ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (চতুর্দশ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০৮:৫১:৩৭ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (চতুর্দশ পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ
- চিনতাম মানে? সে আমার জীবনের একটা উল্লেখ যোগ্য অধ্যায়ের সাথী। সে তো আমার সাথে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। তার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া সম্পর্কে তুমি কি কিছু জান?
- না চাচা।
- তাহলে শোন সেই কথা।
- চাচা তিনি মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রাজাকারের অপবাদ নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। এখন ওগুলো শুনে কি লাভ বলুন? তাছাড়া আমার ঢাকায় যাওয়া এখন একান্ত জরুরী। শায়লার বাবা মায়ের যে কি অবস্থা আল্লাহু আলম, তাছাড়া আমার মা-বোনও সেখানে উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন।
- তুমিতো যেতে চাচ্ছ, এবং যাওয়াও উচিৎ কিন্তু তোমার নামে যে ইতি মধ্যেই শাকিল হত্যার মামলা হয়েছে সে কথা কি তোমার খেয়াল আছে? তোমাকে হাতের নাগালে পেলে কি করবে জানো?
- জানি চাচা, সবই জানি, কিন্তু আমার কাছে নিজের জীবনের চেয়ে মা-বোন আর শায়লার বাবা-মায়ের জীবনের মূল্য অনেক বেশী।
- আর তোমার জীবন এখন আমার জীবনের চেয়েও বেশী মূল্যবান। তুমি আমার বন্ধু সাইয়্যেদ আহম্মদের ছেল, আর তার অবর্তমানে আমার ছেলে। তুমি আজ থেকে আমার ছেলে শাকিলের স্থান দখল করে আছ। আমি কিছুতেই তোমাকে কোথাও যেতে দিবনা। ঢাকায় আমি যাব, আমি...।
- আপনি এসব কি বলছেন চাচা? শাকিল ভাইয়ের ইন্তিকালে আপনি এক নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে আছেন, চাচী আম্মা ও ওয়াকিল শোকাহত, তাছাড়া দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে শোক প্রকাশ করতে, এমতাবস্থায় আপনি ঢাকায় যাবেন, তা কিছুতেই হতে পারেনা।
- দেখ বাবা, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ডিবি কমিশনার। আমার শরীরের রক্ত এখনও যুবকদের মতই টগবগ করছে। আমি যা বলছি বুঝে শুনেই বলছি। তোমার উপর হুকুম চালানোর অধিকার আল্লাহ্ই আমাকে দিয়েছেন। আমি যতদিন বেচে থাকব ততদিন ওয়াকিলের উপর যেমন আমার হুকুম চলবে, তেমনি তোমার উপরও। অতএব, যখন যা বলব তখন তাই করবে। এখন তোমার কাজ হল বিশ্রাম করা। দুপুরের পর আমি রওয়ানা দিয়ে ঢাকায় যাব। এটাই আমার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
- আচ্ছা বাবা আপনি যা ভালো মনে করেন।
দায়িত্ব বলে কথা, শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমজাদ শেখ নিজেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন, আর যাবার সময় ছেলে ওয়াকিলকে সাদীর মেহমানদারির প্রতি তাকীদ দিয়ে গেলেন।
ঢাকায় যখন তিনি শায়লাদের বাসায় পৌছুলেন তখন রাত আটটা। শায়লাদের বাসায় যেন কবরের নিরবতা। ছেলে মারা গেছে আমাজাদ শেখের কিন্তু বেশী বিচলিত ও বিব্রত জামান সাহেব। একেতো নিজে অচল, তার পর একমাত্র মেয়ে শায়লা যেন একটা জিন্দা লাশ। নতুন জীবনে প্রবেশের আগেই প্রস্থান! শায়লার মায়ের মুখেও কোন কথা নাই। সাদীর মা বোন না থাকলে, এ দুদিনে হয়ত বাসার সবাই না খেয়েই মারা যেত।
আমজাদ শেখের আগমনে জামান সাহেবের ভিতরে কিছুটা প্রাণের ছোয়া লেগেছে। মিসেস জামানও আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠার চেষ্টা করছেন। শায়লা এখনও আদো অবচেতন। সাদিয়া দড়জার আড়াল থেকে সালাম দিয়ে তার ভাই সাদীর খবর জানতে চাইল। আমজাদ শেখ সাদীকে তার বাড়িতে নিরাপদে রেখে আসার কথা জানালে সাদিয়া ও তার মা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল।
গত দুদিনের মত আজও সাদিয়া আর তার মা মিলে ঝটপট সবার জন্য খাবার তৈরী করে টেবিলে সাজিয়ে রাখলেন। সাদিয়া বার বার সবাইকে টেবিলে আসার তাগাদা দিচ্ছিল কিন্তু কেউ নড়াচড়ার নামটিও করছিলনা। সাদিয়া শেষ পর্যন্ত অনেকটা জোড় করেই শায়লাকে খাবার টেবিলে নিয়ে এসে বসিয়ে দিয়ে আবার সবাইকে তাগাদা দিতে লাগল। এবার একে একে সবাই এসে বসল। কিন্তু সাদির মা ইতস্তত করল। কিন্তু জামান সাহেব ও আমজাদ শেখের পিড়াপিড়িতে সেও না এসে পারলনা। খেতে খেতে আমজাদ শেখই কথা তুল্লেন।
- মাশা’আল্লাহ এত সুন্দর ও সুস্বাধু খাবার কে রান্না করেছে, জামান?
- শেখ, আগে খাওয়া শেষ কর তার পর বলব।
- না বন্ধু অতক্ষন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবনা।
- সাদিয়া তুমিই বল কে রান্না করেছে তুমি, না তোমার আম্মা?
- নারে ভাই, আমার কি আর অত গুণ আছে নাকি? আমি গ্রামের আধিকালে মানুষ।
- কিরে সাদিয়া তুমি লজ্জা পাচ্ছ কেন? বুঝেছি এটা তোমারই কাজ, মাশা’আল্লাহ।
- হ্যারে আমজাদ, মেয়েটা বড়ই গুণী, লেখা পড়ায়ও ভালো। মাদারীপুর নাজিম উদ্দিন কলেজে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হয়েছে।
- হ্যা, গুণী হবেইনা বা কেন? দুইদিনে সাদিকে যতটা গুণী এবং কর্মঠ ও সৎ হিসেবে পেয়েছি, এ যুগে অমন ছেলে ভাগ্যের ব্যাপার। আসলেই ভাবি আপনি খুব ভাগ্যবান। আপনার ছেলে-মেয়ে দুটি আসলেই আল্লাহর সেরা দান। আর সেরা হবেই বা না কেন? ওরা যে শ্রষ্ঠ্য মানুষেরই সন্তান। সাদি ও সাদিয়ার পিতৃ পরিচয় জানিস জামান?
- আসলে সাদির সাথে আমাদের দীর্ঘ্য দিনের পরিচয় কিন্তু ওর তেমন কোন পরিচয়ই আমাদের জানা নাই।
- যদি জানতি তাহলে বুঝতি ওর বাবা যেমন গুণি ছিলেন তেমনই তার সন্তানরাও গুণী।
- আচ্ছা বলত শুনি।
- তোমার নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা, মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেয়ার সেই দিন গুলোর কথা।
- হ্যা তা তো মনে আছেই। আমাদের কমান্ডার ছিলেন জিয়াউদ্দিন, সুন্দর বনের ভিতরে যখন ট্রনিং নিচ্ছিলাম তখন বড় বড় মশার কামড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা।
- আচ্ছা বলত, আমাদের গ্রুপে কয়জন ট্রেনিং শুরু করেছিলাম আর ট্রেনিং শেষে কয়জন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলাম?
- ট্রেনিং শুরু করেছিলাম ২০ জনে, যুদ্ধও করছিলাম ২০ জনেই কিন্তু হাবিব, হাসান, আমীর যুদ্ধ করতে করতে বীরের মত শহীদ হয়েছিল, আবুল নামের একজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল আর সাইয়্যেদ নামের মাদ্রাসা পড়ুয়া এক মুক্তিযোদ্ধাকে গুপ্তচর বৃত্তির সন্দেহে আমরা হত্যা কের নদীতে ফেলে দিয়েছিলাম। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত বিজয়ী বেশে ফিরে এসেছিলাম আমরা দুইজন সহ মোট ১৫ জন। কি ঠিক বলিনি?
- হ্যারে দোস্ত, তুমি ঠিকই বলেছে। কিন্তু তুমি কি জান সাদি এবং সাদিয়ার গর্বিত পিতা কে?
- আরে হেয়ালি করনাত, কে? খুলে বল।
- মাওলানা সায়্যেদই হল সাদি এবং সাদিয়ার গর্বিত পিতা।
- কি বলছ? তা কিভাবে সম্ভব? তাকেতো তুমিই গুলি করেছিলে।
- হ্যা আমিই গুলি করেছিলাম, তবে তার মাথায় না, কানের পাশ দিয়ে বাতাসে! আর হ্যা, সে অবশ্যই গুপচরের কাজ করেছে কিন্তু পাক বাহিনির পক্ষে নয় বরং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। আর সেই লোকটাকেই সারজীবন রাজাকারীর অপবাদ বয়ে বেড়াতে হয়েছে, এমনকি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের অপবাদ নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে!
- কই আগেতো কখনো ঘটনাটা বলনি। দুঃখ জনক হলেও ভেরি ইন্টারেষ্টিং তো, পুরা ঘটনাটা বল।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৯০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপু।
ভালো থাকুন।
সঠিক ইতিহাস জানা থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ধোঁয়াশা থেকে নিস্তার পেত!
শুকরিয়া ভাই!
আক্তারুজ্জামান সাহেবের কাছে একমন একজন কিছুদিন আগে ভূপাতিত হয়েছেন কিন্তু তার পরেও লজ্জা হয়নি। ওরা লজ্জাহীন প্রাণী।
ধন্যবাদ আপু।
এত কিছু নিয়ে কেমন করে ছিলেন। আল্লাহর শোকর।
আপনাকে পেয়ে যারপরনায় খুব ভালো লাগছে।
ধন্যবাদ।
আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা তিনি যেন নিজ কুদরতে তাঁর একান্ত গোলামদের হাতে এর চেয়েও বেশী শিক্ষনীয় লেখা বেশীবেশী লেখার তাওফিক দেন।
আমিন।
ধন্যবাদ আপু।
সাথে থেকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আন্তরিক মোবারক বাদ আপু।
মন্তব্য করতে লগইন করুন