ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (একাদশ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০২ এপ্রিল, ২০১৫, ০৮:৩৪:৩৬ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (একাদশ পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ ২০ ব্যাগ রক্তের মধ্যে ২ ব্যাগ রক্তের গ্রুপ মিলেছে। ক্রোসম্যাচেও কোন সমস্যা হয়নি। ডাক্তার এবং রুগীর আত্মীয় স্বজন হাফ ছেড়ে বাচল
।
যে চলে যাবার তাকে ঠেকায় এমন সাধ্য কার? ডাক্তারদের সকল চেষ্টা ব্যার্থ করে, সবাইকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে শেষ পর্যন্ত শাকিল চলে গেল নাফেরার দেশে।
শাকিলের মুক্তিযোদ্ধা বাবা বাকরুদ্ধ, মা পাগল প্রায়, একমাত্র ছোট ভাই রাসেল কিংকর্তব্য বিমুঢ়, শায়লাদের পরিবারে শোকের ছায়া, সব ব্যাথা বেদনা আগলে একমাত্র সাদীই দাড়িয়ে আছে পাহাড় সম দৃঢ়তা নিয়ে। নিজের মা-বোনের পাশাপশি না চাইতেই সাদীর কাঁধে আরো দুটি পরিবারের দায়িত্ব বর্তাল ! সবাইকে সান্তনা দেয়া, মেহমান বিদায় করা, ময়না তদন্ত শেষে শাকিলের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দাফন করা, সবই এখন একা সাদীর দায়িত্বে!
সাদীর মাথার উপর শাহাবাগ থানা সহ ঢাকার বিভিন্ন থানায় কম পক্ষে ১০টা মামলা ঝুলছে, তাই বাধ্য হয়েই তাকে গা’বাচিয়ে চলতে হয়। এপর্যন্ত যে কতবার তাকে চোর পুলিশ খেলতে হয়েছে তার কোন গোনাবাছি নাই। বর্তমানে পুলিশের যে ভাবমূর্তি তাতে শাকিলের লাশবাহী গাড়ির সাথে গোপালগঞ্জে যাওয়ারমত রিস্ক নেয়া তার জন্য আধৌ ঠিক হবে কিনা কে জানে, অথছ সাদীকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমজাদ শেখ সাহেব জিদ ধরে বসে আছে!
গোপালগঞ্জের পুলিশের ভয়ে সারা দেশে আন্দলনকারী ছাত্র সমাজ এমনিতেই তটস্থ অথচ সেই গোপালগঞ্জেই সাদীকে যেতে হচ্ছে এক গোপালী পুলিশ শাকীলের লাশ নিয়ে! ব্যাপারটা ভাবতে শুধু সাদী কেন, যে কারোই শরীর হিম হয়ে যাবে।
শাকিলেদের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার ব্যাসপুর গ্রামে। ঢাকা থেকে সেখানে যাওয়া দুইটি রুট আছে। প্রথামটা হলঃ ঢাকার গাবতলী, আমীন বাজার, সাভার, মানিকগঞ্জ হয়ে আরিচা ঘাট থেকে লঞ্চ বা ফেরিতে পদ্মা নদি পার হয়ে ফরিদপুরের উপর দিয়ে বিশ্বরোড হয়ে শীবগাতি বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে মেঠ পথে সামান্য দূরত্বে ব্যাসপুর গ্রাম।
ঢাকার আজিমপুর থেকে দ্বিতীয় রুটটা হল, শ্যামপুর হয়ে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় চীন মৈত্রী সেতু পাড় হয়ে, কালাকান্দি দিয়ে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানা, যা শাকিলের কর্মস্থল ছিল তা অতিক্রম করে মাওয়া ঘাট। ফেরীতে পদ্মা নদী পাড় হয়ে শীব চরের কাওড়া কান্দি। সেখান থেকে ভাঙ্গা হয়ে হোগলা কান্দি, মকসুদপুর, ভাটিয়াপাড়া হয়ে কাশিয়ানী পাড় করে শীবগাতি বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করে ব্যাসপুর গ্রাম যেখানে শাকিলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে চিরস্থাই ঠিকানা কবর বাড়ি!
লাশবাহি এম্বুলেন্স আর শাকিলের কর্মস্থলের কথা চিন্তা করে, শাকিলের বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে, বিপদের সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্যেও সাদী আল্লাহর উপর ভরসা করে দ্বিতীয় রুট দিয়েই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর পথে রওয়ানা হল।
যাওয়ার পথে সাদীকে কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত ঘটনার মুখমুখি হতে হয়নি, বরং পথে পথে পুলিশ তাদের সহায়তা করেছে যা ছিল সাদীর কল্পনারও অতীত। অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য ছিল তবে যুক্তি খুজতে গেলে, হতে পারে শাকিল ও তার বাবা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের লোক বলে সেই খাতিরে, আবার হতে পারে শাকিলের পেশাদারিত্বের কারণে, যেমনটা আপমর জনতা আশা করে।
শাকিলের লাশবাহী এম্বুলেন্স যখন তাদের গ্রামের বাড়ি কাশিয়ানি উপজেলার ব্যাসপুর গ্রামে পৌছুল তখন সেখানে এমন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হল যা প্রকাশের কোন ভাষা নাই। আবাল বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, বণিতা, তরুণ তরুণী, কিশোর কিশোরী এমনকি শিশুরাও আপনজন হারনর শোকের মত হৃদয় বিগলিত অশ্রু বানে পুরা গ্রামকে প্লাবিত করে ফেলল। শাকিলের বাবার কঠরতার কারণে কেউ হয়ত মাতম করেনি কিন্তু চোখের অশ্রু ফেলেনি এমন কেউ ছিলনা।
লোক সমাগমের এবং শাকিল ও শাকিলের বাবার স্মৃতর কথা চিন্তা করে, তাদেরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ইয়ার আলী খান’ কলেজের মাঠে জানাজার ব্যবস্থা করা হল। শাকিলের জানাজায় যে পরিমাণ লোক সমাগম হয়েছে তাতে কয়েকজন পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে তা এক দিকে যেমন অবিশ্বাস্য অন্য দিকে পেশাদারিত্বকেও ছাড়িয়ে গেছে! তাদের ভূমিকা দেখে সাদীর বিশ্বাসই হচ্ছিলনা যে এরা বাংলাদেশের তথা গোপালগঞ্জের পুলিশ!
শাকিলের জানাজায় না গেলে সাদীকে হয়ত সারা জীবনই গোপালগঞ্জের পুলিশ সম্পর্কে একটা ভুলের মধ্যে থেকে হত। গোপালগঞ্জের পুলিশরাও যে সৎ, পেশাদার এবং জনপ্রিয় হতে পারে তা ওখানে না গেলে অজানাই থেকে যেত। গোপালগঞ্জের পুলিশ হওয়ার পরেও শাকিলের জানাজায় ব্যাপক হারে লোকের সমাগম এবং আবাল বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বণিতা, শিশু, কিশোর কিশোরী নির্বিশেষে সকলের চোখের পানি ফেলা দেখেই আঁচ করা যায় যে শাকিল মানুষের মনে কতটা জায়গা করে নিয়েছিল। এমন কোন লোক ছিলনা যে শাকিলের জন্য চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে পরার্থনা করেনি? এত কিছুর পরেও শাকিলের বিষয়ে সাদীর যে আরো অনেক কিছুই জানার বাকী রয়ে গেছে তা কে জানত?
(চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১৫৮৪ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পচাঁটে তবে সুন্ধিবটে।
ধন্যবাদ আপু।
ভিন্নমতের অসহায় মানুষ গুলোর অবস্থা ফুটিয়ে তোলা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনি অসাধারণ কাজ করেছেন, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ।
সত্য বলেছেন। ভালো মানুষরা হাসুদির বগলের পরে থাকলেও তাদের ভালো মানুষি চলে যায় না।
সবাই শাকিলের শোকে মূহ্যমান, কিন্তু শায়লার উপর থেকে সবার নজর সরে গেছে!!!! শাকিলের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু শায়লার মনে যে দহন সৃষ্টি করেছে, তা শান্ত করার দায়িত্ব আমি নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি, যদিও আপনি একজন অঘোষিত প্রার্থী বর্তমান রয়েছেন, তবুও যদি আপনার অপারগতা থাকে!!!
এই আমি কাকে কি বলছি!!!!! আপ্নাকেইতো গল্পের নায়ক বানিয়ে ফেললাম!
একটু ধিরে আর কি?
ধন্যবাদ।
ভাইয়া আপনি তো আমাদের লোকাল গাড়িতে উঠিয়ে ইকটু ইকটু করে তারপর আগাচ্ছেন! স্পীড বাড়ানো যায় না প্লিজ.......
পরিনতির অপেক্ষায়.......
জাযাকাল্লাহু খাইর!
সব কিছুই যেহেতু স্পিডে চলে তাই কিছু কিছু যানকে তো ধিরে চলতেই হয়, নাহলে পিছনে থেকে যাওয়া যাত্রীদের কি হবে?
আসলে ব্যস্ততা এতটা বেড়ে গেছে যে সময় করতে পারছিনা। আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আপু।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ বদ্দা।
আমি মারিনি আপু, আমাদের নোংড়া রাজনীতি শাকিলকে বাঁচতে দেয়নি।
ধন্যবাদ।
শাকিলের ব্যাপারে আমাদেরও জানতে হবে
তা না হলে পড়াটা অপুর্নই রবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন