আমাদের শিক্ষকেরা!

লিখেছেন লিখেছেন রোকাইয়া ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:২১:৪২ দুপুর



একান্ত আপনজনদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষক। একজন ইতিমধ্যে মহান আল্লাহ পাকের নিবিড় তত্বাবধানে চলে গেছেন। বাকি যারা আছেন, সংগ্রাম করে চলেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মা আমার দৈনিক সাড়ে আট ঘন্টা পরিশ্রম করেন। বিজয় দিবস, স্বাধিনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ কিংবা শোক দিবস, কোনটাতেই আরাম করে বাড়িতে থাকতে পারেন না। ছুটি কাটাতে হয় স্কুল এর মাঠে, বিভিন্ন সরকারী অনুষ্ঠানে। অসুস্থ্য হয়ে মেডিক্যাল লিভ নিলে বেতন বন্ধ হয়। পরীক্ষার্থীদের খাতা কাটতে যেতে হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসে। বাড়িতে খাতা আনলে যদি কিছু দুই নম্বরী করেন। তারা তো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না, তারা নিচু জাতের শিক্ষক। সরকারে যত রকম জরীপ আছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে কে করবে? কেন? নিচু জাতের শিক্ষকরা তো আছেন ই! তারা খয়ে যাওয়া জুতা পায়ে,পা দুটোকে কোন রকম টেনে নিয়ে চলবে, শাড়ি বা ওড়নার আচল দিয়ে ঘাম মুছবে, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখবে রোদটা কখন কমবে, বেলাটা কখন পড়বে, কখন গিয়ে বাড়িতে বসে বুড়িয়ে যাওয়া পা দু্টোকে একটু তেল দিয়ে মালিশ করবে! কালকে যে আবার বেরুতে হবে। বাড়ির পর বাড়ি, ঘরের পর ঘর। কার কয়টা বাচ্চা, কেন স্কুলে আসেনা। জরিপ করা তো একটা দ্বায়িত্বই, তাইনা? দেশের শিক্ষার প্রদিপটা তো তাদের হাতেই, তারা যে শিক্ষক!সকাল ৯।১৫ তে হাজির হতে হবে ইস্কুলে, ৯। ২০ ও যদি বেজে যায়, একদিনের বেতন কাট! একদিনের বেতন দিয়ে তো অন্তত সারাদিনের চালটা কেনা যায়! একজন শিক্ষকের তত্বাবধানে একটা ঘরে ৬০ থেকে ৭০ জন ছাত্র। আজকাল আর কানে ভাল শোনা যায়না, আপনজনেরা বলে, আপনি এত জোরে কথা বলেন কেন? কি উপায়? এত জন বাচ্চার সাথে চিৎকার দিয়ে কথা বলতে বলতে গলা শুকিয়ে কাঠ, পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে আবার চিতকার! বাড়ি ফিরে কি আর স্বরটাকে আবার নিচু করা সহজ? এতজন বাচ্চার সম্মিলিত কণ্ঠের বাজনায় আর কানেও এখন ভাল শুনা যায় না । শিক্ষক চাচা স্কুল থেকে ফিরে গরু চরান, অথবা লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে হাল বইতে যান। এছাড়া উপায় কি? স্কুলের চাকরীটার লাভ শুধু বাবার পকেটের টাকা খরচ করে যে পড়াশুনা করেছিলেন, তার বিনিময়ে কিছু গরীব আন্ডাবাচ্চাদের মুখ থেকে স্যার ডাক শোনা।

এতো কষ্টের মধ্যে কি আনন্দ কম! কত ছাত্র যে ডাক্তার, কত জন যে ইঞ্জিনিয়ার, কত পুলিশ অফিসার...কত জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কেউ আমেরিকায়, কেউ অস্ট্রেলীয়ায়, কেউবা ইউরোপে। ওদেরকে অ, আ, ক, খ কে শিখিয়েছে? তোমরাই তো!সেদিন তোমরাই তো বানান করে পড়তে শিখিয়েছ! যুক্ত অক্ষর শিখিয়েছ, BANG বাঙ্ LA লা DESH দেশ শিখিয়েছ! ব্যাকরনের হাতে খড়ি দিয়েছ, অংকের নামতা শিখিয়েছ। তাতেই না আজ আমরা এখানে! আর আজ, তোমাদের সেই ছাত্ররাই তোমাদের উপর মরিচের স্প্রে ছুড়ছে! এরা তো তোমাদের মতই কোন না কোন শিক্ষকের ছাত্র। তোমাদের দিন এনে দিন খাবার কষ্ট টা এরা কি বুঝতে পারছে! এরা কি জানে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয় আর সেখানকার শিক্ষকেরাই এখন এই দূর্ভাগা দেশে সম্ভবত একমাত্র দূর্নীতি মুক্ত কর্মক্ষেত্র। কোন কোন দিনমজুরের আয়ের চেয়ে ও হয়তো তোমাদের আয় কম, কিন্তু দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করা শত শত ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অফিসাররা তোমাদের ব্যয় এর ই ফল। সেই ব্যয় তোমাদের স্নেহের ব্যয়, তোমাদের মেধার ব্যয়, তোমাদের শ্রমের ব্যয়!

কেউ কি আছেন, আমাদের প্রিয় শিক্ষক দের, আমাদের মা দের, আমাদের বাবা দের পক্ষে এগিয়ে আসার! তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকুর জন্য কথা বলার! তারা অনুগ্রহ চান না, অধিকার চান, তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু চান!

বিষয়: বিবিধ

১৩১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File