হক্কানী আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ, সলফে সালেহীন ও ইসলামী দলগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করেছে এবার জামায়াতকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:২৩:২৫ দুপুর



প্রতিটি মানব সন্তান ইসলামের ফিতরতের উপর জন্ম লাভ করে কিন্তু তাদের মাতা পিতার কারনে পরে তারা আস্তিক নাস্তিক মুর্তিপূজারী বা ইহুদী নাসারা হয়। মুসলিম বাবা মায়ের ঘরে জন্ম নেয়া প্রতিটি শিশুই আজন্ম ইসলামী ফিতরত ধারণ করে। যদিও বয় প্রাপ্তির পরে বিভিন্ন কারনে কেউ কেউ সঠিক আমল করেনা এমনকি কেউ কেউ নাস্তিক মোরতাদও হয়ে যায়। তবে তাদের সংখ্যা হতে গোনা।

বেশীর ভাগ মুসলিম সন্তানই তাদের অন্তরে তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্বাবাদ ও রাসূল (সঃ) এর প্রতি মহব্বত পোশণ করে। যারা আল্লাহকে ভালোবাসে রাসূল (সঃ)কে নেতা মানে এবং কুরআনের বিধানকে সমুন্নত দেখতে চায় তারা বিভিন্ন ভাবে তার প্রমাণ দিয়ে থাকে।

কেউ বা মাদ্রাসা কায়েম করে দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে, কেউবা মানুষের আক্বীদা বিশ্বাসের মধ্যে যে বিদায়াত প্রবেশ করেছে তা দূর করার প্রচেষ্টা করে, কেউ বা বয়ষ্ক লোকদের তালিম ও তারবিয়তের মহান ভ্রত নিয়ে দেশ দেশান্তরে ঘুরে ঘুরে আবার কেউবা রাষ্ট্রিয় ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে।

যদিও সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই কিন্তু কর্মধারায় কিছুটা পার্থক্য আছে। যার দৃষ্টিতে যেখান থেকে এবং যেভাবে শুরু করলে ভালো সে সেখান থেকে শুরু করে তবে সবাই মৌলিক ইবাদত সহ কিছু বিষয়ে একই কর্মনীতি অনুসরণ করে।

রাসূল (সঃ) সহ সকল নবী রাসূল গণই তাদের নবুয়তি দায়িত্ব শুরু করেছিলেন দাওয়াতের মাধ্যমে। আর তাদের প্রথম দাওয়াতই ছিল, আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে অস্বীকার কর'। তাওহীদের এ মর্মবাণী মানুষের মাঝে প্রচারের কাজ দিয়েই মূলত সকল ইসলামী সংগঠন গুলোও তাদের কাজ শুরু করে।

বাংলাদেশে ইসলামী দল হিসেবে যারা পরিচিত তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী অন্যতম। রাজনৈতিক ময়দানে যেহেতু জামায়াতের সরব পদাচরনা তাই তাদেরকে বারবার সরকারী তথা আন্তর্জাতিক সঢ়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। তারা যখনই বড় ধরনের সঢ়যন্ত্রের শীকার হয় তখন হাজারও ব্যাথা বেদনা মত পার্থক্য ভুলে পীর মাশায়েখ, আলেম ওলামা এবং ইসলামী দলগুলো এগিয়ে আসে। নিঃশ্বার্থ আল্লাহ প্রেমীক রাসূল(সঃ) ভক্ত এ মানুষ গুলো বিপদের ঘনঘটা কেটে গেলে তারা ফিরে যায় আপন নীড়ে।

যারা জামায়াতের কঠিণ সময়ে শুধুমাত্র আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর খাতিরে নিজেদের ঈমানী দায়িত্ব মনে করে জামায়াতের পাশে দাড়ায় তাদের প্রতি জামায়াতের কি কোন দায়িত্বই নাই? যদি দায়িত্ব থাকে তাহলে সুখের দিন গুলোতে আমরা কেন জামায়াতকে তৌহীদি জনতার কাতারে দেখিনা? কেন যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম ওলামা, মসজিদ মক্তব, ঈমাম মুয়াজ্জিন, পীর মাশায়েখ, সলফে সালেহীনদের দরবারে জামায়াতের নেত্রীবৃন্দের সরব উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়না? তার কারণ কি এটা যে তারা আপনাদের দাওয়াত দেয়না সে জন্য আপনারাও তাদের ছায়া মাড়ান না? যদি তাই হয় তাহলে জেনে রাখুন আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালনে চরম ভাবে ব্যার্থ হয়েছেন বরং আপনাদের দৃষ্টিতে যারা অদূরদর্শী তারা তাদের দায়িত্ব পালনে শফল হয়েছে।

৯০ এর দশকে আপনাদের নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যখন গণ আদালত হয়েছিল তখন আলেম সমাজ সত্যের পক্ষে ময়দানে নেমেছিল। ২০১৩ সালে যখন জামায়াতের প্রথম শারীর নেতারা জেলে এবং চরম শাস্তির অপেক্ষায় তখন আলেম সমাজ তথা তৌহিদী জনতা আর একবার তাদের ভালোবাসা এবং ঈমানদারীর প্রমাণ দিয়েছে। এখন আপনাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনারা কি বিপদ কেটে গেলে আগের মতই একলা চল নীতি অবলম্বন করবেন নাকি সকল এখতেলাফ ভুলে গিয়ে বা ৫% এখতেলাফ এর সাথে ৯৫% ইত্তেফাক নিয়ে এগিয়ে যাবেন? ৯৫% ইত্তেফাকের মোকাবেলায় যদি ৫% এখতেলাফ বিজয়ি হয় তাহলে সে দায়িত্ব নিতে হবে আপনাদেরকেই কারন যে যত বড় তার দায়িত্বও তত বেশী এবং তাকেই বেশী ছাড়া দিতে হয়।

ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে আলেম সমাজ যেখানে ১৩ দফা দাবী এবং ৫ দফা কর্মসূচী ঘোষনা করেছে সেখানে আপনাদের একাত্বতা এবং আজীবনের ঐক্য এখন সময়ের দাবী। আপনারা যদি সেই দাবী পূরণে ব্যর্থহন তাহলে জামায়াতের সাইনবোর্ড হয়ত টিকে যাবে কিন্তু মুসলিম উম্মাহর প্রাপ্তির খাতায় কিছুই যোগ হবে না। তাই আশা করব মুসলিম উম্মাহর প্রাপ্তির খাতায় চুড়ান্ত বিজয়কে সংযুক্ত করার স্বার্থে জামায়াতে ইসলামী সর্বচ্চো ত্যাগ স্বীকার করে হলেও আপন দায়িত্ব পালনে স্বচেষ্ট হবেন। নাহলে ইতিহাস তাদের কখনও ক্ষমা করবে না।

মহাসমাবেশে ১৩ দফা পেশ : মহাসমাবেশে মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনিরী ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো—এক, কথিত গণজাগরণ মঞ্চের মূল উদ্যোক্তা আসিফ মহিনউদ্দীন, আশরাফুল ইসলাম রাতুল, নিহত রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা, ডা. ইমরান, ঘাদানিক নেতা শাহরিয়ার কবির, লেখক জাফর ইকবালসহ স্বঘোষিত নাস্তিকরা নিজেদের ব্লগে (সামহোয়্যারইন, মুক্তমনা, ধর্মকারী, নুরানী চাপা প্রভৃতি) আল্লাহ ও রাসুল (সা.) তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকর জঘন্য মন্তব্য করেছে সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। দুই, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো ইসলামি রাজনীতি চালু থাকবে। তিন, গত কয়েকদিন থেকে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে শহীদ ১৯ জন ওলামায়েকেরাম ও সাধারণ মুসল্লিদের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। চার, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব আল্লামা জাফর উল্যাহ খানসহ সারাদেশে গ্রেফতারকৃত দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে।

পাঁচ, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনসহ কোরআন সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নারী উন্নয়ন নীতিমালাসহ সব ইসলামবিরোধী আইন বাতিল করতে হবে। ছয়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শাহবাগসহ সারাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ইসলামবিরোধী ও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী প্রজন্ম চত্বর প্রত্যাহার করতে হবে। সাত, হাইকোর্টের বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। আট, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীসহ যুদ্ধ পরবর্তী সব মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের গ্রহণযোগ্য বিচার করতে হবে। নয়, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ সব সংবাদিক, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। দশ, হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট করার অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। এগার, নাস্তিক ও সরকারের দালাল ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, শামীম আফজলসহ সব দালালকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। বার, নাস্তিক মুরতাদ, ব্লগারসহ সব ধর্মদ্রোহীর বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করতে হবে এবং তের, জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমসহ সব মসজিদ মাদরাসায় হামলাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কর্মসূচি : সমাবেশে ৫ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ১৩ দফা দাবি মানা না হলে আগামী ১লা মার্চ শুক্রবার সারাদেশে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে মহাসমাবেশ ও জাতীয় সংসদ অভিমুখে সব জেলা থেকে লংমার্চ আহ্বান করা হবে। বাংলাদেশের অন্যতম যুদ্ধাপরাধী এবং ধর্মদ্রোহী মুসল্লিদের খুনি রাজাকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে পদত্যাগ করতে হবে। আগামী শুক্রবার থেকে দেশের সাড়ে চার লাখ মসজিদে নাস্তিক মুরতাদদের পতনের জন্য ফজরের নামাযে ‘কুনুতে নাজেলা’ (বিশেষ দোয়া) পড়া হবে। আগামী মাসে দেশের সাড়ে ৪ লাখ মসজিদের ৯ লাখ ঈমাম মোয়াজ্জিন নিয়ে মহাসমাবেশ করা হবে এবং পরবর্তী দেশের ৪০ লাখ ওলামা মাশায়েখের মহাসমাবেশ আহ্বান করা হবে।

মহাসমাবেশে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ্ আহমাদ শফীর রোগমুক্তি ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জন্য দোয়া করা হয়।

বিষয়: রাজনীতি

১৯৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File