গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন ও বাম বিলাসিতাঃ টেক এ লুক ব্যাক
লিখেছেন লিখেছেন চোথাবাজ ২৯ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৫২:৫২ রাত
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী কোন নতুন ইস্যু নয়। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে গত বিয়াল্লিশ বছর ধরেই এই দাবীর পক্ষে উচ্চকিত ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক বাঙালী। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ৭৫ পরবর্তী সময়ে এদেশের শাসনযন্ত্র সে দাবীর সাথে একাত্ব হয়নি বরং উচ্চকিত সেই কন্ঠকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে নির্লজ্জ ভাবে। এমনকি, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সেই যুদ্ধাপরাধীদেরকেই এদেশে পুনর্বাসিত করেছে। তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে। জনতার আদালতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সেই গণদাবীকে পুনর্জাগরিত করেছিলেন, গণ আদালতে তাদের ফাঁসীর রায় দিয়েছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধেও দেশদ্রোহীর মামলা হয়েছিলো। সেই মামলার অপবাদ নিয়েই তাঁকে মৃত্যু বরন করতে হয়েছে। সত্যিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারটি নিয়ে আসে। মূলতঃ দেশের তরুণ প্রজন্ম তথা সমগ্র দেশবাসী সেই দাবীর সাথে একাত্ব হয়েই মহাজোটকেই বিপুল ম্যান্ডেট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। অবশেষে ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, শুরু হয় জাতীয় ক্ষত শুকানোর চিকিৎসা। সেই ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসী, শুরু হলো কলংকমোচন। জাতি হলো উদ্বেলিত। কিন্তু গত ৫ই ফেব্রুয়ারী আরেক যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার বিচারের রায় হলো যাবজ্জীবন কারাদন্ড। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বীর বাঙ্গালী স্বভাবতই সেই রায় মেনে নিতে পারেনি। সেই থেকে শুরু হলো নতুন ইতিহাস।
"ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক" ৫ই ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২ টা ২৩ মিনিটে ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে বিকাল সাড়ে তিনটায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে যে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আহবান করে তাতে বিক্ষুব্ধ জনতার ঢল নামে। সেই বিক্ষুব্ধ জনতার দাবীতেই শাহবাগ অবরোধ। জন্ম নেয় বাঙ্গালীর এক গৌরবজ্জল দীপশিখা- "গণজাগরণ মঞ্চ"। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল বাঙ্গালীর আবেগের সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত হয় এই গণজাগরণ মঞ্চ। এতে যোগ দেয় এদেশের প্রগতিশীল সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন গুলি। সকলের দাবীর প্রেক্ষিতেই ঠিক করা হয় ছয়দফা। যাতে রয়েছে সকল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াতে ইসলাম ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ইসলামী ছাত্র শিবির নিষিদ্ধ সহ আরো কিছু দাবী।
এই আন্দোলনকে একটি যৌক্তিক পরিসমাপ্তির দিকে নিয়ে যাবার জন্য প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি কর্মসূচী দেয়া হয়েছে সকলের সাথে আলোচনা করে সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক উপায়ে। আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই সুস্পষ্টভাবেই এই গণজাগরণ মঞ্চ থেকে বলা হয়েছে, এই আন্দোলন হবে অহিংস। এই আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচী, যেমন- তিন মিনিট নীরাবতা পালন, শহীদ স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন, শহীদদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে অজানার উদ্দেশ্যে ওড়ানো, দেশব্যাপী একযোগে পতাকা উত্তোলন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠকরণ প্রভৃতিকে প্রথম থেকেই একটি গোষ্ঠীর কাছে কঠোর ও কার্যকর কর্মসূচী বলে মনে হয়নি। কিন্তু একথা ভুললে চলবেনা যে, লক্ষকোটি জনতা যখন কোন কর্মসূচীর সাথে একাত্ম হয়ে যায় তখন সেই কর্মসূচীর চেয়ে কঠোর কোন কর্মসূচী হতে পারেনা। জনগনের চেতনার এই জাগরণই গণজাগরণ মঞ্চের মূল শক্তি এবং তাঁরাই ঠিক করবে এই আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি। সকল মিথ্যাচার-অপবাদ-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এই জনতাকে সাথে নিয়েই গণজাগরণ মঞ্চ এগিয়ে চলছে এবং ভবিষ্যতেও এগিয়ে যাবে।
এবার আসা যাক যে কারণে এই লেখার অবতারণা সেই ব্যাপারে। আন্দোলনের শুরু থেকেই গণজাগরণ মঞ্চের মূল দাবিটি ছিলো কাদের মোল্লা সহ সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করে ইতিমধ্যেই কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যতম যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসীর রায় ও এসেছে। ট্রাইব্যুনালের কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে এবং আমরা আশাকরি প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীর শাস্তিও নিশ্চিত হবে। সকল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবার আগ পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবী হচ্ছে জামাত-শিবিরের রাজনিতী নিষিদ্ধকরণ। গত ২১শে ফেব্রুয়ারী গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ থেকে জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় আইনী প্রক্রিয়া শুরু করবার ব্যাপারে সরকারকে ২৬শে মার্চ পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সাথে লক্ষ করা যায় এই সময়ের মধ্যে সরকার এই ব্যাপারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যদিও আইন্মন্ত্রী বলেছেন যে নির্বাচন কমিশন থেকে জামাতের নিবন্ধন বাতিলের ব্যাপারে ২০০৯ সালে তরিকত ফেডারেশন কর্তৃক দায়েরকৃত একটি মামলাকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে এবং এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনী কাজ চলছে। কিন্তু এই ব্যাখ্যা স্বভাবতই গণজাগরণ মঞ্চকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কারণ এর মাধ্যমে জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এর প্রেক্ষিতে সবার সাথে আলোচনা করেই গণজাগরণ মঞ্চের নতুন কর্মসূচী ঠিক করা হয় ৪ঠা এপ্রিল বিক্ষোভ মিছিল এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সাথে দেখা যায় যে ২৬শে মার্চ গণজাগরণ মঞ্চের মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মহাসমাবেশের শুরু থেকেই একটি অতিবিপ্লবী গোষ্ঠী ঘেরাও এর দাবী সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও হ্যান্ডমাইক নিয়ে এসে মঞ্চের ঠিক সামনে বসেই উদ্ধত আচরণ শুরু করে। যে “জয় বাঙলা” ও “ফাঁসী চাই” স্লোগান এই গণজাগরণ মঞ্চের প্রাণ, সেই স্লোগানই পরিবর্তিত হয়ে তাদের মুখে হয়ে যায় “ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও চাই, পিএম অফিস ঘেরাও চাই”, যেনো পিএম অফিস ঘেরাও এর মাঝেই এই আন্দোলনের সব স্বার্থকতা নিহিত! তাদের বারংবার থামতে বলা হলেও এই অতিবিপ্লবী গোষ্ঠী সবার সাথেই চরম বাজে ব্যবহার করে, এমনকি মেয়েদের সাথেও; যা নিশ্চিতভাবেই এই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। ভেবে লজ্জা পেতে হয় যে, এই অতি বিপ্লবী গোষ্ঠী মহান মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণার সময়-ও ওই একই স্লোগান দেয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কথাকে করে বাধাগ্রস্থ! ধিক্ সেই অতিবিপ্লবীদের! অনেকের কাছেই মনে হতে পারে এই অতিবিপ্লবীদের উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবেই কাঠগড়ায় দাড় করানো হচ্ছে। এর জবাব হলো, সেদিন তাদের ব্যবহার কতটা বাজে ছিলো তা প্রতিটি মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজেই ধারণ করা আছে।
তাদের এই ব্যবহার মোটেও তাৎক্ষনিক ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ছিলো না, বরং ছিল সুপরিকল্পিত। তা নাহলে সবার গায়ে একই টিশার্ট থাকতো না, তারা ঘেরাও এর দাবী সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসতোনা, নিয়ে আসতোনা হ্যান্ড মাইকও। মশাল মিছিলের জন্য প্রস্তুত থাকতো না অনেকগুলি মশাল ও। যা এতোদিন ধরে চলে আসা সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তের স্থান, গণজাগরণ মঞ্চের সাম্যতাকে প্রথমবারের মত করে তুলেছিলো আঘাতপ্রাপ্ত।
২৬শেমার্চের মহাসমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার তাঁর বক্তব্যে যে ভাষায় সরকারের শৈথিল্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারের বিরুদ্ধে কখনো এই ধরনের আক্রমণাত্মক কথা কেউ বলেনি। গণজাগরণ মঞ্চের যে নতুন কর্মসূচী ঘোষিত হয়েছে সেদিন, তা সন্তুষ্ট করেছে উপস্থিত হাজারো জনতাকে, শুধু নিবৃত হয়নি এই অতিবিপ্লবী ১৫-২০ জনের গোষ্ঠী।
প্রশ্ন হলো, কারা এরা? কি তাদের উদ্দেশ্য?
এরা সেই অতিবিপ্লবী গোষ্ঠী, যারা ৫ তারিখ থেকেই বিভ্রান্তির মায়াজাল ছড়ানোর সুচতুর পরিকল্পনা করে এসেছে, ফেসবুকে শাহবাগে সমাবেশের ডাক দেবার পর পরই প্রেসক্লাবের সামনে নতুন সমাবেশের ডাক দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার মাধ্যমে। এরাই “গণজাগরণ মঞ্চ”র ৬দফা দাবীর বিপরীতে ৭দফা দাবী দিয়ে নতুন করে আন্দোলনের ঐক্যের স্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিলো। এরাই “গণজাগরণ সাংস্কৃতিক মঞ্চ” নামে নতুন মঞ্চ তৈরী করে এই মঞ্চকে বিভক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিলো। এরাই ব্লগার রাজিব হায়দার এর মৃত্যুর পর মঞ্চ দখলের পাঁয়তারা কষেছে। এরাই গণজাগরণ মঞ্চের মিডিয়াসেলের নামে নতুন করে আরেকটি মিডিয়াসেল খুলে সংবাদকর্মীদের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের মাধ্যমে মঞ্চকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলো। এরাই অনলাইনে, ব্লগে, ফেসবুকে, জাতীয় পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে নিজেদেরকে আন্দোলনের প্রধান সংগঠক হিসেবে উপস্থাপনের প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে। এমনকি আন্দোলনের কিছুদিনের মাথায় জনতার প্রাণের ঠিকানা “গণজাগরণ মঞ্চ”কে প্রজন্ম চত্বর থেকে শহীদ মিনার কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরিয়ে নেবার ঘোষণা দিয়ে জনতাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। এই অতিবিপ্লবীরাই এসকল ষড়যন্ত্রে সফল না হতে পেরে “গণজাগরণ মঞ্চ”কে সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট মঞ্চ বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালায় অনলাইনে। এদের চোখে মঞ্চে শুধু ছাত্রলীগের উপস্থিতিই ধরা পড়ে, অথচ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র সংহতি, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রফোরাম সহ সকল প্রগতিশীল ছাত্রনেতা ও ব্লগারদের উপস্থিতি এদের চোখে পড়েনা। এমনকি লক্ষ জনতার উপস্থিতিও এদের মনে কোন ধরনের আবেদন সৃষ্টি করেনা। নিশ্চিতভাবেই বলা যেতেপারে এদের জন্যেই কবি নির্মলেন্দু গুন লিখেছেন-
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ
কি এদের উদ্দেশ্য?
