স্যার ক্ষমা করবেন! আপনি রং নম্বরে ডায়েল করেছেন।
লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২১ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:৪৮:০০ দুপুর
স্যার ক্ষমা করবেন! আপনি রং নম্বরে ডায়েল করেছেন। আপনার এই করুন অপলক চাহুনি আমাদের সহ্যসীমার বাহিরে। যে কোন ন্যায় সঙ্গত দাবী করার অধিকারই আপনার আছে, আবার যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসার মূল্য দেয়াও কিন্তু আপনার কর্তব্য।
কি লিখব কি বলব কিভাবে অনুভুতি প্রকাশ করব সে ভাষা আজ হারিয়ে ফেলেছি। আপনার সাথে আত্মীয়তার কোন সম্পর্ক নেই, আপনি যে রাজনীতি করেন আমি সে রাজনীতিও করিনা। ছাত্র সংগঠন করার সময় থেকে যাদের কথায় এবং লেখনী ও বক্তৃতায় অনুপ্রাণীত হয়েছি তারাও জেলে কিন্তু কেন যেন আপনার প্রতি মায়ার বাঁধনটা তাদের প্রতি আমার মহব্বতটাকেও অতিক্রম করেছে।
আপনি যাদের জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করছেন তারা জেলের অন্ধকার, রিমান্ডের নির্যাতনও হাসি মুখে মেনে নিতে পারবে কিন্তু আপনার করুণ চাহুনী আর নিষ্ঠুর নিরবতা মেনে নিতে পারছেনা। আর আপনার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তা হবে আপনার পক্ষ থেকে তাদেরকে গলা টিপে হত্যা করার চেয়েও হৃদয় বিদারক। আপনি আপনার ভালবাসার বাতিঘর মা'জননি ও সহকর্মী তথা দেশবাসীকে এভাবে কাঁদানর অধিকার রাখেন না। তাই আপনার প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনি অনশন ভাঙ্গুন, আমাদের উৎকণ্ঠা ও চোখের পানি দয়া করে বন্ধ করুন।
আপনার দাবীগুলো যেহেতু ন্যায়সঙ্গত তাই আপনার কাছে আমাদের উপরোক্ত অনুরোধ সোভা পায়না কিন্তু এজন্য করলাম যে আপনি রং নম্বরে ডায়েল করেছেন, সেজন্য আর কি?
শৈশব কৈশর অতিক্রম করে আমরা যারা আজ যৌবনে তাদের মধ্যে এমন কাউকে খুজে পাওয়া যাবেনা যে কোনদিন অনশন করেনি। (রাগ করে খাবনা বলে গাল ফুঁলিয়ে থাকেনি)
আমি আমার জীবনে বহুবার অনশন করেছি এবং দাবী আদায়েও সক্ষম হয়েছি। অবশ্য শৈশব ও কৈশরের সেই দাবী গুলো ছিল অযৌক্তিক কিন্তু তার পরেও যাদের কাছে দাবী করতাম তারা ছিল স্নেহবৎসল তাই তারা আমাদের অযৌক্তিক দাবী গুলোও মেনে নিতেন। অথচ আপনার দাবী গুলো যৌক্তিক কিন্তু তার পরেও কর্তা ব্যক্তিরা কর্ণপাত করছেনা। কারণ মাছের মায়ের পুত্র শোক নাই। আর রাষ্ট্রযন্ত্র তো আপনাকে পুত্র হিসেবে স্বীকারই করেনা।
আমাদের পুরুষ শুণ্য পরিবারের কর্তা ছিলেন দাদী মাঝে মধ্যে দাদীর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত কর্তৃত্ব পালন করতেন আমার মা। পুরুষ শুণ্য ছিল এজন্য যে দাদা দূরের এক মসজিদে ইমামতি করতেন আর বাপ চাচারা চাকুরী করতেন চট্টগ্রামে ফলে দাদী চাচী মা এবং আমরা ভাই বোনেরাই ছিলাম বৃহত্তর ফরীদ পুরের অজেয় পারা গায়ের এক নিবৃত পরিবারের সদস্য। পড়া লেখার ব্যাপারে দাদীর কোন মাথা ব্যাথা ছিলনা। দাদীর উপস্থিতিতে আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকায় এরকম ক্ষমতাও কোন বাপের বেটির ছিলনা। কিন্তু কোন কারণে দাদী বাড়িতে উপস্থিত না থাকলে মাতুব্বরের ঝী অর্থাৎ আমার মা আমাদের উপর আনলীমিটেড ক্ষমাতা প্রয়োগ করতেন। পান থেকে চুন খসলেই হল কোন খাতির ছিলনা। প্রকারন্তরে বিগত দিনের জমে থাকা খোব গুলো ঝাড়তেও কসুর করতেন না। আমরাও থাকতাম তটস্থ আর বেতের মত সোজা। মনে মনে দাদীর ফিরে আসার অপেক্ষা করতাম। আর অনশন? সেতো ভুলেও করতাম না। অনশন মানেই অনশন একদম নাখেয়ে থাকা! কোন খাতির হবেনা তা জানতাম, সাথে পিঠে ভাদ্রমাসের তাল পড়ার সম্ভাবনাও ছিল শত ভাগ। তাই ও বয়সেই বুঝতে পেরেছিলাম দাদীর অনুপস্থিতিতে অনশন করতে নাই।
যত রাগ অনুরাগ আর অনশন সব ছিল দাদীর উপস্থিতিতেই। জানতাম দাবী যত ঠুণকই হোক আর অযৌক্তিকই হোক তা পরম আদরে মেনে নেয়া হবে কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতে যার শাসন চলে তাঁরকাছে যৌক্তিক দাবীরও কোন মূল্য নাই। তাঁর কথা শুধু পড়া আর পড়া। সব সময় যে পড়া ভাল্লাগেনা তা তাঁকে কে বুঝাবে? তাছাড়া তিনি ছিলেন মাতুব্বরের বেটি তাই হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না এমন মানুষিকতার।
আমাদের দেশ থেকে প্রজাবৎসল দাদী হৃদয়ের সেই ভালোবাসার সোহাগী শাসন অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। এখন শাসন চলছে আমার মায়ের মত গায়ের মোড়লের কন্যা শেখের বেটির। দাদাদের হুকুম তামীল করা ছাড়া তার যেন আর কোন কাজ নেই কিন্তু জনগণ যে প্রতিবেশীদের তাবেদারী করতে প্রস্তুৎ নয় তা তিনি মানতে রাজি নন। তার অন্তর থেকে এখনও কালনাগিনীর বিষ ঝড়ছে। দাদাদের তাবেদারী করতে অস্বীকারকারী নিজের সন্তানদের প্রতিও তার দায়া মায়া নাই। তার হুকুমের নড়চর হলেই তিনি খর্গ হস্ত। নিজের সন্তান বদেও তিনি কুন্ঠিত নন। তাই তো বলি স্যার অনশন ভাঙ্গুন অন্তত দাদীর ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
(ফুট নোটঃ আমার মা এবং দাদী দুজনই পরজগৎ বাসিনী তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ তাদের গুনাহ খাতা মাফ করে জান্নাতের মেহমান করুন সেই প্রার্থনা করি। মায়ের কঠিণ শাসনে দাদীর আসকারা থাকায় ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত কোন ক্লাশে পাশ করা ভাগ্য জোটেনি। তার পরেও সব মিলিয়ে আমি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁদের ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার নাই তাই তাদের জন্য সবার কাছে দুয়া চাই।)
বিষয়: বিবিধ
২৬৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন