আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী (১৩)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৭ মে, ২০১৩, ০৫:৫৭:২৯ বিকাল

আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী (১২)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)





আমার তৃতীয়বার হজ্জ্ব সফরঃ

১৯৮৯ইং সালে হজ্জ্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে ১২ জুলাই বুধবার। এ দিনটি ছিল সৌদি আরবে ৯ জিলহজ্জ্ব আরাফায় অবস্থানের দিন। জুলাই মাসের তিন তারিখ সৌদি দূতাবাসের টেলিফোন পাই যে, আমাকে রাবেতাতুল আলমে ইসলামী এবারে হজ্জ্বে তাদের মেহমান করেছে এবং ভিসা পাঠিয়েছে। সুতারাং এখনই যেন আমি দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ করে প্রস্তুতি নিয়ে পরের দিনই অর্থাৎ ৪ জুলাই পবিত্র হজ্জ্ব আদায়ের ইদ্দেশ্যে বাংলাদেশ বিমানে মক্কা শরীফের পথে দজিদ্দায় রওয়ানা হই। আমার সাথে আরও ছয়জন সঙ্গী ছিলেন। জিদ্দা বিমান বন্দরের যাবতীয় অনুষ্টানাদি শেষ করে বাইরে এসে দেখি ন্সেহেবর শহীদুল ইসলাম রাবেতার পত্রসহ আমাদেরকে নেয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছে। আমারা ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সময় ৭টায় বিমানে রওয়ানা হই।

একটানা প্রায় ৭ ঘন্টা উড়ার পর বিমান সৌদি সময় প্রায় ১টায় জিদ্দা অবতরণ করে। এয়ারপোর্টের অনুষ্ঠানিকতায় বেশ সময় নেয়। অতঃপর আমরা যখন মক্কা শরীফে পৌঁছি তখন মাগরিব হতে কিছু বাকি। আমরা আসরের নামায দজিদ্দার পথে আদায় করে নিয়েছিলাম। যেহেতু আমরা সকলেই ক্লান্ত ছিলাম, তাই রাতে উমরা সমাপ্ত করা সম্ভব হয় নাই। ভোরে নাস্তা সেরে তওয়াফ ও ছাঈ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর ঘরে হাজির হই। তওয়াফ ও ছাঈসহ উমরার আনুষ্ঠানাদি সেরে ঐ রাত শহীদুল ইসলামের বাসায় কাটাই। পরের দিন সকালে মিনায় রাবেতার গেস্ট হাইজে গিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষে রিপোর্ট করি। অভ্যার্থনা কক্ষ হতে আমাকে থাকার জন্য রুম বরাদ্ধ করে চাবি, ব্যাজ ও খাবার টিকিট দিয়ে দেয়।

মিনায় মসজিদে খায়েফের সংলগ্ন একটি ৪ তলা বিশিষ্ট বিরাট দালানে রাবেতার মেহমানখানা অবস্থিত। এখানে নামায ও সম্মেলনের জন্য একটি বিরাট কক্ষ আছে। আমি পাঁচ বছর আগে আরও একবার সৌদি সরকারের মেহমান হয়ে হজ্জ্ব পালন উপলক্ষে এই মেহমানখানয় অবস্থান করেছিলাম। রাবেতার মেহমান হিসেবে ৭০টি দেশের প্রায় হাজার খানেক প্রতিনিধি এখানে হজ্জ্ব পালনের জন্য এসে সমবেত হয়েছিল। জিলহজ্জ্ব মাসের ৩ তারিখে আমি মেহমান খানায় প্রবেশ করি এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে মতামত বিনিময় ও পরিচয় ইত্যাদি করতে থাকি।

একটানা প্রায় ৭ ঘন্টা উড়ার পর বিমান সৌদি সময় প্রায় ১ টায় জিদ্দা অবতরণ করে। হজ্জ্ব ইসলামের পঞ্চম রুকন। স্বচ্ছল মুসলমান তিনি দুনিয়ার যে অংশেই বাস করুন না কেন, জিন্দেগিতে একবার তার হজ্জ্ব আদায় করা ফরয। হ্জ্ব আদায় উপলক্ষে দুনিয়ার বহু দেশ হতে কয়েক লাখ মুসলমান নারী পুরুষ যখন মক্কায় সমবেত হয় তখন এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ভাষারত, বিভিন্ন রংয়ের ও বিভিন্ন লেবাসের অগণিত, অজস্র লোকের সমাসেশ সত্যিই খুব আকর্ষণীয়। এসব লোকই আবার একই লেবাসে অর্থাৎ একখানা সাদা কাপড় পরিধান করে আর এখানা গায়ে জড়িয়ে লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক আওয়াজ তুলে যখন মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় হাজির হয় তখন সে দৃশ্যের অবতারণ হয় তা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। কা'বা ঘরকে আল্লাহ তা'য়ালা বিশ্বের মুসলমানদের মিলন কেন্দ্র এবং হজ্জকে মিলন অনুষ্ঠান করে যে নির্দেশ দিয়েছেন তাতে অসংখ্য কল্যাণ নিহিত আছে। যেমন আল্লাহ বলেন, 'যাতে করে প্রত্যক্ষ করতে পারে হজ্জ্ব যাত্রীরা তাদের উদ্দেশ্য নিহিত হজ্জ্বের কল্যাণ সমূহ' (আল কোরআন)

দুনিয়ার বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন ভাষার ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের মুসলমানদের পরষ্পরের অবস্থা জানার ও উপলব্ধি করার এ এক মহা সুযোগ। রাবেতার মেহমান হওয়ার কারণে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের নেতৃস্থানীয় হজ্জ্ব প্রতিনিধিদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, আলোচনার মাধ্যেমে আমি এই সুযোগের সদ্ব্যবহারের পুরামাত্রায় চেষ্টা করেছি। এ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট লোকের সাথে আমার আলোচনার বিবরণ আমার লিখিত বই 'দেশ হতে দেশান্তরের ভিতরে দেয়া হয়েছে। তবে এখানে বাদশাহ ফাহদের মিনার বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়টি কেবলমাত্র দেয়া হল।

পরবর্তি পর্বে থাকছেঃ বাদশাহ ফাহদের বাড়ির অনষ্ঠানে যোগদান.....

বিষয়: বিবিধ

১৬৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File