সাংবাদিকতা
লিখেছেন লিখেছেন অতন্দ্র প্রহরী ২২ ডিসেম্বর, ২০১২, ০২:৫৯:১১ দুপুর
লেখালেখি-১
সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যার তুলনা আর হয় না। যেমন ধরুন এই পেশায় এলে সেলিব্রেটি হওয়ার রাস্তাটা অনেকটা সোজা হয়ে যায়। চুল দাড়ি পাকলেই আবার আপনি বুদ্ধিজিবী বনে যেতে পারবেন অনায়াসেই। আর নিরাপত্তার কথা বলছেন? কার সাহস আছে সাংবাদিকের উপর মাস্তানি করবে? একবার করেই দেখুক না!! ঐ ব্যটাকে দুদিনেই দেশের সেরা ঘৃণ্যতম ব্যক্তিতে পরিণত করার রাস্তাটা তো এই সাংবাদিকতার পেশাই।তাই সাংবাদিকতার পেশাকে হেলা ফেলায় দেখবেন না। আসুন নিজের ক্যারিয়ারের জন্য সাংবাদিকতার পেশাটা বেছেনিতে দেরি না করি।
প্রথমেই বলে রাখছি সাংবাদিকতা পেশায় সফল হতে আপনাকে কোনোভাবেই জার্নালিজমে ভর্তি হয়ে চার চারটি বছর নষ্ট করা চলবে না। কারণ আপনি জার্নালিজমের যত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টই হন না কেনো আপনাকে কিছু কিছু বিশেষ বিষয়ের উপর পারদর্শী হতেই হবে। আর সেরকম যোগ্যতা থাকলে কিসের ডিগ্রি কিসের কি? আপনার সফলতা অবস্যম্ভাবী। আসুন আর দেরি না করে শুরু করি।
প্রথমত:-
সাধারণ সাংবাদিকতা শিক্ষায় আপনাকে শিখানো হবে যে কোন ঘটনাকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরে সাজাতে হবে। এই প্রচলনের উপর যথেষ্ট সম্মান রেখেই আপনাকে একই জিনিস মনে করিয়ে দিতে চাই। যে কোনো ঘটনার উপর প্রতিবেদন করার আগে আপনাকে কি? কোথায়? কিভাবে? কখন? এবং কেনো? এই পাচটি প্রশ্নের আলোকে সাজাতে হবে। আশা করি সেটা আপনার জন্য তেমন কঠিন কোনো বিষয় নয়।
দ্বিতীয়তঃ-
এবারে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ মালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যেগুলো আপনার সফল সাংবাদিকতার অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। যেমন, প্রত্যক্ষদর্শি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নির্ভর যোগ্য সুত্র, এলাকা বাসী, গোপন সুত্র, সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকেই মনে করেন, এলাকা বাসীর সাথে আলাপ কালে জানাযায়।
উপরোক্ত শব্দমালা গুলো আপনার চলার পথে যখন তখনই প্রয়োজন হবে তাই এগুলোর যথাযথ ব্যবহার রপ্ত করুন।
উদাহরন_ধরুন সাভারে দুই গার্মেন্টস কর্মীর সাথে মালিক পক্ষের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। এখন আপনাকে যদি বলা হয় মালিক পক্ষকে ডূবাইতে হবে তাহলে এভাবে খবর লিখুন, গতকাল রাজধানীর অদুরে সাভারে গার্মেন্টস মালিকদের সাথে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ব্যাপক ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। (এবার এটা ওটা যা লেখার লিখুন এবং ক জন আহত হল এবং কজন নিহত হল তা লিখুন, এখানে খেয়াল রাখতে হবে নিহতের সংখ্যা সঠিক রাখতে হবে কিন্তু আহতের সংখ্যা আপনাকে যেন শ্রমিকদের অনুকুলে যায় সে অনুপাতে লিখতে হবে) এবার ঘটনার বর্ণনায় আপনাকে এই শব্দমালার সাহায্য নিতে হবে।
উদাহরণ – প্রত্যক্ষদর্শিদের সাথে কথা বলে যানা যায় যে গার্মেন্টস কর্মীরা তাদের নিজস্ব ক্যান্টিনে বসে খাবার খাওয়ার সময় হঠাৎ করেই মালিক পক্ষের লোক রাসেল ঐ পথ দিয়ে হেটে যাবার শ্রমিকদের উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করে। এতে শ্রমিক পক্ষ ঐ কর্মিকে আদর করে বুঝাতে গেলে অদুরেই দাঁড়িয়ে মালিক পক্ষের ক্যডার রা শ্রমিকদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
এবার মনে করেন আপনাকে বলা হল মালিকদের প্রধান জমির আলীকে ডুবাইয়া এক খান রিপোর্ট করতে হবে তাইলে আপনেকে উপরের শব্দমালার দারস্থ হইতেই হইবে।
উদাহরন-২
শিরোনমটা অবশ্যই আকর্ষনীয় হতে হবে যেমন কিছুটা এই রকম “নারায়নগঞ্জের টেন মার্ডারের পেছনে কলকাঠী নেড়েছেন সি এন জি দলের প্রধান”
কৌশল
কেন সি এন জি দলের প্রধানের নাম না লিখে শুধু পদবীর কথা লেখবেন?
কারণ হল একঢিলে একাধিক পাখি মারা হবে, এখানে সি এন জি দলের মান ইজ্জত ও ঐ দলের প্রধানের মান ইজ্জত নিয়া টানাটানি পড়ে যাবে। শিরোনামেই উদ্দেশ্য আহিলের এই কৌশল ছাড় দিলেই আপনার ক্ষতি।
এবার দেখুন কিভাবে ঐ শব্দগুলো দিয়ে পর্নাঙ্গ একটা রিপোর্ট তৈরি করা যায়।
ডেস্ক রিপোর্টঃ নারানগঞ্জের আলোচিত টেন মার্ডারের নেপথ্যের নায়কদের নাম বেরিয়ে আসছে। গতমাসে গ্রেফতার হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী পাতলা জলিল কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সিলেটের টেন মার্ডারের পেছনে জড়িত আছেন সি এন জি দলের কতিপয় শীর্ষ নেতা। দু সপ্তাহ আগে পাতলা জলিলকে জিজ্ঞাসাবাদে এরকম তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। পাতলা জলিলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের একটি গোয়েন্দা দল তৎক্ষনণাৎ সিলেটে ছুটে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিবি কর্মকর্তার তরফ থেকে জানা যায় যে তদন্তকারীদল পাতলা জলিলের দেয়া তথ্যের পক্ষে কিছু আলামত পেয়েছেন। গত সপ্তাহের প্রথম দিকের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের আই জি শিমুল কান্তি বলেছিলেন পাতলা জলিলের কাছ থেকে সিলেটের টেন মার্ডারের ব্যপারে কিছু গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ঐ সংবাদ সম্মেলনের পর গত কাল ডিবি পুলিশের ঐ কর্মকর্তা আমাদের প্রতিবেদক কে এমন তথ্য দিলেন। ঐ খবরের ভিত্তিতে আমাদের দৈনিক জমকালো পত্রিকার একদল সাংবাদিক নারায়ঙ্গঞ্জ যান এবং এলাকা বাসীর সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে সি এন জি দলের প্রধান জমীর আলীর সেক্রেটারীর সাথে নিহত দশনেতার সাথে টেন্ডার সংক্রান্ত মতবিরোধ চলছিল। এদিকে কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে যে পাতলা জলিলের এমন তথ্য প্রদানের এবং ডিবি পুলিশের এমন অগ্রগতির খবর সি এন জি দলের প্রধান জমির আলি সমমনা পুলিশের কর্মকর্তা ও আইনজীবিদের দারস্থ হচ্ছেন।
এভাবে লিখে ফেলুন কয়েক পৃষ্ঠা।
৩য় অধ্যায়
এবার উক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু মেধার পরিচয় দিতে হবে। ধরুন কোন রাজনৈতিক নেতার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন, সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তিনি বললেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে বাংলাদেশ আজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাই এই দেশ কে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে আমাদেরকে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের তৈরীতে মনযোগী হতে হবে”
এখন আপনাকে যদি বলা হয় এই রাজনৈতিক নেতাকে যেভাবেই হোক জনগনের কাছে ঘৃণীত করে তুলতে হবে তাহলে আপনার প্রতিবেদনের শিরোনাম হবে এরকম “বাংলাদেশকে বসবাসের অযোগ্য বললেন অমুক নেতা” এই খবরকে আরও মুখরোচক করতে আরও একটি রিপোর্ট লিখে ফেলতে পারেন এই শিরোনামে “দেশকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করলেন অমুক নেতা” আবার অন্যভাবেও লিখতে পারেন যেমন “দেশ দ্রোহী মন্তব্য করলেন অমুক নেতা”
এর পর দেখুন কি হয়, বাঙ্গালী বলে কথা, হুজুগে পড়ে ঘৃণাতো আছেই ফাসীর কাষ্ঠে ঝুলানোর দাবীও উঠবে এই নেতার বিরুদ্ধে। আর আপনার পদবী? দেখুন না লাফিয়ে কোথায় উঠে!!
আবার যদি আপনাকে বলা হয় যে এই নেতাকে জনপ্রিয় করে তুলুন তাহলে শিরোনামটি এভাবে লিখতে পারেন, “নতুন করে দেশ গড়ার আহবান জানালেন অমুক নেতা” আবার এভাবেও শিরোনামটি লিখতে পারেন “সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের তৈরীর শপথ ঝরে পড়লো নেতার কন্ঠে”
লিখেছেন অতন্দ্র প্রহরী।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন