আক্কেল আলীর বে'আক্কেলে প্রশ্নের আঁতেলীয় সমাধান।
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৫ মে, ২০১৪, ০৪:৪৮:৩৪ রাত
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত কথাটা সমাজে ব্যাপক ভাবে প্রচলিত, ওয়াজ মাহফিলেও আক্কেল আলী কথাটা অনেকবার শুনেছে। এমন ওয়াজ শুনে বার বার পুলকিতও হয়েছে। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা বোধ বেরে গেছে। আক্কেল আলী সব সময় আপন মাকে খুশি রাখতে চেষ্টা করেছে। কোনদিন মনে এমন প্রশ্নের উদয় হয়নি যে বাপের পরিবর্তে কেন মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশতের কথা প্রচলিত? কিন্তু গোল বেধেছে বিয়ের পরে যখন নিজে বাবা হয়েছে। আক্কেল আলী বুঝতেই পারছেনা যে এত কষ্ট করে রুজি রোজগার করে স্ত্রী সন্তানদের লালন পালন করার পরেও সন্তানের বেহেশত বাপের পায়ের নিচে নাহয়ে মায়ের পায়ের নিচে হওয়ার কথা প্রচলিত কেন?
অনেকেই বলে আক্কেল আলীর আক্কেল কম কিন্তু তাই বলে মনে কোন প্রশ্নের উদয় হলে তার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত চুপ করে থাকার পাত্রও আক্কেল আলী নয়। লোকে কি বলল না বলল সেটা বড় বিষয় নয় আসল বিষয় হল উদ্ভুত প্রশ্নের সমাধান হওয়া। তাছারা প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া না করলেও জুমার খুতবা, ওয়াজ মাহফিল আর সওয়াল জওয়াবের মাধ্যমে আক্কেল আলী কুর’আন হাদীস ও ফিকার জ্ঞান যতটুকু অর্জন করেছে তাও কিন্তু কম না?
অন্যদিন ঠিকমত নামায না পড়লেও আক্কেল আলী কোনদিন জুমার নামায পড়েনি এমন কথা কেউ বলতে পারবেনা। বরাবরের মত আজও আক্কেল আলী একদম খতীব সাহেবের পিছনে নামায আদায়ের জন্য মসজিদের মেম্বরের সামনে বসেছে। ওখানে বসতে পারলে স্পষ্টভাবে খতীব সাহেবের খুতবা শুনতে পারে। তবে সেজন্য সবার আগে মসজিদে যেতে হয় আর সেটা করতে পারলে সর্ব প্রথাম মসজিদে প্রবেশের পুরুষ্কার হিসেবে উট সাদাকার বারতি সওয়াবতো আছেই। জুমার দিন সর্ব প্রথাম মসজিদে প্রবেশের মাধ্যমে এমন মূল্যবান সওয়াব হাসিলের ব্যাপারেও আক্কেল আলী বেশ তৎপর।
যথারীতি খুতবা শুরুহলে আক্কেল আলীর একেবারে আক্কেল গুড়ুম! গত ক’দিন যাবত যে প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল আজ খতীব সাহেব সে বিষয়েই খুতবা রাখছেন! হাদীস কুরআনের যুক্তি দিয়ে খতীব সাহেব মায়ের মর্যাদার ফজিলত বয়ানের সাথে সাথে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশতের প্রচলিত কথাটাও উল্লেখ করলেন, যার পরনায় আক্কেল আলী আজ বেজায় খুশি। মনটা বেশ ফুড়ফুড়ে। মসজিদ থেকে ফেরার পথে নিজের সন্তান আর স্ত্রীর জন্য কয়েক ধরনের চকলেট, কেন্ডি, আচার কিনে নিয়ে এল। স্বামীর এরকম আদিক্ষেতা দেখে আক্কেলের স্ত্রী আর চুপ থাকতে পারলনা। কারণ জিজ্ঞেস করায় বিষয়টি খুলে বলল, তবে হুজুর যেসব যুক্তি দিয়েছেন তা মনে করে কিছুই বলতে পারলনা। শুধু এতটুকু মনে করতে পারল যে সন্তানের জন্মের পর চব্বিশ মাস মা’ বুকের দুধ পান করান যা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ, তাই মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত হওয়ার প্রচলিত কথাটা যৌক্তিক।
আক্কেলের সন্তানের বয়স এখন ২৪ মাস কিন্তু মাতৃ দুগ্ধের প্রতি সন্তানের আকর্ষন এখনও কমেনি অথচ হুজুর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে কোন ভাবেই চব্বিশ মাস অতিক্রান্ত সন্তান মাতৃ দুগ্ধ পান করতে পারবেনা। জীবনের বিগত ২৪ বছরে আক্কেল আলী এমন বিপদে আর কখনো পরেনি। একদিকে সন্তানের জীবন মরণ প্রশ্ন আর অন্য দিকে আল্লাহর হুকুম। কোনটাই লঙ্ঘন করার ক্ষমতা আক্কেলের নাই। কথায় আছে বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। এবার ত্রাতার ভুমিকায় এগিয়ে এল আক্কেলের বন্ধু বে’আক্কেল। তার একটাই কথা, সন্তানের বয়স ২৪ মাস হলে মায়ের দুধ পান করতে পারবেনা বুঝলাম কিন্তু বাবার দুধ পান করতে তো কোন বাঁধা নাই, তাই না? বে’আক্কেলের যুক্তি শুনে আক্কেলের মাথায় এবার আসমান ভেঙ্গে পরার পালা। ২৪ মাসের পরে সন্তান বাপের দুধ পান করবে এমন কথা আক্কেল জীবনে এর আগে কখনো শুনেনি।
সন্তানের বয়স চব্বিশ মাস পার হওয়ার পরে বাপের দুধ পান কি করে সম্ভব তার সামাধানের জন্য এবার আক্কেল হাজির হল বাল্য বন্ধু ডাঃ আঁতেল আলীর চেম্বারে। যেমন আক্কেল তেমনি তার বন্ধু বে’আক্কেল আর ডাঃ আঁতেল। এ যেন মানিক জোড়, ত্রিরত্ন! যাই হোক ডাঃ আঁতেল কিন্তু সন্তানকে পিতৃদুগ্ধ পানের সঠিক সমাধানই দিলেন। খচাখচ একটা প্রেসক্রিপশান লিখে দিলেন। সমাধান দেখেতো আক্কেল আলীর চক্ষু চড়ক গাছ। এক প্যাকেট গুড়দুধ, একটা ফিডার এবং নিপল। কিভাবে দুধ তৈরী করে সন্তানকে পান করাতে হবে তাও ডাঃ আঁতেল বলে দিলেন।
এমন সুন্দর সমাধান পেয়ে আক্কেলের আর খুশির সীমা নাই। সন্তানের সেইযে বাপের দুধ পান করা শুর তার যেন আর শেষ নাই। আক্কেলের সন্তানের বয়স ২৪ মাস পার হয়ে এখন ২৪ বছর। ডাক্তারি পাস করে ইন্টার্নী করছে কিন্তু এখনও সে সন্তান যথারীতি বাপের দুধই পান করেযাচ্ছে। অবশ্য বয়স বারার সাথে সাথে বাবার দুধ পানের ধরণও বদলেছে। আক্কেল সন্তান এখন আর ফিডার নীপলের মাধ্যমে নয় বরং কাচের গ্লাসে করে গড়ম দুধ পান করছে। দৈনিক ২/১ গ্লাস দুধ পান না করলে নাকি তার মাথাই ঠিক থাকেনা।
বৃষ্টি ভেজা পড়ন্ত বিকেলে আক্কেল বিছানায় শুয়ে বৌ এর সাথে আত্ম যৈবনিক গল্প করছিল। বিয়ে, সন্তানের জন্ম, সন্তানকে মাতৃ দুগ্ধ পান আর সর্ব শেষ বিগত ২৪ বছর যাবত পিতৃদুগ্ধ পান করানর গল্প। স্মৃতি চাড়নের এক পর্যায়ে আক্কেলের মনে ২৪ বছর পূর্বের সেই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি হল। প্রশ্নটা এবার আরো শক্ত ভাবে দেখা দিল। যুক্তিটা হল মাত্র ২৪ মাস দুধ পান করানর কারণে মায়ের পায়ের নিচে যদি সন্তানের বেহেশত হয় তাহলে ২৪ বছর পর্যন্ত দুধ পান করান, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্য পিতার মর্যাদা কি হওয়া উচিৎ?
আক্কেল আট গাট বেঁধে হুজুরের কাছে সমাধান খুঁজতে যাওয়ার জন্য উঠে দারাল কিন্তু আক্কেল বধূ স্বামীকে আর আগে বারতে দিলনা। সে বলল মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশতের কথা যেমন প্রচলিত আছে তেমনি স্ত্রীর উপরে স্বামীর মর্যাদার কথাও কিন্তু প্রচলিত। অতএব বিচলিত হওয়ার কিছুই নাই আল্লাহ হলেন আহকামুল হাকিমীন, তিনি ভুমিকা অনুসারে আপন আপন স্থানে সকলকেই মর্যাদা দিয়েছেন। আর সন্তানের উপর বাধ্যবাধকতা আরপ করেছেন মাতা-পিতাকে সম্মান করতে, তাদের সাথে সদয় আচরণ করতে এমনকি বিরক্ত হয়ে উহ পর্যন্ত না বলতে।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৮৯ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
০ সরাসরি না খেয়ে মাথার পিছন দিক থেকে ঘুরিয়ে এনে খাওয়ার মত ।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
আমনে লেখেছেন,
আক্কেলের সন্তানের বয়স এখন ৩০ মাস কিন্তু মাতৃ দুগ্ধের প্রতি সন্তানের নেশা এখনও কাটেনি অথচ হুজুর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে কোন ভাবেই ত্রিশ মাস অতিক্রান্ত সন্তান মাতৃ দুগ্ধ পান করতে পারবেনা। জীবনের বিগত ৩০ বছরে আক্কেল আলী এমন বিপদে আর কখনো পরেনি। একদিকে সন্তানের জীবন মরণ প্রশ্ন আর অন্য দিকে আল্লাহর হুকুম। কোনটাই লঙ্ঘন করার ক্ষমতা আক্কেলের নাই। কথায় আছে বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। এবার ত্রাতার ভুমিকায় এগিয়ে এল আক্কেলের বন্ধু বে’আক্কেল। তার একটাই কথা, সন্তানের বয়স ৩০ মাস হলে মায়ের দুধ পান করতে পারবেনা বুঝলাম কিন্তু বাবার দুধ পান করতে তো কোন বাঁধা নাই, তাই না? বে’আক্কেলের যুক্তি শুনে আক্কেলের মাথায় এবার আসমান ভেঙ্গে পরার পালা। ত্রিশ মাসের পরে সন্তান বাপের দুধ পান করবে এমন কথা আক্কেল জীবনে এই প্রথম শুনল।
যাউকগ্যা আমার প্রতি আমনের এই সম্মান দেওনের জন্য ধন্যবাদ, তয় আসল কথা হইল, ৩০ মাস দুধ পানের হুজুরের কাহিনীটাও ভুল ছিল।
আমার নানা আক্কেল মুন্সী নতুন এক কথা হুনাইল, আল্লাহ নাকি বইলছে, '৩০ মাস পর্যন্ত সন্তান তার মায়ের বুক থেকে দুধ খাওয়ার অধিকার রাখে', এইটা তো অধিকারের কথা, ৩০ মাস পরে জোড় কইরা দুধ ছাড়াইতে হইব এমন জোড় জবরদস্তির আদেশ নাকি কুথাও নাই। একটু খোলাসা করিয়া যদি কইতেন।
বেক্কেল ভাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
"র" এর অধিকার হরণ করে "ড়" এর ব্যবহার এতো বাড়লো কিভাবে সেটা চিন্তা করে পেলাম না। "ড়" বর্তমান সরকারের খাস নাকি?
ধন্যবাদ।
ঘুড়পাক > ঘুরপাক
ফুড়ফুড়ে > ফুরফুরে
আচাড় > আচার
ভেঙ্গে পরার > ভেঙ্গে পড়ার
ইত্যাদি। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপু।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন