ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (চতুর্থ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৪ মার্চ, ২০১৫, ০৭:৫৮:৪৮ সন্ধ্যা
ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (চতুর্থ পর্ব)
অবিবাহীত / অবিবাহীতা ব্লগারদের প্রতি উৎসর্গীত
-পূর্ব সূত্রঃ হ্যারে মা, তোর স্যারের খবর কি? আসেনি, তাই না? বলেছিলাম না, আসবে না। পুলিশের চোখ, বুঝলি? ভুল হয়না।
টিং টং, টিং টং... কলিং বেল বাজল। কাজের মেয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই সাদী ভিতরে ঢুকল। সাদীকে দেখে শায়লার বাবার বিশ্বাস হচ্ছিলনা যে সে সত্যিই সাদীকে দেখছে! গত রাতের সেই অপরাধীই তার ঘরে, তার সামনে দাড়িয়ে!
- আসসালামু’আলাইকুম!
- ওয়ালাইকুম’আসসালাম। কি ব্যাপার? তোমাকে না আসতে নিষেধ করেছিলাম, তাহলে আসলে কেন? আচ্ছা বুঝেছি তোমার টিউশন ফিস নিতে এসেছ তাই না? তোমাকে যে মুফতে গত রাতে ছেড়ে দিলাম তারপরেও কি তোমার ফিস বাকী আছে? আচ্ছা নাও, এই পাঁচ হাজার টাকা। ভালোয় ভালোয় কেট পর, নাহলে পুলিশ ডেকে এরেস্ট করিয়ে একেবারে শ্রী ঘরে পাঠিয়ে দিব।
- গত রাত্রের আপনার বদান্যতার জন্য ধন্যবাদ, সাথে সাথে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি যে তিনি, যথাসময়ে আপনাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে আমার জীবন বাচিয়েছেন। জীবনে কখনো সুযোগ আসলে আপনাকে এর চেয়েও বড় প্রতিদান দিব ইনশা’আল্লাহ। আপনার হুকুম আমার মনে আছে তাই টিউশন ফিস নিতে বা আপনার মেয়েকে পড়াতে আসিনি। যদি টিউশন ফিস নিতেই আসতাম তাহলে আপনার আসার আগেই বাসায় এসে টিউশন ফিস নিয়ে সটকে পরতাম, কিন্তু আমরা যে আদর্শের সৈনিক তাতে অন্তত এমন কাপুরুষচিত কাজ করতে শিখিনি।
- হয়েছে, হয়েছে। ছাত্রজীবনে বামপন্থী ছাত্র বন্ধুদের মুখেও এরকম অনেক বড় বড় বুলি শুনেছি, কিন্তু আজ তাদেরই দেখছি আদর্শ ধুয়ে পানিও খেতে পারছেনা বরং যাদের বিরুদ্ধে সারা জীবন সংগ্রাম করেছে, আদর্শের বুলি কপচিয়েছে, পিঠের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছে আর এখন সময়ের আবর্তে সেই তাদের উচ্ছিষ্ট ভোগ করে কোনমতে বেচে থাকতে হচ্ছে!
- স্যার, তারা পঁচে যাওয়া নষ্ট বাম পন্থাকে নিজেদের আদর্শ ভেবে সারা জীবন সংগ্রাম করেছে। মস্কতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতি ধরেছে। তাদের কথিত সেই নষ্ট বাম পন্থা ৭০ বছরের ব্যবধানে নিজেদের আতুর ঘরেই আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমরা যে সত্যের সৈনিক, সে সত্য দুনিয়ার শুরু থেকে অধ্যাবদি আপন মহিমায় টিকে আছে। আমরা মানি আর নাই মানি আল্লাহর দীন দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত টিকে থাকবে ইনশা’আল্লাহ। অতএব, নষ্ট বামদের সাথে আমাদের গুলিয়ে ফেলবেননা স্যার, প্লিজ।
- থাক বাপ, আমার ভুল হয়ে গেছে। তোমরা কাজের কাজ কিছু পার আর নাই পার তর্কে বেশ পটু, তাই তোমার সাথে তর্ক করে মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোন ইচ্ছাই আমার নাই। তুমি গত পাঁচ বছর আমার মেয়েকে পড়িয়েছ, সে ভালো রেজাল্ট করেছে, সে জন্য তোমার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তোমার পথ আর আমাদের পথ আগেও ভিন্ন ছিল আর আজও ভিন্ন। মাঝখানে বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক তোমার সাথে একটা সম্পর্ক হয়েছিল আজ থেকে সে সম্পর্কটুকুও আর রইল না। তোমার আর আমাদের পথ পুরপুরি দুটি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে, তাই দয়া করে তুমি বিদায় হয়ে আমাদের মুক্তি দাও।
- স্যার, মুক্তি দেয়ার মালিক আল্লাহ, তাই তাঁর কাছে মুক্তি চাওয়াই শ্রেয়। আমার কাছে শায়লার কিছু ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট আছে তা আমি ফেরত দিয়ে আপনাদের চিন্তা মুক্ত করার জন্যই মূলত এসেছি। নাও শায়লা তোমার ডকুমেন্টগুলো রাখ। আমার অপারগতার জন্য মাফ করে দিও। আর হ্যা, আজকে যখন তুমি সব কিছু জেনেই গেছে তখন এটাও জেনে নাও, আমরা বিল্পবী, আমরা সংগ্রামী, আমাদের জীবন কণ্টকাকীর্ন, আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলা তোমার মত আলালের ঘরের দুলালীর পক্ষে কোনদিনও সম্ভব হবেনা। এ কথাগুলো আগে বললে হয়ত তুমি মানতে চাইতে না কিন্তু আজ নিশ্চয়ই তোমার চোখের সামনে থেকে সেই রঙিন পর্দা সরে গেছে, যার অপেক্ষায় আমি এতদিন ছিলাম। আমি তোমার সাথে কোন প্রতারণা করিনি। এতদিন শুধু নিরব থেকেছি যাতে তুমি আবেগি হয়ে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেকে এবং বাবা-মাকে বিপদে না ফেল। শুধু একটা অনুরোধ করে বিদায় নিচ্ছি, মুসলিম হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে যদি কোনদিন গর্ববোধ কর, সেদিন স্মরণ কর।
- স্যার যাবেন না।
- যেতে দাও। তাহলে ভেতরে ভেতরে তুমি এত দূর এগিয়েছিলে? আল্লাহ বাচিয়েছেন যে সে কোন ঝামেলা করেনি?
- কিযে বল, এমন ভালো ছেলেরা কোনদিন কোন ঝামেলা করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস করিনা। তবে কেন যে মিছে মিছি ভালো ভালো ছেলেরা এই ছাত্র সমিতির তল্পী বয়ে বেড়ায় আর আদর্শের বুলি আওড়ায় তা আমার বুঝে আসেনা। এইযে তুমি, শুরু শুরুতে কত আদর্শের কথা বলতা, দেশ জাতির সেবা করাই তোমার ধর্ম, কোথায় তোমার আদর্শের গাল ভরা সেই বুলি?
- তুমি থামবে? দেখ, শায়লা আবার কি না কি করে বসে। যাও ওর রুমে যাও। আর ওর কাছে কি সব ডকুমেন্ট ফেরত দিয়ে গেছে তা দেখে আমাকে জানাও। কোন ফটো ঠটো নয়ত? সেরকম কিছু হলে দেরী করা ঠিক হবেনা। হয়ত ওর কাছে আরও কপি থাকতে পারে, তাই জব্ধ করতে হবে।
- আসলেই তোমরা মানুষ না, তোমরা যে পুলিশ, তা মানুষ এমনি এমনিই বলে না। তোমরা নিজেরা নিজেদেরও সন্দেহ কর। ছেলেটার মনে যদি কোন দূর্ভিসন্ধি থাকত, তাহলে সে কখনো এ পথেই আসত না।
(চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১২৮৭ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসলেই তোমরা মানুষ না, তোমরা যে পুলিশ, তা মানুষ এমনি এমনিই বলে না। তোমরা নিজেরা নিজেদেরও সন্দেহ কর।
চমৎকার বলেছেন
আপনার জন্য নিরন্তর দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আসলেই তোমরা মানুষ না, তোমরা যে পুলিশ, তা মানুষ এমনি এমনিই বলে না। তোমরা নিজেরা নিজেদেরও সন্দেহ কর।
সুন্দর অনুভুতি ব্যক্ত করে উৎসাহিত করার জন্য আন্তরিক মুবারকবাদ।
খুব সুন্দর হচ্ছে ভাইয়া ।এগিয়ে যান সাথে আছি ।
আদর্শের ঝান্ডাবাহী হওয়ার কারনে ছেলেটিকে আজ এতোকিছু সহ্য করতে হলো! পড়তে বেশ ভালো লাগলো! মনে হলো নাটক দেখছি
জাযাকাল্লাহু খাইর!
হ্যা আপু সত্যের সৈনিকদের এভাবেই সকলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। তার পরেও তারা সব কিছুকে পিছনে রেখে এগিয়ে যায়।
ধন্যবাদ আপু।
মাশা-আল্লাহ, অনেক সুন্দর ও ইমান জাগানিয়া ধারাবাহিক। তারাতারি লিখে ফেলুন। সঙ্গে আছি। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুন্দর অনুভুতি ব্যক্ত করে উৎসাহিত করার জন্য আন্তরিক মুবারকবাদ।
ইনশা'আল্লাহ ২/১ দিন পর পর এক এক পর্ব নিয়ে হাজির হব।
ভালো থাকুন।
পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
সত্য আর মিথ্যা চিরদিনই আলাদা আর আলাদাই থাকবে তেল আর পানির মত!
ভালো লাগা রেখে গেলাম!
চলুক........সাথেই আছি!
ঠিক বলেছেন আপু।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ বদ্দা।
গল্পটা জমছে অনেক ভালো
পড়ে দেখি পরের পর্বে
কেমনে ছড়ায় আলো।
পাঠকরা কিভাবে নেয় সেটাই দেখার বিষয়।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন