আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী (০৬)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৬ মে, ২০১৩, ০৯:৫৯:০৯ রাত
আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী ০৫)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)
আমার কর্ম ও রাজনৈতিক জীবনঃ
১৯৫০ সনে ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যায়নকালে আমি জামায়াতে ইসলাসমীর প্রতিষ্ঠাতা উপমহাদেশের বিশিষ্ঠ ইসলামী চিন্তা নায়ক সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রঃ) এর কয়েকখানা মূল্যবান বই পাঠ করে লেখক ও তাঁর ইসলামী আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি।
১৯৫২ সনে আলীয়া মাদ্রাসা হতে সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করে আমি খুলনা শহরে অবস্থিত খুলনা আলীয়া মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। খুলনা আলীয়া মাদ্রাসায় কার্যরত অবস্থায় ১৯৫২ সনের যথাসম্ভব জুন মাসে আমি জামায়াতে ইসলামীর রুকন হয়ে রুকনিয়াতের শপথ গ্রহন করি। আমি ছিলাম বাংলাদেশীদের মধ্যে ২নং রুকন। ১নং রুকন ছিলেন মরহুম মাওলানা আব্দুর রহীম সাহেব। মাওলানা আব্দুর রহীম সাহেব যথাসম্ভব ১৯৪৬ সনে জামায়াতে ইসলামীর রুকন হন। বাংলা ভাষিদের মধ্যে তিনিই সর্ব প্রথম রুকন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৫৫ সনের চার্ম মাসে রুকন হন। মরহুম আব্দুল খালে সাহেব রুকন হন ১৯৫৩ সনে।
১৯৫৩ সনের প্রথমে আমি খুলনা আলীয়া মাদ্রাসা হতে বিদায় নিয়ে কিছু দিনের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নির্দ্দেশে ঢাকায় আসি। তখন জামায়াতে ইসলামীর অফিস ছিল ২০৫ নং নওয়াবপুর রোডে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের আমির ছিলেন পাঞ্জবের চৌধুরী আলী আহমদ। আর কাইয়েম অর্থাৎ জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন মাওলানা আব্দুর রহীম।
ঢাকায় আমার মূল কাজ ছিল জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশিত উর্দ্দু বইয়ের বাংলা অনুবাদ। প্রকাশ থাকে যে, ঐ সময় মাত্র দু'খানা পুস্তিকা বাংলায় অনুদিত ছিল। একখানা শান্তির পথ। আর একখানা ইসলামের জীবন পদ্ধতি।
ভিভিন্ন কারণে আমি ঢাকা হতে বিদায় নিয়ে বরিশাল জেলার মঠবাড়িয়া থানার উপকন্ঠে অবস্থিত টিকিকাটা সিনিয়র মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করি। এ মাদ্রাসায় আমি তিন বছরের মত সময় থাকি। অতঃপর জামায়াতে ইসলামী খুলনা বিভাগের আমীরের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে আমি জামায়াতের দির্দ্দেশে খুলনা শহরে চলে আসি।
আমার পশ্চিম পাকিস্তন সফরঃ
বিভাগীয় আমীরের দায়িত্বে নিয়োজিত হওয়ার পরে ১৯৫৭ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে নিখিল পাকিস্তান রুকন সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমি সর্ব প্রথম পশ্চিম পাকিস্তান সফর করি। সম্মেলনের স্থান নির্ধারিত হয়েছিল পাঞ্জব প্রদেশের ভাওয়ালপুর স্টেটের মাচিগোট নামক স্থানে। সফর বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তান হতে আমরা মাত্র ১৪জন রুকন এই সম্মেলনে যোগদান করি। বাংলাভাষিদের মধ্যে মাওলানা আব্দুর রহীম, অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব আব্দুল খালেক, আব্বাস আলী খান ও আমি, এই পাঁচ জন ছিলাম। বাকীরা ছিলেন উর্দ্দুভাষী মুহাজির। এই সম্মেলন তিন দিন চলেছিল। সম্মেলন শেষে আমি সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় অবস্থিত পুরাতন সভ্যতার নিদর্শন ঐতিহাসিক 'ময়েন যোদাড়ো' দেখার জন্য শুক্কুর জেলার জামায়াত নেতাদের সাথে শুক্কুর শহরে চলে আসি। এখান থেকে একজন অভিজ্ঞ গাইড সাথে দিয়ে নেতারা আমাকে 'ময়েন যোদাড়ো' পাঠিয়ে দেন। পুরাতন সভ্যতার নিদর্শন দেখার আগ্রহ আমার স্বভাবজাত। সুতরাং পশ্চিম পাকিস্তান রওয়ানা করার সময়ই আমি ময়েন যোদাড়ো সহ লাহোরে মোগল বাদশাদের স্মৃতি পূরাতন সভ্যতার নিদর্শন সমূহ দেখব বলে নিয়ত করেছিলাম। আল্লাহর ইচ্ছায় আমার সে আগ্রহ এই সফরে কিছুটা হলেও পুরা হয়েছিল।
'ময়েন যোদাড়োর' পরিচয়ঃ
সিন্ধি ভাষায় 'ময়েন যোদাড়োর' অর্থ হল ধ্বংস প্রাপ্ত মানুষের স্মৃতি। লারকানা জেলায় অবস্থিত এই পুরাতন শহরটি সিন্ধু নদ থেকে এক মাইল দূরে মাটি খুড়ে আবিষ্কার করা হয়েছে। প্রত্নতত্ববিদদের মতে 'ময়েন যোদাড়ো' যিশু খৃষ্টের জন্মের চার হাজার বছর আগের শহর। আমি যখন এটা পরিদর্শন করি তখন এক মাইল পর্যন্ত জায়গার মাটি সরিয়ে শহরের নিদর্শনসমূহ বের করা হয়েছে। আজ থেকে ছয় হাজার বছর আগের এই শহরটি বাড়ি ঘর, রাস্তা ড্রেন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দেখলে সত্যিই আশ্চার্য হতে হয়। শহরকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক একলাকায় বিভক্ত করে বাড়ি-ঘর ও দোকান পাট নির্মান করা হয়েছিল। আজ থেকে তিন চারশো বছরের আগের মোগল ও পাঠাণ আমলের নির্মিত দালান কোঠার ইট ছোট ও পাতলা। কিন্তু ছয় হাজার বছর আগের তৈরী ময়েন যোদাড়োর দালান কোঠা ও রাস্তা ঘাট তৈরীর ইট আমাদের এই সময়ের ইটের মত ১০" x ৫" ইঞ্চি ছিল না। এখানে একটি যাদুঘরও করা হয়েছে। এখানে এই শহর থেকে সংগৃহিত ঐ সময়ের লৌহ নির্মিত অস্ত্র, তৈজষ পত্র, মহিলাদের সেই সময় ব্যবহৃত অলঙ্কারাদি ও সেই সময় ব্যাবহৃত নৌকা ও গরুর গাড়ির চাকাও দেখলাম।
আমাদের এক শ্রেণীর ঐতিহাসিকদের কথা ভুল প্রমাণীত হলঃ
আমরা ছোট বেলায় পড়েছি যে, আমাদের অনেক আগে ভারত বর্ষের লোকেরা অসভ্য ছিল। তারা ঘর-বাড়ি তৈরী করতে জানত না, গাছের খোপরে, পাহাড়ের গুহায় ও মাটির খোপরে বাস করত। রান্না বান্না জানতনা, কাঁচা মাছ মাংস ও ফলমূল খেত। কিন্তু ময়েন যোদাড়ো দেখার পর আমাদের ঐসব ঐতিহাসিকদের ধারণা ভিত্তিহীন বলে প্রমাণ হল। 'ময়েন যোদাড়োর' পরে ট্যাকসীলায় পুরাতন সভ্যতার নিদর্শন দেখার পরে আমার উপরোক্ত ধারণা আরও পাকা পোক্ত হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন