ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (ত্রয়দশ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৩ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:৩১:০৮ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (ত্রয়দশ পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ ৪ ঘণ্টার আপ্রাণ চেষ্টার পরেও চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যার্থ করে দিয়ে শাকিল চলে গেছে না ফেরার দেশে! ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। ছাত্র সমিতির নেতা আমিনুল ইসলাম আমিনকে যে টিম গ্রেফতার করেছিল সে টিমে এসআই শাকিল ছিলনা। গ্রেফতারের এক সপ্তাহ আগেই শাকিল ছুটি নিয়েছিল অতছ সেই এস আই শাকিলকেই আমিনের এনকাউন্টারের অভিযোগে জীবন দিতে হল! অন্য দিকে যে আলাউদ্দিন এসআই শাকিলের গাড়ির পথ করে দিয়েছিল এবং জনতার আক্রমণ থেকে অগ্নিদগ্ধ শাকিলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল সেই আলাউদ্দিনকেই প্রধান এবং আরও চল্লিশ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০০ জনের নামে সরকার দলের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে অথচ মূল অপরাধীরা শুধু ধরাছোঁয়ার বাহিরেইনা বরং তাদের নাম পর্যন্ত কেউ নিচ্ছেনা! একেই হয়ত বলে, এক ঢিলে বহু পাখি শিকার! এ পর্যন্ত আমিনুলের নানা এমাজউদ্দিন মোল্লা সহ ত্রিশজন কথিত আসামিকে শ্রীনগর থানা পুলিশ, গ্রেফতার করেছে। পুরা এলাকায় অভিজান চলছে, ফলে এলাকায় থথমে ভাব বিরাজ করছে। ঢাকা মাওয়া মহাসড়কের পার্শ্বের কলাপারা, পাতাবাগ, ষোলঘর, আটপারা, হাসারা সহ প্রায় সকল গ্রামগুলিই ইতিমধ্যে পুরুষ শূন্য হয়ে পরেছে।
আসামিদের নামের তালিকা পড়তে গিয়ে সাদীর চোখ আটকে গেল। ৩৫ নম্বর আসামি হিসেবে তার নামও আছে! সাদীর নাম শুনে আমজাদ শেখ ঘাবড়ে গেলেন। আসলে এপর্যন্ত সাদীর পরিচয়ই জানা হয়নি আমজাদ শেখের।
- আচ্ছা বাবা তোমার নামই কেবল শুনে আসছি অথচ তোমার পরিচয় কিন্তু এখনও জানা হয়নি।
- বাবা, ওনার পরিচয় আমি দিচ্ছি। এই দেখুন গত সপ্তাহের নয়া দিন পত্রিকার খবর, ‘ছাত্র সমিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদী সাইয়েদ আইন বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম’।
- মাশা’আল্লাহ! তা বাবা তোমাদের বাড়ি কোথায় আর শায়লাদের সাথে তোমার সম্পর্কই বা কি?
- আসলে শায়লাদের সাথা আমার কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এক সময় আমি শায়লার গৃহ শিক্ষক ছিলাম। ছাত্র সমিতির পক্ষে ফুলার রোডে, রাতের বেলায় চিকা মারার সময় শায়লার বাবা জামান সাহেবের গোয়েন্দা টিমের হাতে গ্রেফতার হই। সেই ভয়ঙ্কর রাতে এঙ্কাউন্টারের জন্য আমাকে যখন জম টুপি পরিয়ে শুটার পুলিশ নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল তখন ওনার মেয়ের ভালো রেজাল্টের পিছনে আমার অবদান আছে বিবেচনায় ওনার প্রতি আল্লাহর রহম নাযিল হয় আর উনি সেদিন আমাকে ক্রোস ফায়ারে না দিয়ে ছেড়ে দেন অবে তার মেয়েকে পড়াতেও নিষেধ করে দেন। আর সেদিন থেকেই ওনাদের সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ওদের সাথে আমার আর কোন যোগাযোগ ছিলনা বলে শায়েলার বাবার যে হার্ট এটাক হয়েছে তাও আমি জানতাম না। গত সপ্তাহে শায়লার বিয়ের দাওয়াত পাই, সাথে সাথে সকল আয়োজনের দায়িত্বও। আমার মা এবং বোনও এখন শায়লাদের বাসায়, সেজন্য আমাকে এখনই ঢাকায় যেতে হবে চাচা। আশা করি আর বাঁধা দিবেন না। সময় করে আবার এসে শাকিল ভাইয়ের কবর জেয়ারত করে যাব, আর আপনার সাথে দেখা করব ইনশা’আল্লাহ।
- আচ্ছা, আচ্ছা! এখন আমার মনে পরেছে। গোয়েন্দা পুলিশের সেই টিমে আমিও ছিলাম। আহা! তোমাদের মত কত নিরহ ছেলেইযে রাজনীতির বলি হচ্ছে। কেনো যে তোমরা এগুলো কর?
- চাচা, আপনি যখন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তখন আপনার বয়স আমাদের চেয়েও কম ছিল, তাইনা? যাদের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, তারাকি আজও মুক্ত হতে পেরেছে? পারেনি, তাই না? আপনাদের শুরু করা অসমাপ্ত কাজই মূলত আমরা এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। আপনারা যে সামাজিক ন্যায় বিচার, অর্থনৈতিক আর সংস্কৃতিক গোলামি মুক্ত একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই বাংলাদেশ গঠনের কাজকে এগিয়ে নেয়াকে আমরা আমাদের দায়িত্ব মনে করছি। আপনাদের উত্তরসূরি যারা হতে পারত তারা আপনাদের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে বরং হানাদার বাহিনির অসমাপ্ত খুন,ধর্ষন আর রাহাজানির নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে! চাচা, এই জাতির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের হেফাজতের দায়িত্ব যাদের নেয়ার কথা ছিল তারা গাফলতের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ায় সেই দায়িত্ব বাধ্য হয়েই আমাদের কাধে তুলে নিতে হেয়েছ। চাচা, জাতি গঠনের সেই গুরু দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাধে তুলে নিয়ে কি আমরা বড় অন্যায় করে ফেলেছি? যদি না করে থাকি, তাহলে সরকার আমাদেরে নিশ্চিহ্ন করার আত্মঘাতি খেলায় কেন মেতে উঠেছে, বলবেন কি?
- হ্যা বাবা তুমি ঠিক বলেছ। ১৬ই ডিসেম্বর’১৯৭১ সালে আমাদের যে বিজয় হয়েছে তা ছিল মুক্তির প্রথম ধাপ, এখনও যে অনেক পথ বাকী। মজার বিষয় হল তোমাদেরকে এতদিন স্বাধীনতা বিরোধীই ভাবতাম কিন্তু আজ তোমার কথা গুলো শুনে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এতদিন তোমাদের সম্পর্কে যে ধারণা ছিল তা তুমি এক মূহুর্তেই বদলে দিলে! দোয়া করি বাংলার জনগণের মুক্তির যে আন্দলন তোমরা শুরু করেছ তা যেন মঞ্জিলে মকসুদে পৌছায়। তা তোমাদের বাড়ি কোথায়? তোমার বাবাইবা কি করেন?
- আমাদের বাড়ি মাদারী পুর জেলার কালকিনি থানার সাহেবরামপুর গ্রামে। আর বাবা? সে’ত আর এক ইতিহাস। তিনি নাকি যুদ্ধাপরাধী ছিলেন? কল্প কাহিনী রচনা করে তাকে নানা ভাবে হয়রানি করা হচ্ছিল। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নানান অপবাদ, হয়রানি, থানা পুলিশ করতে করতে গত বছরের শেষের দিকে এক দিন আমাদের দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে চলে গেছেন।
- তোমার বাবাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হল কেন?
- কেন আবার? আলেম বলতে যাদের বুঝায় তাদের কাউকেই কি সরকার রেহাই দিচ্ছে? পাইকারী দরে সব আলেম ওলামাইতো এখন রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, হোকনা সে মুক্তি যোদ্ধা।
- কি যেন নাম বল্লে তোমাদের গ্রামের?
- সাহেবরামপুর।
- সাহেবরামপুর? আচ্ছা তুমিকি, সাইয়্যেদ আহম্মদ সাহেব কে চিন?
- আপনি কোন সাইয়্যেদ আহম্মদ সাহেবের কথা বলছেন জানিনা, তবে আমার বাবার নামও সাইয়্যেদ আহম্মদ, মাওলানা সাইয়্যেদ আহম্মদ।
- মাওলানা সাইয়্যেদ আহম্মদ, মাদারীপুর কামিল মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল, মাদারীপুর জেলা ইসলামী সংস্থার সভাপতি। এম আই কারেক্ট মাই সান?
- হ্যা আঙ্কল আপনি ঠিকই ধরেছেন। আপনি তাকে চিনতেন নাকি?
- চিনতাম মানে? সে আমার জীবনের একটা উল্লেখ যোগ্য অধ্যায়ের সাথী। সে তো আমার সাথে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। তার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া সম্পর্কে তুমি কি কিছু জান?
- না চাচা।
- তাহলে শোন সেই কথা।
(চলবে)....
বিষয়: সাহিত্য
১৪২০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ।
শুকরিয়া আপনাকে!
ধর্মহীন সেকুলার আর নষ্ট বামেরা সংস্কৃতিক অংগনে যেঁকে বসেছে। ওরা যা গেলাচ্ছে জাতি তাই গিলছি আর প্রকৃত সত্য সর্বদাই পর্দার অন্তরালে থেকে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে পর্দা হটিয়ে প্রকৃত সত্যকে আলোয় নিয়ে আসা যাতে সবাই সম্ভিত ফিরে পায়।
ধন্যবাদ আপু।
সুন্দর হৃদয়গ্রাহী লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধর্মহীন সেকুলার আর নষ্ট বামেরা সংস্কৃতিক অংগনে যেঁকে বসেছে। ওরা যা গেলাচ্ছে জাতি তাই গিলছি আর প্রকৃত সত্য সর্বদাই পর্দার অন্তরালে থেকে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে পর্দা হটিয়ে প্রকৃত সত্যকে আলোয় নিয়ে আসা যাতে সবাই সম্ভিত ফিরে পায়।
ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ বদ্দা।
শুরু থেকেই সাথে থেকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন