মোবাইল ফোন আনবে না ফেসবুক। কিন্তু কেন?

লিখেছেন লিখেছেন চোথাবাজ ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:১০:৩৫ দুপুর



প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গ, তার বিভিন্ন ব্যবস্থাপক এবং ফেসবুক বার বার স্মার্টফোন বের করছেন না বলে জন সাধারণকে নিরস্ত করলেও শুনতে চাইছে না কেউই। বুধবার সংবাদ সম্মেলন করছে ফেসবুক আর সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোন বের করছে বলে চিৎকার শুরু করে সবাই। কিন্তু বিধি বাম! সম্মেলনে স্মার্টফোন সম্পর্কে কোন কথাই বলে নি তারা। প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল এর জন্য কোন নতুন কোন অপারেটিং সিস্টেম বের করবে কি না সে সম্পর্কেও কোন তথ্য প্রকাশ করে নি প্রতিষ্ঠানটি।

এইচটিসি নির্মিত "ফেসবুক ফোন" এইচটিসি স্ট্যাটাস

গত কয়েক মাস যাবত এ ধরণের গুজব বাজারে রয়েছে। সবাই আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল জগতে নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করার লক্ষ্যে আরো বৃহৎ কোন উদ্যোগ নিবে। আর এই উদ্যোগের মূলে থাকবে একটি স্মার্টফোন এবং অপারেটিং সিস্টেম। এই মুহূর্তে হার্ডওয়্যারটি নিজে তৈরি না করলেও এইচটিসি বা এ ধরণের কোন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে নিয়ে আসবে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টা আরো গরম হয়ে উঠে যখন বিভিন্ন সাইটে অদ্ভুত সব নকশার ফেসবুক ফোন দেখা যেতে শুরু করে তখন। দেখলে মনে হয়, সবাই যেন এই মিথ্যাকে সত্য হিসেবে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।



এক্ষেত্রে আমার মনে হয় আমাদের মার্ক জুকারবার্গের বক্তব্য আরো কাছ থেকে শোনা উচিত। সব কোম্পানি অ্যাপল নয় যে মাসের পর মাস না না করে শেষ পর্যন্ত হার্ডওয়্যারটি নিয়ে হাজির হবে। ফেসবুক যে এধরণের একটি প্রতিষ্ঠান সে সম্পর্কে এখনো কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। আর তাই, মার্ক জুকারবার্গের ফোন ব্যবসার সাথে না জড়ানোর কথাটি আমরা বিশ্বাস করে নিতে পারি।

স্মার্টফোন বা মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম না তৈরির সিদ্ধান্তের পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। যার কিছু আমি এখানে লিপিবদ্ধ করলাম-

১। স্মার্টফোন ব্যবসার বর্তমান অবস্থা:

এই মুহূর্তে স্মার্টফোন ব্যবসার দিকে যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন স্যামসাং আর অ্যাপল ছাড়া অন্য কোন নির্মাতার অবস্থা কিন্তু খুব একটা ভালো না। আমরা নোকিয়ার অবস্থা দেখে হাসি, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি সনি, এলজি বা অন্য নির্মাতাদের মোবাইল বিক্রয়ের হার কিন্তু বেশ কম। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই এই খাতে লোকসান করছে। এমন কি একসময়ের লাভ জনক নির্মাতা এইচটিসি ক্রমশ লোকসান দিতে শুরু করেছে।

আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাজারে সস্তা দামের অ্যানড্রয়েড এর আধিপত্য। এই ধাঁচের স্মার্টফোনগুলোর মূল্য কম হওয়া স্বত্বেও প্রিমিয়াম স্মার্টফোনগুলোর সাথে পার্থক্য সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা গুরুত্ববহন করে না। আর তাই এই ধরণের ফোনগুলোকে সস্তা ফোনের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। আর ব্র্যান্ড পছন্দ করে যারা তাদের কাছে স্যামসাং আর অ্যাপল ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান গুরুত্ব পায় না।

ফেসবুক চালিত স্মার্টফোন: স্বপ্নই থেকে যাবে কি?

২। মোবাইল অপারেটর:

হার্ডওয়্যার ব্যবসা মানেই খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে সরবরাহকারী এবং মোবাইল অপারেটরদের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। এদিক থেকে নেটওয়ার্ক অপারেটরদের মন জয় করাটাই সবচেয়ে কঠিন। বেশির ভাগ সময় মোবাইল নির্মাতাদেরকে এদের পেছন পেছন ঘুরতে দেখা যায় এবং লোকসানে হ্যান্ডসেট সরবরাহ করতে দেখা যায়। সফটওয়্যার নির্মাণে দক্ষ ফেসবুক কেন এত ঝামেলা গ্রহণ করতে যাবে?

৩। প্রতিযোগিতামূলক ওএস বাজার:

মোবাইল ব্যবহারকারীদের সামনে আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে হাজির হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি? আইওস, অ্যানড্রয়েড, উইন্ডোজ ফোন, বিবিএম, ফায়ারফক্স এবং লিনাক্স এত কিছুর পরে ওএস উদ্ভাবনের পেছনে অর্থ খরচ করাটা প্রতিষ্ঠানের জন্য লোকসান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

যে দুইটি অপারেটিং সিস্টেম ২০১৩ সালের স্মার্টফোনগুলোর রাজ্যে আধিপত্য বিরাজ করবে সে দুইটি হচ্ছে অ্যানড্রয়েড এবং আইওএস; পরবর্তী স্থানে রয়েছে ব্ল্যাকবেরি ১০ এবং উইন্ডোজ ফোন ৮। এর পাশাপাশি নির্মাতাদের হাতে রয়েছে উবুন্তু, ফায়ারফক্স এবং টিজান ব্যবহারের সুবিধা।

এতগুলো অপারেটিং সিস্টেম থাকার পর ওএস দুনিয়ায় প্রবেশ করার চেষ্টা গাধামি ছাড়া অন্য কিছু ভাবা কি ঠিক হবে? বিশেষ করে গুগলের জনপ্রিয় অ্যানড্রয়েড থাকতে কয়জন নির্মাতা ফেসবুকের ওএস ব্যবহার করতে চাইবে। তার চেয়ে বড় কথা, একটি ওএস নির্মাণ করতে হলে প্রয়োজন বছরের পর বছরের কঠোর পরিশ্রম। চিহ্নিত করতে প্রতিটি সমস্যা, দিতে হবে সমাধান। আর তাই এইচটিসি অথবা স্যামসাংয়ের মত অ্যানড্রয়েড অভিজ্ঞ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করাটাই ফেসবুকের জন্য বুদ্ধিমানের মত কাজ হবে। যারা কাস্টম লেয়ার তৈরিতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে।

৪। অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণে আরো মনোনিবেশ করতে হবে:

এই মুহূর্তে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটির দিকে আরো মনোনিবেশ করা উচিত ফেসবুকের। মোবাইল থেকে কিভাবে অর্থ উপার্জন করবে সে ব্যাপারে এখনো সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মোবাইল অ্যাপটি সম্পর্কে নানা ধরণের অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদেরও। আর তাই এই অ্যাপ ঠিক করার ব্যাপারে আরো মনোনিবেশ করা উচিত প্রতিষ্ঠানটির।

২০১১ সালে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস এ ফেসবুক এবং এইচটিসি একত্রে নিয়ে আসে এইচটিসি স্ট্যাটাস (চাচা নামে পরিচিত) এবং এইচটিসি সালসা। উভয় ফোনেই ফেসবুকের জন্য নির্দিষ্ট একটি বাটন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ফোন দুইটি ভোক্তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়।

তবে ফেসবুক কখনই স্মার্টফোন নিয়ে হাজির হবে না -এ কথা বলা ঠিক হবে না। প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল অবকাঠামোয় নিজের অবস্থান আরেকটু দৃঢ় করার পর হয়তো স্মার্টফোন অথবা মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে হাজির হলে বেশি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। গুগলকে যদি লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন ভোক্তাকে সকল ধরণের সেবা প্রদানে সক্ষম হওয়ার পরেই প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে শুরু করে। এবং গুগলের মত প্রতিষ্ঠানকেই এর পেছনে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে সে কথা আশা করি নিশ্চয় কেউই ভুলে যান নি।

ওএস নির্মাণ না করেই এর ঝাল কিছুটা হলেও ফেসবুক গ্রহণ করেছে আর তাই প্রতিষ্ঠানটি এত তাড়াতাড়ি ওএস নির্মাণে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে মনে হয় না ।

একটি চোথাবাজি পরিবেশনা

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File