মহেশখালীর কারিগররা অস্ত্র বানায়, ডাকাতি করে!

লিখেছেন লিখেছেন শিলা ০২ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:৪৬:৫২ দুপুর



এখানে এদের দুটোই কাজ- অস্ত্র বানানো আর ডাকাতি। অর্ডার পাওয়া গেলে কারখানাগুলো সচল থাকে। তৈরি হয় অস্ত্র। আর অর্ডার নেইতো চলে ডাকাতি। নিজেদের বানানো অস্ত্রে চলে তাণ্ডব। পান থেকে চুন খসলেই লাশ পড়ে।

পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে লুকানো অর্ধ শতাধিক অস্ত্র তৈরির কারখানা। আর আছে ডজন ডজন দস্যু আস্তানা, অস্ত্রাগার, চোরাইপণ্যের গুদাম।

মহেশখালীর গোরকঘাটা ঘাট পেরিয়ে কালামরছড়া বাজার পর্যন্ত ৩০/৩৫ কিলোমিটার দুর্গম রাস্তা ধরে যেতে একপাশে পাহাড় অন্যপাশে হাজার হাজার একর লবন ক্ষেত, চিংড়ি ঘের আর পানের বরজ। এসব নিয়েও চলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত। দখলদারী ও আধিপত্য বিস্তারের কোন্দলে চলে মারামারি, হানাহানি, রক্তারক্তি।

অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মহেশখালির প্রায় পুরোটাই সন্ত্রাসের এক ভয়ংকর জনপদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাচুর্য, সম্পদ আর ভূ-গঠন এ দ্বীপ উপজেলা যেনো গোটা দেশ থেকে আলাদা অচেনা এক জগত।

কক্সবাজারের কস্তুরিঘাট থেকে ১৫ মিনিটের স্পিডবোট জার্নি। এরপর কাটাখালি নদীর নীল পানি পার হয়ে সবুজ প্যারাবনের এক উপকূলীয় জনপদ। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি স্থানীয়দের ভাষায় ‘দোজখখানা’।

কারা এই সন্ত্রাসী, অস্ত্রের নির্মাতা আর যোগানদার? সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাহস দেখায় না এলাকাবাসী। শুধু এটুকু জানায় অস্ত্র কারখানা বা গুদামের যারা মালিক তারা ভয়ংকর ও দুর্ধর্ষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার প্রশ্রয়ে তাদের এই ত্রাসের রাজত্ব।

গ্রামবাসীর ভাষ্য. “দস্যু বাহিনির সদস্য বা প্রধানের নামে বাচ্চাদের ঘুম পাড়ান এখানকার মায়েরা। বাচ্চারাও ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ওইসব নাম শুনে।”

এমন মন্তব্য হিন্দি সিনেমা সোলে’র ভয়ঙ্কর ডাকাত চরিত্র গব্বর সিং এর কথা মনে করিয়ে দেয়।

ভয়াবহ এই জনপদে সরেজমিন অনুসন্ধান চালায় বাংলানিউজের ইনভেস্টিগেশন টিম। এখানকার অধিকাংশ অস্ত্রকারখানায় ঘুরে কথা হয় বাহিনী প্রধান, গুদামমালিক, অস্ত্রকারিগরদের সঙ্গে। দলটি কথা বলে, স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও।

সবমিলিয়ে পাওয়া তথ্যে উঠে এসেছে মহেশখালীর বাঁকের ভয়ংকর চিত্র।

প্রশাসনের দাবি, এখানে পুলিশ ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান চলে। কিন্তু অজানা কারণে, অজানা হাতের প্রভাবে বন্ধ হয় না কক্সবাজারের পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীর অস্ত্র তৈরির কারখানা ও ব্যবসা।

বিশেষজ্ঞদের মতে ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধাকেই এখানে কাজে লাগাচ্ছে দস্যূরা। দুর্গম দ্বীপ, তাই চাইলেই তারা নিজেদের লুকিয়ে ফেলতে পারছে। অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ বলে পুলিশ-র‌্যাবকেও এগোতে হয় অনেক কৌশলে।

তবে ফল যে একেবারেই নেই সে কথা বলা যাবে না। আগে এখানে অস্ত্রকারখানা ছিলো অর্ধশতাধিক। গত কয়েক বছরে পুলিশ-র‌্যাব কয়েকটি কারখানা উচ্ছেদ করে। বর্তমানে এর সংখ্যা ২৯টিতে দাঁড়িয়েছে বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে।arms

দেশের উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের অস্ত্রের প্রধান সরবরাহ যায় মহেশখালীর ১১টি দুর্গম পাহাড়ে গড়ে ওঠা অস্ত্র তৈরির ২৯টি কারখানা থেকে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের কড়ই বুনিয়ার মুদিরছড়া পাহাড়ে চারটি, পাশের দেবাঙ্গীর পাহাড়ে দুটি, আধারঘোনা পাহাড়ে একটি, হোয়ানক ইউনিয়নের বালুঘোনা, কেরুনতলীর পাহাড়ে দুটি, কালারমারছড়ার মোহাম্মদ শাহ ঘোনা, ফকিরজোম ও ভাঙ্গামুরা পাহাড়ে তিনটি, ইউনুস খালীর ধুয়াছড়ি পাহাড়ে তিনটি, বড় মহেশখালীর মুন্সিরডেইল, মাঝের ডেইল, কমলাঘোনা শুরঘোনা পাহাড়ে তিনটি, দেবাইঙ্গাপাড়া, বড়ডেইল, শুকরিয়াপাড়া, ফুড়িরঝিড়ি পাহাড়ে ছয়টি, শিয়াপাড়া, ভারুইতলী পাহাড়ে দুটি, চোলাই পাহাড় ও পানিরছড়া পাহাড়ে তিনটি কারখানা রয়েছে।

এছাড়াও শাপলাপুর ইউনিয়নের বালুর ডেইলের পাশাপাশি পাহাড় ও উত্তর নলবিলার পূর্বপাশের পাহাড়েও অস্থায়ী কারখানা আছে বলে জানা গেছে।

সবচেয়ে সন্ত্রাসকবলিত এলাকা কালারমারছড়া। এখানে একটি পুলিশ ফাড়িও রয়েছে। ফাড়ির ইনচার্জ শাহনেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, “এ এলাকায় বেশিরভাগ সন্ত্রাসীদের আস্তানা পাহাড়ে। পুলিশ পাহাড়ের একদিক থেকে হানা দিলে সন্ত্রাসী এবং অস্ত্র তৈরির কারিগরেরা আরেক দিক থেকে ভেগে যায়। আবার পাহাড় ঘেরাও দিলে তারা সাগরে নেমে ট্রলার দিয়ে পালিয়ে যায়। তার পরও সন্ত্রাসী ও অস্ত্র কারখানা উচ্ছেদে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত আছে।”

অস্ত্র কারখানার মূল হোতা ও অবস্থান

উত্তর নলবিলার (কালারমারছড়া) পাহাড়ের অস্ত্র কারখানাটি কুখ্যাত সন্ত্রাসী দেলোয়ার হোসেন টুইট্যার। ফকির জোমপাড়া পাহাড়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা বদার কারখানা। কালা জাহাঙ্গীরের অস্ত্র কারখানা শাহঘোনায়। নোনাছড়ি পাহাড়ে আছে খলিল প্রকাশ খইল্ল্যা বাহিনির অস্ত্র কারখানা। নোনাছড়ি পশ্চিম পাড়ায় কাশেম বাহিনির অস্ত্র কারখানা। কালারমারছড়ার আধারঘোনা এলাকায় অস্ত্র কারখানাটি বাদল প্রকাশ বদাইয়্যার। হোয়ানক, কালাগাজীর পাড়ার কাঠাঁলতলি পাহাড়ে রয়েছে জালাল বাহিনির অস্ত্র কারখানা। যাবজ্জীবন দ- মাথায় নিয়ে বড় মহেশখালির ফকিরাঘোনা এলাকায় অস্ত্র বানাচ্ছেন খইল্লা (পুরো নাম জানা যায়নি)। এছাড়াও অস্ত্র কারখানা আছে আঞ্জু শিকদার, সোনাদিয়ার জলদস্যু জাম্বু বাহিনী এবং জামায়াত নেতা এনাম বাহিনিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীর।

মহেশখালীর সন্ত্রাসের গডফাদাররা

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে মহেশখালীর সব অস্ত্র কারখানা ও সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের গডফাদার গুটিকয়েক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। এরা আবার সব রাজনৈতিক দলের নেতা। যেমন হোয়ানকের এনাম বাহিনির গড ফাদার এক সময়ের জামায়াতের আমীর গোলাম আজমের দেহরক্ষী ও ৪২ মামলার আসামি আখতার হামিদ চৌধুরী। সোনাদিয়ার মোকাররম প্রকাশ জাম্বু বাহিনির গড ফাদার কুতুবজোম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল গফুর ওরফে নাগু মেম্বার। উত্তর নলবিলার দেলোয়ার হোসেন টুইট্যার বাহিনির গড ফাদার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. বদিউল আলমের আপন ছোট ভাই বিএনপি নেতা নুরুল কাদের। কালাবদা বাহিনি, কাশেম বাহিনি, কালা জাহাঙ্গীর বাহিনির গড ফাদার স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডভোকেট নোমান। খলিল বাহিনির গড ফাদার আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম চৌধুরী। বদাইয়া প্রকাশ বাদল বাহিনির গড ফাদার সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে কারাবন্দি বিএনপি নেতা রুহুল কাদের। জালাল বাহিনির পেছনে কলকাঠি নাড়েন জেলা যুবলীগ নেতা ও দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার সাংবাদিক জাফর আলম। জোনাব আলি বাহিনির গড ফাদার স্থানীয় মেম্বার ও বাহিনি প্রধান বিএনপি নেতা জোনাব আলী মেম্বার।

অস্ত্র তৈরির কারিগররা

armsবড় মহেশখালী এলাকার এই অস্ত্র কারখানাগুলো সচল থাকে যাদের হাতে তারাও ওই এলাকায় একেকটি মূর্তিমান ত্রাস। এরা অস্ত্রের কারিগর। ফরিদুল আলম ভুঁতাইয়া ও তার ভাই বাশি, নুর হাসেম, শহিদুল্লা, ধলামিয়া, সাবেক মেম্বার খালেকের ভাই খুইল্লা, হোয়ানক এলাকার ডড্ড মিয়া, আবু শামা, তার দুই ছেলে মোস্তাক ও মোস্তাফিজুর রহমান, ইমান হোসেন মিন্টু, নুর মোহাম্মদ,আব্দুল খালেক, ছদর আমিন, কালারমারছড়ার অফিসপাড়ার আবু তাহের, আবদুল মজিদ, মোহাম্মদ আলী বাসিন্ন্যা, হেলাল উদ্দিন, রফিক, বড় মহেশখালীর শাহাব মিয়াসহ ৬৫ জনেরও বেশি অস্ত্র কারিগর রয়েছে এই এলাকায়।

তবে মহেশখালীতে অস্ত্র তৈরির নামকরা কারিগর ছিলো বাদশা মিয়া মিস্ত্রি। বছর চারেক আগে তিনি মারা যান। এই বাদশা মিয়ার কাছেই তার ছেলে জাফর, ভাতিজা শামসুসহ কয়েকজন অস্ত্র তৈরি করা শিখে এখন চালিয়ে যাচ্ছেন পৈতৃক পেশা।

অস্ত্রের অর্ডার পেলেই নিজস্ব কারখানায় অস্ত্র তৈরি করেন তারা। এছাড়া পাহাড়ের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ অর্ডার দিলে সেই মোতাবেক সরঞ্জাম নিয়ে নির্দিষ্টস্থানে গিয়েও অস্ত্র তৈরি করে দিয়ে আসেন। এসবের অধিকাংশই আগ্নেয়াস্ত্র। তবে দেশি ধারালো অস্ত্রও বানায় কেউ কেউ।

কারিগরদের কয়েক জন জানালেন, অস্ত্র বানানোর কাজ পেলে অস্ত্র বানাই আর কাজ না পেলে বাকী সময়ে তারা ডাকাতি করেন।

র‌্যাবের সূত্র মতে, বর্তমানে মহেশখালীতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে ১০টির বেশি ভারী অস্ত্র একে-৪৭, এম-১৬, জি-থ্রি রাইফেলসহ পাঁচ শতাধিক অবৈধ দেশি-বিদেশি অস্ত্র রয়েছে।

অস্ত্র পাচার

মহেশখালীর অস্ত্র যে কেবল ওই জনপদে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয় তা না। কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। তৈরির পর সিন্ডিকেটগুলো সুকৌশলে এসব অস্ত্র পাচার করে। এই সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছে পাহাড়ের বাইরেরও অনেকে।

সিন্ডিকেটের নেতৃত দিচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরমান, সোনা আলীর ছেলে বাশি। এরা গত ৮/১০ বছর ধরে এই ব্যবসা করে আসছে। তারা কাঠের ফার্নিচার, পান ও শুটকির ভেতর ঢুকিয়ে অস্ত্র পাচার করে। বর্তমানে মহিলাসহ বিভিন্ন মাধ্যমেও এই অস্ত্র পাচার করা হয়। এরমধ্যে রোহিঙ্গাদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।

অস্ত্র উদ্ধার ও কারখানা উচ্ছেদ

চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে পরিচালিত অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় মহেশখালী থেকে ২৫টি ভারী অস্ত্র একে-৪৭, এম-১৬, জি-থ্রি রাইফেলসহ প্রায় ৩৭০টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ২০০৭ সালে জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নৌবাহিনী ও পুলিশ মহেশখালীতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ছয়টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৮৪টি অবৈধ অস্ত্রসহ ১১৮ সন্ত্রাসীকে আটক করে। এ সময় দুর্গম পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের তৈরি করা অবৈধ পাঁচটি কারখানা উচ্ছেদ করা হয়।

বর্তমান সরকারের আমলেও উপজেলার বড়মহেশখালী হোয়ানক ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর ও কালারমার ছড়া থেকে বেশ কয়েকটি কারখানা উচ্ছেদ করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

চলতি বছরের মাঝামাঝিতে হোয়ানক ইউনিয়নে র‌্যাব-৭ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে দেশীয় তৈরী একনালা বন্দুক ৭ টি , এলজি ১ টি, ৩০৩ রাইফেলের তাঁজা গুলি ৮ রাউন্ড, শর্টগানের তাঁজা কার্তূজ ৮ রাউন্ড, ১ টি চাপাতিসহ বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারসহ ৪ জন অস্ত্র কারিগরকে গ্রেফতার করে।

এর আগে ২০১০ সালের ৬ মে একই এলাকার নুরীছড়ি পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে মহেশখালীর বড় ডেইল এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে আবু তাহের নামের এক অস্ত্র কারিগরকে আটক করে। পুলিশ পাহাড়টি ঘেরাও করে তল্লাশি চালিয়ে একটি বন্দুক, একটি এলজি ও অস্ত্র তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করে।

গত ৯ মে র‌্যাব কালারমারছড়া ইউনিয়নের নোনাছড়ি বাজার ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ টি এলজি বন্দুক,২ টি দেশীয় রাইফেল ও ১২ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধারসহ তিনজন অস্ত্র কারিগরকে গ্রেফতার করে।

arms

বড় মহেশখালী এলাকায় ২০০৯ সালের ১৩ আগস্ট অভিযান চালিয়ে শুকুরিয়া পাড়ার শারেসিয়া পাড়ার পাহাড়ে অস্ত্র তেরীর কারখানার আবিস্কার করে র‌্যাব । ওই কারখানা থেকে পাহাড়তলীর উড়া মিয়া মিস্ত্রির ছেলে গুরা মিয়া ও ভাই ফরিদ আলম এবং বড় ডেইল এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে রহমত আলীকে আটক করে। অভিযানের সময় ৬ টি এলজি বন্দুক, ২ টি দেশি বন্দুক, ৩ টি লেদ মেশিন এবং অস্ত্র তেরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

২০১০ সালের ৭ মে বড় মহেশখালী ইউনিয়নের গহিন পাহাড় মুড়িছড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ অস্ত্র কারখানা থেকে অস্ত্র কারিগর আবু আহমদকে (২৮) আটক করে অস্ত্র তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করে। আবু আহমেদ বড় মহেশখালীর বড়ডেইল এলাকার আবদুল হাকিমের ছেলে। তার কারখানা থেকে ২টি তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করে পুলিশ।

র‌্যাব ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর পূর্ব ফকির জোমপাড়া মোছাব্বির মিয়ার বাগানের পাশে পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে একটি অস্ত্র কারখানার সন্ধান পায়। ওই কারখানা থেকে একটি কাটা রাইফেল, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, সাতটি এলজি বন্দুক, দুটি দেশীয় একনলা বন্দুক, একটি দেশি দোনলা বন্দুক, একটি থ্রি-কোয়ার্টার রাইফেল, বিভিন্ন ধরনের ১০০ গুলি উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় তজু মিয়া, মো. নাছির উদ্দিন ও আবু বক্কর সিদ্দিক নামের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মহেশখালীর অস্ত্র কারিগর জাফর আলমকে (৪৫) আটক করে পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বিকেলে পুলিশের তিনটি দল অভিযান চালিয়ে একটি গুহায় অস্ত্রের কারখানার সন্ধান পায়। কারখানা থেকে একরামুল হক নামের একজনকে আটক করা হয়।

একই সালের ৭ নভেম্বর হোয়ানকের পাহাড়ি এলাকায় একটি অস্ত্র কারখানায় অভিযান চালায় পুলিশ। অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ আটক করে সিরাজুল মোস্তফা (২৭) নামের এক কারিগরকে।

২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুনতলীর লোহারছড়া পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে একটি অস্ত্র তৈরির কারখানা আবিষ্কার করে পুলিশ। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২টি এলজি, দুইটি ড্রিল মেশিন , দুটি আগুন ধরানোর মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম। একই সঙ্গে বড় মহেশখালী ইউনিয়নের বড় ডেইলের ঠান্ডা মিয়ার ছেলে ছালাম প্রকাশ ছালাম কারিগরকে আটক করে।

২০১০ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র তৈরির শীর্ষ কারিগর বড় মহেশখালীর পাহাড়তলী গ্রামের উলা মিয়া মিস্ত্রীর ছেলে জাফর আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তি মতে পুলিশের ৩ টি পৃথক টিম তিন দিক থেকে বড় মহেশখালীর পাহাড়তলী. বারিতল্যা ঘোনা নামক পাহাড়ী অস্ত্র তৈরির কারখানা আবিস্কার করে। পুলিশ ওই কারখানা থেকে অস্ত্র তৈরির সময় বড় মহেশখালীর পাহাড়তলী গ্রামের মোহাম্মদ জালালের ছেলেএকরামুল হককে গ্রেফতার করে। এছাড়া কারখানা থেকে দুটি লম্বা বন্দুক, দুই রাউন্ড কার্তুজ, দুটি বন্দুকের নলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ।

২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর শাপলাপুর ইউনিয়নের ষাইটমারা গ্রামের পাহাড় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেশীয় তৈরি একটি একনালা বন্দুক, এক রাউন্ড কার্তুজ, এক রাউন্ড রাইফেলের গুলি, ছয়টি বাটগ্রুপ, ছয়টি লোহার পাইপ আটটি স্প্রিং, চারটি প্লার্স, একটি হাতুড়ি , দুটি বাটালি , চারটি লোহার ছেনি , একটি রেতি, একটি লোহার গোলাকার চাকতি, ৫০টি হেকসো ব্লেড, তিনটি হেকসো ব্লেডসহ ফ্রেম, একটি ড্রিল মেশিন, একটি আগুন জ্বালানোর পা¤প এবং ৫টি নির্দিষ্ট আকারের কাঠের টুকরা উদ্ধার করা হয়।

এ সবগুলোই অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম বলে বাংলানিউজকে জানায় পুলিশ। পুলিশ আরও জানায় এসব অস্ত্র তৈরির কারিগর, অস্ত্রের গুদামে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মহেশখালীতে যোগদান করেছি ২০/২২ দিন আগে। আমি এসেই এসব আসামিকে ধরার জন্য নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। অস্ত্র কারখানার খোঁজেও অভিযান চলছে। পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুদিন হয়তো সময় লাগবে।

একনজরে মহেশখালী: বাংলাদেশরে একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালী ২৬৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় নিয়ে নিয়ে গঠিত। এ এলাকার জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। কক্সবাজার সদর থেকে নৌপথে স্পিডবোটে ১৫ মিনিটে আর ট্রলারে ৪৫ মিনিটে মহেশখালী সদরে পৌঁছানো যায়।

সুত্রঃ বাংলানিউজ

বিষয়: বিবিধ

১৬৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File