ফল খাবে খাও, গাছ লিগিয়ে খাও!

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৪ জুন, ২০১৩, ০৪:২৭:৫৭ বিকাল

বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো লিচু আর বিষ খাওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।



একদম গাছ পাকা কাঠাল। দেখুন স্যার পাতাটা পর্যন্ত কাঁচা! একদাম মাত্র ২৫০ টাকা।



জাম, জামরুল,

আঁতা, কাঠাল, নারকেল,

তাল, তরমুজ বেল পেয়ারা,

লিচু, ডালিম, বেদানা, সফেদা, তেঁতুল সহ প্রায় সব ধরণের দেশী ফলের সমারহ ছিল আমাদের বাড়িতে। এর মূলে যিনি ছিলেন তিনি আর কেউ নন, তিনি আমার জান্নাতবাসীনী দাদী।


আমাদের বাড়িতে যত ফল হত তার একটা বড় অংশ যেত আমার পেটে। বাকী ফল খেত পরীবারের অন্য সদস্যরা, পাঠিয়ে দেয়াহত আত্মীয় স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীর বাড়িতে। অবশ্য এজন্য কাউকেই হাত বাড়াতে হতনা। অটমেটিক যার যার প্রাপ্য অংশ তার কাছে পৌছে যেত।

আমারটা প্লেটে করে আমার টেবিলে, আত্মীয়দেরটা ঝুড়িতে করে তাদের বাড়িতে আর প্রতিবেশীদেরটাও দাদী নিজের হাতে দিয়ে আসতেন তাদের বাড়িতে।

ফল প্রেমী আমার দাদীই আমাকে ফল এবং বৃক্ষপ্রেমী বানিয়েছিলেন। আমার দাদী আমাকে দিয়ে অনেক গাছ লাগিয়েছিলেন এখনও আমি সুযোগ পেলেই গাছ লাগাই। কিন্তু অনেকদিন হল প্রবাসে থাকার কারণে নিজেদের গাছের মৌসুমী ফল খাওয়া আর হয়না। অবশ্য এখন দাদীও নাই আর সেই ফলের গাছ এবং ফলও নাই।

শহর তথা বিদেশে থাকার কারণে কিনে খেতে হয় সব ফল। সৌদি আরবে কাঠাল পাওয়া যায়না বল্লেই চলে আর লিচু পাওয়া যায় ভাগ্য গুণে কালে ভদ্রে। তাই লিচু এবং কাঠাল খেতে এবং ছোট্ট মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য দেশে গিয়েছিলাম। সময় এতটাই সংক্ষিপ্ত ছিল যে কাউকে বলার পর্যন্ত সুযোগ হয়নি। ইমিগ্রেশান কর্মকর্তা ফেরারদিন চোখ বড় বড় করে দেখছিলেন। শেষ পর্যন্ত মুসকি হেসে জিজ্ঞেস করেই ফেল্লেন, 'আসতে না আসতেই চলে যাচ্ছেন যে'?

বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে নাপারার কারণেই কিনা জানিনা, যে উদ্দেশ্যে দেশে গিয়েছিলাম তা পুরাপুরি সফল হয়নি। অবশ্য গোটা পঞ্চাশে লিচু, কুড়ি দুয়েক আম এবং গোটা তিনেক কাঠাল খেয়েছি কিন্তু কোন তৃপ্তি পাইনি। উপরন্ত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি।

লিচু সংক্রান্ত খবরটা শুরুতেই আছে, আমের বেলায়ও তাই শুধু কাঠালের একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরছিঃ

মিরপুর ১০ নং গোলচক্কর ফলপট্টিঃ

স্যার একদম গাছ পাকা কাঠাল, দেখেন দেখেন পাতাটা পর্যন্ত কাঁচা। বড় বড় কোষ, নিজের গাছের কাঠাল স্যার। দাম মাত্র ২৫০ টাকা।

আচ্ছা ঠিক আছে ২০০ টাকা রাখুন।

না স্যার এ দামে গাছপাকা কাঠাল থাক দূরের কথা কাঁচা কাঠালও কিনতে পারবেন না।

থাক বাবা দরকার নাই।

ঠিক আছে স্যার গাছের কাঠালতো তাই লাভ লোকসানের তোয়াক্কা নাই। ছেলে মেয়েদের নিয়ে একটা ফল খাবেন, নেন স্যার নিয়ে নেন।

বাসার কলিংবেল দিতেই দুই মেয়ে দড়জা খুলে দিল। এত সুন্দর একটা কাঠাল দেখে দুজনেই সমানে লাফালাফি শুরু করল। এখনই খাবে। বল্লাম আগে আমাকে গোসল করে ফ্রেস হতে দাও কারণ আমি মতিঝিল থেকে এসেছি তাই ক্লান্ত।

