ণীতিবাজ আর দাঙ্গাবাজ গ্রুপটা ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছে। চামচা আর পাতি নেতাদের মধ্যে যারা দেশ ছেড়ে পালাতে পারেনি তারা গাঢাকা দিয়েছে। কিন্তু ১০ বছরের যন্ত্রনা জনগণ সহজেই ভুলতে পারেনি। বিশেষ করে যারা গুম, খুন, ধর্ষনের শিকার হয়েছে তাদের ঠেকায় এমন শক্তি কার?
দাঙ্গা ফাছাদ বন্ধের জন্য জোট নেত্রীর পক্ষ থেকে বার বার বিবৃতি আসলেও নির্যাতিত জনগণকে কোন ভাবেই বাগে আনা যাচ্ছিলনা। আন্দলনের সময় ভয়কাতুরে যে সব নেতা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে ছিল তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে আগুনে ঘী ডালতে থাকল। ফলে রোষের অনলে অনেকেই জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে গেল।
এমন অরাজক পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশ যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে, তা স্বার্থপর নেতা পাতি নেতারা বুঝতে না পরলেও জোট নেত্রী ও বিশেষ করে দেশ প্রমিক জন কল্যাণ সমিতির নেতারা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। তাই দ্রহের এই আগুণ নেভানর দায়িত্বও পরল ছাত্র সমিতির উপর।
এত দিন যেই জালিমদের অত্যাচারে ছাত্র সমিতি ছিল দিসেহারা এখন সেই জালিমদের রক্ষা করার জন্য মজলুম ছাত্র সমিতিকেই আবারও কোমড় বেঁধে মাঠে নামতে হল!
যে সকল ছাত্র নেতারা বিগত সরকারের আমলে ভেজা বেড়ালের মত গা বাচিয়ে চলেছে তারাই যেন এখন এক একটা মূর্তিমান দানব!
ছাত্র সমিতি তথা সাদীরা যখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত তখন বিড়াল থেকে সিংহে পরিণত হওয়া সদ্য প্রসূত টাইগার গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে সাদীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে! যাহোক, জন কল্যাণ সমিতি ও ছাত্র সমিতির আপ্রাণ চেষ্টা আর জোট নেত্রীর সক্ত অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত মাস খানেকের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এল।
পরিস্থিতি পুরপুরি নিয়ন্ত্রণে আসলে, জাতীয় নির্বাচনের ইস্তেহার ঘোষিত হয়। সরকার পতন আন্দলনের সময় বিরোধী দলগুলো যতটা না ব্যাস্ত ছিল তার চেয়ে এখন বেশী ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে দল গুছিয়ে নির্যাচনের বৈতরণী পাড় হতে। আন্দোলনের ময়দানে যে সকল নেতাদের টিকিটিও খুজে পাওয়া যায়নি এখন তারাই সামনের কাতারে! দলের প্রতি নিজেদের আনুগত্ব প্রাকাশের জন্য মরহুম ও বর্তমান নেতা নেত্রীদের স্তুতি গেয়ে নিয়মিত কোরাস করছে, এমনকি গলা দিয়ে রক্ত পর্যন্ত ঝড়াচ্ছে! স্বর্থপর নেতা নেত্রীদের এমন আদিখ্যেতা দেখে সাদী ও আন্দলনে তার সহকর্মী বন্ধুরা মুখ টিপে হাসছে।
আন্দলন করেছে সাদীরা আর জোটের খাতিরে ফসল ঘরে তুলতে ব্যাস্ত আন্দলন বিমুখ স্বার্থপর নেতারা! এমতাবস্থা চুপ করে থাকলে আন্দলন থেকে অর্জিত সুফল জনগণের দোড় গোড়ায় পৌছবে না তাই সাদী আর তার বন্ধুরাও নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে আপন আপন কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরল। অবশ্য সাদী মাঝে একবার আমজাদ শেখ সাহেবের সাথে দেখা করে নির্বাচনের পরে বিয়ের কথা ভাবা যাবে বলে জানিয়ে এসেছে।
এক দিকে সাদী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যাস্ত, আর অন্য দিকে শায়লা তার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মধ্যে অবশ্য ফোনে কুশল বিনিময় হয়। শায়লাই সাদীকে ফোন দেয়। সাদী অবশ্য বিয়ের আগে এমনটা করতে কয়েকবার নিষেধ করেছে কিন্তু কে শোনে কার কথা?
নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক পূর্বেই শায়লার পরীক্ষা হয়ে গেছে, সামনে বাকী শুধু সাদীর নির্বাচনী পরীক্ষা। সেটা হয়ে গেলেই দুজনের শুভ পরিণয়। ভাবতেই শায়লা কেমন যেন একটা পুলক অনুভব করে।
দেখতে দেখতে নির্বাচনও যথারীতি শেষ। সাদীর সমর্থিত দল বাংলদেশ জাতীয় জন কল্যাণ সমিতি (বাজাক্স) আশানুরুপ ৫০টি সংসদীয় আসনে জয় লাভ করেছে। জোটবদ্ধ নির্বাচন হয়েছে বলে সরকারও হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। (বাজাক্স) থেকে পাঁচ জন কে ফুল মন্ত্রী করা হয়েছে, তার মধ্য আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আছে। সব মিলিয়ে সাদীর পোয়া বার। সম্ভাবনার সকল দুয়াড় গুলোই যেন সাদীর সামনে একটা একটা করে খুলে যাচ্ছে।
শায়লা এবং সাদী উভয়েই বারের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বারের পরীক্ষাটা শেষ হলেই শুভ কাজটা শেষ করে কর্ম জীবনে আত্ম নিয়োগ করা জন্য দুজনই যখন প্রস্তুত ঠিক তখনই ঘটল নতুন বিপত্তি।
ইনশা'আল্লাহ চলবে।
ইনশা'আল্লাহ।
ধন্যবাদ ভাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন