ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (বিশতম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২১ মে, ২০১৫, ০৯:৫৪:৪৭ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (বিশতম পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ সাদিয়ার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খিলে গেল। ভাবল বিয়ের আগেই ক্যাবলা কান্তটাকে একটু জব্ধ করতে পারলে খারাপ কি? যেমন ভাবা তেমন কাজ। ওয়াকিলকে জব্ধ করার জন্য সাদিয়া মনের মত করে এক গ্লাস শরবত বানাল।
শরবত পরিবেশনের পূর্বেই সাদী আর আমজাদ সাহেব এসে পরায় সাদিয়ার আশায় গুড়ে বালি পরল না হয় ওয়াকিলের খবর হয়ে যেত!
সাদী আর আমজাদ শেখের ঘন ঘন পরামর্শ্ব দেখে ওয়াকিলের মনে একটা সন্দেহ দানা বাধতে লাগল, কিন্তু ঘুর্ণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি যে তাদের আলোচ্য বিষয় তার আর সাদিয়ার বিয়ে। সে ভেবেছে হয়ত সাদীর মামলা গুলো কিভাবে সুরাহা করা যায় তা নিয়ে শলা পরামর্শ্ব হচ্ছে, তাই সে ওদিকে গুরুত্ব না দিয়ে, সাদীর চাচাত ভাই সামিকে নিয়ে পুরা গ্রামে একটা চক্কর কেটে এসেছে। জোহরের নামাযের পর দুপুরের খাবারের টেবিলে বসেতো ওয়াকিলের চক্ষুচড়ক গাছ! ওমা এত খাবার? মুখ ফসকে বলেই ফেলল, এ দেখছি একেবারে বিয়েবাড়ির আয়োজন! ওয়াকিলের কথায় আর কেউই হাসি আটকাতে পারলনা। আমজাদ শেখ আর সাদীতো বটেই ঘরের ভিতরে বসে সাদিয়াও হেসে ফেলল। সবার হাসি দেখে ওয়াকিল একেবারে বেউকুফ বনে গেল। এতে হাঁসির কি আছে, তা ওয়াকিল বুঝতে না পারলেও বাকিরা ঠিকই বুঝেছে যে ক্যাবলা কান্ত এখনও কিছু আঁচ করতে পারেনি।
খাওয়ার পরে সবাই বিছানায় গা এলিয়ে দিল। সাদী আর ওয়াকিল একই খাটে ঘুমচ্ছিল। হঠাৎ ঘুমের ঘরে ওয়াকিল গোঙানি দিয়ে বলতে থাকল, ‘ছেরেদে বলছি ছেরে দে, মরে যাচ্ছি কিন্তু’।
- ওয়াকিল এই ওয়াকিল? কি, স্বপ্ন দেখছিস নাকি?
- এয়া, এয়া করে চোখ ডলতে ডলতে ওয়াকিল স্বপ্ন দেখছিল বলে জানাল।
- তা, কি দেখেছিস? কে তোকে এই অবেলায় আক্রমণ করল?
- না ভাই, এটা কোন শত্রুর আক্রমণ না। মনে হল কোন মিত্রের আক্রমণ।
- আচ্ছা থাক আর একটু ঘুমিয়ে নে।
ঘুমের ঘরে ওয়াকিল স্বপ্নে দেখেছিল, কোন অপ্সরী তার নাকদুটো চেপে ধরেছে। ওয়াকিলের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু সে নাক ছাড়ছিলনা। এমন ভাবে টিপে ধরেছিল সাদীর ডাক শুনে ঘুম না ভাংলে হয়ত ঘুমের মধ্যেই সে মারা যেত। তরুণী ছিল অপরূপা সুন্দরী কিন্তু এক্সাক্টলি কে তা সে মনে করতে পারছেনা। সাদিয়াকে যতটুকু দেখেছে তাতে সুন্দরীর সাথে সাদিয়ার বেশ মিল আছে বলেই ওয়াকিলের মনে হল।
বিকেল বেলা রওয়ানা হয়ে ওয়াকিল ও তার বাবা যথারীতি তাদের বাড়িতে চলে গেল। অবশ্য যাওয়ার পথে সাদীর মা ওয়াকিলের মায়ের জন্য চার বাটিওয়ালা একটা টিফিনকারি ভরে চার প্রকারকের মাছ মাংশ পোলাও আর পলিথিনে করে বিভিন্ন প্রকারের এক পলিথিন পিঠে দিয়ে দিল। ওয়াকিল ওগুলো নিতে চায়নি, কিন্তু তার বাবা বিনা বাক্যে হাত বাড়িয়ে ওগুলো নিয়ে নিল। ওয়াকিলের কাছে তার বাবার আচরণটা কেমন যেন অপরিচিত মনে হল। ওয়াকিল কোনদিন তার নানা বাড়ি থেকেও তার বাবাকে এভাবে হাতে করে কোনদিন কোন খাবার বা অন্য কোন জিনিস আনতে দেখেনি। অথচ তার নানু কতবারই না তার সামনে, তার বাবাকে বিভিন্ন জিনিস দিতে চেয়েছে! ওয়াকিলের আশ্চর্যের যে আরো অনেক কিছুই বাকী ছিল তা কি সে জানত?
বাড়িতে পৌছুতে পৌছুতে এশার সময় হয়ে গেছে। ওয়াকিল টিফিনকেরি আর পিঠার পলিথিনটা তার মায়ের হাতে দিয়েই সোজা মসজিদে চলে গেল। নামায পড়ে যখন ঘরে এসেছে তখন তার বাবাও নামায শেষে ঘরে ফিরেছে। ততক্ষণে তার মা খাবার গুলো গড়ম করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। এবার মা-বাবার সাথে একই টেবিলে বসেছে ওয়াকিল। এক লোকমা মুখে দিয়েই ওয়াকিলের মা রান্নার প্রশংসা শুরু করে দিল। ওয়াকিলের মাথায় ঢুকছিলনা যে এতে এত প্রশংসার কি আছে? তাছারা সে জীবনে কোনদিন কোন নারীকে অন্যের রান্নার প্রশংসা করতে দেখেনি, তার মাকে তো নয়ই। কারণ তার মাই তাদের আত্মীয়াদের মধ্যে সেরা রাঁধুনি।
- বুঝছ ওয়াকিলের বাবা, এ মেয়েকে বৌ করে আনলে তো আমার সেরা রাঁধুনির সার্টিফিকেটটা হারাতে হবে।
- তাহলে কি আর বলছি? রান্নায় তোমার উপর টেক্কা দেয়ার মত যে আরও কেউ আছে তা বোঝানর জন্যইতো এত দূর থেকে তোমার জন্য স্যাম্পল নিয়ে এসেছি।
- আহারে, বেচারিকে না জানি কত কষ্টই না দিয়েছ। তা রাঁধুনির কোন ফটো ঠটো আননি?
- হ্যা এনেছি, তাও এনেছি।
(চলবে) ..........।
বিষয়: সাহিত্য
১০৯৩ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিয়মিত পড়ে সুন্দর ও উৎসাহ মূলক মন্তব্য করায় আন্তরিক মুবারকবাদ।
বিয়ের আগেই যদি স্বপ্নে ভর করে নাক টিপে ধরতে আসে বিয়ের পরে কি হবে???
শরবত না খাইয়ে ভালো করেন নি কিন্তু! খাওয়ার পর কেমন অভিব্যক্তি হতে পারে তা পড়ার অপেক্ষায় ছিলাম!
বহুদিন পর চার বাটির টিফিন কেরির ছবি মনের পর্দায় ভেসে উঠলো!ভুলেই যেতে বসেছিলাম প্রায়!
অপেক্ষায় রইলাম কন্যার ফটো দেখার পরের বিবরনী জানার..
বিয়ের পরে সাধারণত যা হবার তাই হবে। স্বামীর গলা টিপে ধরবে, সব কাজেই দোষ ধরবে, কথায় কথায় বলবে, ‘তুমি কোন কাজের না, তোমাকে দ্বারা কিছুই হবেনা, কিছুই বুঝনা, যত হিসাব সব আমার সাথে, আমার কিছু দরকার হলেই তোমার পয়সা থাকেনা’, ইত্যাদি ইত্যাদি। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ আপু।
মন্তব্য করতে লগইন করুন