সরকারী খরচে বিয়ে!! (তৃতীয় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১২ মার্চ, ২০১৫, ০৮:২২:৩৪ রাত
সরকারী খরচে বিয়ে!! (তৃতীয় পর্ব)
অবিবাহীত / অবিবাহীতা ব্লগারদের প্রতি উৎসর্গীত
পূর্ব সূত্রঃ শায়লার বাবা যখন স্ত্রীর সাথে পেরে উঠছিলেননা তখন তিনি বললেন, ‘আচ্ছা বুঝলাম, আমার ভুল হয়েছে, কিন্তু আজ যদি সাদী, শায়লাকে পড়াতে না আসে তাহলে বুঝব আমি গত রাতে যে ছেলেকে গ্রেফতার করে ছেরে দিয়েছি এবং শায়লাকে পড়াতে আসতে নিষেধ করেছি সে অবশ্যই সাদী। আর যদি পড়াতে আসে তাহলে বুঝব আমারই ভুল হয়েছে। শায়লা এবার হাফ ছেরে বাঁচল, আর শায়লার মা বিজয়ের হাসি হাসল। শায়লার মায়ের একটাই কাজ আর তা হল, যে কোন মূল্যেই হোক স্বামীকে পরাস্ত করা।
শায়লা একটুও দেরী না করে ঝটপট নাস্তা খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওয়ানা দিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছে সব ভুলে গিয়ে হন্ত দন্ত হয়ে সাদীকে খুজতে লাগলো, কিন্তু কোথাও খুজে পেলনা। শেষে ভগ্ন মনরথে বাসায় ফিরে আসল। শায়লার যেন কোন কিছুই ভালো লাগছিলনা। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে শায়লার মাও বিচলিত হয়ে পরল। বলল, ‘তুই চিন্তা করিসনা দেখবি সাদী ঠিকই পড়াতে আসবে”।
প্রতিদিনের মত শায়লা পড়ার টেবিলে স্যারের অপেক্ষা করছে, কিন্তু স্যারের আসার কোন খবর নাই! তাহলে বাবার কথাই কি ঠিক? শায়লার মাও নার্ভাস ফিল করছিল। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে মা-মেয়ে একত্রে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুল্ল, কিন্তু না? সাদী আসেনি, এসেছে শায়লার বাবা।
- গুড, ভেরি গুড! কিরে আজ মা-মেয়ে দুজনে এসে যে দরজা খুললে, ঘটনা কি? জীবনে কোনদিন তো দরজা খুলনি, এতদিন তো কাজের মেয়েই দরজা খুলত, আজ একেবারে বেল টিপতে না টিপতেই মা-মেয়ে দুজনেই যে হাজির?
- হ্যা, হয়েছে। কেন? আমিকি কোনদিনই তোমার দরজা খুলিনি? কাজের মেয়ে রেখেছ এই তো সেদিন, সবে বছর পনের হল তাইনা? বিবাহের পর থেকে দুই তিন বছর কি আমি তোমার সব কাজ করে দেইনি? তখনতো ডিউটিতে যাওয়ার আগে নিজের হাতে জুতা মোজা পরিয়ে দিয়েছি, ফেরার পর জুতা মোজা খুলে দিয়েছি, তাওয়াল এগিয়ে দিয়েছি, এমনকি খাওয়ার আগে পরে হাত পর্যন্ত ধুয়ে দিয়েছি তাই না? এত তারাতারি সব ভুলে গেলে! একেই বলে নাশকর ইনসান।
- তা দিয়েছ, তখন সাব ইনেস্পেক্টর হিসেবে সামান্য বেতন পেতাম, আর সততার পরাকাষ্ঠা দেখাতাম, তাই সামর্থও ছিলনা আর চাকর নফরও রাখতে পারিনি। তবে এখন কেন যেন মনে হচ্ছে, সেই দিন গুলিই ভালো ছিল। তখন অর্থ ছিলনা, স্বচ্ছলতা ছিলনা কিন্তু সুখ ছিল। এখন অর্থবিত্তের মালিক হয়েছি, বাসায় চাকর, নফর, ড্রাইভার রেখেছি কিন্তু তার পরেও সেই শান্তি খুজে পাচ্ছিনা। মনে হচ্ছে দরজা দিয়ে সেবক সেবিকা ঢোকার সাথে সাথে জানালা দিয়ে সুখ পাখিরা উড়ে গেছে।
- যাবেইতো যাবেনা, যে লোক একসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ত, হালাল হারাম বেছে চলত আর এখন কিনা নামায রোযার ধার ধারেনা আর সমানে পয়সা কামায়, হালাল হারামের পরোয়া করেনা তার ঘরে আর যাই থাক সুখ শান্তি আর বরকত থাকেনা।
- হয়েছে, হয়েছে। আর লেকচার দিতে হবেনা। এসবের জন্য তুমিই দায়ী। আজ দামি ফার্নিচার চাই তো কাল ইলেকট্রনিক সামগ্রী! বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কার্পেট বদলাতে হবে, নাহলে আবার স্ট্যাটাস ঠিক থাকেনা। তোমার চাহিদা পূরণ করতেইতো আমাকে অতিরিক্ত উপার্যনের ধান্দা করতে হচ্ছে।
- হ্যা এখন সব দোষ তো আমারই। নিজের সংসার চালাতেই জখন দম বন্ধ হয়ে আসছিল তখন কি দরকার ছিল ধার উদ্ধার করে ছোট্ট ভাইকে পড়াতে বিদেশে পাঠানর? কই সেই যে গেল আর তো বড় ভাইয়ের কোন খবরও নিলনা।
- বাদ দাওতো ওসব কথা।
- কেন বাদ দিব? বুঝেছি এখন সত্য কথা বলছি তো তাই গায়ে লাগছে। শত হলেও ভাইয়ের সুনামতো? আমার ভাইদের পান থেকে চুন খসলেতো বেশ মাজা করে ফোরন কাট তখন মনে থাকেনা যে সবারই নিজ নিজ ভাই বোনদের প্রতি টান থাকে।
- হায়, সেই দিনগুলোতে যদি আবার ফিরে যেতে পারতাম। জখন ডিউটি থেকে ফিরে শায়লাকে নিয়ে খেলাধুলা করতাম আর তুমি পরম মমতায় নিজের হাতের রান্না করা তরকারী দিয়ে পাশে বসিয়ে খাওয়াতে। আমাকে না খাইয়ে তুমি কখনো খেতে না।
- দাত থাকতে দাতের মর্যাদা কেউ করেনা বুঝলে? তখনতো কোন দিন এমন একটা কথা বলে উৎসাহ দাওনি তাইনা।
- হ্যা সেজন্যইত এখন ডিউটি থেকে এসে দেখি তুমি টিভি সিরিয়াল নিয়ে ব্যাস্ত, শায়লা নেটে হয় চ্যাটিং করছে, না হয় ফেজবুকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। কাজের মেয়ে টেবিলে খাবার রেখে দিয়েছে। মন চাইলে খেলাম আর না চাইলে, না খেয়েই বিছানায় গিয়ে শুয়ে শুয়ে সারাদিনের হিসাব মিলালাম। কিন্তু কোন হিসাবই মিল্লনা আর এ অবস্থায়ই সকাল হয়ে গেল, অথচ তুমি তখনও সিরিয়ালেই ডুবে আছ!
- হ্যা সব দোষতো আমারই। তা বলি, তুমি যে রাতের পর রাত নাইট ডিউটির নামে বাহিরে থাক। কি কর, না কর তার খবর কি আমি কোন দিন নিয়েছি। মানুষ পুলিশ সম্পর্কে নানা কথা বেল, পুলিশের চিরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করে। তোমার চরিত্র যে কত ভালো তা আমাকে শিখাতে এসনা। জুনিয়র অফিসারদের তরুণী স্ত্রীদের প্রতি তোমার শুভ দৃষ্টি মনে করছ আমার চোখে পড়েনি, না?
- আচ্ছা মা, তোমরা কি থামবে?
- হ্যারে মা, তোর স্যারের খবর কি? আসেনি, তাই না? বলেছিলাম না, আসবে না। পুলিশের চোখ, বুঝলি? ভুল হয়না।
বিষয়: সাহিত্য
১৫১৯ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাইয়া আমি চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে সাধারত ধারাবাহিক কোন কিছু পড়তে আমার ভাল লাগে ।
কিন্তু আপনার গল্পটায় খুব বেশী ভাল লাগছে । তাই এটার জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম ।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
সুন্দর মন্তব্য সহ সাথে থেকে পরের পর্ব লেখার প্রতি উতসাহিত করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আল্লাহ আমাদের সকলকেই সৎ জীবনযাপনের তাওফিক দিন। আমিন।
শনিবার নাগাদ চতুর্থ পর্ব পোষ্ট করার চেষ্টা করব ইনশা'আল্লাহ।
উৎসাহিত হলাম।
শনিবার নাগাদ চতুর্থ পর্ব পোষ্ট করব ইনশা'আল্লাহ।
সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্য এবং উৎসাহ দেয়ার জন্য আন্তরিক মুবারকবাদ।
আশা করি শেষ পর্যন্ত সাথে পাব।
ধন্যবাদ।
সঙ্গ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ, বদ্দা।
পুলিশদের আমি বরাবর ভয় পাই! আল্লাহভীতি থাকলে আসলে অনেক সমস্যা এড়ানো যায়!
শুকরিয়া!
স্বমী স্ত্রী যদি পরস্পর পরস্পরকে সুপথে রাখতে চায় তাহলে মনেহয় উভয়েই ভ্রষ্টতা থেকে বেচে যায়।
মুমিনদের অন্তত সেটা প্রাক্টিস করা জরুরী।
ধন্যবাদ, আপু।
আশাকরি সফল সমাপ্তি পর্যন্ত সাথে পাব।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ বাহার ভাই।
মেয়ের সামনে শেষের কথা
কেমন বেমানান হয়ে গেলো
সামনে আরো কত কি আছে
পর্বে মনটা রয়ে গেলো।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন