আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী (১৮)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ০৯ জুন, ২০১৩, ১০:৩৭:৪৭ সকাল
আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী (১৭)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)
ঢাকার উদ্দেশ্যে ফিরতি সফর ও কোলকাতায় অবতরণঃ
করাচীতে কর্মব্যস্ত কয়েকদিন কাটিয়ে বিমানযোগে সরাসরি ঢাকা রওয়ানা হই। আমাদের বিমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতেই ঢাকা হতে সংকেত দেয়া হল যে, ঢাকার আবহাওয়া খুবই খারাপ। সুতরাং বিমান যেন কোলকাতা দমদম বিমান বন্দরে অবতরণ করে, এখানে অমরা প্রায় ৬ ঘন্টা বিমান বন্দরের ওয়েটিং কক্ষে অপেক্ষা করি। এই দীর্ঘ ৬ ঘন্টা বিমান আমাদের জন্য শুধু এক টুকরা করে কেক সরবরাহ করে, যাত্রীদের মধ্যে মহিলা ও শিশুও ছিল, ক্ষুধায় বাচ্চাদের খুবই কষ্ট হচ্ছিল। অতঃপর মাগরিব বাদ আমাদেরকে বলা হল যে, 'ঢাকার আবহাওয়া ভাল হয়ে গিয়েছে, সুতরাং আপনারা বিমানে আরোহন করুন'। আমাদের আরোহনের পরে বিমান ১০ মিনিটের মত উড়ে আবার আমাদেরকে জানান 'ঢাকার আবহাওয়া পুণরায় খারাপ হওয়ায় আবারও আমরা কোলকাতা বিমান বন্দরে ফিরে যাচ্ছি।' বিমান হতে অবতরণ করে বিমান অফিসে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করার পরে আবার আমাদেরকে বিমানে আরোহনের জন্য বলা হয়। বিমান আরোহনের পরে বিমান না উড়তেই আবার ঘোষণা করা হল যে, ঢাকার আবহাওয়া খারাপ হয়েছে, সুতরাং আপনারা নেমে পড়ুন। তখন আমি আমাদেরকে নিয়ে এ ধরনের ছেলেখেলা না করার জন্য পাইলটকে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানাই। অন্য যাত্রীরাও প্রতিবাদে আমার সাথে যোগ দেয়। প্রায় ৯ ঘন্টা আমরা উপবাস। বিমান আমাদের জন্য এই দীর্ঘ সময় কোন খানা পিনার ব্যবস্থা করেনি। তাই আমি প্রতিবাদ করে বল্লাম, আমাদেরকে রাত্রি যাপনের জন্য হোটেল ও খানার নিশ্চয়তা না দেয়া পর্যন্ত আমরা বিমান থেকে নামব না। পরে পাইলট আমাদেকে নিশ্চয়তা দিলে আমরা বিমান হতে অবতরণ করি। অতঃপর আমাদেরকে গাড়ি করে বিমান বন্দর হতে কিছু দুরে আশোক হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোটেলটি ভাইভ স্টার, ১ম শ্রেণীর হোটেল। অধিক রাত হওয়ার কারণে ভেটকী মাছ ফ্রাই ও ভেজিটেবল ছাড়া অন্য কিছু ছিল না বিধায় আমরা পাওয়া রুটি, মাছ ভাজি ও ভেজিটেবল খেয়ে যার যার কক্ষে গিয়ে নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে যাই। পরের দিন ভোরে উঠে নামায আদায় করে হোটেলের আঙ্গিনায় পায়চারী করতে হোটেলের সিকিউরিটি অফিসাররের সাথে আলাপ ও পরিচয় হয়। তিনি বললেন যে, 'আমার বাড়ি খুলনায় ছিল। দেশ বিভাগের পরে কলিকাতায় চলে আসলেও আমরা সুখি নই। কেননা ভারতে বাংলা ভাষা এবং বাঙ্গালী জাতির অস্তিত্বের তেমন কোন নিদর্শন আর বাকী থাকছে না। আপনাদের জন্য আমরা গর্বিত, কেননা আপনারাই বাংলাদেশ, বাঙ্গালী জাতি এবং বাংলা ভাষার অস্তিত্বকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন।' ভদ্রলোকের এই সত্য ও স্পষ্ট কথায় আমি যেমন খুশি হয়েছিলাম, তেমন আশ্চার্যও। সত্যিই কলিকাতার পশ্চিমবঙ্গ বিমান বন্দরে আমি বাংলা ভাষার কোন সাইনবোর্ড দেখলামনা, সাইনবোর্ডগুলি ছিল হিন্দি ও ইংরেজী ভাষায়। এমনকি তেলের ট্যংকারেও হিন্দি লেখা ছিল। ভদ্রলোকের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল যে পশ্চিম বাংলার সাহিত্যক বাবুরা তাদের দেশে বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলন না করে আমাদের দেশে বাঙলা ভাষা রক্ষার মায়া কান্না কাঁদেন কেন? পশ্চিম বাংলায় বাঙ্গালী জাতীঃয়তাবাদকে সর্ব ভারতীয় হিন্দি জাতীয়তাবাদের বেদীতে বলি দিয়ে বাংলাদেশে এসে উহাকে পুনর্জন্মদানের এ মায়া কান্না কেন? নিশ্চয় এর মধ্যে কোন রহস্য লুকায়িত আছে। সকালে নাস্তা সেরে রুমে এস পড়াশুনা করে সময় কাটাই, কেননা ভিসা না থাকার কারণে শহরে ঘোরা ফিরা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। যাহোক দুপুরের খানা খাওয়ার পরে আমাদেরকে আবার বিমান বন্দরে নিয়ে আসা হয়। অতঃপর বিমান বন্দরের অনুষ্ঠানিকতা সেরে আমরা বিমানে আরোহন করে আধা ঘন্টাখানেক উড়ে ঢাকায় অবতরণ করি।
পরবর্তি পর্বে থাকছেঃ ইসলামাবাদের ইউনিটি সম্মেলনে যোগদানঃ
বিষয়: বিবিধ
১৮৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন