আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী (১৪)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ৩০ মে, ২০১৩, ১০:৫২:৩১ সকাল
আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী (১৩)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)
১১ জিলহজ্জ্ব বাদশাহ ফাহদের বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানঃ
১০ জিলহজ্জ্ব বিকেলে রাবেতার একজন কর্মচারী এসে খবর দিল, 'আগামীকাল সকাল সাড়ে সাতটায় মহামান্য বাদশাহ ফাহদের বাড়িতে এক অনুষ্ঠান হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে যারা আমন্ত্রিত তাদের মধ্যে আপনিও আছেন। সুতরাং আপনি প্রস্তত হয়ে সময়ের পূর্বেই অভ্যর্থনা কক্ষে হাজির হবেন। খোঁজ নিয়ে জানলাম, হাজার-খানেক প্রতিনিধির মধ্য হতে মাত্র ৩৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে বাছাই করে আমন্ত্রণ জানান হয়েছে। আমরা সময়মত অভ্যর্থনা কক্ষে হাজির হলে পরে কয়েকখানা গাড়িতে করে আমাদেরকে বাদশার মিনায় অবস্থিত বিরাট বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকটি গেট পার হয়ে আমরা বাদশার বাড়ির বিরাট কনফারেন্স কক্ষে গিয়ে হাজির হই। রাবেতার আমন্ত্রিত মেহমান ছাড়াও হজ্জ্ব মন্ত্রলালয় ও বাদশার মেহমানসহ আমরা মোট দু'শ মেহমান ওখানে উপস্থিত হই। আমন্ত্রিতদের মধ্যে কয়েকটি দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্র প্রধান ও রাজপ্রতিনিধিরাও ছিলেন। আফগানিস্তানের মুহাজিদ সরকারের প্রধান সেবগাতুল্লাহ মোজাদ্দেদীও বাদশার পাশে রাষ্ট্র প্রধানদের সারিতে উপবিষ্ট ছিলেন। বাদশাহ ফাহাদ অনুষ্ঠানে এসে আসন গ্রহণ করার পর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে কার্যক্রম শুরু হয়। অতঃপর পর্যায়ক্রমে রাবেতার সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল্লাহ নাসিফ, হজ্জ্ব মন্ত্রী এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের মুফতি সাহেবান মেহমানদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সব শেষে পবিত্র হারাম শরীফদ্বয়ের খাদিম মহামান্য বাদশাহ ফাহদ বিন আব্দুল আজিজ সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট হজ্জ্ব প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে এক দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। এতে তিনি মুসলিম বিশ্বের প্রধান প্রধান সমস্যা যেমন ফিলিস্তিন সমস্যা, আফগানিস্তানের স্বাধীনতার জিহাদ, ইরান-ইরাক যুদ্ধ ইত্যাদির উপরে সৌদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করেন।
বাদশার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর তিনি এক এক করে সকল মেহমানের সাথে করমর্দন করেন এবং পরিচয় নেন। এখানের অনুষ্ঠান শেষ হলে আমাদেরকে বৃহদাকার খাওয়ার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। খাওয়ার কক্ষে এক অদ্ভুত কান্ড। সারিবদ্ধ বিরাট টেবিলে মাঝখানে বৃহদাকার খাঞ্চার উপরে পোলাও রেখে তার উপরে একটি রোস্ট করা আস্ত দুম্বা বসিয়ে রেখেছে। চার চার জনের জন্য এধরনের একটি খাঞ্চা ছাড়াও প্রচুর কাবাব, মিষ্টি ও ফলমূল প্লেটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অনুমানিক এ ধরনের শ'তিনেক খাঞ্জায় তিনশ আস্ত ভাজি করা দুম্বা, পোলাও, বিরিয়ানী ও নানা ধরনের উপাদেয় খাদ্য সম্ভারে এক দশমাংশ খাওয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। জানিনা এর পর আর কোন মেহমান এসব খাবার খাবে কিনা? খানার অনুষ্ঠান শেষে আমরা আবার আমাদের নির্দিষ্ট মেহমানখানায় ফিরে আসি। ১৫ জিলহজ্জ্ব পর্যন্ত আমি রাবেতার মেহমানখানায় বিভিন্ন দেশের হাজিদের সাথে মত বিনিময় ও দেখা সাক্ষাৎ করে কাটাই। অতঃপর মক্কা শরীফে এসে বিদায়ী তওয়াফ সমাধা করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে জিদ্দা রওয়ানা হই।
হারামে বোমা বিষ্ফোরণঃ
সবশেষে একটি বিষয় আলোচনা করা প্রয়োজন বোধ করছি। তা হলো হারাম শরীফে বোমা বিষ্ফোরণের বিষয়। ৭ জিলহজ্জ্ব দুটি এবং ১০ জিলহজ্জ্ব একটি এই মোট তিনটি বোমা পবিত্র হারাম শরীফে বিষ্ফোরিত হয়। যাতে একজন হাজি মুত্যুবরণ করেন।এবং বেশ কতিপয় হাজী আহত হন। মহান আল্লাহ পবিত্র কা'বা ঘর এবং তার পার্শ্ববর্তী নির্দিষ্ট এলাকাকে হারাম হিসেবে ঘোষণা করে এখানে সব রকমের রক্তপাত, খুন-খারাবীকে কিয়ামত পর্যন্ত হারাম করে দিয়েছেন। অবহমানকাল হতে এমনকি জাহেলিয়াত যুগেও আরবরা এ নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে মেনে চলেছে। সুতরাং যিনি বা যারা এ ধরনের একটি মারাত্মক অপরাধের কাজ হারাম শরীফের সীমানায় করল সমগ্র মুসলিম উম্মাহর তারা ঘৃণার পাত্র। আশা করি সৌদি সরকার অপরাধীদেরকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দানে হারামের পবিত্রতা নিশ্চিত করবেন। ( বোমা হামলার এসব অপরাধীদেরকে পরে সৌদি পুলিশ পাকড়াও করে এবং বিচারে তাদের সকলের শিরোচ্ছেদ হয়, এরা ছিল কুয়েতি শিয়া।)
পরবর্তি পর্বে থাকছেঃ আমার প্রথম গ্রেট ব্রিটেন সফর ও দেশ বিভক্তির পর ১৯৭৮ সনে আমার পাকিস্তান সফর
বিষয়: বিবিধ
২৩৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন