ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (২৪'তম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১০ জুন, ২০১৫, ১১:১৬:১০ রাত
শায়লা এবং সাদী উভয়েই বারের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বারের পরীক্ষাটা শেষ হলেই শুভ কাজটা শেষ করে কর্ম জীবনে আত্ম নিয়োগ করা জন্য দুজনই যখন প্রস্তুত ঠিক তখনই ঘটল নতুন বিপত্তি।
- ===========২৪
সাদীর দলের যে কজন মন্ত্রী হয়েছে তারা শপথ বাক্য পাঠ করেই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের দলের কেউ যেন ব্যক্তিগত কোন কাজে মন্ত্রণালয়ের আঙ্গিনায়ও না আসে। দলীয় পরিচয়ে যদি কেউ মন্ত্রণালয়ে আসে তাহলে তারা কোন প্রকার সহযোগিতা তো পাবেইনা বরং তাদেরকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হবে।
তার দলের আইন মন্ত্রী কয়েক কদম এগিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা যেমন হবেনা তেমনি মামলা থেকে কেউ অব্যহতিও পাবেনা। বিগত সরকারের সময় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তা ক্ষতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মন্ত্রীদের ঘোষনায় সাধারন জনতা উতফুল্ল হলেও যারা আন্দলন করতে গিয়ে বা আন্দলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে মামলা মোকদ্দমা মাথায় নিয়ে ঘুড়ে বেরাচ্ছে তাদের মাথায় যেন বাজ পরল। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতেই পুলিশের সুবিধাবাদী অংশটা খোলস বদলিয়ে ধিরে ধিরে প্রশাসনে জায়গা করে নিতে লাগল। সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই একপা দুপা করে তারা স্বল্প মাত্রায় হলেও গ্রেফতার বাজিন্য শুরু করে দিয়েছে। কুকুর যে ঘী এর পরিবর্তে গু খেতেই বেশী অভ্যস্ত তারা তাই প্রমাণ করতে শতর্ক পদক্ষেপে এগিয়ে চল্ল।
নতুন সরকারের বয়স এখনও একমাস পেরয় নি। সুপ্রিমকোর্ট বারের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। সাদী এবং শায়লা উভয়েই পরীক্ষার্থী। বারের পরীক্ষা দিয়ে সাদী যখন কেন্দ্র থেকে বের হচ্ছিল ঠিক তখনই পথের মাঝে ডিবি পুলিশের একটা দল শাকিল হত্যা মামলায় সাদীকে গ্রেফতার করল!
যে মামলা থেকে সাদীর নাম কেটে দেয়া হয়েছে, সে মামলায় সাদি গ্রেফতার! হ্যা, কারণ আছে। সাদীর নাম কেটে গিয়েছিল বিগত সরকার, তাছাড়া সরকার পতনের পরে যারা বিশৃঙ্খলা করছিল তাদের শক্ত হাতে দমনের ক্ষেত্রে সাদীর যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। এ নিয়ে অনেকের সাথে ঠাণ্ডা লড়াইও হয়েছে। সাদীর কারণে যারা তাদের দাত ঠিক মত দেখাতে পারেনি, তাদের একটা অংশ এখন সরকারের হর্তা কর্তাদের নিকটতম জন। তারা যখন সুযোগ পেয়েছে তখন সাদীর মত উদিয়মান নেতাদের সাইজ করতে না পারলে ভবিষ্যতে তাদের যে পস্তাতে হতে পারে তা তারা ভাল করেই জানে। তাই শুরুতেই পথের কাটা সরাতে না পারলে পরে বেগ পেতে হবে। তাই তারাই হলুদ মিডিয়াকে ব্যবহার করে সরকারকে উস্কে দিয়ে সেই মামলা পূণুরুজ্জিবিত করে সাদীকে গ্রেফতার করিয়েছে।
সাদীকে জেল হাজতে নিয়ে যাওয়া হল। কেন্দ্রীয় জেলের সামনে সহকর্মী ছাত্রদের জটলা, সাদীর মুক্তির দাবীতে মিসিল, মিসিলে পেটয়া বাহিনীর হামলা, সেই একই রূপ! সরকার বদলেছে কিন্তু কারো আচরণ বদলায় নি। সহকর্মী ছাত্ররা দলীয় আইন মন্ত্রীর সাথে দেখা করে বিষয়টা ক্লিয়ার করতে চেয়েছিল, কিন্তু সাদী তাদেরকে শক্ত ভাবে মানা করে দিয়েছে।
পুলিশ হত্যা মামলা, তাও আবার পুড়িয়ে মারার ঘটনা! পুলিশ এমনিতেই আন্দলোন কারীদের উপর বিগ্রে ছিল। তাই আক্রস বসত সাদীর বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করল।
রিমান্ডের কথা শুনে সাদীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পরল, আমজাদ শেখ আবার, এ অফিস সে অফিসে ধর্ণা দিতে লাগল কিন্তু কোন কাজ হলনা। হবেই বা কিভাবে, তার গায়ে যে বিগত সরকারকে সহায়তা করার ছাপ লেগে আছে। বিচারতো আর ন্যায় অন্যায় দেখে হয়না হয় দলীয় পরিচয় আর ক্ষমতার দাপটে, তাছাড়া সাদীর দলের মন্ত্রীর করা হুকুম, ‘আইনের উর্ধে কেউনা’।
সাদীর দলের নীতিবান মন্ত্রীর হুকুম, ‘আইনের উর্ধে কেউনা’ হলেও পুলিশ আর রিমান্ডের নামে টর্চারকারীরা যে এখনও আইনের উর্ধ্বেই রয়ে গেছে, বিচারকও যে আগের সরকারের নিয়োগকৃত, সে কথা মন্ত্রীকে বুঝাবে কে? যত জনপ্রিয় এবং গণ মুখী নেতাই হোকনা কেন আমাদের দেশের বাস্তবতায়, যে যখন ক্ষমতায় যায় সেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। এ ক্ষেত্রে জনকল্যাণ সমিতির মন্ত্রীরাইবা বাদ যাবেন কেন? তারা নীতির যতই চর্চা করুন না কেন আখেরে তারাওতো এদেশেরই মাটিও মানুষেরই সন্তান। তাছাড়া তাদের দলীয় কর্মীদের ছাড়াও এদেশে যে ১৮ কোটি বনি আদম আছে তাদের মধ্যেও তো চাটুকারদের কোন কমতি নাই। নিজেদের দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও সাধারণ এবং বিগত সরকারের আমালের খোলস বদলানো চাটুকারদের নিয়ন্ত্রণ করবে কে?
আমাজাদ সাহেবের হাজারো চেষ্টাও সাদীকে রিমান্ডের খর্গ থেকে রেহাই দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আন্দলনের এক মহা নায়ককে মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে যেতেই হল!
পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরে টিভির ব্রেকিং নিউজে শায়লা, সাদীর গ্রেফতার হওয়ার কথা জানতে পারল। খবরটা শুনে শায়লার হৃদয়টা ছ্যাত করে জ্বলে উঠলেও ভেঙ্গে পরল না। সে ভাবল সংগ্রামের হয়ত এই শুরু। সাদীর মামলা আদালতে উঠতে উঠতে সে বারের সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে। আর সাদীর মোকদ্দমায় ওকালতি করেই তার পেশার হাতে খড়ি হবে।
সাদীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বিগত পাঁচ বছর যেমনি দেখা গেছে তরতাজা যুবকেরা হাসতে হাসতে আদালতে হাজিরা দিচ্ছে, আর রিমান্ড শেষে হুইল চেয়ারে করে পুনরায় আদালতে আসেছে, বর্তমান সরকারের আমলেও সেই একই চিত্র! সাদীও দাড়াতে পারছেনা! একে একে তাকে দশটি মামলায় ৫০দিন রিমান্ডে নেয়া হয়েছে! আজ আবার পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন করে শাকিল হত্যা মামলায় অধিকতর তদন্তের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
আজকের মামলার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। আসামির কাঠগড়ায় সাদী, সাক্ষির কাঠগড়ায় আমজাদ শেখ আর কালো গাউন পরে আসামি পক্ষের আইনজীবী শায়লা। সাদীর পক্ষে আধুনিক সাজে সজ্জিতা এক তরুণী আইন জীবিকে দেখে সাদীর বন্ধুদের তো চোখ কপালের উপর উঠে গেছে। কেউ আবার গেল গেল বলে সাদির চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করছে, তার ইসলামী আন্দলনের বিষয়ই প্রশ্ন তুলছে। অনেকেই বিগত সরকারের শেষ সময় সকল মামলা থেকে সাদীর নাম বাদ যাওয়ার রহস্যের গন্ধ খুজে পাচ্ছে। তবে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের এক কালের ত্রাস হিসেবে খ্যাত আজমল শেখকে সাক্ষির কাঠগড়ায় দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
মাননীয় আদালত, বাংলাদেশের ইতিহাসে আজকের দিনটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ইনশা’আল্লাহ। আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমাকে যুক্তি তর্কের সুযোগ দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ। আসামির পক্ষে কথা বলার আগে আমি একটা গল্প বলতে চাই যা এ মামলার মোটিভ হিসেবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
(চলবে) ............।
বিষয়: সাহিত্য
১২৯৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
তার পর কিযে হবে আল্লাহু আলাম।
আপনাদের আগ্রহের কারণে গল্পের মোড় ঘুড়ে গেছে। ইচ্ছা ছিল আগামী পর্বেই শেষ করার কিন্তু তা মনে হয় হচ্ছেনা আরও ২/১ পর্ব বেড়ে যাচ্ছে।
নিয়মিত সাথে থেকে উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
সরকার শেষ পর্যান্ত পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। মন্ত্রী এম্পিদের দূর্ণীতিবাজ আর দাঙ্গাবাজ গ্রুপটা ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছে। চামচা আর পাতি নেতাদের মধ্যে যারা দেশ ছেড়ে পালাতে পারেনি তারা গাঢাকা দিয়েছে। কিন্তু ১০ বছরের যন্ত্রনা জনগণ সহজেই ভুলতে পারেনি। বিশেষ করে যারা গুম, খুন, ধর্ষনের শিকার হয়েছে তাদের ঠেকায় এমন শক্তি কার?
দাঙ্গা ফাছাদ বন্ধের জন্য জোট নেত্রীর পক্ষ থেকে বার বার বিবৃতি আসলেও নির্যাতিত জনগণকে কোন ভাবেই বাগে আনা যাচ্ছিলনা। আন্দলনের সময় ভয়কাতুরে যে সব নেতা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে ছিল তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে আগুনে ঘী ডালতে থাকল। ফলে রোষের অনলে অনেকেই জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে গেল।
এমন অরাজক পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশ যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে, তা স্বার্থপর নেতা পাতি নেতারা বুঝতে না পরলেও জোট নেত্রী ও বিশেষ করে দেশ প্রমিক জন কল্যাণ সমিতির নেতারা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। তাই দ্রহের এই আগুণ নেভানর দায়িত্বও পরল ছাত্র সমিতির উপর।
এত দিন যেই জালিমদের অত্যাচারে ছাত্র সমিতি ছিল দিসেহারা এখন সেই জালিমদের রক্ষা করার জন্য মজলুম ছাত্র সমিতিকেই আবারও কোমড় বেঁধে মাঠে নামতে হল!
যে সকল ছাত্র নেতারা বিগত সরকারের আমলে ভেজা বেড়ালের মত গা বাচিয়ে চলেছে তারাই যেন এখন এক একটা মূর্তিমান দানব!
ছাত্র সমিতি তথা সাদীরা যখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত তখন বিড়াল থেকে সিংহে পরিণত হওয়া সদ্য প্রসূত টাইগার গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে সাদীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে! যাহোক, জন কল্যাণ সমিতি ও ছাত্র সমিতির আপ্রাণ চেষ্টা আর জোট নেত্রীর সক্ত অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত মাস খানেকের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এল।
পরিস্থিতি পুরপুরি নিয়ন্ত্রণে আসলে, জাতীয় নির্বাচনের ইস্তেহার ঘোষিত হয়। সরকার পতন আন্দলনের সময় বিরোধী দলগুলো যতটা না ব্যাস্ত ছিল তার চেয়ে এখন বেশী ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে দল গুছিয়ে নির্যাচনের বৈতরণী পাড় হতে। আন্দোলনের ময়দানে যে সকল নেতাদের টিকিটিও খুজে পাওয়া যায়নি এখন তারাই সামনের কাতারে! দলের প্রতি নিজেদের আনুগত্ব প্রাকাশের জন্য মরহুম ও বর্তমান নেতা নেত্রীদের স্তুতি গেয়ে নিয়মিত কোরাস করছে, এমনকি গলা দিয়ে রক্ত পর্যন্ত ঝড়াচ্ছে! স্বর্থপর নেতা নেত্রীদের এমন আদিখ্যেতা দেখে সাদী ও আন্দলনে তার সহকর্মী বন্ধুরা মুখ টিপে হাসছে।
আন্দলন করেছে সাদীরা আর জোটের খাতিরে ফসল ঘরে তুলতে ব্যাস্ত আন্দলন বিমুখ স্বার্থপর নেতারা! এমতাবস্থা চুপ করে থাকলে আন্দলন থেকে অর্জিত সুফল জনগণের দোড় গোড়ায় পৌছবে না তাই সাদী আর তার বন্ধুরাও নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে আপন আপন কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরল। অবশ্য সাদী মাঝে একবার আমজাদ শেখ সাহেবের সাথে দেখা করে নির্বাচনের পরে বিয়ের কথা ভাবা যাবে বলে জানিয়ে এসেছে।
এক দিকে সাদী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যাস্ত, আর অন্য দিকে শায়লা তার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মধ্যে অবশ্য ফোনে কুশল বিনিময় হয়। শায়লাই সাদীকে ফোন দেয়। সাদী অবশ্য বিয়ের আগে এমনটা করতে কয়েকবার নিষেধ করেছে কিন্তু কে শোনে কার কথা?
নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক পূর্বেই শায়লার পরীক্ষা হয়ে গেছে, সামনে বাকী শুধু সাদীর নির্বাচনী পরীক্ষা। সেটা হয়ে গেলেই দুজনের শুভ পরিণয়। ভাবতেই শায়লা কেমন যেন একটা পুলক অনুভব করে।
দেখতে দেখতে নির্বাচনও যথারীতি শেষ। সাদীর সমর্থিত দল বাংলদেশ জাতীয় জন কল্যাণ সমিতি (বাজাক্স) আশানুরুপ ৫০টি সংসদীয় আসনে জয় লাভ করেছে। জোটবদ্ধ নির্বাচন হয়েছে বলে সরকারও হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। (বাজাক্স) থেকে পাঁচ জন কে ফুল মন্ত্রী করা হয়েছে, তার মধ্য আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আছে। সব মিলিয়ে সাদীর পোয়া বার। সম্ভাবনার সকল দুয়াড় গুলোই যেন সাদীর সামনে একটা একটা করে খুলে যাচ্ছে।
শায়লা এবং সাদী উভয়েই বারের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বারের পরীক্ষাটা শেষ হলেই শুভ কাজটা শেষ করে কর্ম জীবনে আত্ম নিয়োগ করা জন্য দুজনই যখন প্রস্তুত ঠিক তখনই ঘটল নতুন বিপত্তি।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন