উচ্চশিক্ষিতা বিয়ে করলাম লাভ হইলনা। বৌ আমার বাচ্চা সামলায় পয়সা কামায়না!!
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০১ জুলাই, ২০১৩, ০২:৪৭:৫৫ দুপুর
উচ্চশিক্ষিতা বিয়ে করলাম লাভ হইলনা। বৌ আমার বাচ্চা সামলায় পয়সা কামায়না!!
ঠিক তাই। যখন আমাদের বিয়ে হয়েছে তখন আমারা দুজনই স্টুডেন্ড। আহা কি মাজা! বাপের হোটেলে খেয়ে সুঃখের সংসার! ভাগ্যবানদের ভাগ্যেই কেবল এমনটা হয়। ২৫+১৮ বয়সী জোড়ার পিছনে একটা বিয়োগান্ত ঘটনা আছে তা এই রশের আড্ডায় নাহয় নাই বল্লাম।
স্টুডেন্টেরা যখন অভিভাকদের ফাঁকি দিয়ে আড়ালে আবডালে লুকচুরী খেলে তখন আমরা একেবারে সামাজিক বৈধতা নিয়ে স্বামী স্ত্রীরির মর্যাদায় পরষ্পর পরষ্পরের একান্ত ঘনিষ্ট।
খুশিতে খুশিতে বাবা মায়ের ইচ্ছায় কবুল বল্লাম তাতেই কি তোমার বৌ হলাম, এমন টিন এজারের সাথে সংসার পাতা যে কত সেনসেটিভ তা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ জানেনা। তার পরে যদি পকেট থাকে ফাঁকা তাহলেতো কোন কথাই নাই।
বৌ পালা আর হাতি পালা নাকি সমান কথা অবশ্য আমার না, বিয়ের আগে আমার এক বিবাহিতা বন্ধবী বলেছিল কিন্তু ওর কথায় কান দেইনি বরং সুযোগ আসতেই একপায়ে দাড়িয়ে গিয়েছি কিন্তু ঠেলা সামলান শুরু করেছি বিয়ের পরেই অথচ তখনও মাস্টার্স পরীক্ষার বেশ বাকী।
মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে এমবিএকে না বলে, বিসিএস এর প্রিলি দিয়েই সরকারী চাকুরীর আশা ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছি। বৌর তখন ডিগ্রী পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষায় প্রভাব পড়তেপরে ভেবে তাকে নাজানিয়েই জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশান পাড় হয়ে একেবারে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে উড়াল দিয়েছিলাম। অবশ্য বাড়িতে ভাইবোন এবং বাবাকেও বলা হয়নি। যুক্তি ছিল সবাইকে বলতে গেলে বিভিন্ন বাঁধা আসবে আর চলে যাওয়ার পরে এমনিতেই সবাই জানতে পারবে।
ডিগ্রীতে দ্বিতীয় বিভাগে তিনি যখন পাশ করে গ্রাজুয়েট হলেন এবং মাস্টার্সে ভর্তি হলেন তখন নিজে নিজেই আবদার করলেন যে তিনি চাকুরী করবেন। আমি মতামত দিলাম, আপত্তি নাই যদি তা শিক্ষকতা হয় এবং বাড়ি থেকে পায়ে হাটার দূরত্বের মধ্যে কোন প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায়।
পায়েহাটার দূরত্বের মধ্যে তেমন সুযোগ পাওয়া যায়নি তবে একটু দূরে, দুই জায়গায় সুযোগ হলেও শেষ পর্যন্ত চাকুরী করা হয়নি কিন্তু বেচারীর খুব ইচ্ছা ছিল। সে নিয়ে আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই নিজের অনুপস্থিতিতে কুড়ি বছরের বুড়িকে দূরে কোথাও থেকে চাকুরী করতে দেয়া আমার মত বোকা স্বামীর মন সায় দেয়নি। দুই বছর পরে যখন বিদেশের পাঠ চুকীয়ে দেশে ফিরে এসে ঢাকায় চাকুরী নিলাম তখন গ্রামের একটা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু আমাকে ঢাকায় একা রেখে তিনি গ্রামে যেতে চাননি। আমি অনুমতি দিয়েছিলাম কিন্তু সে যায়নি বরং বছর ঘুড়তে না ঘুড়তেই আমাকে এক কন্যা সন্তানের জনক বানিয়ে ধন্য করেছে।
দ্বিতীয় টার্মে যখন বিদেশে আসি তখন অবশ্য তার ইচ্ছায়ই আশা হয়েছে করণ সন্তান মানুষ করার জন্য নাকি দেশের হালাল উপার্জন যথেষ্ট নয় তাই বিদেশের হালাল উপার্জন চাই। কর্তার ইচ্ছয় কর্মের ফর্মূলাকে মিথ্যা প্রমান করে কর্ত্রীর ইচ্ছায় কর্মের সন্ধানে দ্বিতীয়বারের মতে সৌদিআরবে চলে আসি।
একবছর পরে দেশে গিয়ে ছুটি কাটিয়ে আসার ঠিক ০৯ মাস পরে দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের বাবা হওয়ার সুসংবাদ পেয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলি। এতদিনে বৌ আর টিন এজার নাই। মাস্টার্স করার সাথে সাথে সে দুই কন্যার গর্বিতা জননীও বটে। এমন মেচিউর্ড উচ্চশিক্ষিতা একজন নারীতো চাকুরী করতেই পারে।
ঢাকার বাসায় নিজ সন্তান আর আপন ভাই নিয়ে থাকেন, আমি বেচারা বিদেশে বসে দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খাই, এই বুঝি ভাগ্যলীপি? ছোট মেয়ের বয়স যখন তিন মাস তখন দেশে গেলাম কিন্তু আশ্চার্যের বিষয় এবার আর চাকুরী করার কথা বলছেনা। পুরুষ মানুষ বলে কথা সব সময় সুযোগের ধান্দায় থাকে। আমিও সেই জাতের কিনা তাই সুযোগ হাতছাড়া করি কি করে? বার বার বলি, 'একটা চাকুরী নাও, আশেপাশে অনেক স্কুল চাইলেই শিক্ষকতার জব নিতে পার' কিন্তু কবি নিরব এমনকি বেশী খুনসুটি করলে বিরাট একটা নো বলে ধমকও দেয়!
যখন তার ইচ্ছা ছিল তখন আমি অনুমতি দিতে পারিনি বা অনুমতি দিলেও সুযোগ হয়নি আর যখন সময় এবং সুযোগ দুটই হয়েছে তখন তিনি নিরব এবং বিগ নো! এখন আপনারই বলুন আধা শিক্ষিতাকে বিয়ে করে নিজের সাথে সাথে তাকেও উচ্চশিক্ষিতা বানিয়ে কি লাভ হল? এমন উচ্চশিক্ষিতা বৌ বসে বসে খাবে এমনটা আমি কখনও চাইনি কিন্তু তিনি এখন আর চাকুরীর নাম গন্ধ শুনতেও রাজি নন! অবশ্য ইদানিং তিনি আর সবে বসে খান না এমনকি দাড়িয়ে খাওয়ারও নাকি সময় পাননা। সে জন্য তিনি নাকি স্লিম হয়ে গেছেন। এটা বাস্তব না চাটামি তা বলতে পারবনা তবে কিছুটা স্লিম যে হয়েছেন তা বুঝতে পারছি।
আমার বৌ এর দৈনন্দিন রুটিন আপনাদের সাথে শেয়ার করছি এবং আপনাদের পরামর্শ চাচ্ছি এমন অকর্মা বৌ ঘরে রাখা উচিৎ নাকি ঠ্যাঙ্গিয়ে বাপের বাড়িতে পাঠান উচিৎ।
ভোর ০৫টাঃ ঘুম থেকে উঠে প্রাত কর্ম সেরে ফজরের নামায পড়ে বাচ্চাদের জন্য নাস্তা তৈরী করেন।
ভোর ০৬টাঃ বাচ্চাদের ঘুম থেকে তুলে স্কুলের জন্য প্রস্তুত করে ফজরের নামায পড়িয়ে স্কুলে দিয়ে আসেন।
সকাল ০৭টাঃ নিজের এবং দুই ভাই এর জন্য নাস্তা তৈরী করেন, কুরআন তেলাওয়াত করেন এবং পত্রীকা পড়েন।
সকাল ০৯.৩০ ছোট বাচ্চাকে স্কুল থেকে এনে নাস্তা করিয়ে কোচিং এ দিয়ে আসেন।
সকাল ১০.৩০ বড় বাচ্চাকে স্কুল থেকে এনে নাস্তা করিয়ে কোচিং এ দিয়ে আসেন।
বেলা ১১টা ছোট বাচ্চাকে কোচিং থেকে নিয়ে আসেন।
বেলা ১১.৩০ বড় বাচ্চাকে কোচিং থেকে নিয়ে আসেন।
দুপুর ০২টায় বাচ্চাদের পড়াতে হুজুর আসেন তাই এর মধ্যে রান্না বান্না এবং বাচ্চাদের গোসল করিয়ে দুপরের খানা খাইয়ে রেডি করেন।
বিকেল ০৪টায় বাচ্চাদের নিয়ে আর্ট স্কুলে যান। এক ঘন্টা আর্ট করিয়ে ০৫টায় বাসায় ফিড়েন।
প্রতি বৃহস্পতিবার বাচ্চাদের গানের ক্লাশ ছিল এখন অবশ্য নাই। শুক্রবারে নিজের প্রগ্রাম ছিল এখন অনিয়মিত।
সন্ধায় মাগরিবের নামায পড়ে বাচ্চাদে পড়াতে বসান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। ফাঁকে ফাঁকে রাতের রান্নাটাও সারেরন। বাচ্চাদের ঘুমপরিয়ে এশার নামায পড়ে নিজের বিছানায় যেতে বারটা বেজে যায়। বৃহস্পতিবার ছাড়া আমার সাথেও লম্বা কথা বলেন না। বাসায় কাজের বুয়া আছে ছুটা কিন্তু বাচ্চারা তার হাতের রান্না পছন্দ করেন না। কাজের বুয়ার চেয়ে তার মায়ের হাতের রান্নাই নাকি তাদের কাছে মজাদার। অবশ্য বাচ্চাদের দোষ দিয়ে লাভ নাই বাচ্চার বাবার বক্তব্যও তাই।
দুই বাচ্চার আবার দুধরনের খাবার পছন্দ, একজন যা পছন্দ করে অন্যজান করে তার বিপরীত ফলে একজনের জন্য প'রোটা আর একজনের জন্য নুডুলস, একজনের জন্য চিকেন ফ্রাই তো আর একজনের জন্য টিকিয়া। একজনের জন্য ফ্রেন্স ফ্রাই তো আর একজনের জন্য চপ। একজনের জন্য মুরগীর মাংস তো আর একজনের পছন্দ গরুর মাংশ। একজন ইলিশ মাছ তো অন্যজনের জন্য কৈ মাছ!
বাচ্চাদের সহপাঠিদের প্রায় সবার মা'ই উচ্চ শিক্ষিতা কয়েকজন চাকুরীজিবীও বাট তারা বাচ্চাদের সময় দিতে পারেনা বলে স্কুল কোচিং এর পাশাপাশি গৃহশিক্ষক রেখেছেন কিন্তু আমার বৌ অকর্মা বলে আমি গৃহশিক্ষক রাখিনি অবশ্য তিনিও তা চাননা। বাচ্চার মা'ই পড়ান, আলহামদুলিল্লাহ বাচ্চারা কম্পিটিটিভ রেজাল্ট করছে কিন্তু তাতে কি? আমি চাই বাচ্চার মা চাকুরী করুক এবং আমার আয়ের সাথে তিনিও আয় করুক তাতে ঢাকা শহরে একটার জায়গায় দুইটা ফ্লাট হবে, একটা বাড়ির পরিবর্তে দুইটা বাড়ি হবে। একটা গাড়ির পরিবর্তে দুইটা গাড়ি হবে আরো কত কি? এত কিছুর বিনিময়ে বাচ্চারা নাহয় একটু মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হল তাতে কি? কিন্তু সে বুঝতে চায়না। এখন আপনারাই বলুন এমন নিষ্কর্মা বৌ দিয়ে এখন আমি কি করি?
মাঝে মধ্যে অবশ্য খোটা দেই ভয় দেখাই কিন্ত তিনি কুটিল হেসে বলেন, 'আগের দিন বাঘে খাইছে এখন আর ভয় পাইনা'।
উল্টা এখন আমাকেই ভয় দেখায় কিছু বল্লেই জবাবদেয়, 'তোমার বাচ্চাদের তুমি সামলাও, আমি পারবনা'।
ও'মা বলে কি? বাচ্চা নাকি আমার, তার বুঝি কিছুই না? 'না আমার কিছুই না, তোমাকে দান করলাম, আমার আর ভাল লাগেনা। আল্লহর ওয়াস্তে মাফ কর।
বিষয়: বিবিধ
৩৪৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন