সবুজ স্বপ্ন
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৫ মে, ২০১৪, ১২:৪৪:৪৮ রাত
মরু শহর দুবাইয়ের ব্যাস্ত রাস্তার পার্শ্বে দাড়ান ছয় তলা বাড়িটা অনেকটা রাজ প্রসাদের মত। ঝুলন্ত বারান্দায় বাহারি লতা-পাতার সমাহার। বাহির থেকে দেখলে মনে হবে পুরণ দিনের পরিত্যক্ত রাজ প্রসাদ। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বুঝা যাবে ব্যাস্ত রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা প্রসাদটা মোটেও পরিত্যাক্ত নয়। সবুজ লতা পাতা গুলো পরিপাটি এবং সাজানো গোছানো। স্বর্গীয় হুরপরীরা বেহেস্তের বাগানকে যেভাবে সাজিয়ে রখবে বলে জানাযায় অনেকটা সেরকম। বেহেস্তের সব কিছুতেই নাকি সবুজের সমাহার থাকবে, তাহলে এটাকি বেহেস্তের সেই সাজানো সংসারের দুনিয়াবী প্রতিচ্ছিবি?
ভাবনায় ছেদ পরল টহল পুলিশের গাড়ির ভেঁপু শুনে। এভাবে উদ্দেশ্যহীন দাড়িয়ে থাকতে দেখলে নিশ্চিৎ ওরা আমাকে হাজারটা প্রশ্ন করবে। সন্তসজনক জবাব না দিতে পারলে লাল দালানের ভাত খাইয়ে ছাড়বে। এমন সাতপাঁচ ভেবে এভাবে দাড়িয়ে থাকাটা নিরাপদ মনে হলনা। এমতাবস্থায় উপস্থিত বুদ্ধিই ভরসা, কিন্তু মেয়েদের মত আমার উপস্থিত বুদ্ধি অতটা শার্প না। তার পরেও কিছু একটাতো করতেই হবে।
নাহ! পুলিশের গাড়ি একেবারে কাছে চলে এসেছ। দুরু দুরু মণ নিয়ে বাড়ির সদর দরজার দিকেই হাটা শুরু করলাম। ও মাহ! দরজা দেখি খোলা! কিন্তু বিনা অনুমতিতে ভিতের প্রবেশ করা কি ঠিক হবে? তবে এভাবে দাড়িয়ে থাকাটা আরও ঝুকিপূর্ণ, এখন কি যে করি ভেবে ভেব হয়রান! হঠাৎ ভিতর থেকে শব্দ এল কে? কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় কিন্তু আমার বেলায় হল তার উল্টটা। অর্থাৎ যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত পোহায়। আর দেরী না করে সালাম দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম।
আমি, আমি আবু জারীর। না সালামের কোন উত্তর পেলাম না!
কে বলে যেহেতু প্রশ্ন করেছে তাহলে নিশ্চয় একজন হলেও বাংলা ভাষি আছে। কিছুটা ভরসা পেলাম কিন্তু আর কোন প্রতিউত্তর পাচ্ছিনা কেন? শুধুমাত্র কে বলেছে। টেনশানে বুঝতেও পারিনি ওটা পুরুষের কন্ঠ ছিল নাকি মেয়ে কন্ঠ? এত দেখছি মরার উপর খারার ঘাঁ। এখন কি করি? অজানা পরিবেশে জনশুণ্য এ বাড়িতে যদি কোন মেয়ে মানুষ উপস্থিতি থাকে আর পুলিশ আমাকে ধরে ফেলে তাহলে আজীবনের জন্য শ্রী ঘর। একটু আগে পূর্ব গগণে যে ঊষার আলো দেখতে পেয়েছিলাম তা নিকষ কালো অন্ধকারে পরিণত হয়েছে। পা দুটে কেমন যেন ভাড়ি হয়ে গেছে। পেছন ঘুড়ে যে বেরিয়ে আসব সে শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলেছি।
এভাবে কতক্ষণ যে স্থির হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম তা বলতে পারবনা। বুকে হিম্মৎ করলাম। যেহেতু কোন অপরাধ করিনি তাই বৃথা শাস্তির চিন্তা করছি কেন, ভেবে মনটাকে শক্ত করার চেষ্টা করলাম। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। চোখ তুলে তাকাতেই দেখি আকাশে পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ! ভবনের সামনে সবুজ গালিচায় আচ্ছাদিত দূর্বা ঘাসে ভরা বিশাল মাঠ। মাঠের চতুর্দিকে নারিকেল সুপারি গাছের পাঁচিল। মাঠ জুড়ে ছোট বড় অসংখ্য তাবু। প্রত্যেকটা তাবুই সাজানো গোছান টিপটপ। নরম গালিচা, ঠেস দিয়ে বসার ব্যাবস্থা, মাঝখানে সাজানো পান পাত্র! মাঠের ঠিক মাঝখানের তাবুটা তুলনামূলক কিছুটা ছোট্ট। ছোট্ট তাবুটাকে কেন্দ্র করেই বাকি তাবু গুলো তৈরী হয়েছে। মাঝখনের তাবুটার দিকে তাকাতেই মনে হল ওটা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
তাবুটার নির্বাক মৃদু আহবানে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গেলাম। কাছে যেতেই তাবুর সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে এল। মনে হল স্বপ্ন দেখছি, কিন্তু না স্বপ্ন নয় এটাতো বাস্তব। দেরি না করে ভিতরে গিয়ে বসে পরলাম। চোখ তুলে তাকিয়ে বাহিরের পরিবেশ ও বাকী তাবু গুলো আবলোকন করার চেষ্টা করলাম। সেকি? তাবু গুলোতো ভরে গেছে! কোনটাই খালি নেই! সবাই কেমন যেন আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমিই আজকের এই অনুষ্ঠানের মধ্যমণি!
বালিকাদের ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটা দল দেখলাম, যারা মখমলের রেশমি পোষাক পরা। মাথায় সাজান খাজাঞ্চী। খাজাঞ্চী গুলো আচ্ছাদিত এবং বালিকারা প্রসাদমূখী, তাই খাজাঞ্চীতে কি আছে এবং বালিকাদের চেহারাইবা কেমন তা বুঝতে পারছিলামনা। পার্শ্ববর্তি তাবুর লোক গুলো কেন যেন আমাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে! তারা বলা বলি করছিল আজকের মধুময় এই সান্ধ অনুষ্ঠানটা নাকি আমার খাতিরেই! কিন্তু কেন? সে জবাব তাদের কাছে নাই। আমিও জানিনা কেন এত আয়জন? এর আয়োজকইবা কে?
হঠাৎ দেখলাম আমার এক চাচা দাড়িয়ে আমকে উদ্দেশ্য করে বলছে যে আজকের আয়োজনের কারণ এবং আয়োজকের পরিচয় না পেলে তারা চলে যাবে। আমি নিজেই আগামাথা কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা অথচ তারা আমার কাছ থেকেই জানতে চাচ্ছে, আশ্চর্য! হঠাৎ কেউ যেন একজন প্রসাদের ঝুলন্ত বারান্দায় ঘোষকের ভুমিকায় আবির্ভুত হয়ে আমার পরিচয় তুলে ধরতে শুরু করল। আমি যা না তার চেয়েও অনেক কিছু বাড়িয়ে বলছে বলে মনে হল। আমার পরিচয় শেষ করেই আমার বড় সন্তানের পরিচয় পেশ করল!
আমার পরিচয় যখন বলা হচ্ছিল তখন নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল কিন্তু যখন সন্তানের পরিচয় দেয়া হচ্ছিল তখন ভয়ে আমার পেটের ভাত চাউল হতে শুরু করল। অন্য কোন ভয়ে নয় বরং ভয় হচ্ছিল দুরন্ত আমার সন্তানটা আমাকে জব্দ করবে, কেন তার পরিচয় তুলে ধরার অনুমতি দিলাম। হায় আল্লাহ! এখন কি করি? না, আর দেরী নয় এবার কিছু একটা করতেই হবে। উঠে দ্রুত পদে প্রসাদের কাছে এগিয়ে গেলাম। ততক্ষণে পরিচয় পর্ব শেষ। পরিচয় বলতে আমার আর আমার বড় সন্তানের পরিচয় দিয়েই পরিচয় দানকারী প্রসাদের ভিতরে চলে গেছে। আশ্চর্যের বিষয় হল এবারও খেয়াল করিনি পরিচয় দানকারী কি পুরুষ না মহিলা? দেখা না যাক অন্তত কন্ঠটাতো বুঝতে পারতাম, তাও পারলাম না।
প্রসাদের প্রবেশ পথের পাশেই একটা বিশাল হল রুম। হল রুমের দড়জা খোলা থাকায় ভিতরটা দেখা যাচ্ছিল। হলটা কানায় কানায় পরিপূর্ণ। দর্শক গ্যালারীতে যাদের দেখলাম তারা আর কেউনন, সবাইকেই মনে হল পরিচিত-অপরিচিত ইসলামী আদন্দোলনের নেতা কর্মী। মেহমানদের মঞ্চের কাউকেই চিনতে পারলাম না। চেহারা সুরতে মনে হল তারা সবাই আরব শেখ। তাও আবার ২/৪ জন না বরং শতকের হিসাবে অসংখ্য। উপস্থাপক কে তা বুঝার চেষ্টা করলাম। হালকা পাতলা গড়ন, উজ্জল মুখায়ব, গায়ে আধুনিক পোষাক, মুখ ভর্তি হালকা চাপ দাড়ি, মনে হচ্ছিল অনেক দিনের চেনা এবং ক্ষনিকের জন্য হলেও দেখা কোন জনপ্রিয় ব্লগার। ভদ্রলোক এতটাই ব্যাস্ত যে আমার দিকে তাকানোর সুযোগও তার নাই! ডায়াস রাখার মত জায়গা না থাকায় অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন মেহমানদের পিছনে দাড়িয়া।
তার এহেন কার্যক্রমে নিজেকে ধন্য মনে হলেও তার প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধ হলাম। অভিমানে হল রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। পূণরায় নিজের তাবুর দিকে হাটা শুরু করলাম। কিন্তু না তা আর পারলাম কোথায়? হল থেকে বেরতেই একদল বুজুর্গদের মুখমুখি হলাম। তাদের সকলকেই মনে হল জন্ম জন্মান্তর থেকে চিনি। তারা কেউ স্বদেশী আবার অনেকেই বিদেশী, তবে সবাই বিশ্ব ইসলামনআন্দোলনের প্রাণ পুরুষ। তাদেরকে দেখে মনে হল তারাও যেন আমাকেই খুজছেন। প্রগ্রাম কোথায় হচ্ছে সেখানে তাদের নিয়ে যেতে বললেন। আমি লা জওয়াব। ইশারায় তাদেরকে হল রুম দেখিয়ে দিলাম কিন্তু না, নিস্তার পেলাম না। অগত্যা তাদের সাথে হল রুমের দিকে রওয়ানা হতেই হল। এমন সময় ভেসে এল আজানের সুমধুর শুর। সবচেয়ে মুরুব্বি বুজুর্গের নির্দেশে আমাদের গতি মসজিদের দেকে পরিবর্তিত হয়ে গেল। ডানদিকের হল রুমের পরিবর্তে বামদিকের ওজুখানার দিকে এগিয়ে গেলাম। ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করতেই মোবাইলার এয়ালার্মে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৫১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
দাওয়াত কবুল।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বড় ভাই,আপনার জন্য শুভ কামনা রইল অবিরত............
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন