শামচুলের চুল (গল্প - তৃতীয় পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১২ জানুয়ারি, ২০১৩, ০১:২৭:৩১ দুপুর



(দ্বিতীয় পর্ব)

আশরাফের বন্ধু মামুন বল্ল, দোস্ত ছোট বেলায় শামচুলকে আবার মহিষের দুধ খাওয়াসনি তো?


আমার দাদি বলেছে বাচ্চাদের মহিষের দুধ খাওয়ালে নাকি ওদের আচরনে মহিষের প্রভাব পড়ে'!

আশারাফ বল্ল আরে না, ওতো গরুর দুধ, ল্যাক্টজেন আর হরলিক্স খেয়েই শেষ করতে পারেনি। তাছাড়া ঘরের বড়রা ছাড়া কখনও ছোট বাচ্চাদের মহিষের দুধ খাওয়ানো হয়নি।

শামচুলের বড় বোন যখন এমন কথা শুনল তখন তার মনে কামড় দিল। আসলে শামচুলের এই পরিনতীর জন্য সেই দায়ী। নিজের ভাই বলে কথা? তাই শামচুলের বড় আপা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলনা। সে মায়ের গলা ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।

সকলেই আশ্চর্য হয়ে গেল। তখন শামচুলের আপা সবিস্তারে খুলে বল্ল, সে কেন এবং কি ভাবে ছোট বেলায় শামচুলকে লুকিয়ে লুকিয়ে মাহিষের দুধ পান করিয়েছিল।

মামুন বল্ল সমস্যা নাই, ওর মাথার চুল গুলি যদি কামিয়ে ফেলা যায় এবং পাখপাখালির প্রতি যদি ওর আগ্রহ বাড়ানো যায় তাহলে ও আর পঁচা পানির ডোবায় নামবে না।

আশরাফ বল্ল পাখপাখালির উপর আগ্রহ বাড়ানো কোন ব্যপারই না। তাছারা ওর চুল কামানো ওয়ান টুর ব্যপার।

শামচুলের বয়স ইতমধ্যে সাত বছর হয়ে গেছে। শামচুলকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, পাখপাখালির প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং চুল কামানোর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার দায়িত্বটা শেষ পর্যন্ত আশরাফকেই নিতে হল।

প্রথমদিন স্কুলে গিয়ে শামচুল যখন দেখল ছেলেরা ফুটবল খেলছে তখন তারও খেলতে ইচ্ছে করল।

শামচুল, মামা আশরাফের কাছে নিজের ইচ্ছে ব্যক্ত করল। আশরাফ, শামচুলকে খুব উৎসাহ দিল এবং এও বল্ল যে সে যদি ভালো খেলতে পারে তাহলে তাকে একটা বল কিনে দেয়া হবে।

শামচুল, এখন বল খেলার প্রতি বেশ মনযোগী। কিন্তু পঁচা পানির ডোবায় ডুবে থাকার নেশাও পূর্ববৎ। স্কুল থেকে এসেই সোজা পঁচা পানির ডোবায়! এতে ওর চুলের জাটাও আগের মতই আছে।

পরের দিন যথারীতি স্কুলের মাঠে অন্যান্য ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলছিল কিন্তু জটা চুলের কারনে ওর দৌড়ে গতি আসছিলনা উপরন্ত গোল মুখে যখন কিক করতে যাচ্ছিল তকন প্রতিপক্ষের খেলয়াড়ের সাথে জটা চুলের প্যাঁচ লেগে পরে গেলে সহজ গোলটা হাত ছাড়া হয়ে যায়। ফলে ম্যাচটা গোল শুণ্য টাই হয়। জেতা ম্যাচ গোল শুণ্য টাই হওয়ায় শামচুল আজই প্রথম জটা চুলের বিড়ম্বনা অনুভব করল।

শামচুলদের ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন খুবই কড়া মেজাজি। ছেলে মেয়েদের ফ্রী মিক্সিং একদম পছন্দ করতেন না। নতুন বছরে এতদিন ছুটি কাটিয়ে তিনি আজই প্রথম স্কুলে এসেছেন। হঠাৎ তার চোখ পড়ল ছেলেদের ফুটবাল খেলার মাঠে। দেখলেন একটা মেয়েও ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলছে!

হুজুরেরতো চক্ষু চড়ক গাছ! হুজুর অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে দৌড়ে গেলেন মাঠের ভিতরে। অন্য ছেলেরা হুজুরকে দেখে স্থির হয়ে গেল কিন্তু শামচুল তখনও বল নিয়ে গোল পোস্টের দিকে ছুটছিল। হুজুরও গোল পোস্টের দিক থেকে শামচুলের দিকে তেড়ে আসছিলেন। এর পূর্বে শামচুল কখনও হুজুরকে দেখেনি তাই হুজুর ছিল ওর সম্পূর্ণ অপরিচিত।

গোল করার জন্য সজোরে কিক করতেই বলটা বাতাসের তোরে একটু বেকে গিয়ে সরাসরি হুজুরের নাকে মুখে আঘাত করল। হুজুরতো ধরাসায়ি!

হুজুরকে তোলার জন্য দৌড়ে কাছে যেতে সময় লাগল কিন্তু হুজুরের উঠতে সময় লাগলনা। হুজুরের নাগালের মধ্যে আসার সাথে সাথেই কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই জটা চুল ধরে ধামাধাম দুচার ঘা লাগিয়ে দিল শামচুলের পিঠে। মা বলে গো বলার আগেই ডানা ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন লাইব্রেরীর দিকে।

কারো বুঝতে বাকী রইলনা যে হুজুর ওকে ছা্ত্রী ভেবেই এরকম কান্ড ঘটিয়েছে। হুজুরের ভাগ্য ভালো যে সে ছিল শামচুলের বাবার বন্ধু। একজন ভালো মানুষ হিসেবেও হুজুরের সুপরিচিতি ছিল তাই কোন বিপত্তি ঘটেনি। হুজুর পরে যখন নিজের ভুল বুঝতে পারলেন তখন শামচুলকে আদর করে তার ব্যাথা প্রসমিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

শামচুলের যখন এমন নাকাল অবস্থা তখন আশরাফ বল্ল, দেখ ভাগ্নে, তোমার এই জটাওয়ালা লম্বা চুলের কারনে তুমি গতকাল একটা গোল মিস করেছ। আজ হুজুরের হাতে মার খেয়েছ। কাল যে স্কুলের ছাত্রীদের কারো হাতে অপমানীত হবেনা তার গ্যারান্টি কি? ধর তুমি তোমার চাচাত বোন উর্মিলার কাছে তোমার বই দিতে কমন রুমে গেলা, তখন অন্য মেয়েরা তোমাকে মেয়ে ভেবে দুষ্টমি করল কিন্তু যখন কেউ তোমাকে ছেলে হিসেবে চিনে ফেলবে তখন তারা যে তোমার নামে হেড স্যারের কাছে বিচার দিবেনা তার কি কোন গ্যারান্টি আছে?

এহেন বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচার জন্য তোমার উচিৎ যত বিপত্তির মূল এই চুল গুলো কেটে ফেলা। ব্রাজিলের খেলোয়াড় ফুটবলের রাজা প্লের মাথায় চুল ছিলনা। সে বাতাসের আগে ছুটতে পারত। তার গায়ের রংও ছিল তোমার মত কালো, তাই তাকে অনেকে কালো মানিক বলত। তুমি যদি তার মত বাতাসের আগে ছুটতে চাও তাহলে তোমাকেও বড় চুল কামিয়ে ন্যাড়া হতে হবে।

মামার যুক্তি গুলো ভাগ্নের মনপুত হল কিন্তু ভয় শুধু একটা জায়গায়ই। সবাই বলে ন্যাড়ার নাকি বেল তলায় যেতে নাই। অথচ ওদের বাড়িতে অনেক গুলো বেল গাছ আছে। চুল কামিয়ে ন্যাড়া হলে বাড়ির ভিতরে হাটা চলা করাইত মুশকিল হবে।

ভাগ্নের এমন আশঙ্কার কথা শুনে মামা হো. . হো.. করে হেসে দিল। বল্ল আরে বোকা মাথায় ক্যাপ দিয়ে চলবি, তাহলে আর কোন সমস্যাই থাকবে না। ক্যাপ দিয়ে তুই ইচ্ছা করলে সারাদিনও বেল গাছের নিচে বেসে থাকতে পারবি। আমিই তোকে সুন্দর দেখে একটা ক্যাপ কিনে দিব।

(চলবে.......)

পূর্বে প্রকাশিত

বিষয়: সাহিত্য

২৩২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File