ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে (২৫'ত মপর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১১ জুন, ২০১৫, ১১:৩৭:২৩ রাত
মাননীয় আদালত, বাংলাদেশের ইতিহাসে আজকের দিনটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ইনশা’আল্লাহ। আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমাকে যুক্তি তর্কের সুযোগ দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ। আসামির পক্ষে কথা বলার আগে আমি একটা গল্প বলতে চাই যা এ মামলার মোটিভ হিসেবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
- ===========২৫
এক যুবক মাতৃভূমির টানে গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। বিজয়ের পরে সবাই যখন আখের গোছাতে ব্যাস্ত তখন সে আত্মনীয়গ করেছিলেন মানুষ গড়ার কাজে। সেই ভদ্রলোক মাদ্রাসা পড়ুয়া ছিল বলে রাজনৈতিক মাতপার্থক্যের কারণে তাকে দেশবিরোধী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে শেষ বয়সে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। এক পর্যায়ে দুঃখে কষ্টে তিনি দুনিয়া ছেড়েই চলে যান। বিধবা স্ত্রীর সাথে একটা ছেলে ও একটা মেয়েকে রেখে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সেই ছেলেটি টিউশুনি করে নিজের পড়াশুনার পাশাপাশি সংসারও চালাত। মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান হিসেবে ছেলেটা ছিল প্রতিবাদী। সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে সে এবং তার বন্ধুরা যখন আওয়াজ তুলে তখন রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে তার বিরুদ্ধে একে একে দশটি মামলা রজু করা হয়। ভাগ্যের ফ্যারে একদিন রাতে দেয়াল লিখনের সময় সে ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পরে। সে যখন এঙ্কাউন্টারের জন্য দোয়াদুরুদ পরে প্রস্তুত তখন একজন সদয় পুলিশ অফিসারের বিশেষ বিবেচনায় সে মুক্তি পায় কিন্তু তাকে তার টিউশুনিটি হারাতে হয়। কারণ যে পুলিশ অফিসার তাকে ছেড়ে দিয়েছিল তার মেয়েকেই ঐ ছেলেটা পড়াত। হায়াত ছিল বলেই আল্লাহর ইচ্ছায় পুলিশ পরিবারের অনুগ্রহে ছেলেটা মুক্তি পেয়েছিল, কিন্তু তার টিউশুনিটা চলে যাওয়ায় সে অকুল পাথারে পরে যায়। কিছুদিন পরে সেই পুলিশ অফিসার বক্ষাগাতে আক্রান্ত হলে সরকার তাকে অবসরে পাঠায়। অন্যদিকে ছেলেটি জীবন সংগ্রামে জয়ি হওয়ার জন্য কঠর সাধনায় আত্মনিয়গ করে। ফল হিসেবে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল’তে প্রথম শ্রণীতে প্রথম হয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে।
অন্য দিকে তার সেই ছাত্রী যে কিনা পুলিশ অফিসারের মেয়ে সেও ল’তে অনার্সে প্রথম শ্রনী লাভ করে। অসহায় পুলিশ অফিসার তার মেয়েকে নিয়ে যখন চিন্তিত তখন তার এক সহকর্মী নিজের পুলিশ ছেলের সাথে ঐ মেয়ের বিয়ে ঠিক করে। বিয়ে বলে কথা, বিশাল আয়োজন, কিন্তু মেয়ের পক্ষের এমন কেউ নাই যে এসব ঝামেলা দক্ষতার সাথে আঞ্জাম দিতে পারে। মেয়ের বাবা মায়ের পরামর্শ্বে সে তার সেই গৃহশিক্ষকের কাছে চিঠি লিখে যাতে সে এসে বিয়ের সব দায়িত্ব পালন করে। ছেলেটা চিঠি পেয়ে কাল বিলম্ব না করে তার মা বোন কে সাথে করে নিয়ে এসে বিয়ের সব কাজ আঞ্জম দেয়। বিয়ের কনে প্রস্তুত, কাজী প্রস্তুত শুধু বর আসার অপেক্ষা। কিন্তু এমন সময়ই ঘটে বিপত্তি। বরের গাড়ি ঢাকা মাওয়া রোডে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানা পয়েন্টে অবোধকরীদের আক্রমণের শিকার হয়। ঐ থানায়ই বর পুলিশ অফিসার, ওসির দায়িত্ব পালন করত। ভিড়ের মধ্যে তাকে দেখতে পেয়ে কর্তব্য কর্মের কারণে তার সাথে তৎকালীন সরকারদলীয় যে সকল ক্যাডারের মত পার্থক্য ছিল তারা তার গাড়িতে আগুণ লাগিয়ে দেয়, ফলে বর মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে মৃত্যুবরণ করে!
ঘটনা ঘটেছে মুন্সীগঞ্জে আর যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সে ছিল ঢাকায়, তাও আবার নিহত ব্যক্তির বিয়ের আয়োজনের দায়িত্বেরত। মামলা, নিহত ব্যক্তির পরিবার করেনি, করেছে তৎকালীন সরকার। তাই প্রকৃত খুণীদের পরিবর্তে আসামি করা হয়েছে রাজনীতিক বিবেচনায়। যাকে আসামি করা হয়েছে সেই আবার তার ছাত্রীর খাতিরে নিহতের লাশ কাঁদে বয়ে দাফন করেছে।
মাননীয় আদালত, এই আদালতের ইতিহাসে এমন কি কোন ঘটনা ঘটেছে যে আসামি একজন মেধাবী ছাত্র নেতা, আবার যেকিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল’তে প্রথমশ্রেণীতে প্রথম হয়েছে? সেই মেধাবী আসামির পক্ষে যে ওকালতি করছে সেও ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছে? আমার জানামতে এ আদালতে এমন মেধাবী কেউ এ পর্যন্ত পা রাখেনি, না বিচারক হিসেবে, না স্বাক্ষি হিসেবে আর না আসামি হিসেবে! মাননীয় আদালত এতক্ষণ যে গল্পটা বললাম তার মূল নায়কই আজ আসামির কাঠগাড়ায়। আর তার হবু স্ত্রী আইনের পোষাকে, এবং যে পুলিশ অফিসার তাকে একদিন এনকাউন্টার থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করেছিল তার ছেলের হত্যা মামলায় যাকে আসামি করা হয়েছে তিনি এসেছেন আসামির পক্ষে স্বাক্ষ দিতে!
মাননীয় আদালত সেই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এস আই শাকিলের বাবা এখনও ফরিয়াদি, সরকার পক্ষে স্বাক্ষ দেয়ার কাঠগড়ায় দাড়িয়ে আছেন। এর আগে আমরা আদালতের গেট থেকে সাক্ষি ছিন্তাই হতে দেখেছি তাই এ চালাকিটুকু করতে হয়েছে। মাননীয় আদালত ফরিয়াদির পক্ষের কাঠগড়া থেকে সাক্ষিকে আসামির পক্ষে সাক্ষি দেয়ার জন্য আসামি পক্ষের কাঠগড়ায় যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করছি।
- অনুমতি দেয়া হল।
- মাননীয় আদালত, আমাকে আসামির পক্ষে সাক্ষ দেয়ার অনুমতি দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ। মাননীয় আদালত, আমার বুকের ধন দুনিয়া থেকে চলে গেছে সেজন্য আমি ব্যথিত কিন্তু তাই বলে যে আমার সন্তানের খুনের সাথে জড়িত নয় তেমন কোন নিষ্পাপ সন্তান অন্যের অপরাধে অপরাধী হয়ে শাস্তি ভোগ করুক তা আমি চাইনা। যে সময় আমার ছেলে আক্রান্ত হয়েছে সে সময় যাকে আসামি করা হয়েছে সে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে ছিল এবং আমিও তার সাথেই ছিলাম। মাননীয় আদালত, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধ করেছিলাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাই কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারিনা। আমার ছেলেকেও আমার মত একজন সৎ পুলিশ অফিসার বানাতে চেয়েছিলাম এবং সে আমার দেখান পথেই হাটা শুরু করেছিল কিন্তু ঘুনে ধরা এই সমাজে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা দুষ্ট চক্র আমার সেই আশা পূরন হতে দেয়নি। যে ছেলেকে আজ আসামির কাঠ গড়ায় দাড় করান হয়েছে আমি আশা করব দেশ গড়ার কাজে সে আমার সেই আশা পূরণ করবে।
- মাননীয় আদালত আমি আমার ছেলের হত্যা মামলা থেকে আসামি সাদী সাইয়্যেদের বেকসুর খালাস প্রার্থনা করছি। আর তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিবেচনায় যে মামলা গুলো হয়েছিল তাও খারিজ করে দেয়ার প্রার্থনা করছি। সাথে সাথে আরও একটা আবেদন করছি তাহল রিমান্ডের নামে আর যেন কোন নির্দোষ মেধাবী ছাত্র নেতাকে পুলিশি নির্যাতনের শিকার না হতে হয়, আদালতের পক্ষ থেকে তার দিক নির্দেশনা যেন দেয়া হয়। ধন্যবাদ মাননীয় আদালত ধন্যবাদ।
- অর্ডার, অর্ডারঃ আজকের আদালত এখানে মুলতবি করা হল। আগামিকাল সকাল ১০টায় আদালত আবার পুনরায় বসবে। সকলকে ধন্যবাদ।
বিষয়: সাহিত্য
১৩১৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক অনেক শুকরিয়া।
ধন্যবাদ।
সফল সমাপ্তির জন্য দুয়া কামনা করছি।
ধন্যবাদ।
কোর্টে দর্শকের চেয়ারে আমরাও নড়েচড়ে বসলাম! কিন্তু একি শুনানীর আগেই মুলতবী.........
অপেক্ষায় পরের পর্বের
কোর্টেরওতো সময় আছে, তাই সময় শেষ বলে মুলতবি হয়ে গেল।
ভেবেছিলাম শেষ করে দিব কিন্তু গল্পের মোড়টা মনে হয় ঘুড়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নামও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। সামনের পর্ব গুলো মিলিয়ে লেখা কিছুটা কঠিন মনে হচ্ছে। দুয়া করবেন আপু গল্পটার যেন সফল সমাপ্তি টানতে পারি।
চলবে ইনশা'আল্লাহ।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপু
২৬ তম পর্বের প্রতি মন্তব্যে আবার দিলাম।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন