বিদেশী ললীপপ জাতীয়তাবাদীদের জন্য নয়
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০১ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:২০:৫৬ রাত
যে বিবেচনায় সরকার অধ্যাপক গোলাম আযমকে হাসপাতালে রেখেছে সে বিবেচনায় বিএনপি তার জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারত।
বিদেশী ললীপপ জাতীয়তাবাদীদের জন্য নয়
রাজনীতির অনেক গুলো অনুষঙ্গের মধ্যে সাহস, দূরদর্শিতা আর বাকপটুতা অন্যতম। অখ্যাত বারাক ওবামা, বাকপটুতা আর সাহসের স্পর্ধার কারণে আজ আমেরিকার মত বৃহৎ এবং শক্তিশালী বিশ্বমোড়ল দেশের রাষ্ট্রপতি। সাহস আর বাকপটুতার কারনে মাওলানা ভাসানি এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দিকে পিছনে ফেলে শেখমুজিবুর রহমান, ‘বঙ্গবন্ধু’!
সাহস আর বাকপটুতার কারনেই মুক্তিযুদ্ধের কথিত সোল এজেন্ট বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের প্রধান, আপন কন্যাকে বিবাহ দিতে পেরেছেন রাজাকার নূরু মিঞার নাতি মাশরুরহোসেনের সাথে। সাহসের কারণেই প্রধানমন্ত্রী বলতে পেরেছেন, ‘পুতুলের দাদাশ্বশুড় রাজাকার হলেও যুদ্ধাপরাধী নন’! সাহসের কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার খৃস্টান পুরত্রবধু কৃস্টিনা সম্পর্কে বলতে পেরেছেন, ‘আহলে কিতাব বলেও একটা কথা আছে’! সাহসের কারনেই তিনি ‘আন্তধর্ম বিবাহ” আইন বলে সিদ্ধ করেছেন। সাহসের কারণেই তিনি বিডিআর মিউটিনির পর সেনানিবাসে, সেনা সদস্যদের মুখমুখি হতে পেরেছেন। সাহসের কারনেই তিনি পদ্মাসেতু খেক আবুল হোসেনকে দেশপ্রেমিক খেতাব দিতে পেরেছেন। সাহসের কারনেই তিনি ওসমান পরিবারের নিরাপত্তার ভার নিজের হাতে নিতে পেরেছেন। সাহসের কারণেই তিনি জেলায় জেলায় জয়নাল হাজারী সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। সাহসের কারণেই তিনি লগী-বৈঠা নিয়ে নেতা কর্মীদের রাজ পথে নেমে আসতে বলেছিলেন।
সাহস এবং দূরদদর্শিতার কারণে ৯১-৯৬ এর বিরোধী লদের নেত্রী ধর্মহীন সেকুলার রাজনীতি করার পরেও তৎকালীন সরকারী দলের অঘোষিত বন্ধু ধার্মিক জামায়াত এবং নষ্ট বামদের নিয়ে এক টেবিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে তখনকার সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাহস, বাকপটুতা আর দূরদর্শিতার কারণেই ২০০১-২০০৬ এর বিরোধী দলীয় নেত্রী, শায়খুল হাদিস আল্লামা আযিযুল হক (রঃ) এর মত নিখাদ ধার্মীক ও ইসলামী সংগঠকের সাথে ৫ দফা চুক্তি করতে পেরেছিলেন।
যে জামায়াতের সাথে বর্তমান সরকার এবং সরকারী দলের সাপে-নেউলে সম্পর্ক সেই জামায়াত সম্পর্কে সরকার এবং সরকারী দলের প্রধান যখন বলেন, ‘জামায়াত দেশের জন্য কোন হুমকি নয়’ তখন রাজনীতিবিদের ভাবা দরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতটা সাহসী? এমন বক্তব্য দিয়ে তিনি প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে পারেন এবং তার জবাব কি হবে তাও নিশ্চয়ই তিনি ভেবে রেখেছিলেন। শত্রুকে মিত্র আর প্রতিকুল পরিস্থিতিকে যারা অনুকূলে নিয়ে আসার যোগ্যতা রাখেননা তারা জনসমর্থন থাকার পরেও রাজনীতিক সফলতা ধরে রাখতে পারেন না। ৩০% সমর্থনের পূঁজি নিয়ে ৬০% সমর্থন ক্যাশ করতে পারা সবচেয়ে বড় সফলতা পক্ষান্তরে ৬০% সমর্থন থাকার পরেও ৫১% সমর্থন ক্যাশ করতে নাপারা কতটুকু ব্যার্থতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
অনৈতিক সাহসের চেয়ে নৈতিক সাহস বেশী শক্তিশালী কিন্তু সেই নৈতিক সাহসও যদি অনৈতিক সাহসের কাছে মার খায় বা অনৈতিকতার সামনে যদি নৈতিক সাহসটুকুও তুলে ধরা না যায় তাহলে তাদের রাজনৈতিক মিত্রতা যে কতটা দূর্বল হতে পারে তা আর বলে বুঝাবার অপেক্ষা রাখেনা।
আমার সিরিয়ান এক কলীগ কথায় কথায় বলত কুল্লু বাঙালী মুখমাফি! (মানে, সব বাঙালীরা বেউকুফ)। আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতাম কিন্তু তেমন আরবী নাজানার কারণে উত্তর দিতে পারতাম না। তাছাড়া সরাসরি প্রতিবাদ করলে ঝগড়া লেগে যাওয়ার ভয়ও করতাম। মাস ছয়েক পরে যখন কিছুটা আরবী শিখেছি তখন একদিন আমার সামনে আবারও সেই একই মন্তব্য করল, ‘কুল্লু বাঙ্গালী মুখমাফি’ (সব বাঙ্গালীরাই বেউকুফ)! এবার আর ছেড়ে কথা বললাম না। বাকপটুতার সাথে তড়িৎ যবাব দিলাম, ‘বাঙ্গালী মুখ মাফি সহীহ, লেকিন আহসান মিন সুরি’। অর্থাতঃ বাঙ্গালীরা বেউকুফ বটে কিন্তু সিরিয়ানদের চেয়ে বুদ্ধিমান। অফিস রুমে লেবানিজ, মিশরি, এবং কয়েকজন সৌদি বসেছিল, জবাব শুনে সবাই হো হো... করে হেসে দিয়ে আমার তারিফ করতে থাকল। যদি আমি যুতসই জবাব দিতে নাপারতাম এবং হিনমন্বতায় ভুগতাম তাহলে অন্যান্য কলীগরাও আজীবন বাংগালীদের বেউকুফই ভাবত। সিরিয়ান কলীগ আমাকে বেউকুফ বানাতে গিয়ে নিজেই বেউকুফ বনে গেল ফলে আমার সামনে বসে সে আর কোনদিন ‘কুল্লু বাঙ্গালি মুখমাফি’ বলার হিম্মত করেনি।
বর্তমান রাজনীতিক ডামাঢোলের মধ্যেও যখন প্রধানমন্ত্রী সাহস করে বলতে পারলেন, ‘জামায়াত দেশের জন্য হুমকি নয়’ তখন জামায়াতের মিত্র শক্তি যদি বাকপটুতার সাথে বলতে পারতেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আজ যে সত্য স্বীকার করলেন তা আমরা ৯১ সালেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম আর তাই তখন থেকেই তাদের সাথে রাজনৈতিক মিত্রতা করেছিলাম। জামায়াত এখন আমাদের রাজনৈতিক মিত্র, যতই তেল মারেন না কেন তাদের আর নিজেদের দিকে টানতে পারবেন না। ২৮শে অক্টোবরের লগী বৈঠার তেলেসমাতি, সাতক্ষিরা আর বগুড়ার নারকীয় হত্যাকান্ড, শিবির নেতা দেলোয়ার এবং ডঃ মাসুদের সাথের অমানবিক আচরণ, সর্বপরি আব্দুল কাদের মোল্লাকে জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে আপনারা আজীবনের জন্য জামায়াত কতৃক তালাক প্রাপ্তা হয়ে গেছেন। যা হিল্লার মাধ্যমেও সংশোধন যোগ্য নয়। হারানোর বেদনায় আজ যাকে আপনারা মানাবতাবিরোধী সাজিয়েছেন সে বরং মানবতার বন্ধু, কারণ প্রশ্নবিদ্ধ আদালত বানিয়ে ৯২ বছরের বৃদ্ধকে ৯০ বছরের জেল দেয়ার মত গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ আপনারা হাজির করতে পারেননি। লোক দেখান গ্রেফতার আর সাজান নাটক বলেইতো বিবেকের তারনায় কথিত অপরাধীকে ২ ঘণ্টাও জেলে রাখেননি বরং নাতিজামাই আদরে হাসপাতালে রেখেছেন! যেই বিবেচনায় আপনারা অধ্যাপক গোলাম আযমকে হাসপাতেলে রেখেছেন সেই বিবেচনায় এবং তার দলের সাথে আমাদের রাজনৈতিক মিত্রতা থাকার কারণে আমরা তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেছি।“
জামায়াতের মিত্র শক্তি যদি এতটুকু বাকপটুতা দেখাতে পারত তাহলে আজ যে ভাঙ্গনের শুর বাজছে তা হয়ত বাজতনা আর আতাতের প্রশ্ন তুলতেও কেউ সাহস করতনা। জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলে আর রজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ হয়ে যদি প্রমাণ করতে হয় যে আঁতাত হয়নি তাহলে লুকচুরি না করে জামায়াত যদি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কেবলা পরিববর্তন করে তবে আপনাদের আঙুল চোষা ছাড়া বাংলার জমিনে কোন ললিপপ অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয়না। বিদেশী ললিপপ যে আপনাদের জন্য তৈরী হয়না তার প্রমাণ আশা করি ইতি মধ্যেই আপনারা পেয়েছেন।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৩৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজকের বিএনপির লিডারশীপ ২০০৬ সালের আগের ডাটাবেজ ব্যবহার করে পলিটিক্যাল সিদ´ধান´ত নেয় বলে
স´টেইটমেন´ট এ যেমন গলদ করে, কার´যক´রম হাতে নিতেও তেমন গলদ করে আর সিদ´ধান´ত স´বভাবতঃই ভুল হয়।
ডুবতে বসা নৌকার সম´পদ যেমন কেউ না কেউ উদ´ধার করতে তৎপর হয় - তেমনি বিএনপি নামক নৌকার সম´পদ ও কেউ না কেউ উদ´ধার করবে - প´রশ´ন হল কে সেই প´রাগমাটিজম দেখাবে।
আজ লাখো কোটি ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মী-শুভাকাঙ্খির মনের কথাটাই আপনি তুলে ধরেছেন।
বিএনপির সাথে জোট করে কতটুকু লাভ হয়েছে তা হিসাব করার সময় এসে গেছে।
একলা চলো নীতিতে আগালে মনে হয় আমাদের মধ্যে আরো বেশী কাজ হতো...আমাদের ভাইদেরকে এত নির্যাতনের শিকার হতে হতো না...'
কাদের মোল্লাকেও হারাতাম না।
বিএনপি বেসিক্যালি একটা টাউদের দলে পরিণত হয়েছে।
দেশ এদের কাছেও নিরাপদ না।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন