ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (ঊনবিংশ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৪ মে, ২০১৫, ০৮:৪৩:১০ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (ঊনবিংশ পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ - আপনর মোবাইলে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যালএন্স নাই, দয়া করে রিচার্জ করে পুনুরায় ডায়াল করুন টু টু............।
- শেট, ফোনটা কেটে গেল।
শায়লার সাথে সাদীর কোন ব্যক্তিগত বা ভালবাসার সম্পর্ক নাই, শাকিলের সাথে যখন বিয়ে ঠিক হয়েছিল তখনও সাদীর কোন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ছিলনা কিন্তু আজ কি হল? শায়লার বিয়ের খবর শুনে সাদীর অন্তরের ভিতরে চিন চিনিয়ে উঠল কেন? তাহলে নিজের অজান্তেই সাদীর হৃদয়ে কি শায়লার জন্য একটু জায়গা তৈরী হয়েছিল? না, সাদি ওসব কিছু ভাবতে পারছেনা। তার কাঁধে যে এখন অনেক দায়িত্ব। সাদিয়ার বিয়েটা হয়ে গেলে একটা দায়িত্ব থেকে অন্তত সে মুক্তি পাবে। ওদের জোড়াটা বেশ মানান সই হবে। দুজনই বেশ চটপটে এবং সাবজেক্টও একই। শায়লা এবং সাদীর সাবজেক্টও একই কিন্তু সাবজেক্ট দিয়েতো আর জীবনের ম্যাচিং হয় না। যদি তেমনটাই হত তাহলে সাব্জেক্টে সাব্জেক্টে বিয়ে হত।
পরের দিন সকালেই সাদিয়া আর তার মা আমজাদ শেখের সাথে গোপালগঞ্জের পথে রওয়ানা হল। ঢাকা ছেড়ে মাওয়া ঘাট পার হয়ে যখন তাদের বাসটা ভাঙ্গায় পৌছে যাত্রা বিরোতি নিচ্ছিল ঠিক তখনই সাদী আর ওয়াকিল গিয়ে তাদের বাসে উঠল। সাদিয়া ওয়াকিলের বিয়ের ব্যাপারটা যেমন ওয়াকিল জানেনা তেমনি সদী ও শায়লার বিয়ের ব্যাপারটা ওয়াকিল ও সাদী কেউই জানেনা, তাই তাদের ভিতরে কোন জড়তা নাই। অন্য দিকে হবু বর, শ্বশুর আর বড় ভাইর মুখমুখি হতেই সাদিয়া যেন লজ্জায় মরেই যাচ্ছিল!
সাদী গিয়ে আমজাদ শেখ সাহেবকে সালাম দিয়ে বললঃ
- চাচা আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেল্লাম। দয়া করে ক্ষমা করবেন। আমি চাচ্ছিলাম মা ও সাদিয়াকে নিয়ে এখান থেকেই বাড়ি চলে যেতে।
- না বাবা তা হয়না। তাছাড়া ঢাকায় বসে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি যা তোমার সাথে আলাপ করা দরকার।
- চাচা, আপনাদের সিদ্ধান্তের কথা আমি জেনেছি। আর সে জন্যই এমতাবস্থায় মা-বোনকে নিয়ে সরাসরি আপনার বাড়িতে যাওয়া সমীচীন মনে করছিনা। তার চেয়ে বরং আপনি আমাদের বাড়িতে চলুন।
- হ্যা বাবা তুমি ঠিকই বলেছ। বিষয়টা আমি সেভাবে ভাবিনি। তোমাদের বাড়িতে আমি সেই ছাত্র জীবনে গিয়েছিলাম। তোমার বাবার সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িত।
- তাইনাকি আঙ্কেল? তাতো আগে বলেন নি।
- বলব, বাবা বলব, সবই বলব। আমাকে আগে আমার কাজ গুলো গুছিয়ে নিতে দাও।