গোসল করে ফ্রেস হয়ে আসতেই গিন্নি হাতে তেল মেখে কাঠাল ভাঙ্গা শুরু করল। আমাদের চার সদস্যের পরীবারে কাঠাল মামা পঞ্চম। তাকে সবার মাঝে ফ্লরে পেপার বেডে রেখে বিসমিল্লাহ বলে চাক্কু দিয়ে একদম ঘ্যাচাং করে অপারেশান করে দিলাম।



মা'শা আল্লাহ! সুন্দর কাঠাল, ভরাট কোষ কিন্তু ঘ্রান আসছেনা কেন? কাঠাল, কাঠালের কোষ আর গিন্নির তের রং একদম আলোমতি কণ্ঠ সহ দেশের খ্যাতনামা জাতীয় পত্রীকাগুলোর মতই হলুদ। হলুদের মেলা আমাকে কাঠালের কোষ গুলোর প্রতি আরো লোভি করে তুলেছে। বাচ্চাদের উপস্থিতিতে কাঠালের কোষ মুখে দিলাম। কিন্তু মাজা পেলাম না। যেমনটা জাতীয় হলুদ দৈনিক গুলো পড়ে পাওয়া যায়না।



গিন্নীকে বলতেই সে বোটের দিকটা থেকে হাত সরিয়ে কাঠালের পেটের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল। একদম আঁতির কাছে।



কাঠালের আঁতি (যেটাকে আমাদের এলাকায় ভোতা বলে) সেটা পঁচে গলে একেবারে পানি হয়ে গেছে। ইতি মধ্যে আমি কয়েক কোষ কাঠাল খেয়ে ফেলেছি এবং বাচ্চারাও ২/১ কোষ খেয়েছে।



কাঠালের ভিতরকার অবস্থা দেখে খাওয়ার রুচী একদম হরিয়ে গেল যেমন দিগন্ত এবং ইসলামী টিভি বন্ধ হওয়ার পরে হলুদ মিডিয়া গুলোর প্রতি রুচী চলে গেছে। উপরন্ত গন্ডদেশে বেশ অস্বস্থি অনুভব করতে লাগলাম। ফলে আর কাঠাল খাওয়া হলনা। পুরটাই ফেলে দিতে হল। কাঠালটা ফেলার সময় নিজের অজান্তেই চোখের কোনে দুফোটা জল এসে গেল। দুইশত টাকা লোকসান হয়েছে বলে নয় বরং সামান্য দু/চার টাকা অতিরিক্ত লাভের আশায় আমদের নৈতিকতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তাই ভেবে।

আল্লাহর দেয়া নেয়ামত ধ্বংস করার অধিকার কারও নাই কিন্তু একথাটা পর্যন্ত আমরা ভুলে গিয়েছি। দেশের টপটু বটম যখন দুর্ণীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, সংসদে আইন করে যখন কালোটাকা সাদা করা হয়, পদ্মা সেতু, শেয়ার মার্কেট, গ্যাস, বিদ্যুৎ আর রাষ্টায়াত্ম ব্যাংক খেকরা যখন দেশপ্রেমিকের সনদ পায় তখন সামান্য ক্রিকেটার আশরাফুল এবং নগন্য ফল বিক্রেতাকে দোষ দিয়ে আর কি লাভ?

কাঠালের ভোঁতা বা আঁতি সাধারণত তারাতারি পঁচেনা। কাঠাল খেয়ে আঁতিটা বাগানে ফেলে দেয়ার পরে কমপক্ষে ২০/২৫ দিন পর্যন্ত ওটাকে অক্ষত দেখেছি অথচ কি এমন বিষ প্রয়োগ করা হল যে কাঠালের পাতাটা শুকানর আগেই শক্ত এবং দির্ঘ্যস্থায়ী আঁতিটা পঁচে গেল?

আম এবং লিচু খেয়েও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে তাই বাজার থেকে মৌসুমী ফল এমনকি তরি-তরকারী এবং মাছ-মাংশ কিনতেও ভয় লাগছে।

ফল খেতে হলে এখন গাছ লাগিয়েই খেতে হবে আর মাছ মাংশ খেতে হলে করতে হবে কৃষি খামাড়। অবশ্য অনেকের পক্ষে এগুলো একাকি করা সম্ভব নয় তাই সমমনা বন্ধুরা মিলে খামাড় বাড়ি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অন্তত নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য হলেও ফল ফলাদি এবং ভোগ্য পণ্য উৎপাদ করা সম্ভব হবে।

বিষয়: বিবিধ

২৯৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File