Nokia C-5: সাধ ও সাধ্যের অপুর্ব সমন্নয়ে স্মার্টফোনের অভিজ্ঞতা

লিখেছেন লিখেছেন চোথাবাজ ০৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৫:২৩:৫৬ বিকাল



আজকের বিশ্বে মোবাইল ফোন বলতে আমরা শুধু ফোনালাপ করার একটি যন্ত্রকেই বুঝি না, এযুগের প্রযুক্তির এই উন্মুক্ত দ্বারে এসে আমরা যদি মোবাইল নামক বস্তুটিকে খুজতে থাকি তবে আমার মনে হয় অর্ধেকের বেশি মানুষ খুজে পাবো যারা তার প্রিয় ফোনটিকে শুধু কথা বলার কাজে ব্যাবহার না করে বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি কাজে তার ব্যাবহার করছে মোবাইল ফোন। জীবনের প্রতিটি স্টেপের ছোট ছোট কাজে আমাদেরকে আরো বেশি স্মার্ট করে তুলছে তৃতীয় বিশ্বের এই ছোট্টো ডিভাইসটি। সম্ভবত এই করনেই ডিভাইসটিকে আমরা আদর করে ডাকি “স্মার্টফোন”। কি নেই আজকের এসব ফোনে! ইন্টারনেট, ই-মেইল, চ্যাটিং, ফেসবুকিং, স্যটেলাইট ম্যাপ উইথ জিপিএস, ভিওআইপি কলিং, গেমিং, সাথে থাকছে ছবি তোলা সহ মাল্টিমিডিয়ার বিশাল এক সম্ভার। কিন্তু মাত্র দশটি বছর পেছোনে ফিরে তাকেলেই আমরা দেখতে পাই মোবাইল ফোন মানে চড়া দামে একটি যন্ত্র ক্রয় করে অসহনীয় মূল্যের বিনিময়ে প্রিয়জনের কিছুটা সানিধ্যে আসা।



এখনকার মানুষের ভাবনা অনেক বদলে গেছে। এক টিকেটে দুই ছবি না, টিকেট ছাড়াই এখন মানুষ সব ছবি দেখতে চায়। প্রযুক্তি বিশ্বও থেমে নেই মোটেও। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে সব প্রযুক্তি পন্য প্রতিষ্ঠান এখন সাধারনের চাহিদা মেটাতে রীতিমত রেসিং কার নিয়ে নেমে পড়েছে। খুব স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে মোবাইল টেকনোলজিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এখনকার মোবাইল মানেই ওএস নির্ভর একটি ডিভাইস। জনপ্রিয় ওএস-এর বলতে এখন সবাই Android –কেই প্রাধান্য দেবে। তাছাড়া iOS-ও Android থেকে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। চমৎকার ইউজার ইন্টারফেস ও মন মাতানো সব ফিচার সমৃদ্ধ এই দুইটি অপারেটিং সিস্টেমের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে স্বীর্ষস্থানে থাকা ফিনিশ জয়ান্ট নকিয়া একেবারেই পিছিয়ে পড়েছে। কিন্তু এই নকিয়া-ই আমাদেরকে সর্বপ্রথম স্মার্টফোনের ধারনা দেয় তার S-60 সিম্বিয়ান অপারেটিং সিস্টেমের হ্যান্ডসেটগুলা দিয়ে। আমি মনে করি বাংলাদেশের মত এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোতে স্মার্টফোন এত দ্রুত প্রসার লাভ করত না যদি না নকিয়া তার সাশ্রয়ী মূল্যের স্মার্টফোনগুলো না ছাড়তো। আমি মানতে বাধ্য যে iOS কিংবা Android-এর মত এত ফিচার নকিয়া স্মার্টফোনে নেই কিন্তু নকিয়ার সবচেয়ে বড় তিনটি পাওয়ার হচ্ছে-

১.সাশ্রয়ী ক্রয়মূল্য

২.টেকসই হার্ডওয়্যার

৩.অতীব সাধারন ও চমৎকার ইউজার ইন্টারফেস

যা নকিয়াকে এখনো বাজারে শক্ত অবস্থানে সুনামের সাথে টিকিয়ে রেখেছে।

নাহ... লেবু অনেক কচলে ফেলেছি, আর তেতো করবো না। এবার কাজের কথায় আসা যাক। এতক্ষনে সবাই নিশ্চই সবাই বুঝতে পেরেছেন আমার আজকের রিভিউ নোকিয়া স্মার্টফোনের উপর।

Nokia c5-00

হ্যাঁ, আমার সবচেয়ে কাছের ডিভাইস, আমার প্রিয় সিম্বিয়ান OS চালিত ফোন Nokia C-5 এর উপর আজকের রিভিউটি সাজানো হয়েছে, ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং অফিসিয়াল কনফিগারেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে আমি এর আদি-অন্ত বর্ননা করার চেস্টা করবো।

ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ

আউটলুকঃ এক কথায় চমৎকার। 2.2 ইঞ্চি মাপের মিডিয়াম ডিস্প্লের সাথে গোটা গোটা বাটনের কিপ্যাডের সাথে এতে রয়েছে স্টিলের ব্যাকপার্ট, চকচকে স্টিলের ফ্রন্টস্ট্রিপটি একে করে তুলেছে আরো বেশি নান্দনিক। পাতলা ও মানানসই মাপের এই ফোনটি আপনার ব্যাক্তিত্বের যথেষ্ট পরিচয় বহন করবে।

অপারেটিং স্পিডঃ দুই বছরের ব্যাবহারের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি, এতে হ্যাং নামক ঝামেলা নেই বললেই চলে। কোন অ্যাপ কখনো ফোনকে স্লো করেছে বলে আমার মনে হয়নি, তবে হ্যাঁ Nimbuzz একটু স্লো কাজ করলেও ফোনের ওভারঅল স্পিডে কোন প্রভাব ফেলে না । এর 600MHz ARM 11 প্রসেসর অত্যান্ত কার্যকরভাবে সব অপারেশন সম্পন্ন করে।

ক্যামেরাঃ Nokia C5-এ এইখানে একটা চমক দেখানো হয়েছে। সম্ভবত এই ফোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর উন্নত মানের ক্যামেরা এবং স্মুথ ইমেজ প্রসেসিং স্পিড। 3.2MP, 2048*1536 pixel-এর মেইন ক্যামেরাতে যুক্ত করা আছে LED flash। ছবির মান অত্যান্ত সুন্দর। সোজা কথায় বলতে গেলে আপনার যদি ছবি তোলার শখ থাকে এবং আপনার যদি Nokia C5 মোবাইলটি থাকে তবে আপনাকে আর টাকা নস্ট করে ডিজিটাল ক্যামেরার দ্বারস্থ হতে হবে না। আমি অনেক চেস্টা করেও এর ছবির মানের কোন খুঁত ধরতে পারিনি। শুধু তাই না, এর উন্নত ইমেজ প্রসেসিং সিস্টেম ছবির গুনগত মান ঠিক রেখে ছবিটিকে কম স্পেসের(Approximately 1MB) মধ্যে নিয়ে আসে। যেখানে Sony-এর মোটামুটি মানের একটি ডিজিটাল ক্যামেরায় এক একটি ছবি প্রায় 5MB স্পেস দখল করে সেখানে একই মানের ছবি Nokia C5 আপনাকে দিবে মাত্র 1MB –এর মধ্যে। এর ভিডিও রেকর্ডিং কোয়ালিটিও অত্যান্ত উন্নতমানের, 15fps এ আপনি স্মুথলী mp4 মানের ভিডিও ধারন করতে পারবেন, আমি হলপ করে বলতে পারি যে কোন নরমাল ডিজিটাল ক্যামেরার ভিডিও থেকে এর ভিডিওর মান অত্যান্ত চমৎতকার। এখানেই শেষ নয়, ভিডিও কল করার জন্যে এতে রয়েছে VGA ফন্ট ক্যামেরা।

ব্যাটারী ব্যাকাপঃ এতে রয়েছে উন্নত মানের 1050mAh Li-Ion ব্যাটারি। আছে পাওয়ার সেভিং মূড অপশন। নতুন অবস্থায় আমি সর্বোচ্চ ২ দিন একটানা গান শুনেছি। একটানা একই সাথে গান শোনা এবং চ্যাট করাতে এটি আমাকে সর্বোচ্চ ১ দিন ব্যাকাপ দিয়েছে। নরমালি চ্যাট করে, কথা বলে, ইন্টারনেট ব্যাবহার করে মোটিমুটিভাবে ৩-৪ দিন যায়। যেখানে Android কিংবা i-Phone- এর একটা অতি উন্নত ডিভাইসে নরমাল ব্যাবহারে দিনে অন্তত একবার চার্জ করা লাগে। সবচেয়ে মজার বিষয় হল এটি ব্লুটুথ মডেম হিসেবে ব্যাবহার করলে একটানা ৬-৭ ঘন্টা চলে। এবং USB মডেম হিসেবে ব্যাবহার করলে ব্যাটারি চার্জ তো ব্যাবহারিত হয় ই না বরং চার্জ হতে থাকে যা কিনা অন্যান্য অনেক Nokia সেটেই অসম্ভব।

ভিন্ন স্বাদের কিছু ফিচারঃ এর উন্নত জিপিএস সিস্টেম আপনাকে দেবে ম্যাপ নির্ভর লোকেশন সার্সিং সুবিধা, এতে By default OVI Map সেটাপ দেয়া থাকে, আপনি চাইলে গুগল ম্যাপের সিম্বিয়ান ভার্সনও ব্যাবহার করতে পারেন। জিপিএস এর Accuracy খুবই ভালো। Nokia C5-এ রয়েছে MS World, Power Point, Excel, PDF পড়া ও এডিট করার সুবিধা।

দামঃ নকিয়ার এই স্মার্টফোনটি সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে তুলনামুলকভাব অনেক কম দামে বাজারে ছেড়েছে। এর বর্তমান বাজার মুল্য ১১,৫০০-১১,৮০০ টাকা। আপনি যদি ভেবে থাকেন এর চেয়ে কম মুল্যে অনেক ভালো Android স্মার্টফোন আপনি বাজারে পাবেন তবে আমি বলবো আপনি ভুল করছেন কারন কম মুল্যের স্মার্টফোনগুলোতে এতগুলো সুবিধা আপনি একসাথে আদৌ পাবেন না, একটু খেয়াল করে দেখুন কমদামি স্মার্টফোনগুলো নিম্নমানের চাইনিজ ব্রান্ডের এবং সেগুলোর ক্যামেরার মান না থাকে এতোটা ভালো না থাকে ভালো প্রোসেসর আর জিপিএস তো অপ্রতুল ই বলা যায়।

একনজরে ভালো দিকঃ

১. 3G ভিডিও এবং ভয়েস কলিং সুবিধা

২. উন্নত মানের ক্যামেরা

৩. পিসি মডেম হিসেবে খুবই ভালো

৪. Symbian OS v9.3 চালিত

৫. উচ্চ মানের ব্যাটারি ব্যাকাপ

৬. অপেক্ষাকৃত কম দামি

৭. হাল্কা পাতলা গড়নের

৮. MS World, Power Point, Excel, PDF পড়া ও এডিট করার সুবিধা

৯. পাওয়ারফুল নোকিয়া ব্রাউজার

১০. পাওয়ারফুল জিপিএস সিস্টেম যার মাধ্যমে আপনি চলমান স্পিড জানা থেকে শুরু করে লোকেশনিং, পজিশনিং সবই করতে পারবেন।

১১. গোটা গোটা বাটনের কারনে দ্রুত টাইপিং তথা চ্যাটিং সুবিধা

একনজরে খারাপ দিকঃ

১. র্যা ম খুবই কম, মাত্র 128MB

২. Wi-Fi অনুপস্থিত

৩. স্ক্রিন টাচ নয়

অফিসিয়াল কনফিগারেশনঃ

2G Network GSM 850 / 900 / 1800 / 1900

3G Network HSDPA 900 / 2100

Dimensions 112 x 46 x 12.3 mm, 56 cc (4.41 x 1.81 x 0.48 in)

Weight 89.3 g (3.14 oz)

Display

Type TFT, 16M colors

Size 240 x 320 pixels, 2.2 inches (~182 ppi pixel density)

3.5mm jack Yes

Memory

Card slot microSD, up to 16GB, 2GB included

Internal 50 MB storage, 128 MB RAM

Data

GPRS Class 32

EDGE Class 32

Speed HSDPA, 10.2 Mbps; HSUPA, 2 Mbps

WLAN No

Bluetooth Yes, v2.0 with A2DP

USB Yes, microUSB v2.0

Camera

Primary 3.15 MP, 2048x1536 pixels, LED flash, check quality

Video Yes, VGA@15fps

Secondary VGA videocall camera

Others Features

OS Symbian OS v9.3, Series 60 rel. 3.2

CPU 600 MHz ARM 11

Messaging SMS, AMS, MMS, Email, Push Email, IM, RSS

Browser WAP 2.0/xHTML, HTML, Adobe Flash Lite

Radio Stereo FM radio with RDS

GPS Yes, with A-GPS; Ovi Maps 3.0

Java Yes, MIDP 2.0

Colors White, Warm Grey

- MP4/H.264/H.263 player

- MP3/WAV/eAAC+/WMA player

- Document viewer (Word, Excel, PowerPoint, PDF)

- Video/Photo editor

- Organizer

- Facebook, YouTube, hi5, Friendster, MySpace apps

- Voice memo/dial

- Predictive text input

Battery

Stand-by Up to 630 h (2G) / Up to 670 h (3G)

Talk time Up to 12 h (2G) / Up to 5 h (3G)

Music play Up to 34 h

অবশেষে আমি আমার দৃষ্টিকোন থেকে বলতে পারি আপনি নকিয়ার এই ডিভাইসটি আপনাকে দেবে পূর্নাঙ্গ স্মার্টফোনের সুযোগ সুবিধা। কমদামি বেনামী Android ফোন না কেনার চেয়ে এটি আপনার জন্যে অনেক বেশি প্রিফারেবল

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File