সরকারী খরচে বিয়ে!! (২য় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৭ মার্চ, ২০১৫, ০৫:৪২:২৬ বিকাল
সরকারী খরচে বিয়ে!! (২য় পর্ব)
পূর্ব সূত্রঃ পিয়ন এসে লাল খামে একটা চিঠি দিয়ে গেল। চিঠিটা যে শায়লার তা সাদীর বুঝতে অসুভিধা হয়নি। জীবনে অনেকবার সাদী এমন খামে শায়লার চিঠি পেয়েছে।
শায়লা, সাদীর একসময়কার ছাত্রী বৈ আর কিছুই না। দীর্ঘ্যদিন থেকে সেই সম্পর্কটাও আর নাই। একটা সময় ছিল, যখন সাদী প্রতি সপ্তাহেই শায়লার লেখা একটা করে চিঠি পেত কিন্তু কখনো সে চিঠির জবাব দেয়া হয়নি, অথচ তারপরেও কোন অনুযোগ ছাড়াই সে একের পর এক চিঠি লিখেই গেছে! সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল, এক জনের উদাত্ত প্রেমের আবেদন আর অন্য জনের নিরবে উপেক্ষা করে যাওয়া! এক জনের আশা, বরফ একদিন গলবেই আর অন্য জনের ধরনা, আবেগের মেঘের এই ঘনঘটা একদিন কেটে যেতে বাধ্য। দুজন যখন দুদিকের দোলাচলে দুলছিল মূলত বিপত্তিটা তখনই ঘটল।
বলা নাই কওয়া নাই একদিন আচানক গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ফুলার রোডের দেয়ালে গভির রাতে চিকা মারতে গিয়ে সাদী গ্রেফতার হল সাদী। গোয়েন্দা বাহিনী যখন আন্দলনকারীদের পাকড়াও করার জন্য হন্যে হয়ে খুজছিল তখন না চাইতেই শিকার একেবারে হাতে ধরা দেয়ায় তারাতো বেজায় খুশি। সরকারী এনাম, বকশিস আর তরক্কির আশায় তাদের চোখ গুলি চকচকিয়ে উঠছিল, আবার কেউ কেউ একন কাউন্টারের জন্য রিবালবারের ট্রিগার টিপে গান পয়েন্ট প্রাক্টিস করছিলে। সবাই তাকিয়ে ছিল জামান সাহেবের মুখের দিকে তার নির্দেশ তামিল করার উদ্দেশ্যে। জামান সাহেব সজোরে সাদীর মুখ বাঁধা কালো রুমালটা সরাতেই চমকে উঠলেন, তার উজ্জল চোখ দুটি ঘোলাটে হয়ে এল! তিনি নিজের চোখকেই নিজে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এত দিন গোয়েন্দা পুলিশে সুনামের সাথে কাজ করার পরেও সাদীর এই গোপন চরিত্র সম্পর্কে আগে থেকেই আঁচ করতে না পারায় নিজেকে মনে মনে প্রবোদ দিতে লাগলেন। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সম্পূর্ণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের মেয়ের গৃহ শিক্ষক হওয়ায় সেদিন জামান সাহেব সাদীকে এঙ্কাউন্টারে তো নয়ই এমন কি জেল হাজতেও না পাঠিয়ে একেবারে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তবে সাদী যেন আর কোন দিন তার ঘরের দরজায় ও না যায় সেই হুশিয়ারী দিয়েছিলেন। এর পর কোন দিন যদি সে জামান সাহেবের সামনে পরে তাহলে সেদিন ডাইরেক্ট শুট থেকে কেউ তাকে বাঁচাতে পারবেনা বলে হুমকিও দিয়েছিলেন। সাদীর ভাগ্য নেহায়েতই ভালো, নাহলে এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে, অধ্যবদি জামান সাহেবের হাতে ধরা খেয়ে সহি সালামতে কেউ মায়ের কোলে ফিরে গেছে এমন রেকর্ড নাই। যে জন্য জামান সাহেবকে গোপালী গোয়েন্দা বলে এক নামে সবাই চেনে।
পরের দিন শায়লার বাবা যখন নাস্তার টেবিলে শায়লা ও তার মায়ের উপস্থিতিতে ঘটনাটা বল্লেন তখন শায়লার মাথায় যেন বাজ পরল। সে বুঝতে চেষ্টা করল, কেন স্যার তার কোন চিঠিরই জবাব দেয়নি। কেন সে প্রসঙ্গ পাল্টে শুধু পড়িয়েই চলে যেত। কেন স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও শায়লার চোখে চোখ রেখে কোনদিন কথা বলেনি। পড়ানর সময়ও পারত পক্ষে মুখের দিকে না তাকিয়ে পারলে তাকায়নি। কেন স্যারের মুখটা সর্বদা আনক্লিন সেভড থাকত। কেন স্যার আজান হলেই পড়ান বাদ দিয়ে মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে আসত। কেন স্যার তাকে বার বার স্কার্ফ পড়তে তাগাদা দিত। সব প্রশ্নের উত্তরই আজ শায়লার কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট। কিন্তু একটা যে ব্যাপার কিছুতেই শায়লার মাথায় ঢুকছেনা সেটা হল, কেন সাদির মত মেধাবীরা এসব সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়?
শায়লার মা অবশ্য স্বামীর কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। তার একটাই কথা, আর তাহল রাতের আলো আধারীতে শায়ালার বাবার নিশ্চয়ই কোন না কোন ভুল হয়েছে, নাহলে সাদীর মত এত ভদ্র ছেলে এসব করতেই পারেনা।
শায়লার বাবা যখন স্ত্রীর সাথে পেরে উঠছিলেননা তখন তিনি বললেন, ‘আচ্ছা বুঝলাম, আমার ভুল হয়েছে, কিন্তু আজ যদি সাদী, শায়লাকে পড়াতে না আসে তাহলে বুঝব আমি গত রাতে যে ছেলেকে গ্রেফতার করে ছেড়ি দিয়েছি এবং শায়লাকে পড়াতে আসতে নিষেধ করেছি সে অবশ্যই সাদী। আর যদি পড়াতে আসে তাহলে বুঝব আমারই ভুল হয়েছে। শায়লা এবার হাফ ছেড়ে বাঁচল, আর শায়লার মা বিজয়ের হাসি হাসল। শায়লার মায়ের একটাই কাজ আর তা হল, যে কোন মূল্যেই হোক স্বামীকে পরাস্ত করা।
বিষয়: সাহিত্য
১২৬৪ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ বদ্দা।
অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো ।
মাশা'আল্লাহ, বুদ্ধিমতি।
উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
০ সাদী মনে হয় শিবির করে , তাই না ভায়া ?
শিবিরের ছেলেগুলো খুব ভাল কারেক্টারের হয় , তবে ছাত্রী পড়ানোর সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায় না ।
সরকারী খরচে তো সাদীর ভবলীলা সাঙ্গ করে দিচ্ছিল ভিলেন জামান সাহেব !
আপনাদের যুগের অবস্থা ঠিক বলতে পারলাম না।
তবে খারাপ না। ভালোরা যদি ছাত্রী না পড়ায় তাহলে চরিত্রহীনরা যে সব এলোমেল করে ফেলবে।
বোনের আদেশ তো মানতেই হয়, না আর দেরী নয়।
ধন্যবাদ আপু।
পড়া এবং মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ মুহতারাম।
ধন্যবাদ।
এই পর্ব পড়িয়া গুরু হইয়িলাম প্রীত
মনে হলো পড়তে হবে আছে পর্ব যত।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন