মাননীয় বঙ্গ মাতা আপনার হুকুমে আমার পাড়ায় প্রতিরোধ কমিটি করতে পারিনি তবে ২১ জামায়াতীর লিষ্ট করে থানায় দিয়েছি।
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৭ মার্চ, ২০১৩, ০১:১২:১২ দুপুর
মাতা, আমরা আপনার অপদার্থ সন্তান, যার কারণে আমাদের পাড়ায় এত লোক থাকার পরেও কাউকে প্রতিরোধ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি।
প্রতিরোধ কমিটিতে কেউ নাম দিতে চাচ্ছেনা এমনকি থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটির সদস্য রিন্টু ভাইও না। পাড়া কমিটির নেতা হিসেবে আমি এবং ইউনিয়ন সভাপতি মিন্টু ভাই যিনি গত ইউপি নির্বাচনে মাত্র ২৮০০ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন তিনি মিলে কমিটি করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছি। অবশ্য একজন সাধারণ সমর্থক সিন্টু ভাই আমাদের সাথে যোগ দেয়ায় আমারা তিনজন মিলে প্রতিরোধ কমিটি করতে না পারলেও ২১ জন জামায়াতীর লিষ্ট করে থানায় দিয়েছি।
অবশ্য জামায়াতীরা যদি আমাদের লিষ্ট করে তাহলে ইউনিয়ন সভাপতি মিন্টু গ্রাম সভাপতি আমি আর থানা স্বেচ্ছাবেসক লীগ কমিটির সদস্য রিন্টু ভাই ছাড়া আর কারও নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পারবেনা। এর মানে এই নয় যে আমরা মাত্র তিনজনই আওয়ামিলীগ। যদি তাই হত তাহলে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সব সময় আমাদের এলাকায় আওয়ামিলীগের কলাগাছ গুলো এমপি হত না। এবারই শুধু আমরা নিজেদের কামড়াকামড়ির কারণে চেয়াম্যান হতে পারিনি। তাছাড়া পূর্বে বেশীরভাগ সময়ই আমাদের কেন্ডিডেট চেয়ারম্যান হেয়ছে তা ভোটেই হোক আর যেভাবেই হোক। অবশ্য এবারও আমাদের কেন্ডিডেট ঘোষণা দিয়েছিল যে সে এক ভোট পেলেও চেয়ারম্যান হবে কিন্তু জোর জবরদস্তি করে আমরা ১২০০ ভোট আদায় করলেও বিরোধী পক্ষ পেয়েছে ৪২০০ ভোট! তাছাড়া সে কিভাবে যে থানাকে ম্যানেজ করে চেয়ারম্যান হয়ে গেল বুঝলামনা।
আপনার জ্ঞাতার্থে আরএকটা কথা বলি তাহল আমরা আপনার প্রতিবেশী জেলার লোক। তাই আমাদের হুকুমেই ইউনিয়ন চলে। চেয়ারম্যানকেও আমাদের কথামত চলতে হয় যদিও সে জামায়াত বিএনপি ঘেষা।
মা, আমায় ক্ষমা করবেন কারণ আমি মাত্র ২১ জামায়াতীর নামের লিষ্ট থানায় দিতে পেরেছি। এ লিষ্টে অন্ত ২১০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকার ছিল কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। যে ২১ জনের নাম লিষ্ট করেছি তাদের নামের আগে কমপক্ষে ১০ জনের নাম বাদ দিতে হয়েছে এবং বাকীদের নাম ২১ জনের পরে অন্তর্ভূক্ত করা যেত কিন্তু রিন্টু ভাই, যে কিনা এমপি কাম পদ্মা খেক মন্ত্রীর ডান হাত সে এবং মিন্টু ভাইয়ের যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ায়ই এমনটা হয়েছে। অবশ্য আমার গাফলতিও ক্ষমার অযোগ্য।
রিন্টু ভাই আর মিন্টু ভাই এর অপারগতার বয়ান করার আগে নিজের ব্যর্থতা বয়ান করাই শ্রেয় মনে করছি।
আমার নাম পিন্টুঃ আমরা ৫ ভাই দুই বোন, মা একজন অবশ্য বাবা দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তা করেছিলেন কিন্তু মেঝভাই এর কারণে যে চেষ্টায় তিনি ব্যার্থ হয়েছিলেন। আমার বাবার জীবনে আর কোন ব্যার্থতা নেই। তিনি মুসলিমলীগ করতেন স্বাধীনতার পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হয়েছিলেন বিনিময়ে পানির দরে একটা হিন্দু বাড়ির মালিক হয়েছিলেন এবং আমৃত্যু তিনি গ্রামের হর্তা কর্তা ছিলেন শেষে জবরদখলকৃত হিন্দু বাড়ির জঙ্গল সাফ করতে গিয়ে এডিস মশার কামড়ে পরপারে গেছেন।
তিনি জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে কোন সময়ই পরাজিতদের সমর্থন করেন নি, এটা ছিল তার অন্যতম গুণ। পাঁচ ভাই এর মধ্যে আমি চতুর্থ এবং আমিই একমাত্র বাবার গুণে গুণান্বিত এবং বাবার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ এবং এলাকায় থেকে গণমানুষের সেবা করে যাচ্ছি(?)। বাকী চার ভাই পেয়েছে মায়ের আদর্শ। তারা লেখা পড়া করে কেউ ব্যবসা করছে আবার কেউ সরকারী চাকুরী করছে। আমার সুবিধাবাদী বাবার আদর্শের বিরোধী জামায়াতী আদর্শ আমার বড় ভাই ঢাকায় পড়া লেখা করা অবস্থায় প্রথমে গ্রহণ করে এবং ধিরে ধিরে মা সহ পুরা পরিবারকে গ্রাস করে ফেলে কিন্তু শত চেষ্টা করেও আমাকে ঘায়েল করতে পারেনি। বড় ভাই হিসেবে তাকে অবশ্যই সম্মান করি কিন্তু তাই বলেতো আর বঙ্গ বন্ধু বঙ্গ মাতা সর্বপরি নিজের বাবার আদর্শ ত্যাগ করতে পারিনা।
যে ২১জনের লিষ্ট করেছি তার একনম্বরে আসা দরকার ছিল আমার মায়ের নাম তার পরে বড় ভাই মেঝ ভাই সেজ ভাই এবং ছোট ভাই এর নাম এমনকি দুই বোন ও ভগ্নীপতির নামও আসতে পারত। কিন্তু গর্ভধারিনী মা এবং রক্তের বন্ধন ছিন্ন করতে না পারার কারণে ভাইদের নাম লিষ্ট ভুক্ত করতে পারিনি। তাছাড়া প্রতিবেশী এক বড় ভাই যে কিনা আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু এবং চাচাত ভাবির বড় ভাই ও যাদের বাড়িতে আমাদের জুমা মসজিদ তাকে এবং তার তিন ভাইকেও লিষ্ট ভুক্ত করতে পারিনি। অবশ্য তারা তিন ভাই বিদেশে থাকে। দুই জন সৌদি আরব আর একজন ইটালীতে। তাদের লিষ্টভুক্ত করতে না পারা শুধু আমার ব্যার্থতা না বরং মিন্টু ও রিন্টু ভাই এর ও হাত আছে। সবার বড় আবু জারীর ভাই আমার বেয়াই, বড় ভাই এর বন্ধু, মিন্টু ভাই এর ক্লাশমেট এবং রিন্টু ভাই এর চাচাত ভাই এবং গ্রামের সবার কাছে ভদ্র বলে পরিচিত, তাছাড়া তার শ্বাশুড়ির মামা বর্তমানে আমাদের জেলার ডিসি। সব মিলিয়ে তিনি এবং তার তিন ভাইকে লিষ্ট ভুক্ত করতে পারিনি।
রিন্টু ভাই এর দুই চাচাত ভাইকে লিষ্টু ভুক্ত করেছি বলে সে লিষ্টে স্বাক্ষর করেনি। মিন্টু ভাই এর ফুফাত ভাইকে রেখেছি লিষ্টের এক নম্বরে অশ্য এর বিনিময়ে সে তার দুই ভগ্নীপতির নাম লিষ্ট থেকে বাদ দিয়েছে।
সিন্টু ভাইরা তিন ভাই সেই সবার বড় গ্রামে থাকে কিন্তু সেও আমার মত দূর্ভাগা! তার মা এবং ছোট দুই ভাইও জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত কিন্তু আমরা তাদের নামও লিষ্টে দিতে পারিনি। অবশ্য তারা গ্রামে থাকেনা। দুইজনই সরকারী চাকুরী করে এবং তাদের মাও তাদের সাথে শহরে থাকে।
মা, আপনি চিন্তা করবেন না। লিষ্টে নাম দিতে না পারলেও আপনার নির্দেশ পেলে মা বাবা ভাই বোন দেখবনা বরং আপনার নির্দেশ তামিল করব। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তাদের কাছে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত মা বাবার কোন মূল্য নাই। অবশ্য জামায়াতীরা যদি যেহাদের ডাক দেয় তাহলে আমাদের নাস্তিক মোর্তাদ বলে দুনিয়া ছাড়া করতে পিছ পা হবেনা। যার প্রমাণ বদরের যুদ্ধ।
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ছেলে আব্দুর রহমান তার বাবাকে তলোয়ারের আওতায় পেয়েও ছেড়ে দিয়েছিল কিন্তু আবুবকর (রাঃ) বলেছেন তিনি যদি তার তলোয়ারের আওতায় নিজের ছেলে আব্দুর রহমান কে পেতেন তাহলে নাকি খাতির করতেন না যেমনটা নুহ (আঃ) তার ছেলে কেনানকে মহা প্লাবনের সময় কিস্তিতে তুলেননি এবং লুৎ (আঃ) পাথর বৃষ্টির হাত থেকে নিজ স্ত্রীকে পর্যন্ত বাঁচাবার চেস্টা করেণ নি!
ইসলামপন্থীরা তাদের দ্বীনি ভাই বাদে রক্তের বন্ধনকেও মূল্যায়ন করেনা, এটা নাকি কুরআনের শিক্ষা। তাহলে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকেরা মা, ভাইবোন হিসাব করব কেন?
ভদ্রতার খাতিরেই আপাতত মা বড় ভাই এবং আত্মীয় স্বজনের কয়েকজনকে লিষ্ট ভুক্ত করতে পারলাম না তবে আপনার নির্দেশ পেলে কাউকে খাতির করবনা।
জয় মা, জয় মা!
বঙ্গ মা কি?
জয় হো।
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। জামায়াতকে প্রতিহত করতে হবে, যাতে তারা জানমালের ক্ষতি করতে না পারে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।’
জামায়াতের নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ শান্তি চান। তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান। জামায়াতের নতুন প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস পড়তে হবে। ইতিহাস পড়লে তারা লজ্জা পাবে। জামায়াতের সঙ্গে থাকলে এই প্রজন্মের ভবিষ্যত্ নষ্ট হবে।’ শেখ হাসিনা জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য তাদের অনুসারী নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানান।
বিষয়: রাজনীতি
১৯৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন