মাওলানা আবুল কালাম আযাদ অবশ্যই যুদ্ধাপরাধী!! মৃত্যুদন্ডই হতেপারে তার লঘু শাস্তি!

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২২ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:০১:৩৮ দুপুর



বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল যুদ্ধাপরাধ আর যুদ্ধাপরাধী। টক অব দ্যা কান্ট্রিতে এবার নতুন যে নামটি যুক্ত হয়েছে তা হল মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মামলার রায়ে একেবারে ফাঁসি!

কে যুদ্ধাপরাধী আর কে যুদ্ধাপরাধী না তা আমি জানিনা তবে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ যে একজন বড় মাপের অপরাধী সে কথা আমি হলফ করে বলতে পারি।

সেই ৮০ দশকের কথা, তখন আমি প্রাইমারীর ছাত্র। বাড়িতে কোন রেডিও ছিলনা। পাশের বাড়ির এক খালাতো ভাইর বিবাহের সুবাদে শ্বশুড় বাড়ি থেকে একটা রেডিও পেয়েছেন। নতুন বিয়ে, তাদের মধু চন্দিমার সময় তাই তিনিতো ভাবিকে নিয়েই ব্যস্ত ফলে রেডিও শোনার সময় কই?

আমরা যাতে ভাবিকে বিরক্ত না করি এবং তাদের সুখ স্বপ্নে ব্যঘাত না ঘটাই সে জন্য তার ছোট ভাই এবং সমবয়সি আমাদের কয়েক চ্যাংড়াকে রেডিওটা দিয়ে বারান্দায় বসিয়ে রেখেছিলেন। আমরাও সকাল হতে নাহতেই রেডিওর সামনে বসে গুড় মুড়ির গোষ্ঠি উদ্ধারে ব্যস্ত থাকি।

শুক্রবার বলে মক্তবেও আজ পড়া নাই তাই সাত সকালেই রেডিও নিয়ে বসে গেলাম। রেডিওটা চালু করতেই উজ্জিবন নামে একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আওয়াজ কানে ভেসে আসে। সেই অনুষ্ঠানে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ নামে একজন আলেম ইসলামের বিভিন্ন দিকের উপর সুন্দর আলোচনা করছিলেন। আমি সেই কচী বয়সেই তন্ময় হয়ে সেই আলোচনা শুনেছিলাম। এক পর্যায়ে আমি তার ভক্ত হয়ে যাই এবং বলতে গেলে নিয়মিত তার অনুষ্ঠান শুনতে থাকি।

প্রাইমারী, হাইস্কুল এমনকি কলেজ জীবন শেষ করে ১৯৯৩ সালে বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। একই সাথে ৩২তম বিএমএ লংকোর্সের প্রার্থমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষায় কোয়লিফাইড হয়ে লিখিত পরীক্ষারও প্রস্তুতি চলছিল।

সেই সময় আমি নাকি শিবিরের অগ্রসর কর্মী তাই স্থানীয় দায়িত্বশীল ইসলাম উদ্দিন ভাই বল্লেন, 'আগামীকাল থেকে তিনদিনের শিক্ষা শিবিরে অংশগ্রহনের জন্য আপনাকে আজ রাত দশটার মধ্যে আল ফালাহ মিলনায়তনে গিয়ে হাজির হতে হবে'!

নেতার আদেশ অমান্য করার সুযোগ নাই তাই যথাসময় হাজির হলাম শিক্ষা শিবিরের ক্যাম্পে। জন্ম সূত্রে মুসলিম হিসেবে ইসলাম সম্পর্কে কিছুটা ধারনাতো আগে থেকেই ছিল কিন্তু সেদিনকার সেই শিক্ষা শিবিরে যদি উপস্থিত না হতাম তাহলে ইসলাম আমার কাছে একটা জীবন্ত জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ধরা দিত কিনা সে ব্যপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

সকাল ৭টা এখনই অনুষ্ঠান শুরু হবে। মঞ্চে আমার বাবার মত সুঠাম দেহের অধিকারী কিস্তি টুপি পরিহিত কৃষ্ণ বর্ণের একজন আলেম বসে আছেন। আব্বার সাথে তার পার্থক্য শুধু গাত্র বর্ণের। আব্বা গৌড় বর্ণের এবং মঞ্চে উপবিষ্ট ভদ্রলোক বেশ কৃষ্ণ বর্ণের। কৃষ্ণ বর্ণের হলেও তিনি মঞ্চ আলোকিত করে রেখেছিলেন। অনেকদিন হল আব্বাকে দেখিনা তাই তাকে দেখার পরে আব্বার কথা মনে পড়ে গেল।

ঢাকা মহানগরী উত্তরের নেতৃবৃন্দও মঞ্চে উপবিষ্ট। পরিচালক ভাই ভরাট কন্ঠে ঘোষণা দিলেন, 'আজকের শিক্ষা শিবিরে শুরুতেই কুরআন থেকে দার্স পেশ করবেন, মুহতারাম মাওলানা আবুল কালাম আযাদ'!

ঘোষনা শুনে হলে উপস্থিত আনুমানিক তিনশতাধিক ডেলিগেট শিক্ষার্থী একটু নড়ে চড়ে বসল। আমিও তাদের দেখাদেখি নড়ে চড়ে বসলাম। আমি নড়া চড়া করেছিলাম সবার দেখা দেখি। কারন এধরনের কোন প্রগ্রামে এটাই আমার প্রথম উপস্থিতি। তাই বুঝে হোক আর নাবুঝে হোক অন্যরা যা করছিল আমিও তাই করলাম।

হঠাৎ মনের পর্দায় ছোটবেলার স্মৃতিময় উজ্জিবন অনুষ্ঠানের সেই মাওলানা আবুল কালাম আযাদের নামটা ভেসে উঠল। নিজে নিজেই ভাবনাটাকে মন থেকে ঝেড়ে ফেল্লাম, কারন সরকারী রেডিও টিভিতে আলোচনা করেন এরকম বড় মাপের একজন আলেম যে শিবিরের প্রগ্রামে আসতে পারে সেটা ছিল আমার ভাবনার অতীত।

কিন্তু, এ কি! সেই কন্ঠ যা আমি ছোট বেলায় শুনেছিলম রেডিওতে। হুবহু মিলে যাচ্ছে। তন্ময় হয়ে শুনছিলাম তার তেলাওয়াত এবং অবিভুত হচ্ছিলাম। কাউকে প্রশ্ন করার ফুরসুত পাচ্ছিলামনা। পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াতের মাধ্যমেই তিনি বিনেসুতর মালায় বেঁধে ফেলেছিলেন হল ভর্তি প্রায় তিনশতাধিক কিশোর তরুণকে।

সেদিন তিনি দার্স পেশ করছিলেন সূরা আলে ইমরানের ১৯-২৪ নম্বর আয়াতের উপর। প্রসঙ্গ ক্রমে Sovereignty of Allah (আল্লাহর সার্বভৌমত্ব) শব্দটা এসে গেলো। এই শব্দটার সাথে আমার একটা শত্রুতা ছিল। ইংরেজি শব্দ ভান্ডার রিচ করার জন্য অনেক শব্দ মুখস্ত করেছিলাম যার মধ্যে এই শব্দটাও ছিল কিন্তু বারবার এই শব্দটার বানান ও অর্থ ভুলে যেতাম। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম তার মুখে এই শব্দটার উচ্চারণ শোনার সাথে সাথেই আমার অন্তরের সাথে যেন লেপ্টে গেল। যেমন ভাবে সকাল বেলা পাউরুটির সাথে জ্যাম জ্যালি লেপ্টে নাস্তা করেছিলাম।

সেনিদের পরে আর Sovereignty শব্দটার অর্থ কোনদিন ভুলিনি। মুহতারাম মাওলানা Sovereignty of Allah এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যে কথা বলেছিলেন তা আজও আমার হৃদয়কে আচ্ছাদিত করে রেখেছে এবং আজীবন সেটা হৃদয়ের সাথে লেপ্টে থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

Sovereignty of Allah (আল্লাহর সার্বভৌমত্ব) বুঝাতে গিয়ে তিনি যে উদাহরণটা দিয়েছিলন তা আজ এত দিন পরে আমার নিজের ভাষায় আপনাদের সামনে পেশ করছি, 'আজ যদি বিশ লক্ষ লোক ঢাকা শহর থেকে মার্চ করে তুরাগ বা বুড়ি গঙ্গা বা শীতালক্ষার পাড়ে গিয়ে মোনাজাত করে তাতে গাছের একটা পাতাও নড়বে কিনা জানিনা তবে ক্যান্টন মেন্ট থেকে যদি মাত্র দুই হাজার আর্মি মার্চ শুরু করে তাহলে দিল্লির অন্তরে কাপন ধরে যাবে। আর সেই দুই হাজার সৈন্য যদি হয় তৌহীদের পতাকাবাহী তাহলে সেই ঢেউ দিল্লি মস্ক হয়ে ওয়াসিংটনে গিয়ে হোয়াইট হাউজের উপড় আছড়ে পড়বে।'

মাওলানার সেই দিনকার দার্স শুনে প্লুকিত হয়েছিলাম এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্ব আর মানুষের সার্বভৌমত্বের পার্থক্য বুঝেছিলাম। আর এতদিন পর আজ বুঝতে পারলাম, কেন যুদ্ধাপরাধীর লিস্টে মাওলানা আবুল কালাম আযাদের নাম। কেন তার বিরুদ্ধেই প্রথম মৃত্যু ন্ডের আদেশ। তাহলে তিনি কি দুই হাজার তৌহিদবাদী আর্মীর পরিবর্তে একাই মার্চপাষ্ট শুরু করেছিলেন?

২/৪ টাকা দামের মৌলানাদের দায়িত্ব ছিল মিলাদ পড়া, কবর জেয়ারত আর সবিনা খতম পড়ে সংসার চালানো, কিন্তু সেই মৌলানা সাহেবরা যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্বের মত কঠিন জিনিসের এরকম ব্যাখ্যা করে তাহলে তা যে সাম্রাজ্যবাদীদের দৃষ্টিতে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ তা আমাদের মত নাদান কমজোড় ঈমানদারদের দৃষ্টিতে ধরা না দিলেও বিশ্ব মোড়লদের রাডারে যে ধরা পরেছে তা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া যেহেতু সুযোগ এখন ওদের হাতে তাই এমন আলেম ও তাওহিদী জনতাকেতো আর রাডার থেকে বের হয়ে যেতে দেয়া যায়না।

Sovereignty of Allah এর এরকম বাস্তব ব্যাখ্যা দেয়ার মত যোগ্যতা সম্পন্ন আলেম মাওলানা আবুল কালাম আযাদ যদি সবচেয়ে বড় অপরাধে না হন তাহলে এই ধরায় আর কে হবেন যুদ্ধাপরাধী?

আমাদের মত কমজোড় ঈমানের অধিকারী সাধারণ মুসলমানের কাছে মাওলানার যুদ্ধাপরাধী না হওয়ার হয়ত হাজারো যুক্তি আছে কিন্তু অনাগত বিল্পবের এই সকল সিপাহ সালারদের মস্তিষ্কের নিউরনের ধাক্কা যে ইন্দ মার্কিনীদের ইসলাম আতঙ্কের রাডারে ধরা পরে গেছে সে ব্যপারে নিশ্চৎ হওয়া ছাড়া উপায় নাই।

বাংলাদেশের অখ্যাত পাড়া গায়েরে ২/৪ চারটাকার মৌলুভি সাহেবকে যখন ইন্দ মার্কিনীরা ইসলামী বিপ্লবের এক নম্বর সিপাহসালার হিসেবে খুজে পায় তথনও আমরা যুগ শ্রেষ্ঠ্য এসকল আলেমদের বিরুদ্ধে জামায়াতী রঙিলা মৌলুভি বলে বিষদগার করি!

সাকিব, মাসরাফিদেরও দল আছে তারপরেও আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলে তাদের জাতীয় বীরের খেতাব দেই অথচ আল্লাহর রাসূলের উত্তরসূরী মুসলিম জাহানের আলোক বর্তিকা এসব আলেমদের দলিয় গন্ডিতে আটকে রাখি! দলিয় দৃষ্টিকোণ তেকে দেখি। নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করি অথচ ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ ভুলে জুজু বুড়ি আর মরিচিকার পিছনে ছুটি!

ইহুদী খৃষ্টান চক্র যেখানে এক নিমিষেই ইসলামের সঠিক পথের অনুসারিদের খুজে পায় সেখানে ৭৩ ফের্কার মধ্যে এক নম্বর ফের্কা কোনটি তা খুজে খুজে আমরা খাবি খাই বা খুজেও দেখিনা, আল্লাহর দেয়া বিবেক খাটাই না!

জালেম সরকারের সামনে সত্য কথা বলা, সবচেয়ে বড় যেহাদ আর সেই যেহাদের একজন অন্যতম সিপাহ সালার মাওলানা আবুল কালাম আযাদ। তাই তিনি যদি বাতিলের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধী না হন তাহলে এ ধরায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে আর কে অপরাধী?

তিনি পালিয়ে গেছেন বলে বাতিল শক্তি আজ বিষদগার করছে যেমনটা করেছিল রাসূল (সঃ) এর হিজরতের পরে। যে অপরাধে(?) রাসূল (সঃ)কে মক্কা ছাড়তে হয়েছিল যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে একই অপরাধে(?) হিজরত করতে হেব। হিজরতের সেই ধারার আধুনিক সংস্করণ হলেন মাওলানা আবুল কালাম আযাদের আত্মগোপন বা গুম হয়ে যাওয়া।

আমরা জানিনা তিনি আসলেই হিজরত করতে পেরেছেন কিনা নাকি এটা আবার বাতিলের নতুন কোন ফাঁদ?

আফসোস মুসলিম উম্মাহর জন্য যারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ্য সন্তানদের অপমান করছে। আমরা কুরআন পড়ি, হাদীস পড়ি কিন্তু কুরআন হাদীসের সাথে নিজেদের জীবনকে মিলিয়ে দেখিনা। যদি কুরআন হাদীসের সাথে নিজেদের জীবনকে মিলাই তাহলেই পেয়ে যাব, সত্যিই যুগের এসকল শ্রেষ্ঠ্য সন্তানেরা আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়ার কারনেই বাতিলে কাছে মহা আতঙ্ক এবং সব চেয়ে বড় অপরাধী(?)

এমন বড় অপরাধিদের বিগত দিনগুলোতে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে, করাতে চেরা হয়েছে, জীবন্ত শরীরের উপরে লোহার চিরুনি চালিয়ে হাড্ডি মাংশ আলাদা করে ফেলা হয়েছে। সে তুলনায় মাওলানা আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির আদেশ অপরাধের তুলনায় গৌণ এবং সামান্য শাস্তি বলেই প্রতিয়মান।

(সম্পাদিত রিপোষ্ট)

বিষয়: রাজনীতি

২০৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File