শামচুলের চুল (গল্প- চতুর্থ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৩ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:১৪:৩৪ দুপুর
শামচুলের চুল (গল্প - তৃতীয় পর্ব) আশরাফের যুক্তি গুলো শামচুলের মনপুত হল কিন্তু ভয় শুধু একটা জায়গায়ই। সবাই বলে ন্যাড়ার নাকি বেল তলায় যেতে নাই। অথচ শামচুলদের বাড়িতে অনেক গুলো বেল গাছ আছে। চুল কামিয়ে ন্যাড়া হলে বাড়ির ভিতরে হাটা চলা করাইত মুশকিল হবে। এহেন আশঙ্কার কথা শুনে আশরাফ হো. . হো.. করে হেসে দিল। বল্ল আরে বোকা মাথায় ক্যাপ দিয়ে চলবি তাহলে আর কোন সমস্যাই থাকবে না। ক্যাপ দিয়ে তুই ইচ্ছা করলে সারাদিনও বেল গাছের নিচে বেসে থাকতে পারবি। আমিই তোকে সুন্দর দেখে একটা ক্যাপ কিনে দিব।
শেষমেস জীবনের সপ্তম বর্ষে এসে শামচুল তার চুল কামাতে রাজি হল। চুল কামানর আনন্দে ঘরে খুশির বন্যা বয়ে গেল। জন্মের সাত দিনের মাথায় চুল কামানোর পরে আকীকা দেয়ার সুন্নত পালন হল সাত বছরের মাথায়। আকীকার দাওয়াতে লতু শেখও খেয়ে গেছে কিন্তু তার পীর বাবার ব্যপারে মুখ খুলেনি। অশিক্ষিত লতু শেখও ততদিনে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল এবং তার ও পীর সাহেবের মার খাওয়ার পরে বুঝতে পেরেছিল আসলে ওগুলো ছিল সব প্রতারনা।
শামচুল এখন নিয়মিত স্কুলে যায় ফুটবল খেলে, বাতাসের আগে ছুটে গিয়ে গোল করে। পঁচা পানিতে ডুবে থাকার অভ্যাসটাও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। ডোবায় ডুবে থাকার পরিবর্তে এখন বরং মাছ ধরা পাখী শিকার করা এবং ফুটবল খেলার মধ্যে নিজের জীবনকে বিস্তৃত করে নিয়েছে।
হাডুডু খেলাতেও শামচুলের জুড়ি নেই। নিজের ন্যাড়া মাথার কারনে অনেক সময় বন্ধুদের টিপ্পনি শুনতে হয় কিন্তু তাতে কোন পরওয়া নাই।
মাথায় চুল না থাকায় সমস্যা হয়েছে সহ খেলোয়াড়দের। যার শরীরেই ন্যাড়া মাথার ঘষা লাগে তার জীবনই ওষ্ঠাগত হয়েযায়। ন্যাড়া মাথার চুলের গোড়া গুলো যেন সজারুর কাটা! অনেক সময় ন্যাড়া মাথার আচড়ে অনেকের শরীর পর্যন্ত আচড়ে গেছে।
বন্ধুদের এখন একটাই ভাবনা কিভাবে আবার শামচুলকে চুল রাখানো যায়।
বন্ধুদের শত চেষ্টা এবং আল্টিমেটামেও কোন কাজ হচ্ছিল না। শেষে বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিল যে তারা আর ওকে খেলতে নিবেনা। কিন্তু তাই কি হয়? শামচুল যে দলে খেলে সে দলই জিতে। অনেকে বলে ওর গায়ে নাকি মহিষের মত বল।
শামচুলের পাখি শিকারের কাহিনিও ইতি মধ্যে সকলের কাছে মশহুর হয়ে গেছে। ছোটরা বলে ভাইয়া আমাকে একটা ঘুঘুর বাচ্চা এনে দাওনা? বড়রা বলে, বাড়িতে মেহমান এসেছে দুইটা কুবুতর ধরা দরকার, একটু ধরে দে না?
শাচুল, এরকম কাজের জন্য সর্বদা এক পায়ে খাড়া থাকে। এপর্যন্ত কাউকে ঘুঘুর বাচ্চা এনে দেয়নি, কবুতর ধরে দেয়নি, কিশোরীদের ময়ুরের পালক এনে দেয়নি এমন কথা কেউ বলতে পারবেনা।
সবার কাছেই শামচুল এখন পাখি শিকারী, মৎস আহরন কারী এবং ভালো খেলোয়াড় হিসেবে সুপরিচিত। ছাত্র হিসেবেও একেবারে ফেলনা নয়।
শামচুলের চাচাতো বোন উর্মিলা যে কিনা শামচুলের খেলার সাথী তার সব অভিযোগ এখন ওর ন্যাড়া মাথা নিয়ে। বন্ধুরাও ওকে চুল রাখাতে বলে কিন্তু ও ন্যাড়া মাথায়ই বেশী সাচ্ছন্দ বোধ করে।
বড় বোন জামিলার ইত মধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে এমনকি সে দুই সন্তানের জননীও বটে। বোন ভাগ্নীরা শহর থেকে গ্রামে এসেছে।
ভাগ্নীরাও মামার পাখি শিকারের কাহিনি এত দিনে জেনে গেছে। শহরের বাচ্চারা একুরিয়ামের মাছ এবং খাঁচায় বন্ধী পাখি দেখে দেখে বোর হয়ে গেছে। তারা এখন সত্যিকারের মাছ এবং পাখির বাচ্চার লাইভ স্পর্শ চায়। ঘুঘু আর কবুতরের সাথে করতে চায় মিতালী।
ভাগ্নীদের একটাই দাবী তাদেরকে কথাবলা ময়না পাখি ধরে দিতে হবে। শামচুলও রাজি কিন্তু বটগাছের মগডাল থেকে ময়না পাখির বাচ্চা নিয়ে আশা কি এতই সহজ?
(চলবে...)
বিষয়: সাহিত্য
১৪৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন