ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (নবম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৫ মার্চ, ২০১৫, ০৯:১৬:৫২ রাত
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (নবম পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ সবার ভিতরে একটা টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই বুঝি বর এল, এই বুঝি বর এল। কিন্তু না আসরের সময় হয়ে গেল কিন্তু বর এলনা। আসবে কিভাবে? একদল উত্তেজিত জনতা, ‘দৈনিক জনতার কণ্ঠ’ সম্পাদক আতিক খান মাসুমের বাড়ি ঘেড়াও করে রেখেছে সেই সাথে ঢাকা-মাওয়া মাহা সড়কও! জনতার অবরোধ ঠেলে বরের গাড়ি যে কখন ঢাকায় পৌছুবে তা কেউ জানে না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হল উপস্থিত মেহমানদের আপ্যায়ন করে বিদায় দেয়া হবে। যারা থাকার থাকবে আর যারা যেতে চায় তারা চলে যাবে।
সন্ধ্যার পর বরের বাবার মোবাইলে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিট থেকে ফোন এল যে তার ছেলে মারাত্মক ভাবে অগ্নী দগ্ধ হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ফোন ফেলে দিয়ে আমজাদ শেখ সাহেব সাথে সাথেই মুরছা গেল। সাদী তড়িৎ এগিয়ে এসে আমজাদ শেখ সাহেবের চোখে মুখে পানির ঝাপ্টা দিল, কিন্তু কোন কাজ হলনা। কাল বিলম্ব না করে আমজাদ শেখ সাহেবকে সাথে সাথেই নিকটস্থ বারাকা ক্লিনিকে পাঠান হল। বিদ্যুৎ বেগে বরের দুর্ঘটনার খবর সবার মাঝে চাউর হয়ে গেল। খবর শুনে বরের বাবা আমজাদ শেখ সাহেবের মত শায়লার বাবা জামান সাহেব এবং মা মিসেস জামানও মুর্ছা গেল। তাদেরকেও নিকটস্থ বারাকা ক্লিনিকে পাঠান হল। শায়লার মাঝে কোন ভাবান্তর পরিলক্ষিত হল না। অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর ঠিক তেমনি, শায়লাও যেন একটা পাথরের মূর্তি হয়ে গেল।
সবাইকে বাসায় রেখে সাদী ছুটে গেল ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে। সত্যিই বর শাকিলের অবস্থা খুবই নাজুক। মেডিক্যাল বোর্ড বসেছে, তার চিকিৎসা আধৌ সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে।
সাদীর দিকে অনেক গুল ক্যামেরা তাক করা হল। ভিডিও ক্যামেরার স্পট লাইট আর স্টিল ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক ফোকাসে একজন সুস্থ্য সবল তরুণ সাদীও ভরকে গেল। মিডিয়ার কাছে এখন আর জীবনের মূল্য নাই, তাদের কাছে নিউজ ভেলুটাই আসল। মানুষ মরে যাচ্ছে যাকনা, তাদের ছবি তোলা আর ভিডিও করা চাই ই চাই! ডাক্তারের জন্য পথ আছে কিনা, রুগীর লাইফ সাপোর্ট খুলে যাচ্ছে কিনা সে দিকে কারো কোন খেয়াল নাই।
মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শাকিলকে অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হল। আত্মীয় স্বজন আর সহ কর্মীদের সাথে সাদীও বাহিরে অপক্ষারত। হাজারো চিন্তা সাদীকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আল্লাহ না করুন, শাকিলের কিছু একটা হয়ে গেলে, তার বাবা মা কিভাবে এই শোক সামলে নিবে, আল্লাহু আলম। মরার উপর খারার ঘাঁ হয়ে আসা এই বিপদের মোকাবেলা জামান সাহবের পরিবারই বা কিভাবে করবে কে জানে? মাঝখানে সাদীও ফেঁসে গেল এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা, দূর্ঘটনায়।
সাদী মনে মনে ভাবছে, শায়লার চিঠিটা বরং না পড়লেই ভালো হত, অথবা তার আগের চিঠিগুলো যেভাবে ইগ্নোর করেছে সেভাবে ইগ্নোর করতে পারলেও হয়ত আজ এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার মুখমুখি হতে হতনা। এমন হাজারো চিন্তু যখন সাদীকে ঘায়েল করে ফলছিল তখন সাদী নিজেকে সামলে নিল। যে চিন্তা সাদীকে আচ্ছান্ন করে ফেলছে তা মুমিনের চিন্তা হতে পারেনা। এগুলো শয়তানের ধোঁকা। আস্তাগফিরুল্লাহিল আজিম পড়ে সে মনে মনে তওবা করল।
অপারেশান থিয়েটার থেকে ডাক্তার গাজী সালাহ উদ্দিন বেরিয়ে এলঃ
- আপনারা চিন্তা করবেন না, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি। আমাদের কাজ চেষ্টা করা কিন্তু হায়াত মউতের মালিক আল্লাহ তাই তার ইচ্ছাই চুড়ান্ত। অনর্থক বিচলিত না হয়ে আল্লাহর কাছে দুয়া করতে থাকুন। ব্যান্ডেজের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। রুগীর শরীরে রক্ত শুন্যতা দেখা দিয়েছে। আপনারা কয়েক ব্যাগ ও- (নেগেটিভ) রক্তের ব্যবস্থা করুন।
ডাক্তার গাজী সালাহ উদ্দিন ঠায় দাড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ কোন সারা দিচ্ছেনা। না আত্মীয়দের কেউ, আর না সাংবাদিকেরা! এতক্ষণ তাদের ভিতরে যে সাহায্যের মনভব লক্ষ করা গিয়েছিল তা মূহুর্তেই উবে গেছে।
ডাক্তার আবার তাড়া দিলেন কিন্তু কেউই সারা দিলনা! মনে হচ্ছিল যে ডাক্তার যেন সবার কাছে শাকিলের জন্য তাদের আস্ত কলিজাটাই চেয়ে বসেছে!
(চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১৩৮১ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অপেক্ষায় রইলাম শেষ দেখার........ ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
ভালো লাগছে।
চালিয়ে যান,,,,
ধন্যবাদ।
অপারেশান থিয়েটার থেকে ডাক্তার গাজী সালাহ উদ্দিন বেরিয়ে এলঃ
গাজী সালাহ উদ্দিন সাহেবকে আমরাও খুঁজতেছি.... সম্ভব হলে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিয়েন!
ধারাবাহিকটা ভালো, তবে বেশী হতে হতে পাঠকের তৃষ্ণাবিমুখীতা হতে পারে, বিবেচনা করবেন!
সব মিলিয়ে ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ।
= = =
ধন্যবাদ।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ বদ্দা, ভালো থাকুন।
অপেক্ষায় রইলাম শেষ দেখার........ ধন্যবাদ। সহমত
পাঠক চাইলে সাদীর সাথে হবে আর না চাইলে.।.।.।।। না।
ধন্যবাদ।
এমন কেন হলো
পথিমধ্যে শাকিল আগুনে পুড়িলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন