ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (পঞ্চম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৬ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৩৩:৩৬ রাত

ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (পঞ্চম পর্ব)

অবিবাহীত / অবিবাহীতা ব্লগারদের প্রতি উৎসর্গীত



পূর্ব সূত্রঃ আসলেই তোমরা মানুষ না, তোমরা যে পুলিশ, তা মানুষ এমনি এমনিই বলে না। তোমরা নিজেরা নিজেদেরও সন্দেহ কর। ছেলেটার মনে যদি কোন দূর্ভিসন্ধি থাকত, তাহলে সে কখনো এ পথেই আসত না।

সাদী ভেবেছিল শায়লার চিঠিটা খুলেও দেখবেনা কিন্তু ছোট্ট বোন সাদিয়ার পিড়াপিড়িতে না খুলে পারলনা। যেইনা খামটা ছিঁড়েছে, অমনি সাদিয়া ছোঁ মেরে চিঠিটা নিয়ে গেছে। সাদী চুপটি মেরে বসে আছে। এর আগেও শায়লার অনেক চিঠি সাদিয়া পড়েছে, তাই এ চিঠিও যে সাদিয়ার পড়ার উপযুগি তাতে সাদীর কোন সন্দেহ নাই।

সাদিয়া সাধারণত চিঠি পড়ে ভাইয়ের কাছে এসে নানা বায়না ধরে, এটা ওটা জানতে চায় কিন্তু আজ সেরকমটা করলনা। চিঠিটা পড়ে জাস্ট ভাইয়ের টেবিলের উপর রেখে কোন কিছু না বলেই চলে গেল। সাদী সাত পাঁচ ভেবে শেষ প্রর্যন্ত চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করল।

স্যার,

আসসালামু’আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ।

জীবনের এই প্রথম কারো কাছে সালাম দিয়ে চিঠি লিখলাম। যখন এমনটা করলে আপনি খুশি হতেন তখন করিনি, আর যখন করলাম তখন জানিনা এ চিঠি আপনার কাছে পৌছুবে কি না? যদিওবা পৌছে, পড়বেন কি না তাও জানিনা।

স্যার,

আমরা এখন নিজেদের মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে শিখেছি। আমাদের বাসায় এখন আর কাজের বুয়া নাই, বাসার সব কাজ মা’মণি নিজের হাতেই করেন। বাসায় ডিশ লাইন পর্যন্ত নাই। একটা সাদা কালো টিভিতে বাবা মাঝে মধ্যে খবর দেখেন। একান্ত একাডেমিক কারনেই একটা ল্যাপটপ আর লিমিটেড ক্রেডিটে নেট ব্যবহার করি।

বেশী কথা বলে আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করার মত দুঃসাহস দেখাচ্ছিনা, বরং একান্ত বাধ্য হয়েই কথাগুলো লিখেছি। আপনি মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন, কয়েকটা পত্রিকা আপনার ছবি সহ নিউজ করেছে। বাবা আপনার ছবিটা বুকের সাথে চেপে ধরে কতক্ষণ যে কেঁদেছে তা বলতে পারবনা।

স্যার,

আপনি যে আলোর সন্ধান পেয়েছিলেন সে আলোর সন্ধান হয়ত আমাদের দিতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আমরা এতটাই অন্ধ ছিলাম যে আপনার মিটি মিটি আলো আমাদের নিকষ কালো অন্ধকার দূর করতে পারেনি।

স্যার,

আমারও অনার্সের রেজাল্ট হয়েছে। আপনার ছাত্রী, আপনার সমকক্ষতা অর্জন করতে পারেনি, তবে একেবারে বিমুখও করেনি। যেদিন আপনি চলে গেলেন সেদিনই বাবার হার্ট এয়াটাক্ট হয়েছিল। তিনি অনেকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাদিন ছিলেন। এখন কিছুটা সুস্থ্য তবে ডিউটি করার মত অবস্থায় নাই বলে বাধ্যতামূলক অবসরে আছেন। বাবার সামান্য পেনশানে কোনরকম চলে যাচ্ছে আমাদের তিন জনের সংসার। বাবার এক সাবেক সহকর্মী ও বন্ধু অতিশয় দয়াপরবশ হয়ে তার সাব ইনেস্পেক্টর ছেলের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। বাবার আর কোন অপশান না থাকায় সম্মতিও দিয়েছেন। রিলায়েবেল কোন নিকটাত্মীয় না থাকায় বাবা বেশ প্রেশানিতে আছেন। আমাদের অবস্থাও সেই আগেরমত নাই যাতে আপনার সাথে আমাদের দূরত্ব থাকতে পারে। যে বাবা আপনার মত কোন ছেলের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক থাক সেটাই চাইতেন না, অথচ আজ সেই বাবার আদেশেই আপনার কাছে চিঠিটা লিখলাম! একেই আল্লাহর অশেষ মহিমা বলে কি না জানিনা। ইতি পূর্বে আপনি আমার কোন চিঠিরই রেস্পন্স করেন নি, কিন্তু এই চিঠি যদি আপনার হাতে পৌছে তাহলে মানবিক কারণে হলেও রেস্পন্স করবেন বলে আমার বিশ্বাস। আপনারা যে আদর্শের স্লোগান দেন তার ভিতর মানবিকতার কথা আছে বলে বাবাও বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন বলেই এমন আদেশ দিয়েছেন। আদর্শের বাস্তব নমুনা দেখতে পেলে হয়ত বাবা সহ আমাদের মুর্দা দিল জিন্দা হবে।

স্যার,

আপনার কাছে মাত্র একটা সপ্তাহ সময় চাই। আপনি বড় ভাই হিসেবে আমাদের অনুষ্ঠানটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিবেন, সাথে আন্টি ও সাদিয়াকেও নিয়ে আসবেন বলে মা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

আগামি শুক্রবার, দিন তারিখ ধার্য হয়েছে আশাকরি আমাদের নিরাস করবেন না।

আল্লাহ আপনার সর্বাঙিন মঙ্গল করুন। আমিন।

ইতি-

আপনার এক কালের ছাত্রী

শায়লা জামান মৌ

বিষয়: সাহিত্য

১৩২১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

309364
১৬ মার্চ ২০১৫ রাত ১১:২১
আবু জান্নাত লিখেছেন : মাশা-আল্লাহ, আল্লাহ যদি হেদায়েত দান করেন ঠেকায় কে?। জাযাকাল্লাহ খাইর
১৭ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:২৩
250356
আবু জারীর লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ।
সুন্দর মন্তব্য সহ শুরু থেকেই সাথে থাকার জন্য ধ্যবাদ।
309381
১৭ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:০৩
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ধন্যবাদ, আপনার লিখার টেবিলে ধৈর্য শক্তি প্রসংশার দাবী রাখে!
১৭ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:২৯
250358
আবু জারীর লিখেছেন : উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
309409
১৭ মার্চ ২০১৫ রাত ০৩:০৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম! এ পর্বটি পড়েও অনেক ভালো লাগলো! একটি পরিবারের সুন্দর ও সঠিক পথে মোড় ঘুরলো! একজন আদর্শবান মানুষের সংষ্পর্শ পরিবারটির ধ্যানধারনা ও মানিষিকতা পাল্টাতে সাহায্য করেছে! এভাবেই দাওয়াতী কাজ ফলপ্রসু হয়!

জাযাকাল্লাহু খাইর! ছাত্রটি কে ভাইয়া? Good Luck
১৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৮:২৩
250386
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম'আসসালাম।
হ্যা ধৈর্যের সাথে আল্লাহ প্রদত্ত পথ অনুসরণ করতে পারলে এভাবেই কামিয়াবী হাসিল হয়।
আদর্শিক আন্দলনের হাজার ছাত্রের মধ্যে নাম না জানা কোন একজন।
ধন্যবাদ আপু।
309436
১৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:১৬
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : চলবে তো!
১৭ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:৩৯
250489
আবু জারীর লিখেছেন : চলবে ওস্তাদ! দ্বাদশ পর্ব পর্যন্ত পৌছেছি। দেখা যাক কোথায় গিয়ে ঠেকে।
ধন্যবাদ বদ্দা।
309456
১৭ মার্চ ২০১৫ দুপুর ১২:২৭
আফরা লিখেছেন : হেদায়াতের মালিক আল্লাহ ।আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়াত দান করেন কোন না কোন ওসিলায় ।
এর পর কি হল ভাইয়া ?
১৭ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:৪০
250490
আবু জারীর লিখেছেন : ঠিক বলেছ আপু।
পরের পর্বে জনা যাবে।
ধন্যবাদ।
309486
১৭ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৯
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আগের পর্বগুলো পরা হয় নি, তাই কি মন্তব্য করব বুঝতে পারছি না, তবে এইটুকু বুঝলাম, ছাত্রী স্যারের আদর্শ দ্বারা দারুণভাবে উজ্জীবিত হয়েছে, যা স্যারের দাওয়াতী কাজের চরম স্বার্থকতা।

যদি সময় হয়য়, আগের পর্বগুলো পড়ে যথাযথ মন্তব্য করার চেষ্টা করব। আজ এইটুকুই।
১৭ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:৪২
250491
আবু জারীর লিখেছেন : ঠিক ধরেছেন।
আশা করি সাথে থাকবেন।
ধন্যবাদ।
310016
২০ মার্চ ২০১৫ দুপুর ১২:০১
আহমদ মুসা লিখেছেন : ভালো লাগলো, সাথেই আছি, চালিয়ে যান।
২০ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:৫৮
251117
আবু জারীর লিখেছেন : আপনাদের সবাইকে সাথে পেয়ে ভালো লাগছে। এভাবে সঙ্গ দিলে গল্পটা একটা যৌকিতক পরিণতি পাবে ইনশা'আল্লাহ।
311478
২৮ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৪
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : মাশা-আল্লাহ, আল্লাহ যদি হেদায়েত দান করেন ঠেকায় কে? জাযাকাল্লাহ খাইরান!
সাথেই আছি নিয়মিত ভাবে লিখে যান! ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
২৮ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪২
252535
আবু জারীর লিখেছেন : ঠিক বলেছেন আপু। হেদায়েতের মালিক অবশ্যই আল্লাহ। কিন্তু আমাদের উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দ র্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
সাথে থেকে উৎসাহ দেয়ার জান্য ধন্যবাদ।
333504
০৪ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৫:৪২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন :
গল্পটা মোড় নিচ্ছে এবার কোথায়
পড়তে হবে সেই কাহানি লিখা আছে যেথায়।
০৪ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৯:৪৭
275827
আবু জারীর লিখেছেন : গল্পটা আসলে অনেক বাকে মোড় নিয়েছে।
ধৈর্যের সাথে পড়ার জন্য সাধুবাদ জানাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File