এক কথায় এই প্রশ্নের জবাব দেয়া সম্ভব নয়। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালেই এর উত্তর পাওয়া যাবে। ৭০ এর নির্বাচনের পূর্বে অতিবিপ্লবী গোষ্ঠীরাই “ভোটের রাজনীতি নয়, ভাতের রাজনীতি চাই” বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলো। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এরা মুক্তিযুদ্ধকে “দুই কুকুরের কামড়াকামড়ি” বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিলো। ৭৫ পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীরা যখন এদেশে পুনর্বাসিত হওয়া শুরু করলো, তখন কিন্তু এই অতিবিপ্লবীদের খুঁজেও পাওয়া যায়নি। তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের গণআদালতেও। এরাই মেহেরজান ছবির পক্ষে অবস্থান নিয়ে “ন্যারেটিভ”, “ডিসকোর্স” শব্দসমূহের বাতাবরনে পাকিপ্রেমের স্বাক্ষর রেখেছিলো ব্লগস্ফিয়ারে ও অনলাইনে। এরাই সাঈদীর সেক্সটেপকে ব্যক্তিগত বিষয় বলে এড়িয়ে যাবার ধুয়া তুলেছিলো, এরাই বার বার “ফাঁসী”কে মানবাধিকার লংঘন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এদের প্রেস থেকেই ছাপানো হয় জামাত-শিবিরের ক্যালেন্ডার। এরাই জামাত-শিবিরের নিষিদ্ধের দাবীকে অতিবিপ্লবী সিদ্ধান্ত বলে প্রচার করার চেষ্টা চালায়। শামসুন্নাহার হল আ্নদোলনে জামাতপন্থী শিক্ষক কে বক্তব্য দেয়ার জন্য নিয়ে এসে ছাত্রদের আক্রোশের মুখে দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। এরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্পোরেট বিরোধী আন্দোলনকে গ্রামীনফোনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলো। বিমানবন্দরের সামনে স্থাপিত লালন ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা “বাংলার সংস্কৃতি আন্দোলন”কে ঠিক এভাবেই দ্বিধাবিভক্ত করে শেষ করে দিয়েছিলো মুকুলেই। মোটকথা, অতিবিপ্লবের ভেক ধরে এরাই যুগে যুগে বাঙ্গালীর প্রগতিশীল আন্দোলনকে ধ্বংশ করার পাঁয়তারা করেছে।
এদের লক্ষ একটাই, গণজাগরণকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করা।
এ পর্যায়ে দুটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সমীচীন, প্রশ্নগুলি হলো-
১। কেনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচী এখনি দেয়া হয়নি?
২। কেনোই বা এখনি অনশনের ডাক দেয়া হচ্ছে না?
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হলো দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধানের কার্যালয়। এর আগে কিন্তু কখনোই প্রধানমন্ত্রী বরাবর গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে কোন ধরনের আবেদন করা হয়নি। গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে দেয়া দুটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে মাননীয় স্পীকার ও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর। তাদের কাছ থেকে আশানুরুপ পদক্ষেপ পাওয়া যায়নি বলেই প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। এই কর্মসূচী শুরুই যদি হয় ঘেরাও দিয়ে, তাহলে পরবর্তী কর্মসূচী কি হবে? একই কথা অনশনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অহিংশ আন্দোলনের সর্বোচ্চ ধাপ হচ্ছে অনশন। গণজাগরণ মঞ্চের এই আন্দোলনের পথ অনেক দীর্ঘ। মাত্র তিনজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় হয়েছে। যার মাঝে একটি আবার আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আরো অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচার রয়েছে বাকি, বাকি রয়েছে জামাত-শিবির নিষিদ্ধের ব্যাপারটিও। গণজাগরণ মঞ্চকে এই আন্দোলন সফল করার জন্য অনেক পথ হাঁটতে হবে। এখনি কি চরম কর্মসূচী গ্রহনের সময় এসেছে? হাতের ট্র্যাম্প কার্ডটি আগেই খেলে ফেললে, খেলায় যে হেরে যেতে হবেনা, তার নিশ্চয়তা কি? অতএব সকলের আবেগের স্থানটিকে শ্রদ্ধাজানিয়েই বলা যেতে পারে, এ ধরনের কর্মসূচী শুধুমাত্র বিভক্তিরই নামান্তর মাত্র। ধাপে ধাপে সুশৃংখল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচীর পালন করেই সফলতার শিখরে পৌঁছুতে পারবে।
সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ, সকল বিভ্রান্তির মায়াজালকে পাশ কাটিয়ে গণজাগরণ মঞ্চকে বুকে ধারণ করে রাখুন। কারণ গণজাগরণ মঞ্চ হারলে হারবে সমগ্র বাংলাদেশ।
জয় আমাদের হবেই!
জয় বাংলা!
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন