আসুন শাহাবাগ থেকে শপথ নেই রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই।

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:১৯:৪১ রাত



আসুন শাহাবাগ থেকে শপথ নেই রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই।

যুদ্ধের সময় জন্ম নিয়েছি বলে আজানের ধ্বণী প্রথমে শুনেছি নাকি গুলির শব্দ বলতে পারবনা তবে যখন থেকে শব্দ জ্ঞাণ হয়েছে তখন থেকে যে শব্দটা সবচেয়ে বেশী শুনেছি সেটা হল রাজাকার। অবশ্য আমার ছোট্ট ফুফুর মুখে এ শব্দটা প্রথম শুনেছি বলে এখনও যখনই রাজাকার শব্দটা শুনি তখন নিজের কানে তার কণ্ঠ গুঞ্জরিত হয়। তিনি এবং তার বান্ধবী কাম প্রতিবেশী ভাতিজি তথা আমার হবু বৌ মরহুমা তাসলিমা আপা রাজাকারদের উপর বেশ খ্যাপা ছিলেন।

উপযুক্ত বয়স না হওয়ায় অবশ্য তাসলিমা আপার বিয়ে হয়েছে অন্য জায়গায়। তিনি তিন সন্তানের জননী হওয়ার পরে আমি ঘটনাটা জানতে পেরে বেশ আফসোস করেছিলাম। অবশ্য তখন আমি ৯বম শ্রেণীর ছাত্র। ছোট ফুফু এবং তাসলিমা আপার বিয়ে হয়েছিল আমার বুঝ শক্তি হওয়ার আগেই তবে এতটুকু মনে আছে যে তাদের বিয়ের সময় আমাদের বাড়িতে অনেক মেহমান এসেছিল।

পরে যখনই তারা শ্বশুর বাড়ি থেকে আসতেন তখন খুব আনন্দ অনুভব করতাম কিন্তু চলে যাওয়ার সময় খুব খারাপ লাগত। একবারতো কিছুতেই আমাকে রেখে যেতে পারছিলনা। আমি এতটা এগ্রেসিভ ছিলাম যে ছোট ফুফুর চুলে মুঠি ধরেছিত আর ছাড়াছিনা এবং সজোড়ে নিজের হাত পা ছুড়ছিলাম তখন এক পর্যায় তিনি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, 'এটা তো দেখছি বড় রেজাকার হয়েছে'! ফুফু রাজাকারকে রেজাকার বলেছিলেন এবং সেটাই ছিল আমার কানে ভেসে আসা প্রথম রাজাকার শব্দ।

বড়ে হয়ে দাদীর কাছে শুনেছি যুদ্ধের সময় নাকি ছোট ফুফু এবং তাসলিমা আপার জন্য পুকুরের কাচায় একটা গর্ত বানানো হয়েছিল। সেটার উপরে ছিল খড়ের পালা। দিনের বেলায় নাকি তাদের সেই গর্তে লুকিয়ে রাখা হত। অবশ্য শেষ পর্যন্ত আমাদের গ্রামে পাক সেনারা আসেনি এমনকি রেজাকারও না। তবে সারা বাংলাদেশে যে তান্ডব তারা চালিয়েছে তাতে তাদের উপযু্কত বিচার হওয়া জরুরী ছিল। কিন্তু তৃদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে ৭২-৭৫ সরকার জাতির কপালে কলঙ্কের রাজ টিকা পড়িয়েছিল যা এখনও আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি।

এদেশীয় দালাল এবং রাজাকারদের বিচারের আওয়ায় আনতে গিলে দেখা গেছে একই ঘরে মুক্তি যোদ্ধা এবং রাজাকারের অস্তিত্ব বিধ্যমান! জাতির বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্যের কথা চিন্তা করেই নাকি গ্রেফতার কৃত সকল দালাল এবং রাজাকারদের মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল।

সে যাই হোক, নতুন প্রজন্ম এখন ৭১ এর রাজাকারদের বিচারের দাবীতে উচ্চ কণ্ঠ, আমিও তাদের সাথে একমত। অপরাধীদের ক্ষমা করা হলে শহীদের আত্মা শান্তি পাবেনা অপমানের দহনে কুড়ে কুড়ে মরবে ইজ্জত হারা মা বোনেরা। তাই রাজাকারদের শাস্তির দাবী যথার্থ।

কিন্তু সব সময়ই একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায় আর সেটা হল কোন না কোন ভাবে অপরাধীরা ক্ষমতাসীনদের আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। তাই সন্ত্রাসীরা দেশের ক্ষমতা বদলের সাথে সাথে তাদের খোলসও বদলায়। সন্ত্রাসী এবং রাকাজারদের একটাই দল আর তাহল ক্ষমতাসীন দল। অবশ্য ২/৪জন ব্যতিক্রমও থাকে।

এমতাবস্থায় তরুণ প্রজন্ম যখন জেগেছে তখন রাজাকারের আস্তানা বাংলা দেশে রাখবনা সে ক্ষমতাসীন দলেই হোক আর হোক বিরোধী দলে। এই প্রত্যয় নিয়েই আমদের বজ্র শপথ নিতে হবে। কোন ভাবেই এ দবী যেন ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ না থাকে। যদি তাই হয় তাহলে আসল রাজাকারের এবং বড় অংশ যারা ইতিধ্যেই খোলস বদলিয়ে ফেলেছে তারা ধরা ছোয়ার বাহিরেই থেকে যাবে। ফলে শহীদের আত্মা গুমড়ে মরবে আর হাহাকার থামবেনা ইজ্জত হারা মা বোনদের।

রাজাকারদের চিহ্নিত করা বেশি কঠিণ না দরকার শুধু সদিচ্ছার। আমরা নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে আবেদন করব, ১৮ দলিয় জোট যেন রাজাকারের একটা লিষ্ট তৈরী করে ঠিক তেমনি ১৪ দলীয় জোটও যেন একটা লিষ্ট করে তরুণ প্রজন্মের হাতে দেয়। তরুণ প্রজন্ম উভয় লিষ্ট ভুক্ত সকল অভিযুক্ত দালালদের আইনের কাঠ গড়ায় দাড়া করাবে।

রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধে উঠে তরুণ প্রজন্ম দেশের প্রথিতযশা আইনজিবীদের নিয়োগ দিবে এবং ওপেন কোর্টে তথা প্রজন্ম চত্বরে ট্রায়ল হবে। স্বাক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে সত্যিকারের অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে দেশকে রাজাকার মুক্ত করা যেতে পারে। যাতে ভবিষ্যতে আর কাউকেও রাজাকার গালি দিতে নাহয় বা শুনতে না হয়।

বিষয়: রাজনীতি

১৮৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File