আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী (০২)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৪ মে, ২০১৩, ১১:৪৮:০৭ সকাল
আমার সংক্ষিপ্ত আত্ম কাহিনী (০১)- আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (মোমতাজুল মুহাদ্দেছীন)
আমার জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষাঃ
আমার জন্ম ১৯২৬ সনের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথমার্ধে (বাংলা ১৩৩২ সনের মাঘ মাসে) । আমি আমার পিতা মাতার তৃতীয় সন্তান। জন্মস্থান রাজইর গ্রামে আমার পিত্রালয়।
আমার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় আমার গ্রামের গ্রাম্য মক্তবে। মক্তব হতে নিম্ন প্রাইমারী পাশ করার পরে আমার পিতা আমাকে রায়েন্দা বন্দরের মাইনর স্কুলে নিয়ে ভর্তি করে দেন। আল্লাহর রহমতে আমি পড়াশুনায় খুবই ভাল ছিলাম। আমার স্বরণশক্তি যেমন প্রখর ছিল, তেমনি মুখস্ত শক্তিও ছিল খুব উত্তম। আমার পিতা আমাদের লেখা পড়ার প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন। তিনি নুতন ক্লাশে উঠার সাথে সাথেই আমাদের সমস্ত বই কিনে দিতেন। আর বই হাতে পেয়েই নুতন ক্লাসের পড়া শুরু হওয়ার আগেই আমি বইয়ের সমস্ত পদ্যগুলি মুখস্ত করে ফেলতাম। গদ্য-পদ্য সহ বইয়ের অধিকাংশ স্থান পড়তে গিয়ে আমার মুখস্থ হয়ে যেত। মাদ্রাসায় পড়াকালীন অবস্থায়ও পাঠ্যভুক্ত কিতাবের অধিকাংশ জায়গা আমার মুখস্থ হয়ে যেত। মাইনর স্কুলের পড়া সমাপ্তিতে আমি আমার আম্মার আগ্রহ ও উৎসাহে বরিশাল জেলার গুলুয়া মাদ্রাসায় গিয়ে ভর্তি হয়ে দরসে নেজামী লাইনের পড়া-শুনা শুরু করি।
এ সময় এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই নিম্নমানের। তখন জমিদারী সিসটেম থাকার কারনে জমিদার, গ্রামের প্রজাদের অর্থ লুটে নিয়ে শহর-বন্দরে আরামের জিন্দেগী যাপন করত। গ্রামে রাস্তা-ঘাট বলতে কিছু ছিল না। তখনকার লোকেরা প্রকৃতির তৈরী প্রবাহিত খালের দুই পাড়ে সারিবদ্ধাভাবে বাড়ি করত। কেননা যোগাযোগের ও মালামাল বহনের জন্য পানিতে চালিত নৌকাই ছিল তাদের বাহন। রাস্তা ঘাট ও গাড়ি ইত্যদির কোন ব্যবস্থা তখন এলাকায় এমনকি বন্দর ও থানা সদরেও ছিল না। একমাত্র নৌকা ও পা ছিল মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন।
তখন ছিল আমাদের দেশ ব্রিটিশ শাসনের অধীন। ব্রিটেনের সিবাসা নামক এক ইংরেজ কোম্পানীর একখানা ছোট জাহাজ বাগেরহাট ও হুলার হাটের মধ্যে চলাচল করত। এই জাহাজের একটা স্টেশান ছিল আমাদের নিকটবর্তী বন্দর রায়েন্দায়্ আমি এই জাহাজে বিশ পয়সা ভাড়া দিয়ে টিকেট কেটে বরিশাল জেলার ভান্ডারিয়া বন্দরে নেমে পায়ে হেটে গালুয়া মাদ্রাসায় যেতাম। তিন বৎসরকাল আমি গালুয়া মাদ্রাসায় পড়া-শুনা করে শর্ষীনা আলীয়া মাদ্রাসায় গিয়ে ভর্তি হই।
১৯৩৯ সনে যখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমি গালুয়া মাদ্রাসার ছাত্র। মূলতঃ যুদ্ধ প্রথম দিকে জার্মান ও ব্রিটেনের মধ্যে শুরু হলেও পরে গোটা বিশ্ব এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে তখন ছিল ব্রিটিশ শাসন। তখন বৃহত্তর বাংলাদেশের রাজধানী ছিল কলিকাতায়। আর বৃহত্তর ভারত অর্থাৎ বর্তমান ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় রাজধানী ছিল দিল্লী। বৃটিশ শাসিত বাংলাদেশে তখন মন্ত্রীসভা ছিল শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের নেতৃত্বে। ফজলুল হকে সাহেব বাংলার আপামর জনগণের কাছে কৃষক দরদী বলে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তিনি কৃষক প্রজাপার্টি নামে পার্টি করে জমিদারদের শোষনের বিরুদ্দে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কৃষকদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলেন। ফলে সেই সময়ের নির্বাচনে কৃষকরা ভোট দিয়ে ফজলুল হক সাহেবের দলকে বিজয়ি করে। .............
বিষয়: বিবিধ
১৯১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন