ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (ষষ্ঠ্যদশ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৫ মে, ২০১৫, ০৮:৩৯:৩৮ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (ষষ্ঠ্যদশ পর্ব)
পূর্ব শূত্রঃ [url href="http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/1647/Abujarir/64703#.VUjVsPBN1zk" target="_blank"দেখ সাইয়্যেদ? তুমি আমাকে এতটা কাপুরুষ ভাবলে কি করে? আমি এতদিন তোমার ভয়ে মনের ইচ্ছা প্রকাশ করিনি। মানুষিক ভাবে প্রস্তুত হয়ে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য আমি সেই প্রথম দিন থেকেই সুযুগের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ যখন সুযোগ পেয়েই গেছি তখন আর পিছনে ফিরে যাবনা। চল বন্ধু চল।[/url]
সেই রাতে সাইয়্যেদের সাহসিকতার কারনেই কাউকে কিছু না বলেই আমরা দুজন বাগের হাটের মোরল গঞ্জ হয়ে সুন্দর বনে জিয়া উদ্দিনের সাথে দেখা করি। জিয়া উদ্দিন সাহেব আমাদের দুজনকেই গভির বনে ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেন। ট্রনিং ক্যাম্পেই মূলত তোমাদের সাথে পরিচয়। ট্রেনিং এ সাইয়্যেদই ছিল আমাদের মধ্যে সবার সেরা। যুদ্ধের দিন গুলোতে সাইয়্যেদের উৎসাহে এবং তার ঈমামতিতে আমারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তাম। আমাদের কমান্ডরা জিয়া উদ্দিন সাহেবও মাঝে মধ্যে আমাদের সাথে সাইয়্যেদের ঈমামতিতে নামায পড়তেন। কেউ যখন শহীদ হত তখন শহীদের জানাজাও কিন্তু সাইয়্যেদই পড়াত।
আমারা কেন যুদ্ধে করছি এমন প্রশ্ন আমাদের সবার মাথায়ই ঘুরপাক খেত, সাইয়্যেদের যুক্তি ছিল ইসলামী সেন্টিমেন্ট নিয়ে পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছিল কিন্তু দেশ বিভাগের পর ইসলামী শাসন চালু না হওয়ায়ই মূলত আমরা সুশাসন, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হই। শুধুকি তাই? একই সাথে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক গোলামেও পরিণত হই, আর সেই কারনেই মূলত আজকে আমরা অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছি। আমার মতও ছিল সাইয়্যেদের মতই।
ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তু হয়ে মারা যাওয়া আবুল আর হরিপদ হালদার সহ অন্য কয়েকজনের যুক্তি ছিল, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করাই ঠিক হয়নি। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগ ছিল একটা সাম্প্রদায়িক চিন্তা। বিতর্কের এক পর্যায় আবুল ও সাইয়্যেদ ব্যক্তিগত তর্কে জড়িয়ে পরে এমনকি আবুল, সাইয়্যেদকে দেখে নেয়ার হুমকি পর্যন্ত দেয়। আবুলই শেষে সাইয়্যেদের বিরুদ্ধে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে কমান্ডারের কান ভাড়ি করে এবং কিছু ভুয়া স্বাক্ষপ্রমাণও হাজির করে, যা পরে আমিও বুঝতে পারি, কিন্তু কমান্ডারের অর্ডারে আমাকেই তার উপর গুলি চালাতে হয়!
বন্ধুত্বের টান আর নিরপরাধ হওয়ার কারণেই কিনা জানিনা, তবে আমি সাইয়্যেদের কপালে গুলি চালাতে পারিনি। আমি যে সিস ফায়ার করব সেটা সাইয়্যেদও জানত না আর আমারও এরাদা ছিলানা কিন্তু ট্রিগার চাপতে গিয়ে এমনটাই হয়ে গিয়েছিল। আসল কথা হল রাখে আল্লাহ মারেকে?
শুট হতেই সাইয়্যেদ বলেশ্বর নদীতে পরে যায়। খড়শ্রতা বলেশ্বর নদীতে তখন চলছিল ভাটার টান। প্রবল বেগে নদীর পানি সমুদ্রের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। মুহুর্তেই সে কোথায় হারিয়ে গেল আমরা বুঝতেই পারিনি। সহযোদ্ধারা ভাবল কেল্লা ফতেহ, আর আমার মনে হচ্চিল মক্কা অনেক দূরে। সাইয়্যেদ জীবিত ঘরে ফিরতে পারবেকিনা জানিনা তবে আমার গুলি যে তার শরীর ভেদ করেনি সেব্যাপারে আমি ছিলাম নিশ্চিৎ। তোমরা সকলে ভেবেছিলে গুলি খেয়ে সাইয়্যেদ নদীতে পরে গিয়েছে এবং সলিল সমাধি হয়েছে।
যুদ্ধ শেষে বিজয়ী বেশে যখন বাড়িতে ফিরে আসি তখন আবার আমাদের বাড়িতেই সাইয়্যেদকে পেয়ে যাই। সে যে কি আনন্দের তা বলে বুঝাতে পারবনা। আমি যে সিস ফায়ার করব সেটা না জানা থাকলেও সাইয়্যেদের আত্ম বিশ্বাস ছিল যে আমি তাকে গুলি করব না। সে হিসেবেই সে প্রস্তুতও ছিল। ট্রিগার দাবাতেই মেশিনগানটা যখন গর্জে উঠল অমনি গগণ বিদারী চিৎকার দিয়ে সাইয়্যেদ নদীতে পরে গিয়েছিল। তারপর কি হয়েছে সে নিজেও জানেনা। তবে একদিন পর সে নিজেকে বঙ্গপ সাগরের কোলে জেগে ওঠা দুবলার চরে এক জেলে পল্লীতে আবিষ্কার করে। পরে জেনেছে যে সে জেলেদের জ্বালে অচেতন অবস্থায় উঠে এসেছিল। জেলেরা সাধারণত ভাটার অপেক্ষায় থাকে। সমুদ্রের দিকে ছুটে চলা খড়শ্রতা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে। সেই জেলেরাই তাকে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত তাদের নৌকায় রেখেছিল। জেলেরা তার পরিচয় পেয়ে তাকে নিজেদের দায়িত্বে কাশিয়ানি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌছে দেয়। কিছুটা সুস্থ্য হলে আমার বাবা খবর পেয়ে সাইয়্যেদকে বাড়িতে নিয়ে আসে।
স্বাধীন দেশে আবার সবাই আশায় বুক বেধে নবদ্দোমে কাজ শুরু করে। একে একে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা খুলে যায় এবং পূণরদ্দমে আমাদের লেখা পড়া শুরু হয়ে যায়। আমাদের বাড়িতে থেকেই সাইয়্যেদ দাওরায়ে হাদীস এবং পরে কাশিয়ানী আলীয়া মাদ্রাসা থেকে পর্যায় ক্রমে আলেম, ফাজিল ও কামিল পাশ করে। জয় নগর উচ্চবিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করে আমি ভর্তি হই ইয়ার আলী খান ডিগ্রী কলেজে এবং সেখান থেকেই ইন্টারমিডিয়েট ও গ্রাজুয়েশান করে পুলিশের চাকুরী নেই। চাকুরীর খাতিরে আমি চলে যাই ঢাকায় আর সেইয়্যেদ আরবীর প্রভাসক হিসেবে মাদারীপুর আলীয়া মাদাসায় চাকুরী নিয়ে সেখানে চলে যায়। তার পরও কয়েক বছর ওর সাথে পত্র যোগাযোগ ছিল কিন্তু নিজ নিজ সংসার ও ব্যস্ততার কারণে তা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি।
- আচ্ছা তাহলে সেই সাইয়্যেদ মাল্লাই সাদীর বাবা?
- হ্যারে! দেখ জামান আমাদের তিনটা পরিবারই কোন না কোন ভাবে মাটি মানুষ আর মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত। সাইয়্যেদ আমাদের মাঝে নাই, তুমি অচল আর শাকিলের মৃত্যুতে আমার একটা হাত ভেঙ্গে গেছে। শাকিল শহীদ হয়েছে সে জন্য দুঃখ করিনা কিন্তু রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে আমরা সাদীর মত একজন মেধাবী, সৎ, সাহসী ও জাতির প্রিত কমিটেড তরুণের জীবনটা এভাবে বিনষ্ট হতে দিতে পারিনা।
আমরা যে উদ্দেশ্যে সেদিন মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিলাম আজ ঠিক একই কারণে দেশ ও জাতিকে মুক্তি দেয়ার জন্যই সাদীরা লড়াই করছে। সাদীকে আমার চেয়ে তোমরাই বেশী জান, আমার সাথে তো দু’দিনের পরিচয়। শাকিলের পিছনে ছেলেটা যে খাটুনিটা খেটেছে, আর সে যার সন্তান তাতে ওর জাত চিনতে আমার অন্তত ভুল হয়নি।
যে সাদী আমার শাকিলের জন্য এতকিছু করল সেই সাদীকেই আমার দল আর দলের সরকারের লোকেরা শাকিল হত্যা মামলায় আসামি করল, তাও আবার আমাকে না জিজ্ঞেস করেই! অথচ প্রকৃত দোষিদের সবাই থেকে যাচ্ছে পর্দার অন্তলে। সরকারী চাকুরী যতদিন করেছি ততদিন বিবেক বন্দক দেয়াছিল, এখন তা থেকে মুক্ত। তাই ওয়াদা করছি জীবনের বাকী দিন গুলো আর বিবেকের বিরুদ্ধে কোন কাজ করব না।
- হ্যারে আমজাদ তুমি ঠিকই বলেছে। তি এখন কি রতে চাও?
- তিনটা পরিবারের দায়িত্বই যখন আমার উপর তখন সিদ্ধান্তও আমাকেই নিতে হবে। আশা করি তোমরাও আমার সাথে একমত হবে। আমি ভাবছি সাদীর সাথে শায়লাকে বিয়ে দিব আর সাদিয়াকে ওয়াকিলের সাথে বিয়ে দিয়ে আমার পুত্রবধূ করব।
(চলবে) ..................
বিষয়: সাহিত্য
১১২৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উৎসাহ দেয়া এবং সাথে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করায় আন্তরিক মুবারকবাদ।
দেখা যাক কে জামাই হয় আর কে ঘর জামাই রয়।
এতোদিন পর বিয়ের ফুল ফোটার সুবাস পাওয়া গেলো!
সত্য সমাগত মিথ্যা দূরীভূত! ভালো লাগলো পর্বটি!
ফুলের গায়ে এখনও বহুত কাটা রয়ে গেছে।
ধন্যবাদ আপু।
হ্যা, সমসাময়িক এবং ঘটনাবহুলই।
ধন্যবাদ।
সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শুরু থেকে সাথে থেকে নিয়মিত উৎসাহিত করার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা।
একদম খাটি কথা বলেছেন আপু। এটাই বর্তমান সমাজের আসল চিত্র।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন