কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:৩৫:৩৮ দুপুর



এবার কোথায় পালাবে সোনর চান?

নিজের কথায় আপনি নিজেই ফেসে যাচ্ছেন।

এবার সব জামায়াতিরা মিলে ঠ্যালা সামলান।

সত্য কোনদিন চাপা থাকেনা একদিন না একদিন প্রকাশ পায়ই। কথায় আছে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে ঠিক কাদের মোল্লার ব্যাপারেও তেমনটা ঘটতে যাচ্ছে।

যতই বলুন আপনারা রাজাকার না

এবার জনগণ প্রমাণ করেই ছাড়বে আপনাদের আসল ঠিকানা।

সরকার ইতিমধ্যেই আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আদালতে দেয়া কাদের মোল্লার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে কাদের মোল্লার আসল চেহারা উন্মচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কাদের মোল্লা তথা তার আইজিবীরা বলেছে ঢাকার কসাই কাদের আর বর্তমান কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি না এমনকি তিনি নাকি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঢাকায়ই ছিলেন না! আচ্ছা এই কথা? তাহলে চশমা চোখে দিয়ে পাকিস্তানি সেনাকমান্ডার নিয়াজীর পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিটা কে? সে যদি কসাই কাদের হয়ে থাকে তাহলে সেটা প্রমাণ করা গোয়েন্দা সংস্থার জন্য কঠিণ কিছু না। তাছাড়া সহজেই প্রমাণ করা যাবে যে কাদের মোল্লা যুদ্ধকালিন সময় সত্যিই তার গ্রামের বাড়িতে ছিলেন কি না? যদি প্রমাণীত হয় যে সে গ্রামে ছিলনা তাহলেই তো কেল্লা ফতেহ।

কাদের মোল্লা তার জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি যুদ্ধকালীন তার জন্মভূমি ফরিদপুর জেলার সদরপুরে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন। সেখানকার বিখ্যাত পীর ধলামিয়া সাহেবের বাড়িতে থেকে তার দুই মেয়েকে পড়িয়েছেন। আচ্ছা?

পীর ধলামিয়া সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির সমর্থক ছিলেন। তার বড় মেয়ের জামাই একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বুয়েট থেকে পাস করা ইঞ্জিনিয়ার। সরকারের এলজিইডি বিভাগে তিনি উঁচুপদে চাকরি করতেন এবং পিডি বা প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। গাফফার ইঞ্জিনিয়ার নামের এই কর্তাব্যক্তি এখনো এলজিইডির বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করে থাকেন। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুন্নবী যিনি কিনা এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তিনিও তার সহযোদ্ধা হিসেবে একসঙ্গে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন।

পীর সাহেবের অন্য মেয়ের জামাতা বাংলাদেশের বিখ্যাত অর্থপেডিঙ্ সার্জন ডা. সিরাজুল ইসলাম যিনি এক সময় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া পীর সাহেবের বড়ভাই পাকিস্তান আমলে অর্থাৎ ১৯৫৩ সালের দিকে পুলিশের আইজি ছিলেন। নাম মো. আবুল হাসনাত ওরফে ইসমাইল মিয়া। তিনি প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খানের সহপাঠী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন এবং তার সেগুনবাগিচার বাড়িতে প্রায়ই আসতেন। তার ছেলেদের মধ্যে মেজর জেনারেল মামুন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের অন্য ছেলে মুজিবুর রহমান ফারুক পুলিশের এডিশনাল আইজি এবং বড় ছেলে আবদুস সালাম সিএসপি কর্মকর্তা ছিলেন। এক মেয়ের জামাই ছিলেন লেখক অধ্যাপক আবু রুশদ মতিন উদ্দিন।

কাদের মোল্লার জবানবন্দির আলোকে আপিল বিভাগ এসব বরেণ্য ব্যক্তিদেরকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারলেই হল। তখন দেখা যাবে কাদের মোল্লা কোথায় পালায়?

কাদের মোল্লা নাকি ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ করতেন। এক্ষেত্রে এক্ষেত্রে কাদের মোল্লাকে ধরা কোন ব্যাপারই না। তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের দুই কর্ণধার বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকেও সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করলে তখন পালাবে কোথায় বাঁচাধন?

কাদের মোল্লা উল্লেখ করেছেন, তিনি সদরপুরে আরও ৩০-৩৫ জনের একদল যুবককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন! নতুন কথা শোনালে হে!

সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেগম সালেহা মোশারফ বর্তমান সরকারের একজন সংসদ সদস্য। তার স্বামী প্রয়াত অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন ছিলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি এবং তিনবারের নির্বাচিত এমপি। তাদের আত্মীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার প্রয়াত নান্নু মীর ছিলেন যুদ্ধকালীন সময়ে থানা কমান্ডার এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি। নান্নু মীরের ছোটভাই মনি মীরের মেয়ের সঙ্গে বেগম সালেহা মোশারফের বড় ছেলের বিয়ে হয়েছে। অতএব এদের কাউকে সাক্ষী করলেই কাদের মোল্লার বক্তব্যের সত্যতা জাচাই কোন কঠিণ কাজ হবেনা।

দৈনিক কালের কন্ঠের সংবাদ মত তিনি নাকি যুদ্ধকালীন পুরোটা সময় পীর সাহেবের বাড়িতে ছিলেন। তার টাকা দিয়ে তিনি চৌদ্দরশি বা সাড়ে সাতরশি বাজারে ব্যবসা করতেন পীর সাহেবের দোকানঘরে বসে!

চৌদ্দরশি বাজার ফরিদপুর জেলার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বাজার। স্বাধীনতার সময়ও এই বাজার বসত প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার। কম করে হলেও ৫০ হাজার লোকের আগমন ঘটত হাটের দিনে। পীর সাহেবের দোকানটি ছিল সবচেয়ে বড় এবং বাজারের একমাত্র দ্বিতল টিনের ঘর। পীর সাহেবের মেজ ছেলে রহিচ ব্যবসা-বাণিজ্য দেখতেন। পরবর্তীতে তিনি ডাকাতের গুলিতে মারা যান। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের মোল্লা যদি ওই বাজারে ব্যবসা করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে অন্তত এক লাখ লোককে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যাবে। আরও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। সাপ্তাহিক বিচিত্রার এককালীন চিফ রিপোর্টার বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী জাওয়াদ মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে চৌদ্দরশি বাজারে ব্যবসা করতেন। কাজী জাওয়াদ বিচিত্রা ছেড়ে লন্ডনে বিবিসি বাংলা বিভাগে চাকরি করতেন এবং এখন তিনি বিলাত প্রবাসী।

বাজের লোকদের দরকার নাই একমাত্র কাজী জাওয়াদ সাহেবকে বিলাত থেকে এনে সাক্ষী দেয়াতে পারলেই আপিল বিভাগে কাদের মোল্লা ধরা খেয়ে যাবেন।

কাদের মোল্লা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তিনি রাইফেলস্ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যাপনা এবং স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে বাইশরশি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন উঁচুপদে এমনকি সচিব পদমর্যাদায় চাকরি করছেন। এই যদি যখন অবস্থা তখন সাক্ষ দানের জন্য আপিল বিভাগে অনেক গণ্যমান্য লোক পাওয়া যাবে তখন কাদের মোল্লা আপনি কোথায় পালাবেন?

কাদের মোল্লা নকি ঢাকা প্রেস ক্লাবের সদস্য তথা দু-দুইবার নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। যদি তাই হয় তাহলে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এমন একাধিক জাতীয় ও বরেণ্য সাংবাদিককে সাক্ষী হিসেবে হাজির করে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া কোন ব্যাপার না। যেসকল সম্পাদক সাহেবেরা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে উচ্চ কন্ঠ আশা করি তারা আপিল বিভাগে এসে সাক্ষি দিয়ে কাদের মোল্লাকে উচিৎ শিক্ষা দিবেন।

সরকার ইতিমধ্যেই ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিস্টদের দাবী মোতাবেক আইন সংশোধন করে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি, জনতার আবেগকে সম্মান দেখিয়ে সরকার অবশ্যই আপিল করবে এবং দেশের স্বনামধন্য ও প্রথিতযশা আইনজ্ঞদের এ মামলার প্রসিকিউটর নিয়োগ না করবে এবং সনামধন্য সাংবাদিক বুদ্ধিজিবী মুক্তিযোদ্ধা তথা আওয়ামিলীগের স্থানীয় নেতাদের সাক্ষী দেয়ার সুযোগ দিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় নিশ্চিৎ করবে।

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে এই বুঝি কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় আসে..........

কাদের মোল্লার রায় : নেপথ্যে ভয়াবহ অবহেলার অভিযোগ - গোলাম মাওলা রনি এমপি

বিষয়: রাজনীতি

১৩৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File