- আঙ্কেল, ওয়াকিলকেও সাথে নিয়ে চলুন।
- না, সাদী তা হয়না।
- কেন নয় চাচা? ও না হয় জাস্ট আমাদের বাড়িটা চিনে আসবে।
- আচ্ছা তুমি যখন এত করে বলছ।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা গোপালগঞ্জের বাস বদল করে বরিশালের বাসে করে ভূরঘাটা হয়ে সাদীদের বাড়ি সাহেবরামপুরে পৌছুল। বাসের মধ্যকার ঘণ্টাদুয়েক সময় কার কিরকম কেটেছে কে জানে তবে সাদিয়ার উপর দিয়ে যে ছোটখাট একটা কেয়ামত বয়ে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে ওয়াকিলের ক্যাবলা কান্ত চাহনি আর লজ্জাবনত চেহারা সাদিয়ার কাছে বেশ লেগেছে। জীবনের এমন বাস্তবতার মুখমুখি সাদিয়াকে হতে হবে এমনটা সে কখনও ভাবেনি। সাদীর বার বার ভ্রুকুচকানো আর চিমটি কাটায় সাদিয়ার মনে হচ্ছিল, শায়লাকে সাথে নিয়ে আসতে পারলে সাদিকেও জব্দ করা যেত। তবে সে মনে মনে সিদ্ধন্ত নিয়ে ফেলেছে, বড় ভাইর এই ফাজলামর প্রতিশোধ একদিন নিবেই।
ওয়াকিল বেচারার তেমন ভাবান্তর নাই। গত কয়েকদিনে সাদী, ওয়াকিলের মন জয় করে ফেলেছে তাই সে সব সময়ই সাদীর সাথে সাথে থাকতে চায়, কিন্তু সাদিয়াকে দেখার পর সেই বন্ধনটা কেমন যেন ঢিলা হয়ে গেছে! বাপ ভাইয়ের সামনে ওয়াকিল মুখ খুলে কিছু বলতে পারেনি কিন্তু আড় চোখে কয়েকবার সাদিয়াকে দেখেছে। ব্যাপারটা অবশ্য সাদীর চোখ এড়ায়নি কিন্তু নতুন সম্পর্কের কথা চিন্তা করে সে ইগনোর করেছে।
ওয়াকিল ভেবেছিল বাড়িতে পৌছে সাদী, ওয়াকিলকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরবে, পুকুরে নেমে মাছ ধরবে, গাছে চড়ে ডাব পারবে কিন্তু সে সব কিছুই হচ্ছেনা। এখন সে ভাবছে তার আসাটাই মনে হয় ঠিক হয়নি। বিশেষ করে তার বাবা যখন এসেছে তখন তার আসা মোটেও উচিৎ হয়নি। ইচ্ছা থাকলেও সাদী হয়ত তার বাবাকে সময় দেয়ার কারণে ওয়াকিলকে সময় দিতে পারছেনা। অন্য দিকে অনার্সে পড়ুয়া সাদিয়াও কিন্তু ইচ্ছা করলে তাকে একটু সময় দিতে পারে কিন্তু সে যেন সাদীর চেয়েও বেশী ব্যাস্ত! কয়েকবার অবশ্য চোখাচোখি হয়েছে কিন্তু মেয়েটা কেমন যেন একটা অজানা লজ্জায় দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ের এমন লাজুক চাহুনি ওয়াকিলের ভালোই লাগছে, কিন্তু দুঃখ হচ্ছে একটু গল্প করতে না পারার।
দুপুর হতে আর বেশীক্ষন বাকী নেই তাই সাদী আমাজদ সাহেবকে বাড়ির দরজার পুকুরের মসজিদের ঘাটে নিয়ে গেছে গোসল করানর জন্য। ওয়াকিল যেন এমনই একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সুযোগ বুঝে ওয়াকিল আওয়াজ দিয়ে বলল আন্টি এক গ্লাস পানি দরকার অথচ সাদীর আম্মা তখন পাকের ঘরে আর সাদীয়া কিছু একটা নেয়ার জন্য ঘরে এসেছে বলে ওয়াকিল স্পষ্ট বুঝতে পারছিল। সাদীয়াও যেন এমনই একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ওয়াকিল যে বিষয়টা এখনও জানেনা তা সাদীয়া স্পষ্ট বুঝতে পারছিল তাই ওয়াকিলের মধ্যে যেমন বেশী একটা জড়তা নাই তেমনি সাদীয়াও না জানার ভান করে ওয়াকিলের সামনে আসার হিম্মৎ করল। ওয়াকিল যে পানির পরিবর্তে সাদীয়াকেই এক নজর দেখার জন্য বেশী উদগ্রীব তাও সাদিয়া স্পষ্ট বুঝতে পারছিল, কারণ কিছুক্ষণ পূর্বেই সাদিয়া নিজে বারান্দায় নাস্তা, শরবত ও পানি পাঠিয়েছিল।
সাদিয়ার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খিলে গেল। ভাবল বিয়ের আগেই ক্যাবলা কান্তটাকে একটু জব্ধ করতে পারলে খারাপ কি? যেমন ভাবা তেমন কাজ। ওয়াকিলকে জব্ধ করার জন্য সাদিয়া মনের মত করে এক গ্লাস শরবত বানাল।
(চলবে) ............
বিষয়: সাহিত্য
১৫৫৪ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
ঠিক আছে, আপনার প্রস্তাব গ্রহণপূর্বক এখানেই তাহলে শেষ। আল্লাহ হাফেজ।
বই এর জন্য ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, রাজি তো?
ধন্যবাদ।
ইনশা'আল্লাহ।
তাহলে সত্যি সত্যিই কি ব্লগে দেয়া বন্ধ করে দিব?
আল্লহা তোমার নেক দুয়া কবুল করুন। আমিন।
আর মাত্র ৪/৫টা পর্বই বাকী আছে। ভাবছি পুরটাই ব্লগে প্রকাশ করে দিব এবং মলাট বদ্ধও করব।
আপনারা যারা মুষ্টিমেয় কয়েকজন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের ভালবাসাকে পূঁজি করে বই প্রকাশ করবনা বরং তাদের অণুপ্ররণাকে সম্মান দেয়ার জন্যই কাজটা করব ইনশা'আল্লাহ।
আফরা আপুর হুকুমে যদি শেষ পর্যন্ত বই আকারে প্রকাশ করতেই হয় তাহলে দায়িত্বটা কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে। অর্থাৎ সিবিএফকে।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকুন।
ইনশা'আল্লাহ চলবে এবং এক মলাটে সবার হাতে পৌঁছনর ব্যবস্থাও হবে।
ধন্যবাদ।
অবশেষে কাঠখোট্টা দায়িত্ববান সাদীর মন বলতে কিছু আছে- যেখানে ভালোলাগার সুগভীর অনুভূতি তৈরি হয় নিরবে যা কঠিন দায়িত্ববোধের নিরীখে জেগে ওঠে অতি সচেতনতার সাথে !
সাদিয়ার বানানো মনের মত শরবতের রেসিপিটা জানতে ইচ্ছে হচ্ছে!
ভালো লাগলো এপর্বটিও! কঠিন থ্রিল এর পরে ঘটনা রোমান্টিকতার দিকে আাগাচ্ছে
এই চমৎকার ঘটনাটি নিয়ে বই বের করা হোক -
শুকরিয়া!
কথায় আছে পাগলা হাক্কা (শাকো) নাড়াইস না। পাগলায় বলে আসল কথা মনে করে দিছেন।
গল্পের ড্রাফটে শরবত ছিলনা কিন্তু পর্বটা সমাপ্ত করার খাতিরে শরবত বানালাম, প্রক্ষনেই অবশ্য ভেবেছিলাম কেউ রেসিপির কথা বলে ফেল্লেতো ধরা খেয়ে যাব কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার পাগলী আপু হাক্কাটা নাড়ালই। এখন উপায়?
ধন্যবাদ আপু।
মানুষের গন্ধ পাউ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন