জনপ্রিয়তা
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৮ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:২৮:৪৯ রাত
জনপ্রিয়তা
পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে অনেক জনপ্রিয় নেতার আবির্ভাব ঘটেছে এবং তারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে চলেও গেছে। যারা ক্ষমতাসীন হতে পেরেছে কেবল তাদের নামই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে, অবশ্য অনেকের নাম ইতিহাস থেকে মুছেও গেছে। কিন্তু যারা ক্ষমতাবান হতে পারেনি তাদের খুব কমই ইতিহাসের পাতায় জায়গা পেয়েছে। তারপরেও ইতিহাসে নাম লেখানো আর মানুষের অন্তরের ভালবাসার জায়গায় স্থান করে নেয়া এক কথা নয়।
ক্ষমতাসীন না হয়েও নিকট অতীতে যারা ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন এবং মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পেরেছেন তাদের মধ্যে তুরুষ্কের বদিউজ্জামান নুসরী, মিশরের হাসান আল বান্না, সাইয়েদ কুতুব, পাকিস্তানের সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী অন্যতম।
রাষ্ট্রিয় এবং আন্তর্জাতিক অপপ্রচার এবং কঠিন বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে গত ২৫শে অক্টোবর’২০১৪, ৯২ বছর বয়ষ্ক বাংলার এক নরসার্দুলের জানাজায় দেশ ও দুনিয়া জুড়ে মানুষের যে ঢল নেমেছিল তাতে দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে তিনিও ইতিমধ্যে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়ার পাশাপাশি ইতিহাসের পাতায়ও নাম লিখিয়ে নিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে নবী রাসূলগণ বাদে কোন সাধারণ মানুষ বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে আপামর জনতার হৃদয়ে এমন ভাবে স্থান করে নেয়ার ঘটনা মনেহয় আর দ্বিতীয়টি নেই। অনেকে হয়ত বলবেন যারা জানাজায় এসেছিল তারা সবাই দলীয় কর্মী! হ্যা তারা সবাই দলীয় কর্মী এবং তা প্রমাণীত কারণ সাকারী বা বিরোধিদলীয় কেউ মিডিয়ার ভঁয়ে বা অন্য কোন অজানা আতঙ্কে অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাজায় অংশগ্রহণ করেনি। যদি করত তাহলে লোক সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যেত। সেক্ষেত্রে তর্কের স্থানটুকুও আর অবশিষ্ট থাকতনা। এখন কথা হল যে এত দলীয় কর্মী এল কোথা থেকে? নিশ্চয়ই হাওয়ায় ভেসে আসেনি, এসেছে দলিয়ে প্রচেষ্টায়, তবে সেই প্রচেষ্টার মূলেও ছিল মরহুমের প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব আল্লাহ্ ভিতি সর্বপরি সম্মহনী শক্তি।
যারা নিজেদেরকে মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের চেয়েও বড় নেতা দাবী করেন, যারা ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন, যাদের ধমকে বাঘে মেষে একঘাটে পানি খেত, যারা সদম্ভে বলেছিল সিরাজ শিকদার কোথায়, যারা নিরিহ জনগণের উপর লাল ঘোড়া দাবড়াতে চেয়েছিল, যাদের অঙ্গুলি হেলনে ত্রিশ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিল, দু’লক্ষ মাবোন ইজ্জত দিয়েছিল সেই তাদের মৃত্যুতে মানুষ ইন্না লিল্লাহ পর্যন্ত পড়েনি! কেন? কিসের ভয়ে? তাদের মাসতুত ভাই, আট কোটি কম্বলখেক সাড়েসাত কোটি দলীয় কর্মীরা সাহসের সাথে সেদিন কোন গর্তে লুকিয়েছিল? তাদের সহকর্মীরা কথিত মাহান নেতাকে কেন ফেরাউনের সাথে তুলনা করেছিল? কেনইবা নিহত মহান নেতার লাশের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতার হালুয়ারুটি ভাগ বাটোয়ারা করতে হয়েছিল?
এতেকি এটাই প্রমানীত হয়না যে ক্ষমতার দম্ভে নেতা হওয়া যায় কিন্তু মানুষের হৃদয়ের গহীনে স্থান করে নেয়া যায়না। যাকে মহান করার জন্য মিডিয়া গুলো ২৪ ঘণ্টা বন্দনা করে, যদি তার লাশ আজও কবর থেকে উঠিয়ে এনে নতুন করে সৎকার করার পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলেও এত লোক জড়ো করা যাবেনা, যতটা জড়ো হয়েছিল বিরামহীন অপপ্রচারের শিকার মজলুম জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাজায়। যাকে ইতিহাসের ঘৃর্ণিত ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণের জন্য বিগত ৪২টি বছর এমন কোন হেন প্রচেষ্টা এবং অপপ্রচার ছিলনা যা করা হয়নি কিন্তু তথাপিও তার জনপ্রিয়তা সামান্যতমও হ্রাস করা যায়নি!
ক্ষমতাসীনরা হয়ত ভেবেছি, অপপ্রচারের ভিত্তিতে যেহেতু তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা গেছে তাই জনগণ তার জানাজায় অংশগ্রহণ করবেনা। তাছাড়া গোলাম আযমের রাজনৈতিক মিত্রদের সাথে হয়ত গোপন আতাত হয়েছিল যাতে তারা জানাজায় অংশগ্রহণ না করে। জোটের বৃহত্তর শরিক দল জানাজায় অংশ গ্রহণ না করে আঁতাতের প্রমাণও দিয়েছে কিন্তু নেট লাভ চলেগেছে গোলাম আযমের ঘরেই। রাজনৈতিক মিত্রদের অনিহা আর সরকারের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সত্যেও যখন জনতার ঢল ঠেকাতে ব্যার্থ হয়েছে তখন তাদের হৃদয়ে যে গভির ক্ষতের সৃষ্ট হয়েছে তাতে নিজামীর রায়ের মলম লাগিয়েও স্বস্তি পাচ্ছে বলে হচ্ছেনা। ফলে মীর কাসেম আলীর নীতি ভ্রষ্ট রায় এগিয়ে এনেছে। তাতেও যখন কলিজা ঠান্ডা হয়নি তখন ৭১ এর ১৮ বছেরর তরুণ কামারুজ্জামানের মাথায় পাক আর্মি কমান্ডের সুপ্রিয়র রেস্পন্সেব্লিটি দিয়ে একেবারে দুনিয়া থেকেই বিদায়ের পদক্ষেপ নিল! কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্তই যে চুড়ান্ত তা বাতিল শক্তি বিশ্বাস না করলেও মুমিনদের বিশ্বাসের পারদ আরো উপরে উঠিয়ে দিয়েছে, আলহাদুলিল্লাহ! রাষ্ট্র যন্ত্রের সব মেকানিজম এবং আইসিটির বিচার ইঞ্জিনিয়ারিংকে ভুল প্রমাণ করে কামারুজ্জামানের রব তাকে ছিনা টান এবং মাথা উঁচু করে এখনও দুনিয়ার বুকে বেচে থেকে জালীমের অন্তরে সুনামি সৃষ্টি করতে সক্ষম করেছেন।
গোলাম আযম এমন একদল কর্মীবাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই রাতের আঁধারে তারা তাদের আদ্ধাত্বিক নেতার জন্য দুয়া, আর দিনের আলোয় দুনিয়ার সকল বাধা উপেক্ষা করে তাঁর নির্দেশনার আলোকে সমাজ সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে কথিত পিতার সন্তানেরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বানিজ্য, ইভটেজিং আর খুনাখুনিতে ব্যস্ত, আর রাতের বেলায় পানপাত্রের মুখ ডুবিয়ে ধর্ষনের সেঞ্চুরি করে! প্রতিটি কাজের জন্য কর্মীর আমলনামায় যেমন পাপ-পূণ্য লেখা হবে তেমনি লেখা হবে তাঁর গুরুর তথা নেতার আমল নামায়ও। সেহিসেবে অধ্যাপক গোলাম আযমের আমলনামায় যেমন কিয়ামত পর্যন্ত পূণ্য লেখা হতে থাকবে তেমনি কথিত পিতার আমলনামায় পাপ পাপ আর পাপ লেখা হতে থাকবে।
দুনিয়ায় গোলাম আযম ক্ষমতা বা এহলৌকিক কিছু হয়ত নাইবা পেলেন তাতেকি? তবে নিশ্চিত করে বলা যায়যে তিনি পরকালে, আদালতে আখেরাতে পূর্ণ মর্যাদায় মর্দে মুমিন এবং জামানার শ্রেষ্ঠ্য মুজাহিদ হিসেবে আল্লার সম্মুখে উপস্থিত হবেন ইনশা’আল্লাহ। পক্ষান্তরে কথিত পিতা, তার রেখেযাওয়া অবৈধ সন্তানদের সকল কুকর্মের বোঝা নিয়ে অপমান আর লাঞ্চনায় কাতর হয়ে মহান রবের কাছ থেকে মুখ লুকাতে চেষ্টা করবে কিন্তু কোন কাজ হবেনা। সেদিন আর তাঁর নির্দেশে কেউ নড়বে না, সিরাজ সিকদার মরবেনা, বীর বাঙ্গালী লড়বেনা। যার যা আছে তা নিয়ে ঝাপিয়ে পরার পরিবর্তে নিজেদের বোঝা পিতার ঘারে চাপিয়ে আল্লাহর রোষানল থেকে বাচার ব্যার্থ চেষ্টা করবে।
যেসকল নেতা মানুষের আবেগকে পুঁজি করে ক্ষনিকের জন্য মানুষকে বিমুগ্ধ করতে পেরেছিল তাদের অনেককেই কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে কিন্তু যারা মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছে তারাই কেবল বেচে আছেন এবং থাকবেন শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত। মরহুম গোলাম আযম (রঃ) ইনশা’আল্লাহ মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থকবেন অনন্ত কাল ধরে।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৬ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
মনে যা আসে তাই লেখার চেষ্টা করি।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন