আসুন মাহমুদুর রহমানসহ আধা ডজন “বাইচান্স” সম্পাদককে চিনে নেই
লিখেছেন লিখেছেন এক্টিভিষ্ট ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৩৬:৫৪ বিকাল
মাননীয় আদালত বলেছিলেন মাহমুদুর রহমান হচ্ছেন “বাইচান্স সম্পাদক”। মানে সম্পাদক হওয়ার কোন যোগ্যতা না থাকার পরেও তিনি দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক হয়েছেন।
আওয়ামীপন্থি সাংবাদিক ( যিনি বিগত নির্বাচনে ফেনী থেকে নির্বাচন করে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের কাজে হেরে গিয়েছিলেন )ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, “মাহমুদুর রহমান কোনো পেশাদার সাংবাদিক নন। তার মতো একজন কুলাঙ্গার কখনো সাংবাদিক হতে পারেন না। আমরা তাকে সাংবাদিক হিসেবে মানি না।“
http://www.natunbarta.com/media/2013/02/26/13457/08335c1f1a5ca7d9d4ef9623441e5e93
ওদিক বাম নেতা ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গতকাল বলেছেন, “ মাহমুদুর রহমান অপেশাদার সাংবাদিক হওয়ায় আমার দেশ তৃতীয় শ্রেনীর দলীয় লিফলেটে পরিনত হয়েছে”
আসুন উপরের কথা গুলো পরখ করতে কিছু “বাইচান্স সম্পাদক” ও অপেশাদার সাংবাদিকের পরিচয় জেনে নেই।
দৈনিক যুগান্তর
ছবিঃ যুগান্তর সম্পাদক সালমা ইসলাম
যুগান্তর সম্পাদক সালমা ইসলাম। যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের সহধর্মীনি। কাগজে কলমে দেখা যায় পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টি মনোনিত মহিলা আসনে জাতীয় সংসদ সদস্যও বটে। উল্লেখ্য দৈনিক যুগান্তরের মালিক হচ্ছেন দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্টান যমুনা গ্রুপ।
যুগান্তরের প্রতিষ্টাতা সম্পাদক গোলাম সরোয়ার চলে যাওয়ার পরে প্রথমে লীগপন্থি সাংবাদিক আবেদ খান, পরে মুজিব আমলে আওয়ামী এমপি এবিএমি মুসা পত্রিকাটির হাল ধরার চেষ্টা করেন। কেউ ঠিকতে না পেরে শেষে যুগান্তরের মালিক বাবুলের স্ত্রী সালমা ইসলাম নিজেই পত্রিকাটির সম্পাদক বনে যান।
যুগান্তরের উপসম্পাদকীয় কলামে দুই চারটা লেখা নজরে পড়লেও সালমা কোনদিন সাংবাদিকতা করে যুগান্তরের মত দেশের সেরা একটি পত্রিকার সম্পাদক হয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই।
দৈনিক জনকন্ঠ
ছবিঃ জনকন্ঠ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ
শুরু থেকে দৈনিক জনকন্ঠের সম্পাদক ছিলেন আতিকুল্লাহ খান মাসুদ।
তিনি হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার (কিছু দিনের জন্য) মরহুম হামিদুল্লাহ খানের ছোট ভাই। হামিদুল্লাহ খান কিছুদিন আগে ইত্তেকাল করেছেন। ১৯৯১ সালের বিএনপির এমপিও ছিলেন।
পত্রিকাটির উপদেষ্টা হিসেবে আছেন প্রবীণ সাংবাদিক ও শেখ মুজিবের প্রেস সেক্রেট্রারি তোয়াব খান । তোয়াব খান শুরু থেকে থাকলেও জনকন্ঠের সম্পাদক হিসেবে যিনি আছেন সেই আতিকুল্লাহ খান মাসুদ কোন দিন সাংবাদিকতা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই।
দৈনিক সকালের খবর
ছবিঃ সকালের খবরের সম্পাদক রোমো রউফ চৌধুরী (মাঝে)
বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে আলোচিত র্যাংস গ্রুপ গত বছর বাজারে নিয়ে আসে দৈনিক সকালের খবর। প্রথম দিকে সম্পাদক ছিলেন রাশেদুন্নবী, যিনি এর আগে আমার দেশের কাজ করেছিলেন, পেশাদার সাংবাদিক। তিনি চলে যাওয়ার পর সম্পাদক হন বরুন শংকর রায় নামে আরেকজন সিনিয়র সাংবাদিক। সর্বশেষে এর সম্পাদক হন আব্দুর রঊফ চৌধুরীর ছেলে র্যাংস র ব্যাবস্থাপক রোমো রউফ চৌধুরী । রোমো রউফ চৌধুরী মুলত গাড়ী ব্যাবসায়ী, লেখালেখি করেছেন বলে আমাদের জানা নেই।
দৈনিক যায়যায়দিন
ছবিঃ দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি সাঈদ হোসেন চৌধুরী
সাপ্তাহিক যায়যায়দিন খ্যাত শফিক রেহমানের হাত ধরেই দৈনিক যায়যায়দিনের যাত্রা শুরু। ১/১১ পর যায়যায়দিন শফিক রেহমানের হাত ছাড়া হলে পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন পেশাদার সাংবাদিকরা। মালিকানা চলে যায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বড় ভাই ও এইচআরসি গ্রুপের মালিক সাঈদ হোসেন চৌধুরীর হাতে। তিনি এখন এর মালিক কাম সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি। কোন দিন সাংবাদিকতা করেছেন বলে শুনিনি।
দৈনিক সংবাদ
ছবিঃ দৈনিক সংবাদের সাবেক সম্পাদক আহমেদুল কবীর
দৈনিক সংবাদ পাকিস্থান আমলের প্রথম দিকে ছিল মুসলিম লীগের পত্রিকা। পরে মুসলিম লীগ নেতা নুরুল আমীনের শ্যালক বাম নেতা আহমেদুল কবীর পত্রিকার মালিক হয়ে যান।মুসলিম লীগের পত্রিকা হলেও শুরু থেকেই বাম ঘরনার সংবাদ কর্মীর একছত্র আধিপত্য ছিল দৈনিক সংবাদে।
আহমেদুল কবীর মারা যাওয়ার পর সম্পাদক হন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভানেত্রী মতিয়া চৌধুরীর স্বামী বিশিষ্ট বাম তাত্ত্বিক বজলুর রহমান। বজলুর মারা যাওয়ার পর কিছু দিন সম্পাদক ছিলেন পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক মুনীরুজ্জামান।
বর্তমানে এর সম্পাদক আহমেদুল কবীরের ছেলে বিশিষ্ট চা ব্যাবসায়ী আলতামাশ কবীর। আলতামাশ কোন দিন সাংবাদিকতা তো দুরের থাকুক লেখা লেখিও করেছেন এমন নজীর নেই।
দৈনিক ডেসটিনি
ছবিঃ দৈনিক ডেসটিনির সম্পাদক রফিকুল আমীন
দেশের বহুল আলোচিত মাল্টিলেভেল কোম্পানী ডেসটিনি গ্রুপের পত্রিকা দৈনিক ডেসটিনি। সম্পাদক রফিকুল আমিন। তিনি আবার ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপকও বটে। ডেসটিনি গ্রুপের এমডি হওয়ার আগে তিনি কোথাও সাংবাদিকতা করেছেন বলে ঢাকার কোন সাংবাদিক তথ্য দিতে পারেননি।
কথা হচ্ছে ১/১১ পর নয়া দিগন্তে কলাম লিখে খুব স্বল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান মাহমুদুর রহমান। ধীরে ধীরে আমার দেশের হাত বদল হলে সেটিতে বিনিয়োগ করে জড়িয়ে পড়েন মিডিয়া জগতে। প্রথম দিকে প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ উপদেষ্টা হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করলেও তার অবর্তমানে মাহমুদুর রহমানে পত্রিকার হাল ধরেন। হয়ে যান মালিক কাম ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।
জীবনে কেউ দু-লাইন না লিখেও যদি সম্পাদক বনে যান, তাহলে মাহমুদুর রহমান সম্পাদক হতে সমস্যা কোথায়?
বিষয়: বিবিধ
১০৭৮৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন