ধরা খেতে খেতে বেঁচে গেলামঃ
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:২০:২১ রাত
ধরা খেতে খেতে বেঁচে গেলামঃ
ভালোবাসার খাতিরে রাত বিরাতে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে কতশত লোক যে ধরা খেয়েছে তার কি কোন ইয়াত্তা আছে? ছাত্রজীবনে যখন কেবল মেচিউর্ড হয়েছি, ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হয়েছি তখনও রাত বিরাতে অনেকবার ধরা খেতে খেতে খেতে বেঁচে গেছি। তাই বলে জীবনের মধ্য বয়সে উপনীত হয়ে সৌদি’আরবের মত পবিত্র ভূমিতে বসেও যে আজ তেমন পরিস্থিতির মুখ মুখি হব তা কি কোন দিন ভেবে ছি?
সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও ওদের ওখানে যাব বলে ওয়াদা করেছিলাম। জায়গাটা অবশ্য কিছুটা নির্জন তাই অনেকটা ভূতুরেও। যা হোক গত সপ্তাহের মত আজও সেখানে গিয়েছিলাম। গত সপ্তাহে ভালোয় ভালোয় দেখা সাক্ষাতের কাজটা সেরে আসলেও আজ ধরা খেতে খেতে বেঁচে এসেছি। আলহামদুলিল্লাহ্!
রাতের সবে মাত্র নয়টা। তাতে কি? স্থানটা যে নির্জন এবং ভুতুরে তাই ছোট্ট বেলায় যখন গ্রামে ছিলাম তখনকার নয়টা মানে মধ্যরাত আর আজ যেখানে গিয়েছিলাম সেখানকার অবস্থাটাও অনেকটা তাই। যে উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম সে উদ্দেশ্য পুরা করে ঘরের বান্দা ঘারে ফেরার জন্য কেবল গাড়িটা স্টার্ট করে ব্যাক গিয়ার লাগিয়েছি, কিন্তু মনে হল পিছন থেকে কেউ আমাকে ফলো করছে।
বুকে সাহসের সঞ্চার করে ব্যাকে না গিয়ে সামনের দিকে গাড়িটা টান দিতেই পিছনের গাড়িটাও যে আমাকে ফলো করে এগিয়ে আসছে তা বুঝতে আর কষ্ট হয়নি, তবে পিছনের গাড়িটার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারছিলাম না। এমতাবস্থায় ভয় পাওয়া চরম বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। পরিস্থিত যেখানে গিয়ে গড়িয়েছে তাতে নিজের কিছুই করার নাই তাই ভয় পাওয়া শুধু বোকামিইনা বরং চরম বোকামি, অতএব সাহস করে সামনের দিকে এগিয়ে চল্লাম।
রাস্তার ডান দিকে চেপে গাড়ি চালাচ্ছিলাম যাতে পিছনের গাড়িটা ওভারটেক করে চলে যেতে পারে কিন্তু না, সেটা আমার পিছু ছাড়ছে না! অন্ধকারের মধ্যে পিছনের গাড়িটার হেড লাইট ছাড়া কিছু দেখাও যাচ্ছে না! এভাবেই এগিয়ে চলছি। এইতো আর কয়েক’শ মিটার দূরেই লাইট পোস্টের আলো জ্বলছে। ঐ পর্যন্ত যেতে পারলেই হল, তার পর আর আমার টিকিটির নাগাল কে পায়?
যে রাস্তায় লাইট পোস্টের আলো জ্বলছে সে রাস্তাটাও নির্জন এবং ভাঙ্গাচুড়া, তবে সামান্য বাম দিকে মোড় নিলেই কেল্লা ফতেহ, তবে বামদিকের ঐ সামান্য রাস্তাটুকু রং রুট। তাতে কি? ফাঁকা রাস্তা, তার পরে এত রাত! কেউ দেখবে না, আর এত রাতে এখানে পুলিশ আসবে কোত্থেকে? তাছাড়া পেছনের গাড়িটার গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে ওটাও বাম দিকেই মোড় নিবে।
গাড়িটার প্রতি এতক্ষন যে সন্দেহ ছিল তা অনেকটা কেটে গেছে। মনে হল ওটাও আমার মত কোন ভোলা ভালা লোকেই ড্রাইভ করছে এবং উদ্দেশ্যও হয়ত আমার মতই মহৎ!
যেই না বামে মোড় নিব, ও মা ওটা তো দেখছি পুলিশের গাড়ি! হায় আল্লাহ্ বামে মোড় নিলেই ব্যাটা নির্ঘাত আমার ঘার মটকাবে। ঘার মটকাবে মানে ধরে ৯০০ (নয় শত) রিয়াল মানে ১৮০০০ (আঠার হাজার) টাকা জরিমানা করবে, তার পরে কোথায় গিয়েছিলাম, কি করি, কেন গিয়েছিলাম, এমন হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। সাত পাঁচ না ভেবে ডান দিকের ভাঙ্গা রাস্তা ধরেই দে ছুট! আমাকে আর কে পায়? পুলিশ ব্যাটা হয়ত শিকার না ধরতে পেরে মনের আফসোস নিয়েই ফিরে গেল। আহারে বেচারা পুলিশ!
উদ্দেশ্য যেহেতু সৎ ছিল তাই সৎ বান্দাদের আল্লাহ্ই হেফাজত করেন আর যে কাজে গিয়েছিলাম তাও মূলত তাঁর দেয়া কর্তব্য দাওয়াতে দীনের কাজ, তাই তাঁর বান্দাকে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বটাও তাঁরই। আমার রব আমাকে আশু বিপদ থেকে বাচিয়েছেন তাই মণিবের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ্ তাঁর গোলামদের এভাবেই হেফাজত করেন।
আসুন আমরা সবাই ভয়কে জয় করে যে যেখানেই আছি দাওয়াতি কাজে আত্ম নিয়গ করি। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হবেন ইনশা’আল্লাহ।
দেশ, বিদেশ তথা সারা দুনিয়ার যে অবস্থা তাতে প্রচলিত পদ্ধতিতে দাওয়াতি কাজের সুযোগ নাই। অবশ্যই পদ্ধতি পাল্টাতে হবে।
উপশাখার বৈঠক করতে হবে পারিবারিক ভাবে, আর দাওয়াতি কাজ করতে হবে আত্মীয় এবং ফ্রেন্ড সার্কেলে। উপশাখা সভাপতি হবেন ফ্যামিলি প্রধান, নায়েবে আমির হবেন গৃহকত্রী, সম্পাদক হবে ছেলে আর ট্রেজারার হবে মেয়ে।
আমরা যদি নিযেদের পরিবার ভিত্তিক ইউনিট কায়েম করতে পারি আর নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াতের আওতায় আনতে পারি তাহলে বাংলাদেশের কোন পরিবারই ইসলামের দাওয়াতের আওতার বাহিরে থাকবে বলে আমার মনে হয়না।
আল্লাহ্ আমাদের নেক প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১২৭০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা সবাই ভয়কে জয় করে যে যেখানেই আছি দাওয়াতি কাজে আত্ম নিয়গ করি। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হবেন ইনশা’আল্লাহ।
এটা আমাদের একমাত্র মুক্তির পথ ।
অনেক ভাল লাগল । জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
ধন্যবাদ।
সুন্দর শিক্ষনিয় পোস্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন