শিশুতোষ নাটকঃ যোগ বিয়োগ আকাইদ

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১০ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:৩৯:৩৪ দুপুর

নাটকঃ যোগ বিয়োগ আকাইদ --- আবু জারীর

শিশু শ্রেনীতে, শ্রেনী শিক্ষক গণিত শিখাচ্ছিলেন এমন সময় প্রধান শিক্ষকের প্রবেশঃ

প্রধান শিক্ষকঃ আসসালামু’আলাইকুম

ছাত্র-ছাত্রী ও শ্রেনী শিক্ষকঃ ওয়ালাইকুম’আসসালাম।

প্রধান শিক্ষকঃ বাচ্চারা তোমরা কেমন আছ?

ছাত্র-ছাত্রীঃ আলহাম’দুলিল্লাহ আমরা সবাই ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন স্যার?

প্রধান শিক্ষকঃ আমিও আলহাম’দুলিল্লাহ ভালো আছি।

প্রথম ছাত্রীঃ স্যার, আমরা তো বাচ্চানা সবাই স্টুডেন্ট, আম্মু বলেছেন বাচ্চারা সব ঘরে থাকে আর স্টুডেন্টরা স্কুলে যায়।

প্রধান শিক্ষকঃ তোমার আম্মু ঠিকই বলেছেন। তোমরা সবাই এখন স্টুডেন্ট, তবে তা তোমাদের ক্লাশ টিচারের। আমিতো তোমাদের ক্লাশ টিচার না তাই তোমরা সকলে আমার বাচ্চার মত। আচ্ছা বাবুরা বলতো ১+১ = কত হয়?

ছাত্র-ছাত্রীঃ সমস্বরে দুই।

প্রধান শিক্ষকঃ এইযে বাবু তোমার নাম কি?

ছাত্রীঃ আম্মু।

প্রধান শিক্ষকঃ আম্মু? আম্মু কারো নাম হয় না কি?

ছাত্রীঃ তাহলে আমার আব্বু আমাকে আম্মু বলে ডাকে কেন?

প্রধান শিক্ষকঃ আর তোমার টিচার তোমাকে কি নামে ডাকে?

ছাত্রীঃ নাফিসা।

প্রধান শিক্ষকঃ আচ্ছা নাফিসা, স্কুলে আসার সময় তোমার আম্মু কি করেন?

ছাত্রীঃ ঘরের ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করেন।

প্রধান শিক্ষকঃ আহা, আমি তা জানতে চাইনি। আমি জানতে চাচ্ছি তোমার স্কুল ব্যাগ গুছিয়ে দেন কিনা?

ছাত্রীঃ আমার ব্যাগ আমি নিজেই রাত্রে ঘুমানোর আগে গুছিয়ে রাখি। আম্মু বলেন আমি নাকি বড় হয়ে গেছি। আমি এখন স্টুডেন্ট। প্রত্যেক স্টুডেন্টের নাকি নিজের কাজ নিজেরই করা উচিৎ’।

প্রধান শিক্ষকঃ তোমার আম্মু ঠিকই বলেছেন। তবে স্কুলের টিফিন নিশ্চয়ই তোমাকে বানিয়ে আনতে বলেনা?

ছাত্রীঃ আম্মুও বানিয়ে দেয়না। আমার টিফিন তো আল্লাহ বানিয়ে দেন! জানেন স্যার, আল্লাহ না আমাকে খুব ভালবাসেন।

প্রধান শিক্ষকঃ আচ্ছা? তা কিভাবে?

ছাত্রীঃ আমি, জাম-জামরুল, তাল-তরমুজ, বেল-পেয়ার, আঁতা, কাঠাল, নারকেল, দুধ, কলা, মধু, মাছ, মাংস এবং ডিম পছন্দ করি। আমার আল্লাহ আমার জন্য ওগুলো বানিয়ে রাখেন। আব্বু সুধু বাজার থেকে কিনে এনে আমাকে খেতে দেন?

প্রধান শিক্ষকঃ তোমার আল্লাহই যখন তোমাকে ভালোবেসে ওগুলো বানায় তখন আবার তোমার আব্বু বাজার থেকে কিনে আনেন কেন?

ছাত্রীঃ স্যার আপনি দেখছি আমার দাদা ভাইর মত বোকা! কিচ্ছু জানেন না! আমার দাদা ভাইওনা বোকার বোকা কিচ্ছু জানেনা। সব কিছু সুধু জিজ্ঞেস করে।

প্রধান শিক্ষকঃ ঠিকই বলেছ। আমি আসলেই শিক্ষকতা জীবনের ৩০ বছরের মাথায় তোমার কাছে তোমার দাদা ভাইয়ের মত বোকা হয়ে গেছি। এবার আমার প্রশ্নের জবাব দাও। তোমার আল্লাহ’ই যখন তোমাকে ভালোবেসে তোমার জন্য ফলমূল, তরিতরকারি, মাছমাংস, দুধ-ডিম ও মধু তৈরী করে তখন তোমার আব্বুকে তা কিনতে হয় কেন? টাকা কি আল্লাহ নেন?

ছাত্রীঃ আমার আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষি নন। তিনি কোন কিছুরই মূল্য নেন না। তিনি বিনে পয়সায় সকল প্রাণীর প্রয়োজনীয় সব চাহিদা মেটান।

প্রধান শিক্ষকঃ তাহলে ওগুলো কার কাছ থেকে কিনে? পয়সাই বা কে নেয়?

ছাত্রীঃ ফলমূল যে গাছে ফলে সে গাছে পানি দিতে হয়, গাছ থেকে ফল পারতে হয়, বাজারে নিয়ে আসতে হয়। আব্বু যে পয়সা দিয়ে ফলগুলো কিনেন তা মূলত ফলের দাম না বরং বাগানের পরিচর্যা, ফল পারা এবং বাজারে নিয়ে আসার মজুরী।

প্রধান শিক্ষকঃ আল্লাহু’আকবার! আল্লাহু’আকবার! আল্লাহু’আকবার! (সকলে সমস্বরে) আল্লাহু’আকবার! আসলেই আমরা সকলেই বোকা, তুমি সত্যিই মহা জ্ঞানী। কে তোমাকে শিখিয়েছে আক্বীদার নীরেট এই সত্য কথা?

ছাত্রীঃ আমার বোকা দাদা ভাই।

প্রধান শিক্ষকঃ স্যালিউট, তোমার দাদা ভাইকে আর তোমাকে আন্তরিক মোবারকবাদ। তুমি বস।

প্রধান শিক্ষকঃ এইযে বাবু তুমি দাড়াও। কি নাম তোমার?

ছাত্রঃ রেদোয়ান

প্রধান শিক্ষকঃ ধর তোমার আম্মু টিফিনের জন্য তোমাকে একটা আপেল দিল, তোমার আব্বুও একটা আপেল দিল, আর এই নাও আমি একটা আপেল দিলাম। এখন তোমার কাছে মোট কয়টা আপেল আছে?

ছাত্রঃ দুইটা, স্যার দুইটা!

প্রধান শিক্ষকঃ রেদোয়ান তুমিকি আমার প্রশ্নটা বুঝেছ? না বুঝলে আবার ভালো করে শুন। ধর তোমার আম্মু টিফিনের জন্য তোমাকে একটা আপেল দিয়েছ, তোমার আব্বুও একটা আপেল দিয়েছ, আর এখন আমি একটা আপেল দিলাম। এখন তোমার কাছে মোট কয়টা আপেল আছে?

ছাত্রঃ (কেদে দিয়ে) স্যার বিশ্বাস করুন আমি মিত্থ্যা কথা বলিনা, আম্মু বলেছেন মিথ্যা কথা বলা মহা পাপ। বিশ্বাস না হলে ব্যাগ চেক করে দেখেন স্যার।

(শ্রেণী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক বিব্রত হয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করবে এবং রেদোয়ানের ব্যাগে একটি আপেল পাওয়া যাবে, সদ্য দেয়া স্যারের আপেল সহ সত্যিই আপেলের সংখ্যা দুইটি!)

প্রধান শিক্ষকঃ রেদোয়ান তুমি আমার কাছে আস। ( আর একজন ছাত্রকে উদ্দ্যেশ্য করে) এইযে বাবু তোমার নাম কি?

২য় ছাত্রঃ আব্দুল্লাহ

প্রধান শিক্ষকঃ আব্দুল্লাহ, তুমি কি টিফিনের জন্য কিছু এনেছ?

২য় ছাত্রঃ জ্বি স্যার, আমি ওরেঞ্জ এনেছি।

প্রধান শিক্ষকঃ গুড। তোমাকে তোমার আম্মু কয়টা ওরেঞ্জ দিয়েছে?

২য় ছাত্রঃ দুইটা

প্রধান শিক্ষকঃ তোমার আব্বু কয়টা দিয়েছে?

২য় ছাত্রঃ দুইটা

প্রধান শিক্ষকঃ এই ধর, আমি দিলাম একটা। ঢুকাও, ব্যাগের মধ্যে ঢুকাও। এবার তুমি বলতো, তোমার ব্যাগে এখন কয়টা ওরেঞ্জ আছে?

২য় ছাত্রঃ ছয়টা স্যার, ছয়টা! (ছাত্র তার ব্যাগ থেকে ছয়টা ওরেঞ্জ বের করে দেখাবে)

প্রধান শিক্ষকঃ (শ্রণী শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে) আপনি কি বাচ্চাদের গণিত শিখান না ম্যাজিক শিখান?

শ্রেণি শিক্ষকঃ (আমতা আমতা করে), স্যার, আমিতো গণিতই শিখাই এবং বাচ্চারা গণিতে খুব ভালো।

প্রধান শিক্ষকঃ হ্যা, তাতো দেখতেই পাচ্চি কেমন গণিত শিখাচ্ছেন? মুশকিল হল বাচ্চারা যেভাবে প্রমাণ দিল তাতে ওদেরও অবিশ্বাস করার কোন সুযোগ নাই।

শ্রেণি শিক্ষকঃ স্যার, আপনি অভয় দিলে বাচ্চাদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারি ব্যাপারটা কি? কিভাবে এটা সম্ভব?

প্রধান শিক্ষকঃ আসলে বিষয়টা জানা খুব জরুরী। আপনি জিজ্ঞেস করে দেখুন।

শ্রেণি শিক্ষকঃ (প্রথম ছাত্রকে উদ্দ্যেশ্য করে) আছা রেদোয়ান তোমার আম্মু তোমাকে একটা আপেল দিয়েছে, তোমার আব্বুও একটা আপেল দিয়েছে আর এখন স্যার একটা আপেল দিলেন। সব মিলিয়েতো তোমার কাছে তিনটা আপেল থাকার কথা?

প্রথম ছাত্রঃ স্যার সবই ঠিক আছে কিন্তু আসার সময় গাড়িতে বসে আমি একটা আপেল খেয়ে ফেলেছি, তাইতো স্যারের দেয়া আপেল সহ আমার কাছে এখন আপেল আছে দুইটি।

প্রধান শিক্ষকঃ ওহ মাই গড! সত্যিই তো, ছেলে দেখি একই সাথে যোগ, বিয়োগ সবই শিখে ফেলেছ! তোমারটা নাহয় মানলাম কিন্তু ওর বিষয়টা?

শ্রেণী শিক্ষকঃ আছা আব্দুল্লাহ, তুমি ভালো করে মনযোগ দিয়ে শোন, তোমার আম্মু তোমাকে দুইটা ওরেঞ্জ দিয়েছে, তোমার আব্বুও তোমাকে দুইটা ওরেঞ্জ দিয়েছে আর এখন স্যর দিয়েছেন একটা। তাতে তোমার কাছে পাঁচটা ওরেঞ্জ হওয়ার কথা। কিন্তু তুমি বলছ ছয়টা, ব্যাগ থেকেও ছয়টা আপেলই বের করলা আথচ তুমি আমার সাথে আমার গাড়িতেই স্কুলে এসেছ, পথে গাড়ি থামাইনি যে তুমি দোকান থেকে একটা ওরেঞ্জ কিনে আনবে বা তোমাকে কেউ একটা ওরেঞ্জ দিবে? তাহলে তোমার কাছে ছয়টা ওরেঞ্জ এল কোত্থেকে?

২য় ছাত্রঃ স্যার সহজ! গতকালও আমি ওরেঞ্জ নিয়ে এসেছিলাম। আব্বু-আম্মু যথারীতি ২টা করে ওরেঞ্জ দিয়েছিলেন আর্থাত’ ৪টা ওরেঞ্জ নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু খেয়েছিলাম ৩টা। তাই একটা ওরেঞ্জ আগে থেকেই আমার ব্যাগে ছিল!

প্রধান শিক্ষকঃ বহ! বহ! চমৎকার! তোমরা দেখছি যোগ, বিয়োগ, আক্বাইদ সহ শিখে ফেলেছ। তোমাদের ধন্যবাদ। আজকের মত ছুটি, ফি’আমানিল্লাহ।

ছাত্র-ছাত্রীরাঃ আল্লাহ্‌ হাফেজ, মা’আসসালামা।

বিষয়: বিবিধ

১৮৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File