তাকওয়ার গুণ অর্জনের মহা মৌসুম আস সিয়াম আর রমাদান!

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৫ জুলাই, ২০১৩, ০৪:১০:৩৩ বিকাল

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾

বাকারাঃ১৮৩) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল ৷ এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে ৷

ইসলামের অন্যান্য বিধানের মতো রোযাও পর্যায়ক্রমে ফরয হয় ৷ শুরুতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলামনদেরকে মাত্র প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ এ রোযা ফরয ছিল না ৷ তারপর দ্বিতীয় হিজরীর রমযান মাসের রোযার এই বিধান কুরআনে নাযিল হয় ৷

রোযা ফরয হওয়ার এই ঘোষণার মধ্যে অন্তর্ণিহীত মূল বিষয়টি হল এর মাধ্যমে তাকওয়ার গুণাবলী অর্যন করার প্রতাশা । তাহলে আসুন আমরা পর্যায় ক্রমে জেনে নেই রোযা কি ? তাকওয়াই বা কি ? এবং কিভাবে রোযা পালন করলে তাকওয়ার গুণ অর্জিত হতে পারে ?

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে রোযা হচ্ছে তৃতীয় স্তম্ভ

রোযা ফার্সি শব্দ আর আরবী শব্দ হল সিয়াম বা রমাদান। رَمَضَانُ শব্দটি رَمضٌ শব্দ থেকে নির্গত। এর অর্থ পুড়িয়ে ফেলা। রোযা রাখলে গুনাহ মাফ হয়। রমাদান গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। তাই এর নাম রমাদান।

রমাদান বা সিয়াম ফরয হওয়ার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু তাকওয়ার গুণ অর্জন করা তাই আসুন এবার আমরা জেনে নেই যে তাকওয়া কি এবং কিভাবে এ গুণ অর্জন করা সম্ভব।

তাকওয়ার মূল ধাতু হল وَقيٌ যার অর্থ হল বাঁচা বা বেঁচে চলা। অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করে তাঁর সকল আদেশ মেনে এবং নিষেধ থেকে বেঁচে চলার নামই হল তাকওয়া।

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করা, তাঁর নাফরমানী না করা, আল্লাহকে স্মরণ করা, তাঁকে ভুলে না যাওয়া এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা ও তাঁর কুফরী না করা।

ওমর বিন আব্দুল আযীয (রঃ) বলেছেনঃ দিনে রোযা রাখা কিংবা রাত্রে জাগরণ করা অথবা দু'টোর আংশিক আমলের নাম তাকওয়া নয়। বরং তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহ যা ফরয করেছেন তা পালন করা এবং তিনি যা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে থাকা। এর পর আল্লাহ যাকে কল্যাণ দান করেন সেটা এক কল্যানের সাথে অন্য কল্যানের সম্মিলন।

ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) উবাই বিন কা'ব (রাঃ)কে তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উবাই (রাঃ) বলেনঃ আপনি কি কাঁটাযুক্ত পথে চলেছেন? ওমর (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ। উবাই বলেন, কিভাবে চলেছেন? ওমর বলেন, গায়ে যেন কাঁটা না লাগে সেজন্য চেষ্টা করেছি ও সতর্কভাবে চলেছি। উবাই বলেন, 'এটাই হচ্ছেতাকওয়ার উদাহরণ।

উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, 'সম্ভবত তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।' এখাবে 'সম্ভবত' শব্দটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিয়ামের আসল উদ্দেশ্য হেচ্ছে তাকওয়া কিন্তু সিয়াম সাধনার পরেও সবাই তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারবে না। অনেকের রোযা রাত্র জাগরণ এবং ক্ষুধা পিপাষার কষ্ট বাদে তাকে আর কিছু ফায়দা দিবে না। কারণ তারা শুধু দেশাচল সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অভুক্ত থাকে কিন্তু এর উদ্দেশ্য ও তাৎপর্যের প্রতি কোন ভুরুক্ষেপ করে না।

তাকওয়ার গুণ অর্জনের উপায়ঃ সিয়াম সাধনার করে নিজেদের জীবন ও আমলে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে তাকওয়ার গুণ অর্জিত হতে পারে। মূলত তাকওয়ার গুণ অর্জনেরই একটা উপযুক্ত ট্রেনিং হল সিয়াম বা রোজা। কারণ আল্লাহ চাচ্ছেন যে মুমিনগণ সর্ব প্রকার অন্যায় অবিচার যুলম থেকে বেঁচে থাকুক আর সেজন্যই রোযার মাধ্যমে বৈধ বিষয় গুলোকেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবৈধ করে আল্লাহ দেখতে চান যে বান্দা তাঁর হুকুম পালন করে কিনা? যদি বান্দা নির্দিষ্টি সময়ের জন্য বৈধ কাজ গুলোকেও আল্লাহর হুকুমে অবৈধ মনে করে বিরত থাকতে পারে তাহলে আশা করা যায় যে তারা সারাজীবনের জন্য যেসকল কাজ অবৈধ সেগুলো থেকে আমৃত্যু বিরত থাকতে পারবে।

কেন তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে হবে?

আল্লাহ বান্দাকে হুকুম করেছেন তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে তাই বিনা প্রশ্নে প্রত্যেক বান্দাকে তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে হবে। আর তা পারলেই মুমিনদের জন্য উভয় জাহানেই রয়েছে অফুরন্ত কল্যাণ।

﴿وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ ۚ وَإِن تَكْفُرُوا فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ غَنِيًّا حَمِيدًا﴾

সূরা নিসাঃ ১৩১) আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর মালিকানাধীন ৷ তোমাদের পূর্বে যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছিলাম তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও আল্লাহর ভয় করে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম ৷ তোমরা না মানতে চাও না মানো, কিন্তু আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের মালিক একমাত্র আল্লাহ ৷ তিনি অভাব মুক্ত ও সমস্ত প্রংশসার অধিকারী ৷

তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারলে দুনিয়া ও আখেরাতে যে সকল ফায়দা রয়েছে তা হলঃ

وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ﴾

সূরা বাক্বারঃ১৯৪) আল্লাহকে ভয় করতে থাকো এবং একথা জেনে রাখো যে, আল্লাহ সেই সকল মোত্তাকীদের সাথে আছেন যারা তাঁর নির্ধারিত সীমালংঘন করা থেকে বিরত থাকে৷

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا﴾

সূরা তালাকঃ২) যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেবেন ৷

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا﴾

সূরা তালাকঃ৪) যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার কাজ সহজসাধ্য করে দেন৷

﴿وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَٰكِن كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ﴾

সূরা আরাফঃ ৯৬) যদি জনপদের লোকেরা ঈমান আনতো এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর রবকতসমূহের দুয়ার খুলে দিতাম ৷ কিন্তু তারা তো প্রত্যাখ্যান করেছে ৷ কাজেই তারা যে অসৎকাজ করে যাচ্ছিলো তার জন্যে আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি৷

﴿إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ﴾

সূরা আরাফঃ২০১) প্রকৃতপক্ষে যারা মুত্তাকী, তাদেরকে যদি কখনো শয়তানের প্রভাবে অসৎ চিন্তা স্পর্শও করে যায় তাহলে তারা তখনই সতর্ক হয়ে উঠে তারপর তারা নিজেদের সঠিক কর্মপদ্ধতি পরিষ্কার দেখতে পায়৷

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ﴾

সূরা আনফালঃ২৯) হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করার পথ অবলম্বন করো তাহলে আল্লাহ তোমাদের খাঁটি ও ভেজালের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় করার দূরদৃষ্টি দান করবেন এবং তোমাদের পাপগুলো তোমাদের থেকে দূর করে দেবেন এবং তোমাদের ত্রুটি -বিচ্যুতি ক্ষমা করবেন ৷ আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল৷

إِنْ أَوْلِيَاؤُهُ إِلَّا الْمُتَّقُونَ

সূরা আনফালঃ৩৪) মোত্তাকীরা তাঁর (আল্লাহর) বন্ধু

﴿قُلْ أَؤُنَبِّئُكُم بِخَيْرٍ مِّن ذَٰلِكُمْ ۚ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ﴾

আলে ইমরাণঃ১৫) বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয় ৷ সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে৷ পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সংগিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ৷ আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন ৷

﴿بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ وَاتَّقَىٰ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ﴾

সূরা আলে ইমরাণঃ৭৬) আচ্ছা, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না কেন ? যে ব্যক্তিই তার অংগীকার পূর্ণ করবে এবং অসৎকাজ থেকে দূরে থাকবে, সে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হবে ৷ কারণ আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন ৷

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ﴾

আলে ইমরাণঃ ১০২) হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো ৷ মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়৷

﴿وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ﴾

আলে ইমরাণঃ১৩৩) দৌড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব মোত্তাকী লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।

وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَىٰ ۚ وَاتَّقُونِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ﴾

সূরা বাক্বারাঃ১৯৭) আর সবচেয়ে ভালো পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া ৷ কাজেই হে বুদ্ধিমানেরা ! আমার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকো ৷

﴿لَٰكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌ مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌ مَّبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ وَعْدَ اللَّهِ ۖ لَا يُخْلِفُ اللَّهُ الْمِيعَادَ﴾

সূরা যুমারঃ২০) তবে যারা তাদের রবকে ভয় করে চলছে তাদের জন্য রয়েছে বহুতল সুউচ্চ বৃহৎ প্রাসাদ যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে ৷ এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ৷ আল্লাহ কখনো তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না ৷

﴿وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ﴾

সূরা যুমারঃ৭৩) আর যারা তাদের রবের অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাত অভিমুখে নিয়ে যাওয়া হবে ৷ অবশেষে তারা যখন সেখানে পৌঁছবে তখন দেখবে জান্নাতের দরজাসমূহ পূর্বেই খুলে দেয়া হয়েছে ৷ ব্যবস্থাপকরা তাদের বলবেঃ তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা অত্যন্ত ভাল ছিলে, চিরকালের জন্য এখানে প্রবেশ করো৷

﴿إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ شَيْئًا﴾

মরিয়মঃ ৬০-৬৩) তবে যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের সমান্যতম অধিকারও ক্ষুন্ন হবে না৷

﴿جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدَ الرَّحْمَٰنُ عِبَادَهُ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّهُ كَانَ وَعْدُهُ مَأْتِيًّا﴾

৬১) তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি করুণাময় নিজের বান্দাদের কাছে অদৃশ্য পন্থায় দিয়ে রেখেছেন ৷ আর অবশ্যই এ প্রতিশ্রুতি পালিত হবেই ৷

﴿لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا إِلَّا سَلَامًا ۖ وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيهَا بُكْرَةً وَعَشِيًّا﴾

৬২) সেখানে তারা কোন বাজে কথা শুনবে না, যা কিছুই শুনবে ঠিকই শুনবে ৷ আর সকাল সন্ধ্যায় তারা অনবরত নিজেদের রিযিক লাভ করতে থাকবে ৷

﴿تِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي نُورِثُ مِنْ عِبَادِنَا مَن كَانَ تَقِيًّا﴾

৬৩) এ হচ্ছে সেই জান্নাত, যার উত্তরাধিকারী করবো আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে মুত্তাকীদেরকে ৷

﴿وَإِن مِّنكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا ۚ كَانَ عَلَىٰ رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا﴾

সূরা মরিয়মঃ৭১-৭২) তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে জাহান্নাম অতিক্রম করবে না ৷ এতো একটা স্থিরীকৃত ব্যাপার, যা সম্পন্ন করা তোমার রবের দায়িত্ব ৷

﴿ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوا وَّنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا﴾

৭২) তারপর যারা (দুনিয়ায়) মুত্তাকী ছিল তাদেরকে আমি বাঁচিয়ে নেবো এবং জালেমদেরকে তার মধ্য নিক্ষিপ্ত অবস্থায় রেখে দিবো ৷

﴿يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَٰنِ وَفْدًا﴾

সূরা মরিয়মঃ ৮৫) সেদিনটি অচিরেই আসবে যেদিন মুত্তাকীদেরকে মেহমান হিসেবে রহমানের সামনে পেশ করবো

﴿إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ﴾

সূরা দুখানঃ ৫১-৫৭) মোত্তাকী লোকেরা শান্তি ও নিরাপত্তার জায়গায় থাকবে।

﴿فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ﴾

৫২) বাগান ও ঝর্ণা ঘেরা জায়গায় ৷

﴿يَلْبَسُونَ مِن سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُّتَقَابِلِينَ﴾

৫৩) তারা রেশম ও মখমলের পোশাক পরে সামনাসামনি বসবে ৷

﴿كَذَٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُم بِحُورٍ عِينٍ﴾

৫৪) এটা হবে তাদের অবস্থা ৷ আমি সুন্দরী হরিণ নয়না নারীদের সাথে তাদের বিয়ে দেবো ৷

﴿يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ آمِنِينَ﴾

৫৫) সেখানে তারা নিশ্চিন্তে মনের সুখে সবরকম সুস্বাদু জিনিস চেয়ে চেয়ে নেবে ৷

﴿لَا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوْتَ إِلَّا الْمَوْتَةَ الْأُولَىٰ ۖ وَوَقَاهُمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ﴾

৫৬) সেখানে তারা কখনো মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে না ৷ তবে দুনিয়াতে যে মৃত্যু এসেছিলো তা তো এসেই গেছে৷

﴿فَضْلًا مِّن رَّبِّكَ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾

৫৭) আর আল্লাহ তাঁর করুনায় তাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন ৷ এটাই বড় সফলতা ৷

﴿إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ﴾

সূরা ক্বামারঃ ৫৪) আল্লাহর নাফরমানী থেকে আত্মরক্ষাকারীরা নিশ্চিতরূপে বাগান ও ঝর্নাসমূহের মধ্যে অবস্থান করবে,

﴿فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِندَ مَلِيكٍ مُّقْتَدِرٍ﴾

৫৫) সত্যিকার মর্যাদার স্থানে মহা শক্তিধর সম্রাটের সান্নিধ্যে৷

﴿الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ﴾

সূরা যুখরুফঃ৬৭) যখন যে দিনটি আসবে তখন মুত্তাকীরা ছাড়া অবশিষ্ট সব বন্ধুই একে অপরের দুশমন হয়ে যাবে৷

﴿مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ ۖ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ﴾

সূরা মুহাম্মদঃ ১৫) মুত্তাকীদের জন্য যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার অবস্থা এই যে, তার মধ্যে স্বচ্ছ ও নির্মল পানির নহর বইতে থাকবে ৷ এমন সব দুধের নহর বইতে থাকবে যার স্বাধে সামান্য কোন পরিবর্তন বা বিকৃতিও আসবে না, শরাবের এমন নহর বইতে থাকবে পানকারীদের জন্য যা হবে অতীব সুস্বাধু এবং বইতে থাকবে স্বচ্ছ মধুর নহর ৷ এ ছাড়াও তাদের জন্য সেখানে থাকবে সব রকমের ফল এবং তাদের রবের পক্ষ থেকে থাকবে ক্ষমা ৷ (যে ব্যক্তি এ জান্নাত লাভ করবে সেকি) ঐ ব্যক্তির মত হতে পারে যে চিরদিন জাহান্নামে থাকবে, যাদের এমন গরম পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে?

(জান্নাতের সমুদ্র ও নদীসমূহের পানি হবে নির্ভেজাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন । তার মধ্যে কোন প্রকার সংমিশ্রন থাকবে না ।

জান্নাতে দুধের নহর এমন হবে যে, "তা পশুর বাঁট বা স্তন থেকে নির্গত দুধ হবে না । "অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা এ দুধ ঝর্ণার আকারে মাটি থেকে বের করবেন এবং নদীর আকারে প্রবাহিত করবেন ।

জান্নাতের সরাব এমন হবে, যে শরাব দুনিয়ার সাধারণ মদের মত ফল পঁচিয়ে পায়ে মাড়িয়ে নির্গত করা হবে না । বরং এটাও আল্লাহ তা'আলা ঝর্ণার আকারে সৃষ্টি করবেন এবং নদী -নালার আকারে প্রবাহিত করবেন ।

জান্নাতের মধুর পরিচয় দেয়া হয়েছে এই যে, তা মৌমাছির পেট থেকে নির্গত মধু হবে না অর্থাৎ ঐ মধুও ঝর্ণা থেকে নির্গত হবে এবং নদী-নালায় প্রবাহিত হবে

জান্নাতের এসব নিয়ামতের উল্লেখের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার উল্লেখ করার দুটি অর্থ হতে পারে । এক, এসব নিয়ামতের চেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন । দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, পৃথিবীতে তাদের দ্বারা যেসব ক্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল জান্নাতে তাদের সামনে কখনো তার উল্লেখ পর্যন্ত করা হবে না । বরং যাতে তারা জান্নাতে লজ্জিত না হন সে জন্য আল্লাহ তাদের ঐ সব ত্রুটি-বিচ্যুতির ওপর চিরদিনের জন্য পর্দা টেনে দেবেন ।

বিষয়: বিবিধ

১০৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File